স্বামী বাউলানন্দজীর ভ্রমণকালীন সময়ের ঘটনাসমূহ এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। স্বামীজী মা জগদম্বার দর্শন পাওয়ার পর পেরেন্টাপল্লীতে শিবলিঙ্গ আবিস্কার করলেন এবং তাঁর পূজা পাঠ করে মনে গভীর শান্তি পেলেন । কিন্তু সেখানে তখনও থাকার মতো কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তিনি আবার রাজমন্দ্রির দিকেই ফিরে গেলেন। সেখানে পুষ্কর ঘাটের নিকট বাবাজী মঠে তিনি বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু তিনি যেখানেই থাকুন না কেন_ মা জগদম্বার দর্শনের পর থেকে তার মধ্যে একটা অদ্ভুত ঈশ্বরোন্মাদ অবস্থা দেখা দিয়েছিল। সব সময় তিনি তাঁর দেখা মা জগদম্বার শরীরের গঠন, মুখের হাসি, উজ্জ্বল দৃষ্টি, করুণা ভরা মুখ _সবই দেখতে পেতেন এবং সদা-সর্বদা তিনি সর্বাঙ্গে রোমাঞ্চ অনুভব করতেন! এই অবস্থায় তিনি মাঝে মাঝেই সমাধিস্থ হয়ে পড়তেন।
মা জগদম্বার কৃপায় সাধকগণ এই অবস্থায় অদ্ভুত অদ্ভুত কর্ম করতে সক্ষম হন। তাঁরা নানান সিদ্ধি লাভ করেন এবং সেই সিদ্ধাই-এর বলে নানান অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তবে যাঁরা উর্ধ্ব-প্রগতির আকাঙ্ক্ষা করেন, তাঁরা এই সিদ্ধাই-এর প্রলোভনে ভোলেন না । তাঁরা এসব অগ্রাহ্য করেন। তাঁরা শুধুমাত্র মা জগদম্বা কেই ধরে থাকেন, তাঁরা জানেন যে, সমস্ত শক্তির উৎস হোলন মা জগদম্বা।।
পরিনামে এই সাধকগণ সর্বদা এক স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করেন এবং তাঁরা আনন্দে মত্ত হয়ে শুধু ✓রী মায়ের জয়গান গাইতে শুরু করেন।
জগদম্বার অনন্ত শরীর__ সূর্য, চন্দ্র, নদী, মৃত্তিকা, পর্বত এবং বিভিন্ন সৃষ্ট জীব__এই সব কিছু নিয়েই মা জগদম্বার শরীর।
যে ভক্ত জগদম্বার এই মহিমা জানতে পারে__সে চোখের সামনে যা কিছু দেখে, তার স্বরূপ সম্বন্ধে সমস্ত কিছুই বুঝতে পারে এবং তার উৎকর্ষের মূল্যায়ন করতে পারে!তিনি অনুভব করলেন সাধকের (ভক্তের) এই বোধ যত গভীর হবে __মাকে দেখার বোধও ততো গভীর হবে ! পুস্কর ঘাটে থাকার সময়, ঈশ্বরোন্মাদ অবস্থায় তিনি তখন যা উপলব্ধি করতেন, সেগুলিকে বর্ণনা করার একটা অনুপ্রেরণা তাঁর নিজের অভ্যন্তর থেকে তৈরি হচ্ছিল। ভাষা, রচনাশৈলী,ছন্দ _ সব কিছুই আপনা-আপনি আসতে লাগলো !
