প্রিয় আত্মন্—ধর্মের প্রাণ হল অনুভূতি। অনুভূতিবিহীন ধর্ম অসার— শুধুমাত্র কথার কথা। ধর্মই হল জীবনের পরিপূর্ণতা লাভের কলা—যা পরম সত্যের বোধ এবং পরম আনন্দের সাক্ষাৎকার ঘটায়। এই পরম সত্যের অনুভূতি লাভের জন্য মানবকে সত্যাশ্রয়ী এবং নিষ্কপট হতে হবে, নতুবা ধর্মের অনুভূতি লাভ বড়ই দুরূহ।
ধর্মের শিক্ষা মানবকে বিনয়ী করে। ধর্মের জ্ঞান মানবকে মহান করে। মানবের এই জ্ঞানকে জীবনে যোজনা করতে হবে। এই জানা যদি জীবনে যুক্ত না হয়, তাহলে সমস্তই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু যদি এটা জীবনে যোজনা বা অনুশীলন করা যায়, তাহলেই এর সার্থকতা। যে কোন অনুভূতি যোজনা বা অনুশীলন সাপেক্ষ অর্থাৎ সব কিছুই যোজনা বা অনুশীলনের অপেক্ষা রাখে। সেইহেতু এই জানাকে জীবনে যোজনা করাই মানবজীবনের সাধনা। সত্যাশ্রয়ী, নিষ্কপট, সহজ মানবই একমাত্র জানাকে জীবনে যোজনা করতে পারেন। আর যিনি যোজনা করতে পারেন, তিনিই কেবল এই পরমবোধ প্রাপ্ত হতে পারেন।
প্রিয় আত্মন্—উপরোক্ত আলোচনায় আমরা নিশ্চিত হলাম যে, অনুভূতিই ধর্মের প্রাণ—অনুভূতিবিহীন ধর্ম নিষ্ফল।
মুসলমান হলে যদি খোদার অনুভূতি হয়, খ্রীষ্টান হলে যদি গড(God)-এর অনুভূতি হয়, হিন্দু হলে যদি পরমেশ্বরের অনুভূতি হয় কিংবা বৌদ্ধ হলে যদি পরম নির্বাণ লাভ হয়, তাহলে আমি তা-ই হতে রাজি। আমি তো ঐ পরম সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরের অনুভূতির কাঙ্গাল। বাদ বা মতবাদ নিয়ে আমার বিরোধ করার অবকাশ কোথায়। আমি বাদ-বিতণ্ডার কবলে পড়তে চাই না, আমি চাই সেই পরমতত্ত্বের বোধ। যেখানে সমস্ত বাদের পরিসমাপ্তি হয়, যেখানে পরম বোধের উদয় হয়- আমি সেখানে যেতে চাই। তাই আমি করজোড়ে প্রার্থনা করি—“হে পরমেশ্বর । আমাকে তুমি এমন স্হানে নিয়ে চল—যেখানে সাম্প্রদায়িক চেতনা, গোষ্ঠীচেতনা এবং মতবাদ নিয়ে কোন বিরোধ নেই এবং বাদ-বিবাদ ও স্বার্থবুদ্ধির কোন স্হান নেই। হে পরমেশ্বর, সেখানে শুধু তোমার পরম বোধ বিদ্যমান এবং সেখানে শুধু তুমিই বিরাজমান’।
প্রিয় আত্মন্—বাদ সমস্ত বিবাদের মূলে। জগতে যত রকমের দুর্ঘটনা, বিবাদ ও সংঘর্ষ—তাদের মূলে ঐ বাদ। কোন বাদকে ভিত্তি করে হয় রাষ্ট্রবিপ্লব, আবার আসে নতুন বাদ। বাদের বিরুদ্ধে হয় সংঘর্ষ — বিনষ্ট হয় বাদ, আবার নতুন কোন বাদের অভ্যুদয় ঘটে। এইভাবে বাদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ সংঘটিত হয়, কারণ মানব হীন স্বার্থবুদ্ধিতে বাদগ্রস্ত বা আচ্ছন্ন। যতদিন না মানব স্বার্থবুদ্ধি ত্যাগ করে সহজ হচ্ছে, ততদিন মানবের বাদগ্রস্ততার পরিসমাপ্তি হবে না। এইজন্য মানবকে সর্বপ্রথম সহজ হতে হবে এবং সমস্ত বাদের ঊর্ধ্বে পরম বোধে উপনীত হতে হবে।
