গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ কথার সাগর ছিলেন ! তাঁর “চলা পা আর বলা মুখ” – সুতরাং কত কথা যে তিনি বলেছিলেন – তার ইয়ত্তা নাই । তাঁর বলা একটা কথা আজ হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল – যা চরমভাবে প্রাসঙ্গিক বলেই এখানে উল্লেখ করছি । গুরুমহারাজ সেদিন সিটিংয়ে বসে হঠাৎ করে বলে উঠলেন – “এবার মাটিতে সাধুর রক্ত ঝরবে ৷ বহুকাল হয়ে গেল প্রকৃত সাধুর রক্ত মাটিতে পড়েনি – এবার পড়বে ! এতদিন শুধু পাঁঠার রক্তে, পশুর রক্তে(পশুবলির কথা বলেছিলেন অথবা নিম্নচেতনার অবিবেকী মানুষকে বোঝাতেও বলতে পারেন)ধরণী সিক্ত হয়েছে ফলে ধরণী জ্বলছে – এবার সাধুর রক্ত ধরণীতে পড়ে ধরণী শীতল হবে ৷”
এই কথাগুলো গুরুজীর মুখ থেকে শুনে সেদিন আমাদের খুবই কষ্ট হয়েছিল । আমরা ভেবেছিলাম গুরুজীর-ই রক্ত ঝরবে বোধহয় ! উনি তখন প্রায়ই বলতেন – “আমারই এক প্রিয়জন আমার মস্তকে আঘাত করবে ৷” আমরা এই দুটোকে মিলিয়ে নিয়ে ভেবে নিয়েছিলাম যে তাহলে হয়তো গুরুজীর মাথা ফেটে রক্ত মাটিতে পড়ে ধরণী শীতল হবে !
কিন্তু আমাদের ভাবনায় ভুল ছিল ! বিসমিল্লায় গলদ_ গুরুজী-কে “সাধু”– এই বিশেষণ দিয়েই ভুল করেছিলাম, আসলে গুরুজীর তো কোন ‘সংজ্ঞা’-ই হয় না ! যে মানুষটা বলছেন – ” আমি পরশমণি তৈরি করি “, যিনি বলছেন – ” আমি ‘অবতার’ নই, আমার সাথে এসেছে যারা_ তারা ‘অবতার’ !” তাঁকে সংজ্ঞায়িত করতে যাওয়া কতটা মূর্খতা – কতটা আহাম্মকি – সেটা আপনারাই বিচার করুন !
পরে “সাধু”র সংজ্ঞা শুনেছিলাম ওনারই শ্রীমুখে – “যে সাধে – সেই সাধু । সদাসর্বদা যিনি ইষ্টচিন্তায় থাকেন – তিনিই সাধু” ! উনি আরও বলেছিলেন – “পুড়বে সাধু উড়বে ছাই – তবে সাধুর গুণ গাই ৷”
আর সন্ন্যাস হ’ল একটা লাইফ স্টাইল । বৈদিক চতুরাশ্রমের যেটা শেষ ধাপ – সেটাকেই ভগবান বুদ্ধ এগিয়ে এনে ব্রহ্মচর্যের পরের ধাপে নিয়ে এসেছিলেন । সন্ন্যাস একটা ব্রত – সন্ন্যাসী সমগ্র জীবন ধরে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে একটি বিশেষ ‘ব্রত’ পালন করে যান, যে ব্রত পালনের মাধ্যমে তিনি তাঁর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অর্থাৎ ঈশ্বরত্ব লাভের দিকে পৌঁছে যান ! গেরুয়া বসন পড়ে কোন মঠ-মিশন-আশ্রমে থাকলেই যে সাধু বা সন্ন্যাসী বলা যাবে তার কোন মানে নাই ৷ মানব জীবনের কিছু বাহ্য ত্যাগব্রত অবলম্বন করলেও যদি মনে সম্যক ত্যাগ(সম্+ন্যাসী=সন্ন্যাসী) না আসে – তাহলে নোঙর ফেলে দাঁড় টানার মতোই – সব প্রচেষ্টা বৃথা হয়ে যাবে ।
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “এবার আমার এখানেই দেখছি অনেকে রয়েছে যারা পূর্ব শরীরে ছিল সন্ন্যাসী – এবার তারা সংসার করছে, আবার পূর্ব শরীরে অনেকেই সংসার করেছিল – এবার এই শরীরে তারা ব্রহ্মচারী-সন্ন্যাসী হয়ে আশ্রমের কাজ করছে ।”
