[ ঈশ্বরের নির্দেশে পি আর এস-এর বিলোপ]
হনুমান ছিল স্বামীজীর খুব অনুগত ভক্ত। বলিষ্ঠ সুঠাম দেহ তার। তিনি অসম্ভব বলে কিছু জানতেন না। যে কোনো প্রকারে তিনি স্বামীজীর ইচ্ছাকে সফলরূপ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেন। এই লোকই ইন্দ্রিয়-পরিতৃপ্তির জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেললেন।
বৎসরের শেষে ব্যবসায় ঘাটতি দেখা দিল। দেনা মেটাবার মত দ্রব্য-সামগ্রী আর রইলো না। অর্থ-বিনিয়োগকারীদের ক্যাম্প, আতঙ্কের স্থানে পরিণত হোল।
অর্থ বিনিয়োগকারীরা একত্র জমায়েত হয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলেন। তারা যে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন সেই টাকা আদায় করে তিন/চার বছর আগে যে বন্ড করা হয়েছিল, তার ছেদ টানতে চাইলেন।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কয়েকটা দল ছিল। প্রত্যেক দলের নিজস্ব আইনজ্ঞ ছিল। দলগুলি নিজ নিজ আইনজ্ঞের পরামর্শ নিতে লাগলো।
পি. আর. এস-এর পক্ষে আইনজ্ঞ ছিলেন লক্ষ্মীপতি এবং শিব্রহ্মম। তারা ছিলেন স্বামীজীর ভক্ত সন্তান। তারা পরিস্থিতিটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। প্রত্যেক দলের আইনজ্ঞ জানতে চাইলেন এজেন্টের হাতে যে বিরাট অঙ্কের টাকা এসেছিল সেই টাকা কিভাবে খরচ হল। এজেন্টকে কৈফিয়ৎ চাওয়া হল কোনো ঋণ তিনি পরিশােধ করেছেন কিনা ! বিনিয়ােগকারী এবং পি. আর. এস—উভয় পক্ষের লােক তাকে জেরা শুরু করলেন। কিন্তু কেউ কোনো উত্তর পেলেন না।
উভয় পক্ষের মধ্যে সন্দেহের গুঞ্জন চলতে লাগলো। অর্থ বিনিয়ােগকারীদের মধ্যে কয়েকজন ক্রোধে ফেটে পড়লেন। পি. আর. এস-এর হিসাবখাতায় দেখানাে হচ্ছে তারা অর্থ বিনিয়ােগকারীদের টাকা মিটিয়ে দিয়েছে। এজেন্ট তাদের তরফ থেকে টাকা নিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা আসল জায়গায় পৌঁছায় নি।
স্বামীজী সমস্ত অর্থ বিনিয়ােগকারীদের ডেকে পাঠালেন। তিনি তাদেরকে বললেন : ” সমস্ত রেকর্ড দেখার দরকার আমাদের নেই। করণিক এ সমস্ত দেখবে।
আপনারা পি. আর. এস-এ টাকা বিনিয়ােগ করেছেন। সমস্ত ব্যাপারটা আপনাদের প্রতিনিধির (এজেন্ট) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিলো। আপনাদের এবং আমাদের তরফ থেকে তিনি যা করার করছিলেন। বিভিন্ন স্থান হোতে টাকা জমা পড়েছে। আমরা জানি না তিনি এই সমস্ত টাকা নিয়ে কি করেছেন। কোন ঋণ পরিশোধ করেছেন কিনা তাও আমরা জানি না। তাকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। কাজের মধ্যে তাঁর স্বাধীনতা ছিল। তিনি উভয় পক্ষের হয়ে কাজ করেছেন।
আমরা সকলে জানি যে, আমাদের কোনো লােকসান হয় নি। আমরা এও জানি যে রাজমুন্দ্রী থেকে যে টাকা আমরা পেয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশী মূল্যের পণ্য আমরা পাঠিয়েছি। পি. আর. এস-এর টাকা তার হাতেই ছিল। আপনারা এবং এজেন্ট এ বিষয়ে জানেন। তার অজ্ঞাতে আমরা এবং অন্য কেউ কোন টাকা পাই নি। তিনি আমাদের খরচ করার মত টাকা দিতেন। সমস্ত বৃত্তান্ত তার জানা।
এক সময় আমরা (স্বামীজী ‘আমি’র পরিবর্তে ‘আমরা’ শব্দ ব্যবহার করতেন) তাঁকে ব্যবসা বন্ধ করার কথা বলেছিলাম। তিনি তাতে রাজি হ’ননি। ঐদিন অবস্থাটা ভালোই ছিল । তিনি নিজের দায়িত্বে আরও ব্যবসা চালাতে লাগলেন। ঠিক তার পরেই লোকসান দেখা দিল। তার নিকট হোতে জেনে নিন কত লােকসান হয়েছে। কেনই বা লােকসান হয়েছে।
আপনারা সকলে এখানে জমায়েত হয়েছেন। আপনাদেরকে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছি। পি. আর. এস-এর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ সম্বন্ধে এজেন্ট জ্ঞাত আছেন। তিনি জানেন আপনাদের নিকট হোতে কত টাকা আমরা নিয়েছি, এবং কোথা হোতে কত টাকা ধার করেছি। আমাদের সমস্ত সম্পত্তি আপনাদের হাতে দিচ্ছি। এ থেকে বিনিয়োগের অনুপাতে আপনারা ভাগ করে নিন।”
সমবেত লোকের মধ্যে যাঁরা বিনা জামিনে টাকা বিনিয়ােগ করেছিলেন __ তারা এই প্রস্তাবে খুশী হোলেন। কিন্তু যাঁরা জামিনের উপর ভিত্তি করে ঋণ দিয়েছিলেন তাঁরা একে অপরের মুখ পানে চাইতে লাগলেন।
“আপনাদেরকে এর জবাব এখনই দিতে হবে না। আপনার বাড়ী ফিরে যান। নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা করুন। আগামীকাল-এর উত্তর দেবেন” __স্বামীজী এইকথা তাঁদেরকে বললেন। (ক্রমশঃ)