[১৯৫৯_১৯৬১ সাল পর্যন্ত স্বামীজীর বিভিন্ন কার্যাবলী ও উপদেশ।]
১৯৫৯ সালের শেষের দিকে স্বামী বাউলানন্দ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিল । চিকিৎসার জন্য তাকে রাজমুন্দ্রি নিয়ে আসা হোল । প্রথমে তিনি হনুমানের (একজন ভক্ত)-এর বাড়ি গিয়ে উঠলেন । পরে নির্মলম্ অর্থাৎ লেখক আঃ বেঙ্কট রাও খবর পেয়ে তাঁকে ‘বালানন্দ বিহারে’ অর্থাৎ লেখকের বাড়িতে নিয়ে গেলেন । সেখানে চিকিৎসা চলতে থাকলো। ডাক্তারা বললো_’ স্বামীজীর সম্পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন।’ তিনি তখন খুব কম কথা বলতেন। সুচিকিৎসা এবং সাবধানতা অবলম্বনের ফলে ক্রমশই তিনি সুস্থ বোধ করতে লাগলেন। রাজমুন্দ্রিতে অবস্থানকালে তাঁর কয়েকজন ভক্তের ইচ্ছা জাগল যে, সমস্ত ভক্তদের নিয়ে একটা সম্মেলনী সভার আয়োজন করে ! সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৬০ সালের ১৭-ই জানুয়ারি দিন ধার্য হোলো । স্বামীজীর নিকট অনুমোদন চাওয়া হোলো এবং তিনি রাজি হলেন কিন্তু শরীর অসুস্থ থাকার জন্য তিনি ওই সভায় যোগদান করতে পারলেন না । তিনি তাঁর বাণী লিখে পাঠিয়ে দিলেন । মঞ্চে শ্রীরামকৃষ্ণের পূজা সম্পন্ন করে স্বামী বাউলানন্দজীর ফটোয় মাল্যদান করা হয়েছিল এবং সমবেত ভক্তবৃন্দের নিকট হরি নামে একজন ভক্ত স্বামীজীর সেই লেখাটি পাঠ করে শুনিয়েছিল।
চিঠির সারমর্ম ছিল এই যে, ‘মানুষ সাধারণত দুটো জিনিসের আকাঙ্ক্ষা করে__ প্রথমটা হোলো সুখ এবং দ্বিতীয়টা হোলো নিরাপত্তা । কিন্তু এই দুটি ক্ষণস্থায়ী হওয়ার ফলে মানুষ এগুলোতে সন্তুষ্ট হোতে পারে না । এই অসন্তোষের ফলে তারা স্থায়ী সুখ ও নিরাপত্তা পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ক্ষণস্থায়ী সুখ এবং নিরাপত্তা চিরস্থায়ী সুখ এবং নিরাপত্তা পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ।
মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে যা কিছু পায়, তা তাদেরকে জাগতিক সুখ এবং নিরাপত্তা দিতে পারে । কিন্তু কখনোই চিরস্থায়ী সুখ বা নিরাপত্তা পরিশ্রমের দ্বারা অর্জন করতে পারা যায় না । এটি একমাত্র সম্ভব হয় আধ্যাত্মিকতার সোপান বেয়ে উপরে উঠতে পারলে! তখন সে বুঝতে পারে যে, ভগবত অনুরাগ‌ই মানুষকে চিরস্থায়ী সুখ এবং নিরাপত্তা দিতে পারে । ধন-দৌলত, সামাজিক মর্যাদা, নাম-যশ প্রভৃতি মানুষকে ক্ষণস্থায়ী সুখ দেয়, কিন্তু চিরস্থায়ী সুখ ও নিরাপত্তা লাভের জন্য অবলম্বন করতে হয় অধ্যাত্ম মার্গ!
দৈহিক সুখ এবং নিরাপত্তা ভোগ করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ! এই প্রবৃত্তি মুক্ত হোতে হোলে মানুষকে ঈশ্বরমুখী হোতে হবে। আদর্শ পিতা মাতার উচিত ছোট থেকেই তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে প্রকৃত সুখ এবং প্রকৃত নিরাপত্তা সম্বন্ধে সচেতন করে তোলা এবং এই দুটি অর্জনের জন্য তাদেরকে প্রযত্নশীল করা ! এভাবেই মানুষ তার জীবনের অন্তিমলক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে।।