বাল্যকাল থেকেই শিব আমার ইষ্ট। ছােটবেলায় দ্বিতীয় ভাগ পড়ার সময় তপােবনের একটি ছবি দেখেছিলাম – সুন্দর ঋষির আশ্রম – প্রস্ফুটিত চারিদিকে ফুলের বাগান, দূরে স্রোতস্বিনী সতত প্রবাহিত, গােবৎস সহ নধর গাভীটি একপাশে বাঁধা। এসব মনােহারী দৃশ্য ছাড়াও একটি অদ্ভুত দৃশ্য আমার মনকে তীব্রভাবে নাড়া দিয়েছিল, সেটি ছিল একটি জলপাত্রে বাঘ আর হরিণ একসাথে জলপান করছে। কল্পনায় ভাবতাম—আমি যখন বড় হবাে ঐরকম ঋষির আশ্রমে যাবাে–যেখানে সাক্ষাৎ মূর্ত প্রেম বিরাজিত, যেখানে হিংসার সঙ্গে কোমলতার হবে সহাবস্থান। আর একটা জিনিস ছােটবেলা থেকেই আমার মনে দৃঢ়বদ্ধ হয়ে বসেছিল যে, হিমালয়ে শিব থাকে, ওখানে গেলেই শিব-দর্শন হয়। সুতরাং বড় হলে হিমালয় যাবার একান্ত বাসনাও ছােট থেকেই আমার ছিল।
এরপর আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি, মনে ভাবলাম যৌবনের কালি মনে লাগার আগেই গৃহত্যাগ করে সাধু-সন্ন্যাসী হবার এটাই প্রকৃষ্ট সময়। ভাবাও যা, করাও তা। সােজা বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সংঘে যােগদান করলাম। ওখান থেকে সন্ন্যাসী হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘের শাখায় কাজ করেছি – শুধু কাজ আর কাজ। কিন্তু একদিনের জন্যও ভুলিনি আমার শিব-দর্শনের আকাঙক্ষার কথা।
যৌবনের উচ্ছলতায়—কাজের জোয়ারে, সেবাকর্মের তাগিদে প্রায় ৩০ বৎসর কাল রয়ে গেলাম সংঘে। ষাটোর্ধ্ব বয়স পৌঁছে গেছে—জীবনকাল সীমিত, ভাবনা এল মনে, ‘তাইতাে ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ন্যায় কোনো মহাপুরুষের সাক্ষাৎ এবং সঙ্গলাভ যদি জীবনে না হয় তাহলে তাে বৃথা তপস্যা, বৃথাই জীবনধারণ !’ তখন আর কালবিলম্ব না করে সব ছেড়ে-ছুড়ে দিয়ে চলে গেলাম হিমালয়ে, উত্তরকাশীর কৈলাস-আশ্রমে গিয়ে উঠলাম ! ভাবলাম বাকী জীবনটা মৌনব্রত অবলম্বন করে শিব-দর্শনের আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কাটিয়ে দেবাে, নাহলে এই শরীরটা হিমালয়ের কোলেই না-হয় অন্তিম শয়ানে শােবে।
মৌনব্রত অবলম্বন করে কৃচ্ছ্ব্রসাধন করতে করতে কেটে গেল কয়েকটা বছর। হঠাৎ একদিন প্রশান্ত নামে একটি বাঙালী ছেলে এল ওখানে, সে কোন একটা আশ্রমে জায়গা পেতে চায়