প্রত্যেকটি মানবের মধ্যে রয়েছে সমুন্নত হবার ও দেবত্ব লাভের সম্ভাবনা।সুতরাং কোন মানবই হেয় বা অবজ্ঞার পাত্র নয়। মানব কখনই হীন বা তুচ্ছ নয়। মানবকে হীন বা তুচ্ছ বলে উপেক্ষা করা মোটেই সমীচীন নয়। মানব মহান, পরমাত্মার প্রকাশ।
মানব মহাপুরুষদের অনুসরণ করে মহাপুরুষদের সমকক্ষ হোক, মানবের ক্রমোন্নতির ধারা বলিষ্ঠ হোক, মানবের আত্মভাব প্রতিষ্ঠা হোক—এটাই আমার একান্ত ইচ্ছা ৷
মানবজাতির অনগ্রসরতার মূলে ধর্মবোধের অভাব। মানব ঋষি- মহর্ষি প্রবর্তিত পথ ভুলে বেদ-বেদান্ত উপনিষদ ছেড়ে কতকগুলি নেতিবাচক, সংকীর্ণমনা সাম্প্রদায়িক নেতাকে অনুসরণ করছে, আর ধর্মের নামে অসংহতি, সংকীর্ণতা ও অসাম্যের বীজ বপন করছে। বিকৃত দেশাচার ও সাম্প্রদায়িক বিকারগ্রস্ত ক্ষমতাপিপাসু কিছু লোক ঘৃণা ও হিংসার কালো মেঘ সৃষ্টি করে। মানবজাতির ক্রমোন্নতির ধারা ও প্রগতির পথকে রুদ্ধ করছে। ধর্মের নাম দিয়ে মানবকে দানবে পরিণত করছে। তাই মানব আজও হয়ে উঠল না মাধব। তারা ধর্মের মাষ্টারমশাই সেজে সামোর পরিবর্তে ভেদাভেদ ও সংকীর্ণতা, প্রেমের পরিবর্তে ঘৃণা ও অবহেলা, মৈত্রীর পরিবর্তে হিংসা-দ্বেষ ও বঞ্চনা, শান্তির পরিবর্তে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে ডেকে আনছে। এর ফলে মানবগণ ধর্মের প্রকৃত পথ ও ভাব হতে দূরে সরে গিয়ে ভণ্ডামিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। সমগ্র মানবসমাজ এক অবক্ষয়মুখী অবস্হার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
প্রিয় আত্মন্, মানব বিবেককে সুপ্ত রেখে বিকৃত আচারে বা ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত। প্রশ্ন হতে পারে ভ্রষ্টাচার কী ? বিচার বিহীন আচারই হল স্রষ্টাচার বিবেকপূর্ণ বিচারই যথার্থ বিচার। সাধারণ মানুষ ধর্মের নামে প্রলাপ বচন। শুনে ও ভণ্ডামি দেখে ধর্মের প্রতি একটা অনীহা বা অশ্রদ্ধার ভাব পোষণ করছে। সাধারণ মানুষের ধর্মের প্রতি অবহেলার এটাই একমাত্র কারণ।
প্রিয় আত্মন্, অসুস্থ বা অসহজ মস্তিষ্কে ধর্মচিন্তা করা যায় না। সুস্হ বা সহজ মস্তিষ্কেই ধর্মচিন্তা সম্ভব। অন্যথায় ধর্মচিন্তায় বিশৃঙ্খলা উপস্হিত হয়। ধর্মকে বাদ দিয়ে মানবজাতির কল্যাণ করতে যাওয়া যেন একটি মেরুদণ্ডহীন। সরীসৃপকে দাঁড় করাবার চেষ্টা। অসহজ ব্যক্তিরা মানবজাতির কল্যাণ করতে গিয়ে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই ঘটাচ্ছে। তারা মানবসমাজের কিঞ্চিৎ ভালো করতে গিয়ে অধিক পরিমাণে ক্ষতিই করছে।
