[বিশ্বাসমকে দেওয়া অভিনন্দনপত্রের শেষ ভাগ।]
…..আমাদের জ্যেষ্ঠভ্রাতা ‘বিশ্বাসম’ এই বিরাট প্রোজেক্টের ভার নিজের কাঁধে নিলেন এবং তার পুত্র সুব্বারাও এর সহযোগিতায় এটা নির্মাণ করতে সক্ষম হোলেন । তাঁকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই এবং তাঁর যোগ্য পুত্র সুব্বারাও কে জানাই ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন । ‘শ্রদ্ধা’ সবসময় আমাদের প্রেসিডেন্টের পাশে থেকে তাঁকে প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাকেও আমাদের অভিনন্দন জানাই।
অতীতের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাই প্রথম ধাপে আমাদের(পেরেন্টাপল্লী) মন্দির ছিল চৌকো পাথরের ভিত্তি এবং থাম । মন্দিরের মেঝে বালি দিয়ে পূরণ করা ! দ্বিতীয় ধাপে পাকা থামের উপর কাঠের পাটা । মেঝেতে বালির উপর ইঁট বিছানো । তৃতীয় ধাপে ইঁট, সিমেন্ট, বালি, লোহা প্রভৃতি দিয়ে বাঁধানো মন্দির !
এই তিন ধাপের মন্দিরের সমস্ত কাজই ‘বিশ্বাসম’ করেছেন ! মন্দির প্রাঙ্গণ সমতল করার জন্য তিনি মাথায় করে মাটি ব’য়ে এনেছিলেন !
‘বিশ্বাসম'(শ্রী গাভাম আঃ রাও) একজন সাধারন গৃহী মানুষ । সরকারি কর্মচারী, ছাপোষা লোক । তাঁর বড় সংসার । সংসারে সকলের ভরণপোষণের কথা তাঁকেই চিন্তা করতে হোতো । এসব দিক দেখাশোনা করেও তিনি আশ্রমের জন্য বড় কাজ করলেন । প্রভুর কৃপালাভ করলেন। গুরু এবং গুরুবাক্যে তাঁর ষোলআনা বিশ্বাস ! গুরুর অশেষ কৃপায় ধন্য তিনি !
একবার স্বামীজী চাইলেন আশ্রমের পানীয় জলের জন্য কূপ খনন করতে ! কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার এলেন। বিশ্বাসম তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে জানলেন _ গোদাবরীর লেভেল পর্যন্ত মাটি খনন না করলে ভালো জল পাওয়া যাবে না ! তাঁরা চলে গেলেন । স্বামীজী বললেন _”অত না করেও ভালো জল পাওয়া সম্ভব!”
স্বামীজীর কথায় বিশ্বাস করে তিনি কাজ শুরু করলেন । স্বামীজী শাবল দিয়ে মাটি কাটতে লাগলেন এবং বিশ্বাসম সেই মাটি গর্তের বাইরে ফেলতে লাগলেন । ভালো জল পাওয়া গেল । গর্ত খোঁড়া শেষ হোলে স্বামীজী ইঁট ধরে দিতেন এবং বিশ্বাসম গাঁথুনির কাজ করতেন ।
বিশ্বাসমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলো যে, তিনি আশ্রমের কাজে লিপ্ত থেকে অফিসের কাজে অবহেলা করছেন! তিনি এই অভিযোগের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না ক’রে গুরুবাক্যের প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থা রেখে আশ্রমের কাজ করে যেতে লাগলেন ! তিনি অনেক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন কিন্তু গুরুর কৃপায় সে সমস্ত পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আমাদের গুরুদেবের মধ্যে সূক্ষ্ম আকারে আমাদের আশ্রমের মূল সম্পদ ঘনীভূত ! তাঁর মধ্যে “প্রেমে”-র যে প্রকাশ, সেটাই আমাদের সম্পদ! আমাদের আশ্রমের সম্পদ অফুরন্ত ! যারা জাগতিক দুঃখ কষ্ট পাচ্ছে, কামিনী-কাঞ্চনে জড়িয়ে পড়েছে, যারা নিজেদের পরিবার এবং জনগণের এবং রাষ্ট্রের সেবায় লিপ্ত থেকে জীবনসংগ্রাম করছে অথচ সন্তুষ্টি পাচ্ছে না এবং দিশেহারা___ আমাদের আশ্রমের সম্পদ (সেই ঘনীভূত প্রেম) তাদেরকে সন্তুষ্টি প্রদান করে !
আমাদের আশ্রমের সম্পদ __ব্যক্তির শক্তিকে জাগিয়ে তোলে, ব্যক্তিকে গতির দিকে পুরোদমে ঠেলে দেয় !