এটাই হোল জগদম্বার কাজ ! এসব সাধকের,বিদ্যা, শিক্ষা, ভাষাজ্ঞানের উপর নির্ভর করে না _এসব যেন একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের মতো চলে আসে।মা জগদম্বা যতক্ষণ ইচ্ছা করেন, এগুলি ততক্ষণ চলতে থাকে! তাঁর অনিচ্ছায় এই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।
জগদম্বাকে দর্শন করার পর থেকে স্বামীজীর তখন এরূপ অবস্থা হয়েছিলো যে, তাঁর জীবনের সমস্ত উপলব্ধি ইংরাজী কবিতার আকারে সারি সারি হয়ে তাঁর সামনে পর্দায় ছবির মতো ভাসতে লাগলো। এই সমস্ত কবিতার সারি গুলিকে তিনি লিপিবদ্ধ করতে লাগলেন। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তার অনুভূতির কথা, উপলব্ধির কথা_ কবিতার আকারে তিনি লিখেই যেতে থাকলেন।।(ক্রমশঃ)
~~~~~~~~~~©~~~~~~~~
*MESSAGE TO HUMANITY*
~ _Swami Baulananda_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুতরাং সাধারণতঃ যে অমানবীয় সত্তাগুলি উচ্চ চেতনা পেয়ে কাণ্ডজ্ঞানযুক্ত মানব হয়_ সেগুলির বেশ কিছুকাল ধরে বাহ্য প্রগতির মাধ্যমে সর্বদা সুখী এবং নিরাপদ হওয়ার প্রবণতা এবং আগ্রহ থাকবেই! আর এটা থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মধ্যে পর্যাপ্ত সূক্ষ্ম শক্তি উৎপাদনের পর, তাদের সূক্ষ্ম চেতনাগুলি নিপুণভাবে সক্রিয় হচ্ছে। এগুলি এবং অমানবীয় সত্তাগুলির মধ্যে পার্থক্য হল–এগুলি হল বলশালী, এদের কাণ্ডজ্ঞান আছে, সুতরাং এদের মনুষ্য শরীর আছে। কিন্তু পরবর্তীগুলির ( অমানবীয় সত্তাগুলির ) কোন কাণ্ডজ্ঞান নাই এবং তাদের মনুষ্য শরীরও নাই । মানবের এই কাণ্ডজ্ঞান হল এক উচ্চ চেতনা। মনুষ্য পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে অমানবীয় সত্তাকে ঐ কাণ্ডজ্ঞান লাভ করতে হবে। অমানবীয় সত্তায় যে উচ্চ শক্তির অণুগুলি সঞ্চিত হয়, স্বাভাবিক অবস্থায় অণুগুলির ঐ উচ্চ শক্তি সঞ্চালনের কোন পথ থাকে না। এর কোন কর্ম চেতনা থাকে না এবং এর কোন আদি কারণ থাকে না যার মাধ্যমে সে মানব সত্তা বা মানব শরীরের আকারে নিজেকে প্রকাশ করে ।
কিন্তু শক্তি কখন জড় অবস্থায় থাকতে পারে না। অমানবীয় সত্তার সুখী হওয়া এবং নিরাপদ হওয়ার তীব্র তাড়নায় এই শক্তি সার্বজনীন সূত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সক্রিয় হতে ও নিজেকে প্রকাশ করতে প্রচেষ্টা চালায়। এই প্রচেষ্টা মনুষ্য শরীর গঠনের দ্বারা উচ্চ প্রগতির কেন্দ্র সৃষ্টি করে এবং তার দ্বারা মানব শরীর ধারণ করার চেষ্টা করে।
অমানবীয় সত্তার উচ্চ চেতনা অর্থাৎ মানবীয় সত্তার কাণ্ডজ্ঞান হল মানবের অন্যতম প্রয়ােজনীয় উপাদান। অমানবীয় প্রগতির উচ্চ পর্যায় হল মানবীয় স্তরের নীচ এবং নিম্ন পর্যায় ।
