[পি আর এস-এর অবলোপে পেরেন্টাপল্লী আশ্রমের অবস্থা]
তারা সকলে চলে গেলেন। পরের দিন আবার তারা সমবেত হলেন। তারা বললেন “আমরা কোনো কথা জানতে চাই না। আমরা যে টাকা দিয়েছি সেই টাকা নিয়ে আমাদের চিন্তা। দয়া করে আমাদের টাকা ফেরৎ দিন।”
উত্তরে স্বামীজী বললেন – “যদি আমাদেরকে টাকা শোধ করতে হয় তাহলে সব বিনিয়ােগকারীকে সমানভাবে দেখতে হবে । আপনারা আমাদের প্রস্তাবে রাজী হচ্ছেন না। যাঁরা জামিনের ভিত্তিতে টাকা বিনিয়ােগ করেছেন তাদেরকে যদি টাকা দিই তাহলে অপর পক্ষকে বঞ্চিত করা হয়। এটা পাপ। সমস্ত ঋণ পরিশােধ করার সুযােগ আপনারা আমাদেরকে দিচ্ছেন না। সুতরাং আপনারা নিজেরাই যে যার প্রাপ্য আদায় করে নিন।” উভয় পক্ষের লােক এবং আইনজ্ঞরা চলে গেলেন।
যারা জামিনের ভিত্তিতে টাকা দিয়েছিলেন তারা মামলা রুজু করতে চাইলেন। যারা বিনা জামিনে টাকা দিয়েছিলেন তারা এজেন্টের বাড়ীর সামনে হামলা করলেন। কিন্তু কোন উত্তর পেলেন না। এজেন্ট নীরব।
স্বামীজী আইন সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপার লক্ষ্মীপতির হাতে ছেড়ে দিয়ে পেরেন্টীপল্লী চলে গেলেন। যাবার আগে বলে গেলেন প্রয়ােজন হলে তিনি আবার আসবেন।
ব্যবসা বন্ধ করার পর পেরেটাপন্নী আশ্রমে খুব অল্পকষ্ট দেখা দিল। অাশ্রমবাসীদের নীতি হল যা জোটে তাই দিয়ে দিন-যাপন করা। এতেই তারা সন্তুষ্ট। আশ্রমে বাগান আছে। অনেক কলাগাছ আছে। প্রচুর কলা ফলে। কলা খাওয়া যাবে। কলাগছের থোর রান্না করে খাওয়া যাবে। কলাগাছের মূল পাওয়া যাবে। এও রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। যা পাওয়া যাবে তাতেই আমাদেরকে অভ্যস্ত হতে হবে। শ্রীরামকৃষ্ণও জানেন কি হবে !
আশ্রমবাসীদের কেউ কেউ বিচলিত হয়ে পড়লো। এসব খাবার খেয়ে কি ভাবে তারা বাঁচবে ! তারা নানা অজুহাতে আশ্ৰম ছেড়ে নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেল। কেবল নন্দনাম্মা, রামকৃষ্ণাম্মা এবং অন্নপূর্ণাম্মা আশ্রমে রইলেন। তাঁদের বক্তব্য – খাওয়া-পরার জন্য তারা আশ্রমে আসেননি, যে মহান ব্যক্তিকে তারা গুরু হিসাবে পেয়েছেন তাঁর সেবা করাই তাঁদের কাজ । খাবার জুটুক বা না জুটুক গুরুর সান্নিধ্যে তাদের জীবন কেটে যাবে।
নন্দনম এবং রামকৃষ্ণা মাতার কিছু অর্থসংস্থান ছিল। তাঁরা বাড়ী থেকে কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে এলেন। আশ্রমে ফিরে এসে তারা স্বামীজীর জন্য চালের মণ্ড করতে লাগলেন। স্বামীজী কারও জন্য বিশেষ ব্যবস্থা পছন্দ করতেন না। তিনি চালের দ্বারা তরল খাবার বানাতে আদেশ দিলেন। কলাগাছের মূল সিদ্ধ করে তার সাথে তরল খাবার আশ্রমবাসীরা খেতে লাগলো ।
এইভাবে ছয় মাস কেটে গেল। স্বামীজীর অনেক ভক্ত ছিল যারা আশ্রমের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু তারা এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত ছিল না। মাঝে মাঝে উৎসব হোতো। উৎসবের পর অবশিষ্ট খাদ্যসামগ্রী যা থাকতো তা দিয়ে কিছুদিন চলতো। এইভাবে আশ্রমজীবন চলতে লাগলো। পেরেন্টাপল্লীর কয়েকজন মা ও মেয়ে আশ্রম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতো। তারাও আশ্রমে খেতো। যৎসামান্য খাবার জুটলেও তা সকলে ভাল করে খেতেন।
