[বিশ্বাসমের জন্য অভিনন্দন পত্র।]
“শ্রদ্ধেয় গুরুদেব এবং আমার ভাইবোনেরা !
আমি আপনাদের সামনে কয়েকটা বিষয় তুলে ধরছি । গোদাবরীর তীরে, পপি পাহাড়ের পদতলে এই “রামকৃষ্ণ মুনিবাতম” নামক পবিত্র স্থানে, বহু উপজাতি মাতা-পিতার সম্মুখে আমরা বৈকুণ্ঠ একাদশীর উৎসব বহু বছর ধরে পালন করে আসছি । পূর্বের ন্যায় এবছরও রাজ্যের বিভিন্ন স্থান হোতে ভক্তবৃন্দ এখানে এসে জমায়েত হয়েছেন এবং উৎসবও মহাসমারোহে উদযাপিত হচ্ছে ।
এবছরের উৎসবের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে __এই উৎসব আশ্রমের ইতিহাসের এক স্মরণীয় ঘটনা ! ভক্তদের মধ্যে যারা আমাদের স্বামীজীর “জীবিত বিশেষলু”_নামক গ্রন্থ পড়েছেন, তাঁরা অবশ্যই এই স্থানের পবিত্রতা সম্বন্ধে অবহিত আছেন। স্বামীজী যখন পরিব্রাজক রূপে ঘুরছিলেন, তখন একদিন মা জগদম্বা পোচাভরমের বালুতটে তাঁর সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তাঁকে অনুসরণ করার জন্য স্বামীজীকে ইঙ্গিত করেছিলেন । তিনি স্বামীজীকে এই পবিত্র স্থানে নিয়ে এসে অন্তর্হিত হয়ে যান । যে স্থানে এসে মা অন্তর্হিত হলেন, সেই স্থানে স্বামীজী একটি শিবলিঙ্গ দেখতে পেয়েছিলেন । সেই শিবলিঙ্গকেই প্রত্যহ সকালে এখন পূজা করা হয় । সেইদিন হোতে এই আশ্রম মন্দিরে ✓রী মা পূজা পাচ্ছেন । এখানকার রেড্ডীরা এঁকে “ইয়ালাম্মা থাল্লী” নামে পূজা করে। কোনো কোনো ভক্ত তাঁকে “মা জগদম্বা” বলে । কোনো কোনো ভক্ত তাঁকে নারকেল জল দিয়ে অভিষেক করেন এবং “ওঁ নমঃ শিবায়” বলে বিল্বপত্র অর্পণ করেন । আশ্রমের ভক্তরা পূজার সময় তুলসী মালা দিয়ে এই দেবতাকে সজ্জিত করে এবং “ওঁ নমো নারায়ণায়” মন্ত্র উচ্চারণ করে ! কোনো কোনো ভক্ত __এঁর সামনে “শ্রীরামকৃষ্ণের সহস্রনাম” পাঠ করে ! এই আশ্রমটির প্রতিষ্ঠাতা আমাদের গুরুদেব স্বামী বাউলানন্দজী । এই শিবলিঙ্গ আজকের নয়। আমরা এখানে অনেক পুরোনো ইঁট দেখেছি ।এতে বোঝা যায় _বহু শতাব্দী পূর্বেও এখানে মন্দির ছিল ! সম্ভবত গোদাবরীর করালগ্রাসে সেটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। বিশাল কাঁঠাল গাছের নিচে প্রভু শিবের মূর্তি দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। এই মূর্তির উপর গাছের শুকনো পাতা যেন অঞ্জলি স্বরুপ পড়তো । কাঁঠালগাছগুলি মানুষ এবং অন্যান্য জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে লিঙ্গকে রক্ষা করতো । শতাব্দীর পর শতাব্দী এভাবে আবৃত থেকেও অক্ষত অবস্থায় এই শিবলিঙ্গটি ছিল । প্রভু তাঁর ঈপ্সিত সন্তান বাউলানন্দজীর জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলেন ।
স্বামীজী এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে, পাথরের থামের উপর কাঠের পাটাতন দিয়ে প্রথমে মন্দির তৈরি করা হয়েছিল । মন্দিরের মেঝে বালি দিয়ে পূরণ করা হয়েছিল । 1940 সালে এই মন্দির ‘প্রেসিডেন্ট বিশ্বাসম’ এবং তাঁর সঙ্গী ‘শ্রদ্ধা’-র পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত হয়েছিল। এঁরাই হোলেন স্বামীজীর প্রথমকার শিষ্য।
বিশ্বাসম এখানকার অনেক কর্ম পরিচালনা করেছেন । মন্দির নির্মাণ বা অন্যান্য কাজে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে । এখান হোতেই শতশত জামা কাপড় বিতরণ করা হয়েছে, নরনারায়ন সেবা করা হয়েছে ! মা লক্ষ্মী প্রাণভরে এবং আনন্দে এখানে খেলা করেছেন। তখন মানুষের বড় অভাব ছিল, ওই সময় পাকা মন্দির নির্মাণের কথা ভাবাই যায় নি !
কিন্তু কালের চাকা ঘুরলো । মা লক্ষ্মী বিশ্রাম নিলে, সরস্বতী তাঁর স্থান দখল করলেন ! এই ঢিবি হোতেই আমাদের গুরুর মুখনিঃসৃত বাণী __ পাহাড়-পর্বত-নদী-নালা-সাগর পার হয়ে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়লো । স্বামী বাউলানন্দের ত্যাগের মহিমা শাশ্বত নদীর ন্যায় প্রবাহিত হোলো । যে সমস্ত ভক্ত এই পবিত্র স্থানের সঙ্গে যুক্ত হোলেন, তাঁরা স্বামীজীর কৃপা দৃষ্টিতে সিক্ত হলেন । এমনকি যে সমস্ত বিশাল কাঁঠাল গাছ,যারা প্রভূকে ছায়া প্রদান করতো, তারাও এই কৃপাদৃষ্টি হোতে বঞ্চিত হলো না ।
গোদাবরীর আক্রমণে এই প্রতিষ্ঠান বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । আমাদের প্রেসিডেন্ট এবং তার পুত্র সুব্বারাও এই পরিস্থিতি দেখে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণের কথা চিন্তা করলেন । পুরোনো গাছগুলি সরিয়ে দেবার জন্য স্বামীজীর অনুমতিও পেলেন । দীর্ঘ এক বৎসর যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রম এবং বিরামহীন প্রচেষ্টার দ্বারা এই বিশাল পাকা মন্দির তৈরি করলেন এবং প্রভুর কৃপা লাভ করলেন। আর আমাদের সকলকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করলেন ।
মনুষ্য জীবন অতি অদ্ভুত ! অনেকে দীর্ঘকাল বেঁচে থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, অনেক ভাল-মন্দ কাজ করে এবং অন্যের দ্বারা ভালো মন্দ কাজ করিয়ে তারপরে মৃত্যুবরণ করে ! তাদের জীবন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে __তারা ভালো মন্দ কাজ করে প্রচুর অর্থোপার্জন ক’রে সন্তান-সন্ততির জন্য অর্থ সঞ্চয় করেছে এবং তাদের জন্য বড় বড় প্রাসাদ বানিয়েছে । কিন্তু একজন ব্যক্তির জীবদ্দশায় এই মন্দির নির্মাণ এক বিরাট কীর্তি ! এই বিরাট প্রজেক্ট তৈরি করার জন্য তিনি কত অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তিনি কিছু হটেন নি_কাজ চালিয়ে গেছেন।