অমানবীয় সত্তা এবং উচ্চ চেতনা বিহীন সত্তাগুলির মধ্যে যখন ক্ষুদ্র চেতনা থাকে তখন কিছু বৈচিত্র্য দেখা যায় এবং অন্যগুলির ক্ষুদ্র এবং উচ্চ চেতনাযুক্ত অবস্থাতেও কিছু বৈচিত্র্য থাকে। যেগুলির কেবলমাত্র ক্ষুদ্র চেতনা আছে, সেগুলি ক্ষুদ্র এবং বৃহত্তর চেতনাযুক্ত সত্তার সংস্পর্শে বৃহত্তর চেতনা পাবার উপযুক্ত হয় এবং পায়ও তাই। এই উভয় প্রকার চেতনার প্রগতি, সুখ এবং নিরাপত্তার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার কোন ক্ষমতা থাকে না।
কিন্তু ঐ সত্তাগুলি সব সময় সুখী এবং নিরাপদ হওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন থাকে। নিজেকে বাহ্য বা ঊর্ধ্ব প্রগতিতে উন্নীত করার জন্য মানবের যে উদ্বেগ থাকে এবং তা থেকে যে শক্তির অণু বিচ্ছুরিত হয় ঐ সত্তাগুলির উদ্বেগ তা আকর্ষণ করে। এর ফলে উচ্চ চেতনা বিহীন সত্তাগুলি উচ্চ চেতনা পাওয়ার উপযুক্ত হয়। এবং অমানবীয় শরীরের অবসানের পর তারা মানব শরীর ধারণ করে।
যে মানবীয় সত্তার ঊর্ধ্ব প্রগতি পাওয়ার জন্য উদ্বেগ থাকে সেইগুলির সঙ্গে ঐগুলির আকর্ষিত এবং সংগৃহীত অণুকণাগুলির সংমিশ্রণ হয়। ঐ অমানবীয় সত্তাগুলি যখন মানব শরীর ধারণ করে তখন তারা সূক্ষ্ম শক্তি ধারণ করার প্রচেষ্টায় অধিকতর শক্তিশালী হয়। যে সত্তা ঊর্ধ্ব প্রগতিলিপ্সু, মানবীয় সত্তার শক্তির অণুসংগ্রহ করেছে সেই সত্তার চেয়ে এগুলি অধিকতর শক্তিশালী।
এইভাবে মানবের জন সংখ্যা বৃদ্ধির অখণ্ডতা নিশ্চিত হয়। যখন মানুষ সম্ভবমত পশ্চাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তখন গাণিতিক সূত্রে দেখল যে একটা সময় ছিল, যখন এই বিশ্বে কেবলমাত্র একটি পুরুষ এবং একটি মাত্র নারী ছিল। এঁরাই হলেন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মানবের পিতামাতা। এমন কি নারীর পূর্বে পুরুষ মানুষ ছিল। এই সময়টা হল আরও পূর্বের । তারও অনেক আগে এই বিশ্বে পুরুষ মানুষও ছিল না। এই সময়টা হল যখন এই বিশ্বে কোন সত্তা ছিল না। একমাত্র বিশ্ব হিসেবে সর্বেসর্বা (ঈশ্বর) বিরাজ করছিলেন।
এই সত্তাগুলি স্বাভাবিক ধারায় সুখ এবং নিরাপত্তার অন্বেষণে তাদের ‘ঊর্ধ্ব প্রগতি’ সমাপ্ত করে গাছ-গাছড়া হতে আরম্ভ করে অমানবীয় সত্তা এবং কাণ্ডজ্ঞান, উপযুক্ত মনুষ্য চেতনা প্রগতির পথে সুখ এবং নিরাপত্তার জন্য যে নির্ভরশীলতা—সে সম্বন্ধে সচেতনতা প্রভৃতি যুক্ত মানবীয় সত্তা হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই মুল বিশ্ব সত্তার ( Universal Being ) সঙ্গে একীভূত হয়ে গেল। তারা বিশ্ব সত্তার ( Universal Being ) সঙ্গে এক হয়ে বিশ্বে ব্যক্তি সত্তার সঙ্গে এক হয়ে গেল। এই পর্যায়ে সার্বিকতা ছাড়া ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য রইল না। এর ফলে তারা বিশ্ব সত্তা হয়ে গেল।