একবার দুঃখ করে গুরুমহারাজ মুখার্জি বাড়িতে শেষের দিকে একদিন রাত্রির সিটিং-এ বলেছিলেন – ” জানো ন’কাকা ! ভাবছি এবার থেকে আর কাউকে ব্রহ্মচর্য বা সন্ন্যাস দেবো না !” ন’কাকা জিজ্ঞাসা করলেন – ” কেন গো ! তোমার আবার কি হলো ? এইসব চিন্তা আসছে কেন মনে ?” গুরুজি উত্তর দিয়েছিলেন – ” দেখছি কি জানো – ভালো ভালো ছেলে-মেয়েগুলো মনে দারুণ ত্যাগ-বৈরাগ্য-আত্মোন্নতির উদ্যোগ নিয়ে আমার কাছে আসছে ! কিন্তু সাদা কাপড় বা গেরুয়া কাপড় পড়ার পর থেকেই তারা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে – মনে নানান অভিমান বা অহংকার সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে – ফলে তাদের পূর্বের ভাবটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে – ছেলে-মেয়েগুলির আধ্যাত্মিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে ! গেরুয়াও একটা বিরাট Sentiment – জানো তো ন’কাকা !”
গুরুমহারাজ বলেছিলেন বাউলমতে আট প্রকারের সাধু রয়েছে –আউসে-পাউষে-নিব্বংশে-মাগমলে-চ্যাটের দায়ে-প্যাটের(পেটের) দায়ে, স্বভাবে-ভক্তিতে ! স্বভাব-সাধু বা ভক্তিতে সাধু-ই প্রকৃত সাধু – যাঁরা সদাসর্বদা ইষ্টের সাথে যোগ রেখে চলেন ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন_ভারতবর্ষে কালে কালে হাজার হাজার সাধু-সন্তকে হত্যা করা হয়েছে! পৌরাণিক সাহিত্যগুলিতে মুনি-ঋষি হত্যার কাহিনী রয়েছে, ইসলামীয় এবং ইংরেজ শাসনকালেও প্রচুর সাধুহত্যা হয়েছে! গুরুজী বলেছিলেন_” বাবরের সময় থেকে আজ পর্যন্ত__ শুধুমাত্র রামমন্দিরকে কেন্দ্র করেই কত হাজার সাধু-সন্ত মারা গেছে__তা কল্পনাও করতে পারবে না !”
কিন্তু মহাত্মা –মহাপুরুষের ক্ষেত্রে সব ব্যাপারটাই আলাদা! গুরুজীর কাছে শুনেছিলাম পরমগুরুদেব রামানন্দ অবধূতকে চোরেরা ছুরিকাঘাত করে – আধমরা করে ফেলে রেখেছিল ৷ পরে যখন ওনাকে উদ্ধার করে সুস্থ করে তোলা হয় এবং পুলিশ এসে দুষ্কৃতীদের বিবরণ জানতে চায় – তখন উনি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেন নি – বলেছিলেন – ” যো হুয়া_ সবকুছ্ প্রারব্ধবশতঃ হুয়া !” কোন জন্মে উনি ক্ষত্রিয়শরীরে ছিলেন এবং অকারণে অস্ত্র চালিয়ে কিছু জীবের রক্ত ঝরিয়েছিলেন – তাই এখন প্রারব্ধভোগ !
রামানন্দ অবধূতজী মহাজ্ঞানী ছিলেন – কালদ্রষ্ট্রা ছিলেন – তাই তাঁর পক্ষে জ্ঞানবিচার করে সিদ্ধান্ত করা সম্ভব । একই কারণে যীশুখ্রীষ্টও ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় দোষীদেরকে ক্ষমা করেছিলেন ! এমনটা হয়তো আরও অনেক মহাত্মাই করে থাকতে পারেন _হয়তো তাঁদের সবার কথা ইতিহাসে লেখাও নাই !