আমাদের ঐ সম্পদ(প্রেম) সর্বশক্তিসম্পন্ন হাত দিয়ে আমাদেরকে যে কোনো বাধা-বিপত্তি হোতে রক্ষা করছে।
যদি আমরা আমাদের আশ্রমের প্রকৃত সম্পদ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারি –তাহলে আমরা মুক্ত হবো ! আমাদের পরম সৌভাগ্য যে আমরা আমাদের গুরুদেব পরমপুরুষ স্বামী বাউলানন্দজীর সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি !
আমাদের আশ্রমের নাম “রামকৃষ্ণ মুনিবাতম” সুতরাং এখানে শ্রীরামকৃষ্ণের একটা ভালো ঘর অবশ্যই থাকা দরকার ! আমি প্রেসিডেন্ট(বিশ্বাসম)-কে অনুরোধ করবো, তিনি যেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য একটা ঘর তৈরি করে দেন! জয় শ্রী রামকৃষ্ণ !”
পাঠ শেষ হলে আমি(লেখক_আঃবেঙ্কট রাও) কাগজটা বিশ্বাসমের হাতে দিলাম । ‘হরি’ নামের একজন ভক্ত কয়েক মিনিট বক্তব্য রাখলেন। শ্রোতারা প্রত্যেকেই বিশ্বাসমের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল । এই অভিনন্দন পেয়ে বিশ্বাসম ভাবাবেগে কাঁপছিলেন । ভাবাবেগ সঃবরন ক’রে দাঁড়িয়ে উঠে উনি শুধু বললেন _”আমি কি বলবো, আমিতো কিছুই জানিনা!” এইকথা শুনেই স্বামীজী বলে উঠলেন “জয় শ্রীরামকৃষ্ণ”, এবং এরপরই সভার কাজ সমাপ্ত হোল ।
এই ঘটনার পর বিশ্বাসম দু-এক বছর আশ্রমের ভক্ত নিবাসে রইলেন । প্রত্যেক সোমবার তিনি মৌন থাকতেন । সপ্তাহের অন্যদিনও তিনি বেশি কথা বলতেন না । অল্প কিছুদিন পর তাঁর মধ্যে ভাবের পরিবর্তন দেখা গেল ! তিনি সকলের মধ্যে ভগবান বাসুদেবকে দেখতে পেতেন !
আশ্রমে দু-এক বছর থাকার পর তাঁর শরীর ভেঙে গেল । তিনি কাঁকিনাড়া(দক্ষিন ভারতের)-য় তাঁর বাড়িতে ফিরে গেলেন । ওখানে গিয়ে তিনি একেবারেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন । কয়েকদিন শয্যাশায়ী থাকার পর তিনি তাঁর নশ্বর শরীর ত্যাগ করে রামকৃষ্ণলোকে চলে গেলেন। (ক্রমশঃ)
…..আমাদের জ্যেষ্ঠভ্রাতা ‘বিশ্বাসম’ এই বিরাট প্রোজেক্টের ভার নিজের কাঁধে নিলেন এবং তার পুত্র সুব্বারাও এর সহযোগিতায় এটা নির্মাণ করতে সক্ষম হোলেন । তাঁকে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই এবং তাঁর যোগ্য পুত্র সুব্বারাও কে জানাই ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন । ‘শ্রদ্ধা’ সবসময় আমাদের প্রেসিডেন্টের পাশে থেকে তাঁকে প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করেছেন, তাকেও আমাদের অভিনন্দন জানাই।
অতীতের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাই প্রথম ধাপে আমাদের(পেরেন্টাপল্লী) মন্দির ছিল চৌকো পাথরের ভিত্তি এবং থাম । মন্দিরের মেঝে বালি দিয়ে পূরণ করা ! দ্বিতীয় ধাপে পাকা থামের উপর কাঠের পাটা । মেঝেতে বালির উপর ইঁট বিছানো । তৃতীয় ধাপে ইঁট, সিমেন্ট, বালি, লোহা প্রভৃতি দিয়ে বাঁধানো মন্দির !
এই তিন ধাপের মন্দিরের সমস্ত কাজই ‘বিশ্বাসম’ করেছেন ! মন্দির প্রাঙ্গণ সমতল করার জন্য তিনি মাথায় করে মাটি ব’য়ে এনেছিলেন !