ঐ সত্তাগুলি নিজেদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে তাদের উৎস বিশ্ব সত্তার সঙ্গে অভেদ হওয়ার ফলে নিজেরাই ‘বিশ্ব সত্তা’ ( Universal Being ) হয়ে গেল। বর্তমানে অবস্থানকারী ব্যক্তি সত্তার মূল বা উৎস হওয়ায় ব্যক্তি সত্তার সুখ এবং নিরাপত্তার অন্বেষণ বিশ্ব সত্তার সুখ এবং নিরাপত্তার অন্বেষণে পরিণত হল। এর ফলে যে সত্তা বিশ্ব সত্তার সঙ্গে একীভূত হয়েছে তারই অন্বেষণ হয়ে গেল । ব্যক্তি সত্তায় এই ভাবে প্রাপ্ত সুখ এবং নিরাপত্তা বিশ্ব সত্তার সুখ এবং নিরাপত্তা হল। এই হল মানুষের ঊর্ধ্ব প্রগতির কেন্দ্র। এই হল মানব সত্তার ঊর্ধ্ব প্রগতি। … [ক্রমশঃ]
মা জগদম্বার কৃপায় সাধকগণ এই অবস্থায় অদ্ভুত অদ্ভুত কর্ম করতে সক্ষম হন। তাঁরা নানান সিদ্ধি লাভ করেন এবং সেই সিদ্ধাই-এর বলে নানান অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। তবে যাঁরা উর্ধ্ব-প্রগতির আকাঙ্ক্ষা করেন, তাঁরা এই সিদ্ধাই-এর প্রলোভনে ভোলেন না । তাঁরা এসব অগ্রাহ্য করেন। তাঁরা শুধুমাত্র মা জগদম্বা কেই ধরে থাকেন, তাঁরা জানেন যে, সমস্ত শক্তির উৎস হোলন মা জগদম্বা।।
পরিনামে এই সাধকগণ সর্বদা এক স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করেন এবং তাঁরা আনন্দে মত্ত হয়ে শুধু ✓রী মায়ের জয়গান গাইতে শুরু করেন।
জগদম্বার অনন্ত শরীর__ সূর্য, চন্দ্র, নদী, মৃত্তিকা, পর্বত এবং বিভিন্ন সৃষ্ট জীব__এই সব কিছু নিয়েই মা জগদম্বার শরীর।
যে ভক্ত জগদম্বার এই মহিমা জানতে পারে__সে চোখের সামনে যা কিছু দেখে, তার স্বরূপ সম্বন্ধে সমস্ত কিছুই বুঝতে পারে এবং তার উৎকর্ষের মূল্যায়ন করতে পারে!তিনি অনুভব করলেন সাধকের (ভক্তের) এই বোধ যত গভীর হবে __মাকে দেখার বোধও ততো গভীর হবে ! পুস্কর ঘাটে থাকার সময়, ঈশ্বরোন্মাদ অবস্থায় তিনি তখন যা উপলব্ধি করতেন, সেগুলিকে বর্ণনা করার একটা অনুপ্রেরণা তাঁর নিজের অভ্যন্তর থেকে তৈরি হচ্ছিল। ভাষা, রচনাশৈলী,ছন্দ _ সব কিছুই আপনা-আপনি আসতে লাগলো !
এটাই হোল জগদম্বার কাজ ! এসব সাধকের,বিদ্যা, শিক্ষা, ভাষাজ্ঞানের উপর নির্ভর করে না _এসব যেন একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের মতো চলে আসে।মা জগদম্বা যতক্ষণ ইচ্ছা করেন, এগুলি ততক্ষণ চলতে থাকে! তাঁর অনিচ্ছায় এই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।
জগদম্বাকে দর্শন করার পর থেকে স্বামীজীর তখন এরূপ অবস্থা হয়েছিলো যে, তাঁর জীবনের সমস্ত উপলব্ধি ইংরাজী কবিতার আকারে সারি সারি হয়ে তাঁর সামনে পর্দায় ছবির মতো ভাসতে লাগলো। এই সমস্ত কবিতার সারি গুলিকে তিনি লিপিবদ্ধ করতে লাগলেন। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তার অনুভূতির কথা, উপলব্ধির কথা_ কবিতার আকারে তিনি লিখেই যেতে থাকলেন।।(ক্রমশঃ)