হনুমান Cheating case-এ পরােক্ষভাবে জড়িত থাকায় স্বামীজী এক বৎসর তার সঙ্গে দেখা করবেন না বলেছিলেন । এক বৎসর পূর্ণ হোল। সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার কালও পূর্ণ হল । হনুমান আশ্রমে এলেন। স্বামীজীকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলেন। গুরু-শিষ্যের পুনর্মিলনে একটা আনন্দের ঝড় বয়ে গেল।
আশ্রমের দুরবস্থা দেখে হনুমান খুব ব্যথিত হ’লেন। তিনি কোনো এক ব্যক্তির নিকট হোতে অর্থ সাহায্য নিয়ে বনের কাজ শুরু করলেন। এক পক্ষ কালের মধ্যে ৩/৪ নৌকা-বােঝাই জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে সেগুলাে বিক্রি করলেন। এই টাকা দিয়ে আশ্রমের জন্য খাদ্য-সামগ্রী ক্রয় করলেন ।
দীর্ঘদিন কলাগাছের মূল এবং তরল খাবার খেয়ে স্বামীজীর শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল। আশ্রমে কিছু ওষুধ থাকতো। একদিন স্বামীজী একটা ভুল ওষুধ খেয়ে নিলেন। এতে তাঁর শরীর আরও খারাপের দিকে গেল !
নন্দনম এবং থাল্লি জোর করে স্বামীজীকে রাজমুন্দ্রী নিয়ে উপস্থিত হোলেন। স্বামীজীকে রাজুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। কয়েকদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ বােধ করতে লাগলেন। নন্দনম মাতা আশ্রমে ফিরে গেলেন। থাল্লি রাজমুন্দ্ৰীতেই রয়ে গেলেন। ওখানে তিনি স্বামীজীর জন্য পথ্য তৈরী করতেন।
একমাস ধরে চিকিৎসা চলতে লাগলো। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি লেখার কাজ বন্ধ করেন নি। ছয় মাস আগে ‘Message to Humanity’ লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। শারীরিক এই কষ্টের মধ্যেও ওই বই লেখার কাজ শেষ করলেন।(ক্রমশঃ)
তারা সকলে চলে গেলেন। পরের দিন আবার তারা সমবেত হলেন। তারা বললেন “আমরা কোনো কথা জানতে চাই না। আমরা যে টাকা দিয়েছি সেই টাকা নিয়ে আমাদের চিন্তা। দয়া করে আমাদের টাকা ফেরৎ দিন।”
উত্তরে স্বামীজী বললেন – “যদি আমাদেরকে টাকা শোধ করতে হয় তাহলে সব বিনিয়ােগকারীকে সমানভাবে দেখতে হবে । আপনারা আমাদের প্রস্তাবে রাজী হচ্ছেন না। যাঁরা জামিনের ভিত্তিতে টাকা বিনিয়ােগ করেছেন তাদেরকে যদি টাকা দিই তাহলে অপর পক্ষকে বঞ্চিত করা হয়। এটা পাপ। সমস্ত ঋণ পরিশােধ করার সুযােগ আপনারা আমাদেরকে দিচ্ছেন না। সুতরাং আপনারা নিজেরাই যে যার প্রাপ্য আদায় করে নিন।” উভয় পক্ষের লােক এবং আইনজ্ঞরা চলে গেলেন।
যারা জামিনের ভিত্তিতে টাকা দিয়েছিলেন তারা মামলা রুজু করতে চাইলেন। যারা বিনা জামিনে টাকা দিয়েছিলেন তারা এজেন্টের বাড়ীর সামনে হামলা করলেন। কিন্তু কোন উত্তর পেলেন না। এজেন্ট নীরব।
স্বামীজী আইন সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাপার লক্ষ্মীপতির হাতে ছেড়ে দিয়ে পেরেন্টীপল্লী চলে গেলেন। যাবার আগে বলে গেলেন প্রয়ােজন হলে তিনি আবার আসবেন।
ব্যবসা বন্ধ করার পর পেরেটাপন্নী আশ্রমে খুব অল্পকষ্ট দেখা দিল। অাশ্রমবাসীদের নীতি হল যা জোটে তাই দিয়ে দিন-যাপন করা। এতেই তারা সন্তুষ্ট। আশ্রমে বাগান আছে। অনেক কলাগাছ আছে। প্রচুর কলা ফলে। কলা খাওয়া যাবে। কলাগছের থোর রান্না করে খাওয়া যাবে। কলাগাছের মূল পাওয়া যাবে। এও রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। যা পাওয়া যাবে তাতেই আমাদেরকে অভ্যস্ত হতে হবে। শ্রীরামকৃষ্ণও জানেন কি হবে !