ধর্মের স্বরূপ সত্য। বিশ্বের সমূহ অস্তিত্ব যার উপর অবস্থান করছে—অণু-পরমাণু, উদ্ভিদ, কীট, পতঙ্গ, পক্ষী, পশু, মানব ও চরাচর বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডকে যা ধারণ করে আছে এবং পরিপূরণ, পরিপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে তাই ধর্ম। আর এই ধর্মবোধ বা পরম সত্যের বোধই হল জীবনের উদ্দেশ্য। অণু-পরমাণু হতে সমস্ত বিশ্বে যেখানে যা কিছু আছে, সমস্তই ধর্মে আশ্রিত বা ধর্মে অবস্থান করছে। সুতরাং কেউ ধর্মচ্যুত নয়। কিন্তু সমস্ত চরাচরে সকলের ধর্মবোধ হয় না। একমাত্র মানবজীবনেই এই বিশ্বরহস্য উদঘাটিত হয় এবং পরম তত্ত্বের বোধ হয়। সেইজন্য মানব শ্রেষ্ঠ ও মহান। একমাত্র মানবেরই ধর্মবোধ হয় আর মানবই আত্মার রহস্য বুঝতে পারে। সম্প্রদায়গুলি ধর্মের আশ্রিত মতবিশেষ। এটা বহু হতে পারে, কিন্তু বিরোধ কিছু নেই। পরম সত্যের বোধ হলে আর কেউ মতবাদ নিয়ে দ্বন্দ্ব করে না। যেখানে ধর্মবোধের অভাব, সেখানেই বিরোধ থাকতে পারে। ধর্ম একই—কখনই বহু নয়। কিন্তু সম্প্রদায় বা মতবাদ বহু। মানব আপন সহজাত ভাব ও সংস্কার অনুযায়ী স্বভাবের অনুকূল যে কোন একটি ধর্মমত গ্রহণ করতে পারে। সেই মতকে আশ্রয় করেই মানবকে তার মনের বিস্তার ও চিত্তের প্রসার ঘটিয়ে পরিপূর্ণতার পথে অগ্রসর হতে হবে। আর মতের এটাই উদ্দেশ্য। সমস্ত মতবাদের ঊর্ধ্বে রয়েছে পরমতত্ত্ব। যে কোন ধর্মমতকে আশ্রয় করে সেই পরমতত্ত্বে উপনীত হওয়াই মানবজীবনের উদ্দেশ্য। তখনই সেই পরম তত্ত্বের বোধে বোধ হয়। আর পরম তত্ত্বের বোধে বোধ হলেই জীবনে চরম ও পরম সার্থকতা আসে এবং জীবন মহাজীবনে পরিণত হয়। তখন সামা, প্রেম, মৈত্রী ও শান্তির একবিশ্বউদার ভাব ফুটে ওঠে। সেই ভাব জগতকেও প্রভাবিত করে। তার অমৃত স্পর্শে মানবসমাজের মধ্যে দিব্য অনুভূতির ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। মানবজাতি সেই মহান ভাবকে অনুসরণ করতে থাকে। সত্য হতে উৎসারিত আলোকে মানবজাতির জীবন আলোকময় হয়ে ওঠে। পশুমানব রূপান্তরিত হতে থাকে দেবমানবে। জগতে আসে এক বিরাট যুগান্তর।