~~~~~~~~~~©~~~~~~~~
*MESSAGE TO HUMANITY*
~ _Swami Baulananda_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুতরাং সাধারণতঃ যে অমানবীয় সত্তাগুলি উচ্চ চেতনা পেয়ে কাণ্ডজ্ঞানযুক্ত মানব হয়_ সেগুলির বেশ কিছুকাল ধরে বাহ্য প্রগতির মাধ্যমে সর্বদা সুখী এবং নিরাপদ হওয়ার প্রবণতা এবং আগ্রহ থাকবেই! আর এটা থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মধ্যে পর্যাপ্ত সূক্ষ্ম শক্তি উৎপাদনের পর, তাদের সূক্ষ্ম চেতনাগুলি নিপুণভাবে সক্রিয় হচ্ছে। এগুলি এবং অমানবীয় সত্তাগুলির মধ্যে পার্থক্য হল–এগুলি হল বলশালী, এদের কাণ্ডজ্ঞান আছে, সুতরাং এদের মনুষ্য শরীর আছে। কিন্তু পরবর্তীগুলির ( অমানবীয় সত্তাগুলির ) কোন কাণ্ডজ্ঞান নাই এবং তাদের মনুষ্য শরীরও নাই । মানবের এই কাণ্ডজ্ঞান হল এক উচ্চ চেতনা। মনুষ্য পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে অমানবীয় সত্তাকে ঐ কাণ্ডজ্ঞান লাভ করতে হবে। অমানবীয় সত্তায় যে উচ্চ শক্তির অণুগুলি সঞ্চিত হয়, স্বাভাবিক অবস্থায় অণুগুলির ঐ উচ্চ শক্তি সঞ্চালনের কোন পথ থাকে না। এর কোন কর্ম চেতনা থাকে না এবং এর কোন আদি কারণ থাকে না যার মাধ্যমে সে মানব সত্তা বা মানব শরীরের আকারে নিজেকে প্রকাশ করে ।
কিন্তু শক্তি কখন জড় অবস্থায় থাকতে পারে না। অমানবীয় সত্তার সুখী হওয়া এবং নিরাপদ হওয়ার তীব্র তাড়নায় এই শক্তি সার্বজনীন সূত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সক্রিয় হতে ও নিজেকে প্রকাশ করতে প্রচেষ্টা চালায়। এই প্রচেষ্টা মনুষ্য শরীর গঠনের দ্বারা উচ্চ প্রগতির কেন্দ্র সৃষ্টি করে এবং তার দ্বারা মানব শরীর ধারণ করার চেষ্টা করে।
অমানবীয় সত্তার উচ্চ চেতনা অর্থাৎ মানবীয় সত্তার কাণ্ডজ্ঞান হল মানবের অন্যতম প্রয়ােজনীয় উপাদান। অমানবীয় প্রগতির উচ্চ পর্যায় হল মানবীয় স্তরের নীচ এবং নিম্ন পর্যায় ।
অমানবীয় সত্তা এবং উচ্চ চেতনা বিহীন সত্তাগুলির মধ্যে যখন ক্ষুদ্র চেতনা থাকে তখন কিছু বৈচিত্র্য দেখা যায় এবং অন্যগুলির ক্ষুদ্র এবং উচ্চ চেতনাযুক্ত অবস্থাতেও কিছু বৈচিত্র্য থাকে। যেগুলির কেবলমাত্র ক্ষুদ্র চেতনা আছে, সেগুলি ক্ষুদ্র এবং বৃহত্তর চেতনাযুক্ত সত্তার সংস্পর্শে বৃহত্তর চেতনা পাবার উপযুক্ত হয় এবং পায়ও তাই। এই উভয় প্রকার চেতনার প্রগতি, সুখ এবং নিরাপত্তার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার কোন ক্ষমতা থাকে না।