আশ্রমবাসীদের কেউ কেউ বিচলিত হয়ে পড়লো। এসব খাবার খেয়ে কি ভাবে তারা বাঁচবে ! তারা নানা অজুহাতে আশ্ৰম ছেড়ে নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেল। কেবল নন্দনাম্মা, রামকৃষ্ণাম্মা এবং অন্নপূর্ণাম্মা আশ্রমে রইলেন। তাঁদের বক্তব্য – খাওয়া-পরার জন্য তারা আশ্রমে আসেননি, যে মহান ব্যক্তিকে তারা গুরু হিসাবে পেয়েছেন তাঁর সেবা করাই তাঁদের কাজ । খাবার জুটুক বা না জুটুক গুরুর সান্নিধ্যে তাদের জীবন কেটে যাবে।
নন্দনম এবং রামকৃষ্ণা মাতার কিছু অর্থসংস্থান ছিল। তাঁরা বাড়ী থেকে কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে এলেন। আশ্রমে ফিরে এসে তারা স্বামীজীর জন্য চালের মণ্ড করতে লাগলেন। স্বামীজী কারও জন্য বিশেষ ব্যবস্থা পছন্দ করতেন না। তিনি চালের দ্বারা তরল খাবার বানাতে আদেশ দিলেন। কলাগাছের মূল সিদ্ধ করে তার সাথে তরল খাবার আশ্রমবাসীরা খেতে লাগলো ।
এইভাবে ছয় মাস কেটে গেল। স্বামীজীর অনেক ভক্ত ছিল যারা আশ্রমের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু তারা এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত ছিল না। মাঝে মাঝে উৎসব হোতো। উৎসবের পর অবশিষ্ট খাদ্যসামগ্রী যা থাকতো তা দিয়ে কিছুদিন চলতো। এইভাবে আশ্রমজীবন চলতে লাগলো। পেরেন্টাপল্লীর কয়েকজন মা ও মেয়ে আশ্রম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতো। তারাও আশ্রমে খেতো। যৎসামান্য খাবার জুটলেও তা সকলে ভাল করে খেতেন।
হনুমান Cheating case-এ পরােক্ষভাবে জড়িত থাকায় স্বামীজী এক বৎসর তার সঙ্গে দেখা করবেন না বলেছিলেন । এক বৎসর পূর্ণ হোল। সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার কালও পূর্ণ হল । হনুমান আশ্রমে এলেন। স্বামীজীকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলেন। গুরু-শিষ্যের পুনর্মিলনে একটা আনন্দের ঝড় বয়ে গেল।
আশ্রমের দুরবস্থা দেখে হনুমান খুব ব্যথিত হ’লেন। তিনি কোনো এক ব্যক্তির নিকট হোতে অর্থ সাহায্য নিয়ে বনের কাজ শুরু করলেন। এক পক্ষ কালের মধ্যে ৩/৪ নৌকা-বােঝাই জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে সেগুলাে বিক্রি করলেন। এই টাকা দিয়ে আশ্রমের জন্য খাদ্য-সামগ্রী ক্রয় করলেন ।
দীর্ঘদিন কলাগাছের মূল এবং তরল খাবার খেয়ে স্বামীজীর শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল। আশ্রমে কিছু ওষুধ থাকতো। একদিন স্বামীজী একটা ভুল ওষুধ খেয়ে নিলেন। এতে তাঁর শরীর আরও খারাপের দিকে গেল !
নন্দনম এবং থাল্লি জোর করে স্বামীজীকে রাজমুন্দ্রী নিয়ে উপস্থিত হোলেন। স্বামীজীকে রাজুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। কয়েকদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ বােধ করতে লাগলেন। নন্দনম মাতা আশ্রমে ফিরে গেলেন। থাল্লি রাজমুন্দ্ৰীতেই রয়ে গেলেন। ওখানে তিনি স্বামীজীর জন্য পথ্য তৈরী করতেন।
একমাস ধরে চিকিৎসা চলতে লাগলো। অসুস্থ অবস্থাতেও তিনি লেখার কাজ বন্ধ করেন নি। ছয় মাস আগে ‘Message to Humanity’ লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। শারীরিক এই কষ্টের মধ্যেও ওই বই লেখার কাজ শেষ করলেন।(ক্রমশঃ)