গুরু মহারাজ :- না – না – সেরকম ভেবোনা । বিবর্তন বা evolution – এ __মানবজন্মই চূড়ান্ত! Vegetation থেকে শুরু হয়ে Homo-eractus!এটা একটা ক্রম! এবার অন্যটা হোল Homo-eractus to_ Homo-sapiens ৷ ব্যস্ – এটাই চূড়ান্ত! এরপর আবার মানুষ কি ৫/৬ হাত লম্বা অন্য কোন প্রাণীতে পরিণত হবে মনে করছ না কি ?
পৃথিবী গ্রহের সবচাইতে উন্নত শারীরিক, মানসিক গঠন মানুষের, এটাই সবচাইতে উন্নত ও উপযুক্ত শরীর । মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখন বলছে নরাকার ব্রহ্মান্ডের কথা! নরাকার প্রাপ্ত হওয়াটাই স্থুল শরীরের highest manifestation! তাই এই মনুষ্য শরীরেই ঈশ্বরত্ব লাভ হয়! কিন্তু ঈশ্বরলাভ বা ঈশ্বরত্বলাভ করতে গেলে যে ধারায় ৮৪ লক্ষ যোনী অতিক্রম করে মনুষ্য শরীর লাভ হয়েছে, সেই ধারাটির পরিবর্তন করতে হয় । এটা আর evolution নয়, তখন বলা যায় involution! অন্যান্য প্রাণীর মতোই মানুষ একটি প্রাণী, কিন্তু মানুষ একটি বিশেষ প্রাণী! কারণ সমস্ত প্রাণীর মধ্যে একমাত্র মানুষেরই Common Sense বা কাণ্ডজ্ঞানের পরিপূর্ণতা আসা সম্ভব হয় ৷ আর এই common Sense -এর Complete Manifestation হলে তবেই তাকে আমরা ‘প্রকৃত মানুষ’ – বলতে পারি ৷ সাধারণভাবে দেখা যায় মনুষ্য শরীর লাভ হয়েছে বটে কিন্তু চেতনা সেই পশুস্তরে-ই রয়ে গেছে ৷ আমি এমনও দেখি, এখানেই অনেকে আসে – যাদের চেতনা সরীসৃপের স্তরে রয়েছে ৷ শুধুই নবদ্বারের অলিতে-গলিতে চেতনা হামাগুড়ি দিচ্ছে কিম্বা বুকে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছে – এর বাইরে আর কিছুই চিন্তা-ভাবনাই করতে পারছে না!
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন – মান-হুঁশ _মানুষ ; আর আমি বলছি যার ‘হুঁশ’ আছে সেই মানুষ! ‘হুঁশ’ অর্থে বিবেক বা Consience! বিবেক যার জাগেনি সে আবার মানুষ কি ! ধন, যৌবন, প্রতিপত্তি, রূপ সব রয়েছে কিন্তু বিবেকী নয় – অবিবেকী, সে কি করবে বলোতো – সমাজে একটা অসুর হয়ে জীবন কাটাবে, সমাজের – মানবতার চরম ক্ষতিসাধন করবে! সে তো তার নিজের ভালোটাও বুঝতে পারবে না – ফলে অপরের ভালো কি করে করবে ?
এইভাবেই বিভিন্ন ধর্মনেতা, রাজনৈতিক নেতা, সমাজনেতা – মনুষ্য সমাজের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে চলেছে । বিবেক জাগ্রত হয়নি, অথচ কোন না কোন ভাবে মানব সমাজের নেতা হয়ে বসে আছে! তাহলে তারা মনুষ্য সমাজের ভালোটা কি করবে? বরং খারাপটাই করবে। কারণটা বলছি __অারও অনেক অবিবেকী মানুষজন এই ক্ষমতাবান ব্যক্তিটির চারপাশে ঘুর ঘুর করবে — ফলে তারাও ক্ষমতালাভ করবে আর সামগ্রিকভাবে সমাজের ক্ষতি করবে!
বর্তমান সমাজে এমনটাই ঘটছে! প্রচুর অবিবেকী ক্ষমতাশালী মানুষ সমাজে তান্ডব চালাচ্ছে! কোন সুস্থ, সভ্য মানবসমাজ কি এইভাবে টিকে থাকতে পারে???