বা সাধন-ভজন করতে চায়, আমি এখানে ক্ষুদ্রাবাসে ওর থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম। কিছুদিন পর দেখা করতে গেছি ওর সাথে, দেখি ও একজন মাদ্রাজী যুবকের সাথে বাংলায় “রবীন” নামের একটি যুবকের সম্বন্ধে কথােপকথন করছে, সে সব শুনে আমার বহুকালের আকাঙ্খিত, সুপ্ত সৎ-বাসনা যেন জেগে উঠল, মন বলল “আর ভয় কি, এইতাে পেয়ে গেছি”। কথা শেষ হবার পর জানলাম, মাদ্রাজী যুবকটির নাম দেবেন্দ্রনাথ। ওর সাথে প্রশান্তর পূর্ব পরিচয় ছিল এবং দেবেন্দ্রনাথ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়
বিশেষতঃ বর্ধমানে খুব ঘুরেছিল “রামকৃষ্ণদেব” জন্মেছেন কিনা তার খোঁজ নিতে । সম্ভবতঃ ওদের এইরকম একটা দল ছিল যারা বিশ্বাস করত ঠাকুরের দেহত্যাগের ১০০ বছরের মধ্যে তিনি নতুন শরীরে বর্ধমানে আসবেন । খুঁজতে খুঁজতেই “রবীন” নামে যুবকটির সাথে ওদের পরিচয় হয় এবং তাঁর সঙ্গ করে অভিভূত হয়ে পড়ে আর তাদের রামকৃষ্ণ খোঁজার বাসনাও মিটে যায়।
এসব শুনে আমি প্রশান্তকে বললাম “যাও তুমি দেখে এসো – কি ব্যাপার ! তারপর চিঠি দিয়ে আমাকে সব জানালে, আমিও চলে যাবাে ।” প্রশান্ত চলে গেল। আমি একা একা বেদান্তচৰ্চা করি আর প্রতীক্ষায় থাকি কবে প্রশান্তর চিঠি আসবে !
একদিন-দুইদিন করতে করতে তিনমাস পর প্রশান্তর চিঠি এল, তখন আমার ধৈর্যের বাঁধ প্রায় ভাঙ্গতে বসেছে। তাড়াতাড়ি চিঠি খুলে দেখি প্রশান্ত লিখেছে, “মহারাজ, গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের যে বর্ণনা রয়েছে তার সাক্ষাৎ মূৰ্ত্তি দেখছি এখানে”। এটা পড়েই আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলাম, তাহলে আমার এতদিনের সাধনা, আন্তরিক প্রার্থনা পূর্ণ হতে চলেছে। চিঠির পরের অংশটি পড়ে আমার চোখের জল আর বাধা মানল না, লেখা-ছিল উনি সন্ন্যাস নেবার জন্য ঋষিকেশ যাচ্ছেন, আপনি ওখানেই তাঁর সাক্ষাৎ পাবেন।
চিঠিটা পড়ে প্রচণ্ড আনন্দ হবার সাথে-সাথেই একটা বদ্-বুদ্ধি মাথায় চাপল, ভাবলাম ভগবানকে পরীক্ষা করতেই বা দোষ কি ! আমি কেন যাবাে, আমার সারাজীবনের প্রার্থনা যদি উনি শুনেই থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই উনি এখানে আসবেন ।
সত্যি-সত্যিই গুরুজী উত্তরকাশীর কৈলাস আশ্রমে এসে হাজির হয়েছেন আর সৌভাগ্যক্রমে ঠিক সেই সময়ই আমি আশ্রমের শিবমন্দিরে প্রণাম করার জন্য হাজির হয়েছি। উনি মন্দির থেকে বেরিয়ে রেলিং-এর ধারে দাড়িয়ে দূরে হরি-পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। উঁচু মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে আমি উঠে এলাম । কাছ থেকে ভালাে করে দেখে আমি বুঝতে পারলাম ইনিই আমার সেই আরাধ্য