প্রিয় আত্মন্—তোমার সাধনার পথে যাকে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে হচ্ছে, তুমি সেই বাধাকে যত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে, ততই ব্যর্থতায় ভুগবে। কারণ তুমি যে বিষয় হতে নিজেকে যতই সরাবার চেষ্টা করবে, সেই বিষয়ে তোমার চেতনা ততই নিমগ্ন হবে, কারণ বাধাগুলি যে তোমার ভিতরে। যতক্ষণ পর্যন্ত না এদের সঙ্গে তোমার বুঝাপড়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ বাধাগুলি অপসারিত হবে না। কিন্তু বাধার সাথে বুঝাপড়া করে নাও- দেখবে তোমার বাধাগুলি সহায়তা করছে। যাকে তুমি শত্রু ভাবছিলে, সেই তোমার পরম মিত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। তোমরা জীবনবিরোধী কিছু করো না । জীবনের ছন্দময়তায় জীবনমুখী হও। জীবন অতি মূল্যবান, একে নষ্ট করোনা। এই জীবন মহাজীবনের দ্বারস্বরূপ। জীবনের মধ্য দিয়েই পরম সত্যের বোধ হয়। জীবনকে বাদ দিয়ে যা কখনই সম্ভব হয় না।
প্রিয় আত্মন্—তোমরা তোমাদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে দমন করো না এবং বৃথা ইন্দ্রিয় ভোগ-লালসায় লিপ্ত হয়ো না। প্রথমটিতে বিকৃতি আর দ্বিতীয়টিতে ব্যর্থতা সূচিত করে। তোমাদের অন্তর্নিহিত মহাশক্তির জাগরণ কর, সংযোজন কর পরমতত্ত্বে—জীবনকে করো রূপান্তর। তোমাদের ভিতরে রয়েছে মহাশক্তির কেন্দ্র। পরম সত্যকে বোধে বোধ কর। বিচার বাদ দিয়ে আচার প্রবণতা বা আবেগের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে কিংবা বিবেক-বোধকে পদদলিত করে প্রকৃত সত্যের কণ্ঠরোধ করা সদাচার বা ধর্মাচার নয়, তা অজ্ঞানতা বা পাশবিকতা এবং অসহজ ও জীবনবিরোধী। মানবজাতিকে কাটিয়ে উঠতে হবে এই ভাবগুলি, তাহলেই মানবজাতির প্রগতির পথ প্রশস্ত হবে। প্রেমের ও ভালবাসার শিক্ষা কোনদিন মানবকে অবক্ষয়মুখী বিপদের দিকে নিয়ে যায় না, তা মানবকে উন্নত করে—মহান করে। ত্যাগভূমিই হল প্রেমের অধিষ্ঠান আর ভোগভূমিই কামনা- বাসনার অধিষ্ঠান। বহুর হিতে, বহুর সুখে নিজ স্বার্থসুখকে বিসর্জন দেওয়াই প্রেমের লক্ষণ। নিজের সুখের জন্য তৎপরতাই কাম, সকলকে সুখী করবার প্রচেষ্টাই ভালবাসা । ভালবাসাহীন জীবন যেন শুষ্ক মরুভূমি। নিষ্ঠুর, নির্মম মানব পশুসদৃশ । লোভী ও আত্মসুখ-পরায়ণ মানব যেন সাক্ষাৎ পিশাচ আর বিবেকবর্জিত অসহজ মানব যেন বিকৃত দানব। ভালবাসাহীন জীবন শুধু ঘৃণা, বিদ্বেষ আর ঈর্ষায় পূর্ণ। ভালবাসার গভীরতায় দিব্য প্রেমের উন্মেষ হয়, জীবনে নেমে আসে পরম শান্তি ও আনন্দের হিল্লোল। প্রেমের অপূর্ণতায় কামের প্রবণতা আর প্রেমের আবির্ভাবে কামের অবলুপ্তি। সুতরাং প্রেমেতেই পরম শান্তি ও পরম আনন্দ আর কামেতেই দুশ্চিন্তা, দুঃখ, ঈর্ষা, ঘৃণা, দ্বেষ, অভিমান, অলসতা এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