কিন্তু ঐ সত্তাগুলি সব সময় সুখী এবং নিরাপদ হওয়ার জন্য উদ্বিগ্ন থাকে। নিজেকে বাহ্য বা ঊর্ধ্ব প্রগতিতে উন্নীত করার জন্য মানবের যে উদ্বেগ থাকে এবং তা থেকে যে শক্তির অণু বিচ্ছুরিত হয় ঐ সত্তাগুলির উদ্বেগ তা আকর্ষণ করে। এর ফলে উচ্চ চেতনা বিহীন সত্তাগুলি উচ্চ চেতনা পাওয়ার উপযুক্ত হয়। এবং অমানবীয় শরীরের অবসানের পর তারা মানব শরীর ধারণ করে।
যে মানবীয় সত্তার ঊর্ধ্ব প্রগতি পাওয়ার জন্য উদ্বেগ থাকে সেইগুলির সঙ্গে ঐগুলির আকর্ষিত এবং সংগৃহীত অণুকণাগুলির সংমিশ্রণ হয়। ঐ অমানবীয় সত্তাগুলি যখন মানব শরীর ধারণ করে তখন তারা সূক্ষ্ম শক্তি ধারণ করার প্রচেষ্টায় অধিকতর শক্তিশালী হয়। যে সত্তা ঊর্ধ্ব প্রগতিলিপ্সু, মানবীয় সত্তার শক্তির অণুসংগ্রহ করেছে সেই সত্তার চেয়ে এগুলি অধিকতর শক্তিশালী।
এইভাবে মানবের জন সংখ্যা বৃদ্ধির অখণ্ডতা নিশ্চিত হয়। যখন মানুষ সম্ভবমত পশ্চাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তখন গাণিতিক সূত্রে দেখল যে একটা সময় ছিল, যখন এই বিশ্বে কেবলমাত্র একটি পুরুষ এবং একটি মাত্র নারী ছিল। এঁরাই হলেন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ মানবের পিতামাতা। এমন কি নারীর পূর্বে পুরুষ মানুষ ছিল। এই সময়টা হল আরও পূর্বের । তারও অনেক আগে এই বিশ্বে পুরুষ মানুষও ছিল না। এই সময়টা হল যখন এই বিশ্বে কোন সত্তা ছিল না। একমাত্র বিশ্ব হিসেবে সর্বেসর্বা (ঈশ্বর) বিরাজ করছিলেন।
এই সত্তাগুলি স্বাভাবিক ধারায় সুখ এবং নিরাপত্তার অন্বেষণে তাদের ‘ঊর্ধ্ব প্রগতি’ সমাপ্ত করে গাছ-গাছড়া হতে আরম্ভ করে অমানবীয় সত্তা এবং কাণ্ডজ্ঞান, উপযুক্ত মনুষ্য চেতনা প্রগতির পথে সুখ এবং নিরাপত্তার জন্য যে নির্ভরশীলতা—সে সম্বন্ধে সচেতনতা প্রভৃতি যুক্ত মানবীয় সত্তা হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই মুল বিশ্ব সত্তার ( Universal Being ) সঙ্গে একীভূত হয়ে গেল। তারা বিশ্ব সত্তার ( Universal Being ) সঙ্গে এক হয়ে বিশ্বে ব্যক্তি সত্তার সঙ্গে এক হয়ে গেল। এই পর্যায়ে সার্বিকতা ছাড়া ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য রইল না। এর ফলে তারা বিশ্ব সত্তা হয়ে গেল।
ঐ সত্তাগুলি নিজেদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে তাদের উৎস বিশ্ব সত্তার সঙ্গে অভেদ হওয়ার ফলে নিজেরাই ‘বিশ্ব সত্তা’ ( Universal Being ) হয়ে গেল। বর্তমানে অবস্থানকারী ব্যক্তি সত্তার মূল বা উৎস হওয়ায় ব্যক্তি সত্তার সুখ এবং নিরাপত্তার অন্বেষণ বিশ্ব সত্তার সুখ এবং নিরাপত্তার অন্বেষণে পরিণত হল। এর ফলে যে সত্তা বিশ্ব সত্তার সঙ্গে একীভূত হয়েছে তারই অন্বেষণ হয়ে গেল । ব্যক্তি সত্তায় এই ভাবে প্রাপ্ত সুখ এবং নিরাপত্তা বিশ্ব সত্তার সুখ এবং নিরাপত্তা হল। এই হল মানুষের ঊর্ধ্ব প্রগতির কেন্দ্র। এই হল মানব সত্তার ঊর্ধ্ব প্রগতি। … [ক্রমশঃ]