ইষ্ট –”গুরুমহারাজ”। মাথায় হনুমান টুপি, কালােকোট ও সাদা কাপড়ের আড়ালে অনেকটা ঢাকা দিলেও, আমার সৌভাগ্য যে, আমি ওনাকে ঠিক চিনেছিলাম । ওনার নাম লিখতে চেয়ে কলম বের করলাম কিন্তু লেখা ফুটল না (তখন মৌন থাকায় সবসময় পেন কাগজ থাকত)। ওনার কাছ থেকেই ইসারায় পেন চাইলাম—উনি বললেন নেই। দৌড়ে মন্দিরে ঢুকে দেখি একজন সাধু বসে, তার কাছ থেকে পেন নিয়ে তাকেই লিখে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি কি পরমানন্দ” ? উনি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপনি কি করে জানলেন ? কিন্তু সে উত্তর দেবার আমার তখন আর প্রয়ােজন নেই কারণ আমি তখন নিশ্চিত হয়ে গেছি যে, উনিই সেই প্রশান্ত-দেবেন্দ্রের কাছে শােনা রবীনরূপী আমাদের গুরুমহারাজ ।
তবুও লিখে ওনার নামটা দেখাতে উনিও একটু অবাক হবার ভান করলেন, তারপর সব শুনে আনন্দ করে আমাকে ঘরের ভিতর দিকে নিয়ে গিয়ে বসালেন এবং নির্বিকল্প সমাধি সম্পর্কে আলােচনা করতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন যে, “আপনি মৌন তাই কথার আদান-প্রদানে একটু অসুবিধা হচ্ছে”। আমি লিখলাম —আপনাকে পাবার জন্যই তাে মৌনতা, এবার তাহলে ভেঙ্গে দিই। উনি বললেন, “না এখনও সময় আসেনি, তখন ভাঙ্গবেন যখন সময় হবে” । ঐ সময় আমি ওনার চরণ স্পর্শ করতে যাওয়ায় উনি আমার প্রণাম নেননি।
প্রাথমিকভাবে মনটা খারাপ হলেও পরে বুঝেছিলাম যে যেহেতু আমি সন্ন্যাসী আর উনি তখনও গেরুয়া নেননি তাই সন্ন্যাসীর মর্যাদা রক্ষার জন্যই তিনি এই কাজ করেছিলেন। কারণ পরে অর্থাৎ উনার সন্ন্যাস নেয়ার পর থেকে যখনই আমি প্রণাম করতাম, উনি প্রণাম নিতেন। প্রশান্ত ওখান থেকে যাবার সময় ৩০ টাকা একজন সাধুর কাছ থেকে ধার নিয়েছিল সেটা সে পরে পাঠিয়েও দিয়েছে কিন্তু গুরুজী অামাকে ৩০ টাকা দিয়ে ঐ সাধুটিকে দিতে বললেন, তারপর বললেন, “কালকেই ঋষিকেশ যাচ্ছি, ওখানে ১ মাস থাকতে হবে,” মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল—আরাধ্যকে হাতের কাছে পেয়েও আবার ছাড়তে হবে, ভাবতে ভাবতেই কৈলাস আশ্রমের বেদান্তশিক্ষার আসরে গেলাম। দেখি ওখানে Handbill বিলি হচ্ছে –ঋষিকেশ আশ্রমে ১ মাসের বেদান্ত শিক্ষার জন্য যারা যেতে চান তাদের থাকা-খাওয়া ফ্রী। বুঝলাম গুরুজী কেন আমাকে ৩০ টাকা জোর করে দিলেন কারণ তিনি ভালভাবেই জানতেন সাধুটি টাকা পেয়ে গেছে, বাড়তি টাকা দিতে গেলেই বা সে নেবে কেন ? ওটা আমার ঋষিকেশ যাবার ভাড়া !