কিন্তু আমরা সাধারন মানুষেরা অথবা সাধারণ সাধকেরা (সাধারণ অর্থে যারা সাধু-সন্ত-ব্রহ্মচারী) তো মহাজ্ঞানী নই – চরম অজ্ঞানী, তাই কোন Action ঘটলেই – সাথে সাথে তার immediate Reaction করার জন্য তেতে উঠি ! Proper action করার কথা ভেবে উঠতে পারি না, ফলে আবার কর্মফল – আবার প্রারব্ধ ! গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ কিন্তু বারবার Proper action -এর কথাই বলেছিলেন ! … [ক্রমশঃ]
এই কথাগুলো গুরুজীর মুখ থেকে শুনে সেদিন আমাদের খুবই কষ্ট হয়েছিল । আমরা ভেবেছিলাম গুরুজীর-ই রক্ত ঝরবে বোধহয় ! উনি তখন প্রায়ই বলতেন – “আমারই এক প্রিয়জন আমার মস্তকে আঘাত করবে ৷” আমরা এই দুটোকে মিলিয়ে নিয়ে ভেবে নিয়েছিলাম যে তাহলে হয়তো গুরুজীর মাথা ফেটে রক্ত মাটিতে পড়ে ধরণী শীতল হবে !
কিন্তু আমাদের ভাবনায় ভুল ছিল ! বিসমিল্লায় গলদ_ গুরুজী-কে “সাধু”– এই বিশেষণ দিয়েই ভুল করেছিলাম, আসলে গুরুজীর তো কোন ‘সংজ্ঞা’-ই হয় না ! যে মানুষটা বলছেন – ” আমি পরশমণি তৈরি করি “, যিনি বলছেন – ” আমি ‘অবতার’ নই, আমার সাথে এসেছে যারা_ তারা ‘অবতার’ !” তাঁকে সংজ্ঞায়িত করতে যাওয়া কতটা মূর্খতা – কতটা আহাম্মকি – সেটা আপনারাই বিচার করুন !
পরে “সাধু”র সংজ্ঞা শুনেছিলাম ওনারই শ্রীমুখে – “যে সাধে – সেই সাধু । সদাসর্বদা যিনি ইষ্টচিন্তায় থাকেন – তিনিই সাধু” ! উনি আরও বলেছিলেন – “পুড়বে সাধু উড়বে ছাই – তবে সাধুর গুণ গাই ৷”
আর সন্ন্যাস হ’ল একটা লাইফ স্টাইল । বৈদিক চতুরাশ্রমের যেটা শেষ ধাপ – সেটাকেই ভগবান বুদ্ধ এগিয়ে এনে ব্রহ্মচর্যের পরের ধাপে নিয়ে এসেছিলেন । সন্ন্যাস একটা ব্রত – সন্ন্যাসী সমগ্র জীবন ধরে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে একটি বিশেষ ‘ব্রত’ পালন করে যান, যে ব্রত পালনের মাধ্যমে তিনি তাঁর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অর্থাৎ ঈশ্বরত্ব লাভের দিকে পৌঁছে যান ! গেরুয়া বসন পড়ে কোন মঠ-মিশন-আশ্রমে থাকলেই যে সাধু বা সন্ন্যাসী বলা যাবে তার কোন মানে নাই ৷ মানব জীবনের কিছু বাহ্য ত্যাগব্রত অবলম্বন করলেও যদি মনে সম্যক ত্যাগ(সম্+ন্যাসী=সন্ন্যাসী) না আসে – তাহলে নোঙর ফেলে দাঁড় টানার মতোই – সব প্রচেষ্টা বৃথা হয়ে যাবে ।
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “এবার আমার এখানেই দেখছি অনেকে রয়েছে যারা পূর্ব শরীরে ছিল সন্ন্যাসী – এবার তারা সংসার করছে, আবার পূর্ব শরীরে অনেকেই সংসার করেছিল – এবার এই শরীরে তারা ব্রহ্মচারী-সন্ন্যাসী হয়ে আশ্রমের কাজ করছে ।”
একবার দুঃখ করে গুরুমহারাজ মুখার্জি বাড়িতে শেষের দিকে একদিন রাত্রির সিটিং-এ বলেছিলেন – ” জানো ন’কাকা ! ভাবছি এবার থেকে আর কাউকে ব্রহ্মচর্য বা সন্ন্যাস দেবো না !” ন’কাকা জিজ্ঞাসা করলেন – ” কেন গো ! তোমার আবার কি হলো ? এইসব চিন্তা আসছে কেন মনে ?” গুরুজি উত্তর দিয়েছিলেন – ” দেখছি কি জানো – ভালো ভালো ছেলে-মেয়েগুলো মনে দারুণ ত্যাগ-বৈরাগ্য-আত্মোন্নতির উদ্যোগ নিয়ে আমার কাছে আসছে ! কিন্তু সাদা কাপড় বা গেরুয়া কাপড় পড়ার পর থেকেই তারা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে – মনে নানান অভিমান বা অহংকার সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে – ফলে তাদের পূর্বের ভাবটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে – ছেলে-মেয়েগুলির আধ্যাত্মিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে ! গেরুয়াও একটা বিরাট Sentiment – জানো তো ন’কাকা !”
