গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন – ” ভারতবর্ষের এখন প্রধান সমস্যা অত্যাধিক জনসংখ্যা ! যেখানে কুড়িটি ইঁদুরের থাকার কথা সেখানে আশিটি ইঁদুর ঘেঁষাঘেষি করে রয়েছে !” গুরু মহারাজের কথা স্থূল অর্থে ধরলে ভারতবর্ষের জনসংখ্যা বর্তমানে (১৩০÷৪)কোটি বা ৩০-৩২ কোটি হওয়া উচিত ছিল ৷
অকারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে যাওয়া – মানবতার চরম অপমান ! প্রকৃতি তথা পৃথিবীর উপর এটি চরম আঘাত ! যে কোন বিবেকপরায়ণ ব্যক্তি যদি তার এতোটুকু বুদ্ধি প্রয়োগ করে এই ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করে – তাহলেই সে বুঝতে পারবে যে, পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়িয়ে চলাটা মানুষের বাঁচার পক্ষে কতটা প্রতিকূল !
প্রকৃতির আলো, বাতাস, জল (ভূগর্ভস্থ এবং ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থিত) খনিজ পদার্থ, কৃষিযোগ্য জমি সবকিছুই পূর্ব হতে(সৃষ্টির পর থেকে) নির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে – এগুলির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা অথবা এদের চরিত্র পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করে যাওয়া __মানেই প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করা ! প্রকৃতির বিরুদ্ধে সরাসরি action ঘটানো! আর “To every action there is an equal and opposite reaction” _ এটা সমস্ত বুদ্ধিমান মানুষের নিশ্চয়ই জানা রয়েছে ! তাহলে দিনের পর দিন ধরে আমরা সভ্য, শিক্ষিত, বুদ্ধিমান মানুষেরা এই ভুলটা করে যাচ্ছি কেন – রাষ্ট্রনেতারা, সমাজপতিরা, ধর্মীয় নেতারা মানুষকে এই একটা ব্যাপারে সচেতন করে গড়ে তুলতে পারছেন না কেন ?
কোন কোন রাষ্ট্র – তার নিজের মতো করে কোন আইন বানিয়ে – তার নিজের দেশের জনসংখ্যা ঠিক রাখার চেষ্টা করছে – কিন্তু সার্বজনীন বা বিশ্বজনীন ভাবনা কই ?– তা না হলে পৃথিবী গ্রহের সমস্যার সার্বিক সমাধান কোনদিনই হবে না ! “আমার দেশে জনসংখ্যা কম, ওদের দেশে বেশি, ওরা ঝামেলা পোহাক”–এ ভাবনা ভুল ! মানুষ জীবন রক্ষার তাগিদে _জীবিকার খোঁজে Migrate করবেই _এবং one fine morning দলে দলে ক্ষুধার্ত মানুষ, অসহায় মানুষ,অত্যাচারিত মানুষ ঠিক পৌঁছে যাবে সেই দেশে!!
গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “সমগ্র মানব সমাজ যেন একটা সম্পূর্ণ শরীর । শরীরের কোন অংশে সমস্যা সৃষ্টি হলে যেমন সমগ্র শরীর ব্যথাগ্রস্থ হয় – সমাজ শরীরেও তাই হয়” ! কিন্তু গণ্ডমূর্খ অথচ শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, সভ্য মানব তার চেতনায় বিশ্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি বলেই এই ব্যথা অনুভব করে না! আজ থেকে ১০০বছরের‌ও বেশি আগে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ একথা বুঝেছিলেন, তাই তিনি উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন – ” দুটো-একটা সন্তান হবার পর স্বামী-স্ত্রী ভাই-বোনের মতো থাকবে ।” এ যুগের ঠাকুর, গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বীরত্বব্যঞ্জক সুরে বললেন – ” বর্তমানে ভারতবর্ষের জনসংখ্যার যা অবস্থা, তাতে এখনকার যুবক-যুবতীদের মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকে_ তাহলে কিছুদিন আর তাদের বিয়ে-থা করাই উচিত নয় ৷ Live together, Stay together করুক – কিন্তু সন্তান উৎপাদন করে জনসংখ্যা যেন বৃদ্ধি না করে ৷”
মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যাপারে গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “হযরত ছিলেন আরব জাতির ত্রাণকর্তা ! নদী-নারী-মৃত্তিকা – এই তিনটি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ! যেখানে নদী বেশি, মাটি উর্বর – সেখানে নারীরাও উর্বর(অর্থাৎ একটা নারী সারাজীবনে অনেক সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম) ! অপরপক্ষে হজরত যেখানে জন্মেছিলেন সেটি মরুভূমির দেশ, নদী নাই বললেই চলে, মাটি (বালি) রুক্ষ-অনুর্বর, তাই ওইসব দেশের নারীরা পুরুষালী হয়(অধিকাংশ নারীর গোঁফ বেরোয়) – বেশিরভাগের সন্তান হয় না, হলেও একটি-দু’টি ৷ তাই হযরতের বহু-বিবাহ এবং বহুসন্তান সংক্রান্ত সমস্ত বিধানগুলি ছিল মরুভূমির দেশের জন্য, সমভূমির জন্য নয় ! কিন্তু এখানেও মানুষের সেই চরম মূর্খতা বা ভ্রান্তি কার্য্যকরী হলো ! স্থান-কাল-পাত্রের পরিবর্তনে যে সবকিছুই পরিবর্তিত করে নিতে হয় – সেটা আর হলো না – ফলস্বরূপ এই জনবিস্ফোরণ” !