তবু ভারতবর্ষ এখনো টিকে আছে, অার তার অন্তর্গত রাজ্য এই বাংলাও এখনো টিকে আছে_এটাই আশ্চর্যের বিষয়! কবিরা এইজন্যই বলেছে _”শতভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা” ! কিন্তু কেন টিকে আছে বলোতো – মহাপুরুষগণের জন্য! তাঁদের জীবনের ত্যাগ-সাধনা, উপদেশাবলী বহু মানুষকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে – বহু জীবনকে উজ্জীবিত করে ধর্মপথে অগ্রসর হবার দিশা দেখায়! এইভাবেই ভারতীয় সমাজে বহু সাত্ত্বিক মানুষ, ভালো মানুষ, বিবেকী মানুষ রয়েছেন – যারা সমাজকে ধরে রেখেছন বা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন । যখনই এই মানুষগুলির সংখ্যা কমে যায় তখনই কোন না কোন শক্তিশালী মানুষ(মহাপুরুষ, অবতার পুরুষ) এসে আবার খানিকটা তুলে ধরেন – এইভাবেই চলছে!
সমাজে সদা-সর্বদা হয়ে চলেছে দেবাসুরের সংগ্রাম। বেশীরভাগ সময়ে অসুরদেরই প্রাধান্য থাকে, দেবতারা হয় স্বর্গ থেকে বিতাড়িত ৷ মাঝে মাঝে দৈবীশক্তির সহায়তায় দেবতারা স্বর্গরাজ্যে স্থান পায়।
বর্তমানেও সমাজে দেখা যায় অসুর শক্তির প্রাধান্য _ দেবতারা আজও স্বর্গরাজ্য থেকে বিতারিত! অর্থাৎ বিবেকী, জ্ঞানী, সাধক -দের সমাজে এখন কোন স্থান নেই, সমাজ এদের কথা এখন শুনবে না বা মানবে না _এখন বাহুবলী , অর্থবলীদের প্রভাব!
কিন্তু এটাও বেশীদিন চলবে না — শীঘ্রই এই অবস্থারও পরিবর্তন ঘটবে – কিছু ভালো মানুষ আবার সমাজে নেতৃত্ব দেবে ৷
সেইজন্যই বলছিলাম সমাজে বিবেকবান মানুষের বেশী বেশী প্রয়োজন । বিবেকবানরাই ঠিক ঠিক মানুষ । আর এই বিবেক বা Consience -এর যদি Complete Manifestation হয় – তাহলে সেটাই হ’ল দেবত্ব ৷ তাই মনুষ্য শরীর লাভ করলেই মানুষ হওয়া হোল না, বিবেকবান হলে তবেই মানুষ হওয়া যায় ৷ আর মানুষের মধ্যে যদি বিবেকের Complete Manifestation হয় – তবেই মানুষ দেবতায় রূপান্তরিত হয় ৷ সমাজে কোন ভালো মানুষ দেখতে পেলে আমরা তো বলে থাকি_”আহা! উনি মানুষ নন গো উনি দেবতা!” আরো পরিস্কার করে বলছি শোন _
ঋষিরা বলেছেন ব্রহ্ম ষোল কলায় প্রকাশিত ৷ ব্রহ্মের অর্দ্ধকলা বা অষ্টকলার প্রকাশমান অবস্থাই মানুষ! ঐ যে বলছিলাম না __মনুষ্য পূর্ববর্ত্তী জীবের Consiousness বা চেতনা থাকলেও Consience বা বিবেক থাকে না, কান্ডজ্ঞান বা Common Sense -এর অভাব থাকে! দেখবে যে কোন পশু বা পাখী – পায়খানা পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তা করে দেবে! প্রস্রাব পেলে তো মোটেই সময় নষ্ট করে না ! স্থান-কাল-পাত্র বাছার প্রয়োজন মনে করে না ৷ “আহার-নিদ্রা-মৈথুনঞ্চ-ভয়ম্” এই চারটি মেটানো বা পালন-ই যেন তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য – অন্য কিছু নয়! একই প্রজাতির মধ্যে মরণপণ সংগ্রাম করে আহার বা মৈথুনের অধিকার নিয়ে! যত বড় বড় প্রাণী তাদের তত ভয়ঙ্কর লড়াই! নারীর অধিকার নিয়ে মোষের লড়াই, ষাঁড়ের লড়াই, হাতির লড়াই কয়েকদিন ধরে চলে! অনেক সময় অপেক্ষাকৃত দূর্বল প্রতিপক্ষরা মারা যায়!
এবার আসি মানুষের কথায়! মানুষ স্থুল বিবর্তনে যেহেতু top – এ রয়েছে তাই মানুষের মধ্যেও নিম্নস্তরে লড়াই সংগ্রাম রয়েছে ।
চেতনার স্তর যত নিম্নে থাকে – পাশবিক, আসুরিক, দানবিক অবস্থায় থাকে__ তত বেশি সংগ্রাম, তত বেশি লড়াই, হিংসা, হানাহানি!