ঋষিকেশ পৌঁছেই আমি গুরুজীর খবর নিলাম কিন্তু হতাশ হলাম শুনে যে, তিনি আশ্রম থেকে ২ মাইল দূরে গ্রামে থাকছেন। ভাবলাম সেকি ! আমি থােড়াই বেদান্ত-পাঠ নিতে এসেছি, আমি তো সাক্ষাৎ বেদান্ত-স্বরূপকে দেখার জন্য এসেছি, অথচ দর্শন হবে না । ওখানকার মন্দিরের শিব খুব জাগ্রত, চন্দ্রভাগা নদীতে ডুবানাে শিব নিজে দর্শন দিয়ে ওখানে বর্তমানে অধিষ্ঠিত। আমি শিবের কাছে প্রার্থনা করলাম –“হে শিব, হে আমার জীবনারাধ্য, আমার মনের মানুষকে তুমি যখন মিলিয়েই দিয়েছ, তখন তাঁকে আর কেন দূরে রাখছ প্রভু ! আমার কাছে এনে দাও, তাঁর সঙ্গলাভ করে জীবন ধন্য করি”।
একান্ত প্রার্থনায় কাজ হোল। পরদিন ভােরবেলায় দেখি উনি এসে গেছেন এবং ঐ আশ্রমেই থাকার জায়গাও করে নিয়েছেন। ফলে একমাস নিত্যই ভােরে ওনার সঙ্গলাভ করতে লাগলাম । ওনার শ্রীমুখের বাণী শ্রবণ করতে করতে মনে হত স্বয়ং শিবই যেন প্রবচন করছেন। এরপর ওনার সন্ন্যাস নেবার দিন এল । স্বামী বিদ্যানন্দ গিরি মহারাজ ওনার সংস্কার করলেন। গেরুয়া কাপড়টি আমি রঙ দিয়ে ওনাকে দিয়ে এলাম, সংস্কারের কাজ প্রায় ভাের থেকে সন্ধ্যা অব্দি চলল ফলে আমি ডেরায় ফিরতে বাধ্য হলাম। পরদিন সকালে গিয়ে দেখা করতেই উনি বললেন- “১০০ বছর পর বিশেষযােগে সূর্যগ্রহণ হচ্ছে এই উপলক্ষে কুরুক্ষেত্র যেতে হবে”। বেদান্ত শিক্ষার ক্লাস শেষ, ফলে আমাকেও উত্তরকাশী ফিরতে হবে ; উনিও চলে যাবেন, বিদায়ের মুহূর্তে বেননাবিধুর কণ্ঠে বললাম –“কৈলাসের শিবই যদি সমভূমিতে যাবেন (বনগ্রামে কাজ হবে সেকথা আগেই বলেছিলেন) তাহলে আমিই বা কেন এখানে থাকব, আমাকেও সঙ্গে নিন”। উনি বললেন, “বনগ্রামে এখনও থাকার ব্যবস্থা হয়নি, একবছর পরে যাবেন”।
ওনাকে বিদায় দিয়ে উত্তরকাশীতে ফিরলাম, এক বছরের প্রতীক্ষার অবসানও হ’ল উনি চিঠিতে আমাকে যেতে লিখলেন । চিঠির উত্তর যখন আমি দিলাম তার উত্তরে প্রশান্ত লিখল যে, “আপনাকে চিঠি লিখলেও অমরনাথ চলে গেছেন”। আবার মন খারাপ হ’ল আরও প্রতীক্ষা না কি পরীক্ষা ? এইভাবে দিন যায়–রাত যায়, মন খারাপ, শরীর খারাপ ৷ –একদিন দুপুরে শুয়ে শুয়ে বেদান্ত-বিচার করছি, হঠাৎ পর্দাটা একটু ফাঁক হয়ে গেল—দেখি গুরুজী ঢুকছেন। আমি এতটাই বিস্মিত, আল্লাদিত, বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম আবেগের আতিশয্যে, আমি কিছুক্ষণের জন্য সংজ্ঞা হারিয়েছিলাম । সম্বিৎ ফিরতেই আমি স-সন্মানে গুরুজীকে হরিণচর্ম পেতে বসালাম, বসেই উনি নানান আধ্যাত্মিক আলােচনা করতে শুরু করলেন। তারপর উঠে বাজারে যেতে চাইলেন, আমিও সঙ্গে গেলাম। বাজার থেকে ফুলের মালা কেনা হল। ওখান থেকে উনি লক্ষেশ্বরে গিয়ে পরম গুরুজী মহারাজ রামানন্দ অবধূতের সাথে দেখা করলেন। ওনাকে আমরা সবাই মালা পরালাম, কিছু সৎসঙ্গ হল, তারপর আবার সকলে চলে এলাম।
