#কথা প্রসঙ্গে:–(অষ্টম খন্ডের পান্ডুলিপি থেকে নেওয়া)
[ মানুষের শরীর-স্বাস্থ্য ও রোগ-ব্যাধি সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে……..]
গুরুমহারাজ :– মানুষ নিজে নিজেই তার স্বাস্থ্যের বারোটা বাজায়! শুধুমাত্র অনিয়মিত এবং উল্টোপাল্টা আহার্য গ্রহণ আর উৎশৃংখল জীবনযাপনের জন্য-ই মানুষ বিভিন্ন রোগব্যাধিকে তার জীবনে ডেকে আনে । Food habit এবং life-style , এই দুটোকে ভারতীয় শাস্ত্রে যম ও নিয়ম বলা হয়েছে ! এই দুটোর পরিবর্তনে এক একটা জাতির জীবনে সর্বনাশ হয়ে গেছে । এই যে একটা বিশেষ community-র মধ্যে আজকাল দেখা যাচ্ছে কুষ্ঠরোগ, বন্ধ্যাত্ব, তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়ের সংখ্যা দারুণভাবে বেড়ে যাচ্ছে –সেটা শুধুমাত্র ওই community-র food habit ও life style টা হঠাৎ করে বদলে ফেলার জন্যই ! তাও তো ওরা মাত্র এটা কয়েকশো বছর হলো পাল্টেছে – তাতেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে ! তাহলে আরো দু’চারশো বছর পরে কি হতে পারে_একবার ভাবো দেখি !
তাহলে এর remedy কি হবে ? remedy একটাই – ঐ দুটো (food habit এবং life style)-কে change করে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনলেই ওই সমস্ত দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধির প্রবণতা, genetic disorder – এই সবগুলোই সেরে যাবে ।
ক্যান্সার, এইডস্, কুষ্ঠ, যৌনরোগ, শ্বেতী এসবই degenerative disease ! Degenerative disease অর্থে সেই সব রোগ যেগুলোকে শরীর আর re-generate করতে পারছে না । আমরা এগুলোকে বলি___ মহাপ্রকৃতি এই শরীরকে আর তেমন পছন্দ করছে না – কারণ ঐ শরীরে এমন কিছু প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাজ হয়েছে যে, তাকে withdraw করে নিতে চাইছে প্রকৃতি ! কিন্তু যদি আবার তার food habit এবং life style -এর সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে অন্তত ১২ বছর সুস্থ জীবনযাপন করে এবং সাথে সাথে হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করে আর তার সাথে যোগাসন, প্রাণায়াম চালিয়ে যায় – তাহলে তার ওই সব degenerative disease-এর মতো মারাত্মক ব্যাধিও সেরে যেতে পারে । আর শুধু সেরে যাওয়াই নয় – তার genetic disorder-ও এমনভাবে সেরে যাবে যে, তার পরবর্তী generation-এ ওইসব রোগ-ব্যাধির আর কোনো প্রভাব পড়বে না – তারা সুস্থ সবল শরীর-স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে । অর্থাৎ মহাপ্রকৃতি ঐ শরীরকে বা ঐ বংশকেই আর রাখতে চাইছিল না(যেহেতু ঐ বংশের রক্তে নানারকম বিষ ঢুকে গেছে) __সেইরকম একটা বংশ-ও পুনরায় আবার রক্ষা পেয়ে যেতে পারে !
ক্যান্সার, এইডস্ -এই রোগগুলো কি কোন ওষুধে সারে ? কোন definite medicine কি এখনো আবিষ্কার হয়েছে ? হয়নি কিন্তু ! তা যদি হোতো – তাহলে তো আর এই রোগগুলো নিয়ে মানুষের আর কোন চিন্তাই থাকতো না ! ক্যান্সার রোগ হলেই অমুক ওষুধটা খেয়ে নাও – ব্যস্ তাহলেই সেরে যাবে ! কিন্তু এমনটা হয় কি – হয় না ৷ এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে আর বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির ওষুধ কিনে তাদের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে ৷ এরজন্য ওদের আবার এজেন্ট রয়েছে বিশ্বের সব দেশে – যারা লাগাতার প্রচার চালিয়ে এই ওষুধগুলো মানুষকে কিনতে বা খেতে বাধ্য করে ৷ সাধারণ মানুষ আর কি করবে ? কোন বিকল্প না পেয়ে ওই ওষুধগুলোই কিনে খায় বা ওদের‌ই চিকিৎসাপদ্ধতির শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয় ।
অথচ দ্যাখো, কত হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে এইসব রোগ নিয়ে গবেষণা হয়েছিল । আয়ুর্বেদে এইডস্ রোগকে ‘শোষক’ রোগ বলা হয়েছে । এই রোগের নিদান হিসাবে বিধান দেওয়া হয়েছে – সমাজ থেকে দূরে কোন স্থানে বিল্ববৃক্ষতলে একাকী বাস করা এবং নিষ্ঠাভরে সাধন-ভজন করা ! তাহলে বুঝতে পারছো – বিধান দেওয়া হোল, ‘সম্পূর্ণভাবে food habit and life style-কে বদলে ফেলো ! আর সেইসঙ্গে নির্জনবাস বা isolation-এর ব্যবস্থা অর্থাৎ তার দ্বারা যেন সমাজের আর কারো কোনো ক্ষতি না হয় ! বিল্ববৃক্ষতলে বাসের অর্থ হলো – বিল্বপত্র, কাঁচা বা পাকা বেল খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করাটাও degenerative রোগের খুবই কার্যকরী ওষুধ, এছাড়া বেলের শিকড়-বাটা ঘা-গুলিতে লাগালেও উপকার পাওয়া যায় ।
আমিও চিন্তা করে দেখেছি – যে কোনো degenerative discase-এর চিকিৎসার পদ্ধতি হলো – সম্পূর্ণভাবে নিরামিষ আহার গ্রহণ, auto-urine therapy (প্রত্যহ প্রত্যুষে আগা-গোড়া বাদ দিয়ে পান এবং প্রয়োজনে মালিশ বা প্রলেপ), এর সাথে ধ্যান-জপ, আসন-প্রাণায়াম সাধন-ভজন, সৎসঙ্গ, সৎগ্রন্থ পাঠ ইত্যাদি মনকে সাংসারিক বিষয়সমূহ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রাখাটাও এই সব রোগের চিকিৎসার একটা অন্যতম অঙ্গ ! ভারতীয় ঋষিদের দেওয়া বিধান কখনোই ব্যর্থ হবার নয় – সত্যি সত্যিই যদি কেউ ১২ বছর তার জীবনে food habit ও life style-কে শুদ্ধ সাত্বিক করে ফেলতে পারে, তাহলে এইডস্, ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধির হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব । …(এই আলোচনার শেষ অংশ পরের দিন) [ক্রমশঃ]