গুরুমহারাজ বলেছিলেন বাউলমতে আট প্রকারের সাধু রয়েছে –আউসে-পাউষে-নিব্বংশে-মাগমলে-চ্যাটের দায়ে-প্যাটের(পেটের) দায়ে, স্বভাবে-ভক্তিতে ! স্বভাব-সাধু বা ভক্তিতে সাধু-ই প্রকৃত সাধু – যাঁরা সদাসর্বদা ইষ্টের সাথে যোগ রেখে চলেন ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন_ভারতবর্ষে কালে কালে হাজার হাজার সাধু-সন্তকে হত্যা করা হয়েছে! পৌরাণিক সাহিত্যগুলিতে মুনি-ঋষি হত্যার কাহিনী রয়েছে, ইসলামীয় এবং ইংরেজ শাসনকালেও প্রচুর সাধুহত্যা হয়েছে! গুরুজী বলেছিলেন_” বাবরের সময় থেকে আজ পর্যন্ত__ শুধুমাত্র রামমন্দিরকে কেন্দ্র করেই কত হাজার সাধু-সন্ত মারা গেছে__তা কল্পনাও করতে পারবে না !”
কিন্তু মহাত্মা –মহাপুরুষের ক্ষেত্রে সব ব্যাপারটাই আলাদা! গুরুজীর কাছে শুনেছিলাম পরমগুরুদেব রামানন্দ অবধূতকে চোরেরা ছুরিকাঘাত করে – আধমরা করে ফেলে রেখেছিল ৷ পরে যখন ওনাকে উদ্ধার করে সুস্থ করে তোলা হয় এবং পুলিশ এসে দুষ্কৃতীদের বিবরণ জানতে চায় – তখন উনি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেন নি – বলেছিলেন – ” যো হুয়া_ সবকুছ্ প্রারব্ধবশতঃ হুয়া !” কোন জন্মে উনি ক্ষত্রিয়শরীরে ছিলেন এবং অকারণে অস্ত্র চালিয়ে কিছু জীবের রক্ত ঝরিয়েছিলেন – তাই এখন প্রারব্ধভোগ !
রামানন্দ অবধূতজী মহাজ্ঞানী ছিলেন – কালদ্রষ্ট্রা ছিলেন – তাই তাঁর পক্ষে জ্ঞানবিচার করে সিদ্ধান্ত করা সম্ভব । একই কারণে যীশুখ্রীষ্টও ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় দোষীদেরকে ক্ষমা করেছিলেন ! এমনটা হয়তো আরও অনেক মহাত্মাই করে থাকতে পারেন _হয়তো তাঁদের সবার কথা ইতিহাসে লেখাও নাই !
কিন্তু আমরা সাধারন মানুষেরা অথবা সাধারণ সাধকেরা (সাধারণ অর্থে যারা সাধু-সন্ত-ব্রহ্মচারী) তো মহাজ্ঞানী নই – চরম অজ্ঞানী, তাই কোন Action ঘটলেই – সাথে সাথে তার immediate Reaction করার জন্য তেতে উঠি ! Proper action করার কথা ভেবে উঠতে পারি না, ফলে আবার কর্মফল – আবার প্রারব্ধ ! গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ কিন্তু বারবার Proper action -এর কথাই বলেছিলেন ! … [ক্রমশঃ]