ৎফেরার পথে উনি আমাকে নির্দেশ দিলেন “মহারাজ ! আপনি তৃপ্তিমা ( তৃপ্তিমা ওনার সাথেই ছিলেন )-কে সঙ্গে নিয়ে বনগ্রামে চলে যান” । বনগ্রামে এসে দেখি গুরুমহারাজের কুঠিয়া ও পাশে একটি মাটির প্রার্থনা ঘর ছাড়া তখন আর বিশেষ কিছুই নেই, চারিদিকে জঙ্গল। ফলে গ্রামে ন’কাকাদের কালীবাড়ির টিনের ঘরটায় প্রশান্তদের সঙ্গেই থাকার ব্যবস্থা হল। একদিন আশ্রমের জঙ্গল পরিষ্কার করছি, গুরুমহারাজ তখন ফিরেছেন, উনি বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ বলে উঠলেন, “মহারাজ সরে আসুন, বড় বড় সাপ রয়েছে। ওখানে”। পরে জানলাম সত্যিই সাপ ছিল ।
বটতলায় যে গুহাটি করা হয়েছে ওটারও ইতিহাস আছে। ধ্যান করার জায়গার কথা জিজ্ঞাসা করায় উনি আশ্রমের বাইরে মাঠের মধ্যে যে বটগাছটি আছে ওটির তলায় করতে বললেন। সেখানেই ধ্যানে বসতাম, কিন্তু প্রতিদিনই নানা ভৌতিক উৎপাত হত, যদিও বৈদিক শান্তিপাঠ করলে সে সব কেটে যেতাে, কিন্তু ডিসটার্ব হত । গুরুজীকে বললাম এসব কথা, উনি আশ্রমের ভিতরের বটতলার বসতে বললেন। গাছটি তখন এমনই ছিল যে, গােড়ায় একটি প্রকৃতিগতভাবে গুহা হয়ে ছিল। ওটাকেই মাটি দিয়ে ঠিক-ঠাক করে নিলাম, উপরে একটা ছাউনিও বানালাম, আসন পাতা হল । ভাবছি গুরুমহারাজ যদি উদ্বোধন করে দেন, তাহলেই আমি ওখানেই ধ্যান-জপ করব বা ঐখানেই থাকবাে। একদিন রাত্রিবেলায় বটতলায় দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়েই বিভিন্ন ব্রহ্মচারী ভক্তদের সাথে উনি আধ্যাত্মিক আলােচনা করছিলেন, হঠাৎ শুরু হল ঝড়। গুরুজী সবাইকে নিয়ে আমার গুহায় ঢুকে আসনে বসে পড়লেন এবং আলােচনা চালাতে লাগলেন, আমার মনােবাঞ্ছাও পূর্ণ হোল ।
গুরুজী ফুল খুব ভালবাসতেন, ফলে ওনার কুঠিয়ার সামনে ফুলবাগান তৈরী করতে শুরু করলাম। স্বর্ণচাপা ফুল উনি খুব ভালবাসতেন। সেই সব ফুলগাছ তৈরী হলে যখন দু-চারটি ফুল ওনাকে দেখাতাম উনি খুবই আনন্দ পেতেন। আশ্রম-বাগানের ফুল অন্য কেউ তুললে গুরুমহারাজ বলতেন “ফুলগুলি তপেশ্বরানন্দ মহারাজ আগেই নিবেদন করে রেখেছেন, তােমরা তুলাে না”।
আজ মনে পড়ছে ওনার সাথে দক্ষিণভারতে যাবার সময় ট্রেনে এত ভিড়, অথচ আমার শরীর ক্লান্ত – সদাজাগ্রত, সদা-অক্লান্ত গুরুদেব আমাকে নিজের কোলে শুইয়ে ঘুম পাড়ালেন । মনে পড়ে লাঠিখেলার কথা, গভীর রাত্রে উনি আমাকে মাঝে মাঝে ডেকে নিয়ে যেতেন মাঠে। দুজনার মধ্যে ফ্রী ফাইট প্র্যাকটিস্ হোত ।
বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন গুরুমহারাজের, কতশত ভক্তের সাথে তাঁর যে কতরকম লীলা তা একমাত্র তিনি নিজেই জানতেন, সাধারণ মানুষ কি করে তাঁর মহিমা বুঝতে সক্ষম হবে ! তবে তাঁর কৃপা হলে বা অহৈতুকী করুণায় সবই সম্ভব ।৷
*ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ*