গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ – ” সাধু-সন্তের রক্ত মাটিতে ঝরে ধরণী শীতল হবে “– এই কথা বলেছিলেন এবং এই সংক্রান্ত বেশ কিছু আলোচনাও করেছিলেন – সেইসব সম্বন্ধেই কথা হচ্ছিল !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – সাধু-সন্তের হত্যা বা তাঁদের রক্তপাতের ঘটনা পৃথিবীতে কোনো নতুন ঘটনা নয় ৷ পৌরাণিক আমলেও এর অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। দৈত্য-দানব-রাক্ষসেরা বহু সাধু-সন্ত অর্থাৎ তৎকালীন মুনি ঋষিদের হত্যা করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে যখন থেকে লিখিত ইতিহাসের যুগ এলো_তখন থেকে ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও বারবার সাধুহত্যার প্রমাণ পাওয়া যায় ৷ মুসলিম শাসনাধীন সময়েই ভারতবর্ষে সবচাইতে বেশি মানুষ মারা পড়েছিল – এদের মধ্যে সাধুসন্তের সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না ! তবে তারও আগে অর্থাৎ ভারতের মুসলিমরা ঢোকার আগে (৭২২ খ্রীষ্টাব্দের আগে)-ও হিন্দু ও বৌদ্ধ সংঘাতে অনেক সাধু হত্যা হয়েছে ! উদাহরণ হিসাবে বলা যায়_ শৈবসাধক শশাঙ্ক যখন বাংলার শাসনকর্তা ছিল, তখন গৌড়ের কাছে কর্ণসুবর্ণ এলাকায় একটি বিশাল বৌদ্ধবিহারের সমস্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মেরে ফেলা হয়েছিল ।
ইসলামীয় শাসকেরা এক হাতে কোরান এবং অন্য হাতে তরবারি নিয়েই ভারতে বসবাস করতে এসেছিল । সুতরাং ইসলামীয় শাসনাধীন সময়ে ভারতবর্ষে সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটার‌ই তো কথা_ আর সেটাই ঘটেছিল ! প্রাণের ভয়ে দলে দলে হিন্দুরা ধর্মমত পাল্টে ফেলতে বাধ্য হতো বা তাদের বাধ্য করা হতো (যদিও তৎকালে ভারতীয় উচ্চবর্ণের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বহু সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল – এটাও ঠিক কথা!)! ইতিহাসে বিদেশীয় অত্যাচারের প্রায় সমস্ত কথাই পরিসংখ্যান সহ লিপিবদ্ধ রয়েছে – কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার পরও সঠিক ইতিহাস ভারতের জনগণকে ঠিকমতো জানানোই হলো না ! কিসের যেন এক অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে – ভারতবর্ষকে, এর প্রাচীন পরম্পরাকে __শুধুমাত্র হেয় প্রতিপন্ন করারই ক্রমাগত চেষ্টা চালানো হয়ে চলেছে !
ইসলামের অত্যাচারের কাহিনী – ভারতবর্ষের মন্দির-সৌধ ধ্বংস করে সেখানে নিজেদের নাম-যুক্ত করে সৌধ স্থাপন করার ইতিহাস – কেন জানিনা একদমই ভারতীয়দের(ছাত্র-ছাত্রীদের) পড়ানো হলো না ! তার পরিবর্তে অনেক বেশি করে মুঘলদের গৌরব-গাথা ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে স্থান করে নিল ! কি দুর্ভাগ্য ভারতবর্ষের – কি দুর্ভাগ্য ভারতবাসীর !
আজ যখন বাংলাদেশের একটি যুবক আসাদ নুর (Asad Noor)-এর ভিডিও (Youtube-এ)গুলো follow করি , আর দেখি ওই ছেলেটি অথবা আরও কয়েকজন সাহসী যুবক ছেলে-মেয়ে __ইসলামীয় ইতিহাসের ‘পোল’ খুলে দিচ্ছে – তখন ভারতীয় মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিবিদ্-দের এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের ক্রিয়াকাণ্ড দেখে-বক্তব্য শুনে _ করুণা হয় !
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “পৃথিবীর প্রধান প্রধান সমস্ত ধর্মমত গুলিরই কিছু না কিছু Reformation হয়েছে – শুধুমাত্র ইসলামের এখনও সেভাবে হয়নি ! যদিও আহমদিয়া, বাহাইয়া, কাদেরি, শিয়া, সুন্নি ইত্যাদি নানাভাবে এই মতটি বিভক্ত হয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও মূল জায়গাটাতে (আল-কোরান এবং আল-হাদিসে) কোন পরিবর্তন হয়নি ! বাইরে থেকে এই ধর্মমতের কোনদিন পরিবর্তন করা যাবেও না – যতদিন না ইসলামের মধ্যে থেকে প্রতিবাদীরা বেরিয়ে এসে এর পরিবর্তন করে”।
তসলিমা নাসরিন যখন প্রথম প্রতিবাদী কন্ঠ হয়েছিল – তখন আমরা গুরু মহারাজকে বলেছিলাম – “এবার তো মেয়েটা মরবে!” গুরু মহারাজ বলেছিলেন – “ও বাঁচবে।” আজও কিন্তু সে প্রতিবাদী কন্ঠ হয়েই বেঁচে রয়েছে । সলমন রূশদির ব্যাপারেও গুরু মহারাজ বলেছিলেন_”খতম বাহিনী ওর কিচ্ছু করতে পারবে না ” ( রূশদির ‘স্যাটানিক ভার্সেস’_ প্রকাশিত হবার পর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে ওকে মেরে ফেলার জন্য “খতম বাহিনী” পাঠিয়েছিল।)
‘মালালা ইউসুফজাই’-এর নোবেল গ্রহণের দিন, নোবেল কমিটির সামনে বক্তব্য রাখার ভিডিওটা দেখতে দেখতে আমাদের আশ্রমের একজন ইউরোপীয় ভক্ত (নরওয়ের কুনুথ-হেলগে) ঝর ঝর করে কাঁদছিল ! ও বলছিল – “ঐ বাচ্চা মেয়েটির মধ্যে দিয়ে #গুরুজীই কথা বলছেন ! তা নাহলে কখনোই ওইটুকু বাচ্চা মেয়ে__ পৃথিবীর ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা মৌলবাদীর বিরুদ্ধে, ঐরকম চোখা চোখা বক্তব্য রাখতে পারতো না” !
এইভাবেই দেখা যাচ্ছে – একটা Reformation শুরু হয়ে গেছে ৷ এই পৃথিবীতে গুরুমহারাজের শরীর ধারণ করাটা একটা “নতুন যুগের শুভ-সূচনা” ! উনি বলেছিলেন যে, “আমি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যখন যেখানে পা রেখেছি_সেখানেই কিছু না কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে ! তবে এ সবই হয়েছে মা জগদম্বার ইচ্ছায়, যখন যা কাজ করেছি-যে সব কথা বলেছি__ সবই তাঁর ইচ্ছায় !” তাহলে এখনও যা কিছু হচ্ছে – সবই মা জগদম্বার ইচ্ছাতেই হচ্ছে ৷ ফলে যা হচ্ছে__ তা ভালোই হচ্ছে, আর যা হবে তা ভালোই হবে ৷৷(ক্রমশঃ)