এর ফলে কি হলো – এই অত্যধিক জনসংখ্যার প্রাথমিক চাহিদা, অর্থাৎ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের যোগানের ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে করতেই হলো ! খাদ্যসমস্যা মেটাতে উচ্চফলনশীল শস্য এবং অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল খাদ্য উৎপাদন করতে হলো ! প্রতিটি শস্যের সংকরায়ন ঘটাতে গিয়ে সেগুলির জিনবিন্যাস পাল্টে গেল _ পোল্ট্রি প্রোডাক্ট, মাছ-মাংসের ক্ষেত্রেও তাই ! তাতে কি হলো – মানুষের শরীরে পুরুষানুক্রমে যে genetic character ছিল, তারা এতদিন natural খাদ্যে অভ্যস্থ ছিল ! কিন্তু এখন নতুন genetic character বিশিষ্ট খাদ্য এসে যাওয়ায় মানব শরীরের বিভিন্ন endocrine system confused হয়ে গেল – শরীর খাদ্য,পাচক রস ইত্যাদিকে গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে কিন্তু আভ্যন্তরীন কলকব্জাগুলি সেগুলিকে নিয়ে ঠিকমতো adjust করতে পারছে না ! ফলে মানুষের natural immunity system নষ্ট হয়ে যাচ্ছে – আর এইজন্যেই মানুষ কঠিন কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে ! যে সমস্ত virus, bacteria হয়তো বহুকাল আগেও ছিল – কিন্তু মানবশরীরে সেগুলি ক্রিয়াশীল হতো না (হয়তো কোন পশু-পাখির শরীরেই সীমাবদ্ধ থাকতো)! দিনের পর দিন Innatural খাদ্য গ্রহণের ফলে_ মানুষের শরীরের immunity system ক্রিয়াশীলতা হারাচ্ছে এবং এখন মানুষের দেহে সেইসব virus, bacteria বাসা বাঁধছে এবং মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে – মহামারী সৃষ্টি করছে !
অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের জন্য সেচকার্য করতে এবং সমগ্র জীবজগতের শরীর রক্ষার জন্য মিষ্টি-জলের অত্যধিক প্রয়োগ করতেই হয়েছে! এর চরম কুফল হলো_ ভূ-অভ্যন্তরের জলস্তর দ্রুত নেমে যাওয়া,এবং তাৎক্ষণিক ফল আর্সেনিক দূষণ, ক্যাডমিয়াম দূষণ ইত্যাদি! কিন্তু প্রকৃতির নিজস্ব system-কে আঘাত দেওয়ায় আরও কত কি যে প্রত্যাঘাত আসতে পারে – তা আমরা চিন্তাও করছি না ! আর যারা করছেও – তাদের করার-ই বা কি আছে – এত বিপুল জনসংখ্যাকে তো পানীয় জল দিতে হবে – খাদ্যশস্য উৎপাদনের সেচ কার্য্য তো করতে দিতে হবে _তাতে জলস্তর পাতালে নেমে যাক না!!! বেচারা মানুষ !! !!! … [ক্রমশঃ]