প্রিয় আত্মন্, সমস্ত জীবজগতের মধ্যে মানব হল সর্বাপেক্ষা হৃদয়বান। তাই মানব ধার্মিক ও প্রেমিক, সদয় ও সহানুভূতিশীল। যার হৃদয় বিকশিত হয়ে সীমার গণ্ডীকে অতিক্রম করে সম্প্রসারণমুখী হয়েছে—তিনিই তো সাক্ষাৎ জীবন। সংকীর্ণচিত্ত ও হৃদয়হীন মানব মৃতবৎ। সংকুচিত হৃদয়সম্পন্ন মানব-অন্তঃকরণে ভগবৎ প্রেমের আবির্ভাব হয় না। সেই অন্তঃকরণ অনুভূতিবিহীন হয়ে থাকে। কাম, হিংসা, ঘৃণা, ক্রোধ, অহংকার, কপটতা ও অসহজতা যেন সাক্ষাৎ জীবন্ত দানব। তোমরা অন্যদের নিকট হতে যেরূপ ব্যবহার আশা কর, তোমাদের নিজেদেরও অন্যের প্রতি সেরূপ ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই তোমরা তোমাদের প্রার্থিত ব্যবহার পেতে পার, নতুবা নয়। তোমরা ঘৃণার দ্বারা কখনই ঘৃণাকে দূর করতে পারবে না, কেবলমাত্র ভালবাসার দ্বারা তা সম্ভব। মানবের শরীরে মুখ্য কেন্দ্র দুটি, একটি মস্তিষ্ক, আর অপরটি হৃদয়। মস্তিষ্ক চিন্তাশক্তির আধার এবং হৃদয় ভাবাবেগ ও প্রেরণার উৎস। হৃদয়ে উন্নত বৃত্তিগুলির অনুসরণ না করে, অন্তর্জগতে মহৎ ভাবগুলির অনুধাবন না করে, কেবলমাত্র মস্তিষ্কচর্চা করলে বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ হয় ও মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে কিন্তু তার পরিণাম ! হৃদয়হীনতার ফলে মানবের মধ্যে জাগ্রত হয় নীচ স্বার্থপরায়ণতা, সংকীর্ণতা, নির্মম নিষ্ঠুরতা এবং হিংসা, লোভ, পরস্ব অপহরণের দুষ্প্রবৃত্তি ও চতুরতা। এরা যেন সাক্ষাৎ শয়তান ! আর শুধুমাত্র হৃদয়বৃত্তির অনুশীলন করলে মানব হয়ে পড়ে দুর্বলচিত্ত, অতি ভাবপ্রবণ এবং অন্ধবিশ্বাসী। চিত্তবিকারগ্রস্ততায় মানব সুখ, দুঃখ ও হতাশায় আবিষ্ট হয়। এইরূপে তারা নৈরাশ্যের ঘাত-প্রতিঘাতে বিহ্বল হয়ে অতিরিক্ত ভাববিলাসে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং বিবেক-বুদ্ধিহীন, ভাব-বিকারগ্রস্ত, বিকৃত মস্তিষ্কযুক্ত অসহজ মানবে পরিণত হয়। আবার মস্তিষ্ক ও হৃদয় আছে, কিন্তু দেহ শ্রমবিমুখ ও শ্রমকাতর—এটাও অপূর্ণতা। মানবের মস্তিষ্ক, হৃদয় ও শরীর এই তিনের সক্রিয়তাতেই জীবন ছন্দময় হয়ে ওঠে। সেই ছন্দের তালে তালে পরমানন্দময় পরমতত্ত্বে জীবন উপনীত হয়।
অন্তঃশৈব, বহিশাক্ত ও ব্যবহারে বৈষ্ণব। বেদান্তের মস্তিষ্ক, বৈষ্ণবের হৃদয় এবং শাক্তের শরীর। সুমেধা, সৎ ব্যবহার এবং সৎকর্ম। প্রিয় আত্মন্ ! অন্তরে সাক্ষীপরায়ণ হও, ব্যবহারে ঈশ্বরপরায়ণ হও এবং কর্মে সেবাপরায়ণ হও। এটাই মস্তিষ্ক, হৃদয় এবং শরীরের পূর্ণ অভিব্যক্তি জানবে।