‘বিশ্বাসম'(শ্রী গাভাম আঃ রাও) একজন সাধারন গৃহী মানুষ । সরকারি কর্মচারী, ছাপোষা লোক । তাঁর বড় সংসার । সংসারে সকলের ভরণপোষণের কথা তাঁকেই চিন্তা করতে হোতো । এসব দিক দেখাশোনা করেও তিনি আশ্রমের জন্য বড় কাজ করলেন । প্রভুর কৃপালাভ করলেন। গুরু এবং গুরুবাক্যে তাঁর ষোলআনা বিশ্বাস ! গুরুর অশেষ কৃপায় ধন্য তিনি !
একবার স্বামীজী চাইলেন আশ্রমের পানীয় জলের জন্য কূপ খনন করতে ! কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার এলেন। বিশ্বাসম তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে জানলেন _ গোদাবরীর লেভেল পর্যন্ত মাটি খনন না করলে ভালো জল পাওয়া যাবে না ! তাঁরা চলে গেলেন । স্বামীজী বললেন _”অত না করেও ভালো জল পাওয়া সম্ভব!”
স্বামীজীর কথায় বিশ্বাস করে তিনি কাজ শুরু করলেন । স্বামীজী শাবল দিয়ে মাটি কাটতে লাগলেন এবং বিশ্বাসম সেই মাটি গর্তের বাইরে ফেলতে লাগলেন । ভালো জল পাওয়া গেল । গর্ত খোঁড়া শেষ হোলে স্বামীজী ইঁট ধরে দিতেন এবং বিশ্বাসম গাঁথুনির কাজ করতেন ।
বিশ্বাসমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলো যে, তিনি আশ্রমের কাজে লিপ্ত থেকে অফিসের কাজে অবহেলা করছেন! তিনি এই অভিযোগের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না ক’রে গুরুবাক্যের প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থা রেখে আশ্রমের কাজ করে যেতে লাগলেন ! তিনি অনেক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন কিন্তু গুরুর কৃপায় সে সমস্ত পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন।
আমাদের গুরুদেবের মধ্যে সূক্ষ্ম আকারে আমাদের আশ্রমের মূল সম্পদ ঘনীভূত ! তাঁর মধ্যে “প্রেমে”-র যে প্রকাশ, সেটাই আমাদের সম্পদ! আমাদের আশ্রমের সম্পদ অফুরন্ত ! যারা জাগতিক দুঃখ কষ্ট পাচ্ছে, কামিনী-কাঞ্চনে জড়িয়ে পড়েছে, যারা নিজেদের পরিবার এবং জনগণের এবং রাষ্ট্রের সেবায় লিপ্ত থেকে জীবনসংগ্রাম করছে অথচ সন্তুষ্টি পাচ্ছে না এবং দিশেহারা___ আমাদের আশ্রমের সম্পদ (সেই ঘনীভূত প্রেম) তাদেরকে সন্তুষ্টি প্রদান করে !
আমাদের আশ্রমের সম্পদ __ব্যক্তির শক্তিকে জাগিয়ে তোলে, ব্যক্তিকে গতির দিকে পুরোদমে ঠেলে দেয় !
আমাদের ঐ সম্পদ(প্রেম) সর্বশক্তিসম্পন্ন হাত দিয়ে আমাদেরকে যে কোনো বাধা-বিপত্তি হোতে রক্ষা করছে।
যদি আমরা আমাদের আশ্রমের প্রকৃত সম্পদ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারি –তাহলে আমরা মুক্ত হবো ! আমাদের পরম সৌভাগ্য যে আমরা আমাদের গুরুদেব পরমপুরুষ স্বামী বাউলানন্দজীর সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি !
আমাদের আশ্রমের নাম “রামকৃষ্ণ মুনিবাতম” সুতরাং এখানে শ্রীরামকৃষ্ণের একটা ভালো ঘর অবশ্যই থাকা দরকার ! আমি প্রেসিডেন্ট(বিশ্বাসম)-কে অনুরোধ করবো, তিনি যেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য একটা ঘর তৈরি করে দেন! জয় শ্রী রামকৃষ্ণ !”
পাঠ শেষ হলে আমি(লেখক_আঃবেঙ্কট রাও) কাগজটা বিশ্বাসমের হাতে দিলাম । ‘হরি’ নামের একজন ভক্ত কয়েক মিনিট বক্তব্য রাখলেন। শ্রোতারা প্রত্যেকেই বিশ্বাসমের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল । এই অভিনন্দন পেয়ে বিশ্বাসম ভাবাবেগে কাঁপছিলেন । ভাবাবেগ সঃবরন ক’রে দাঁড়িয়ে উঠে উনি শুধু বললেন _”আমি কি বলবো, আমিতো কিছুই জানিনা!” এইকথা শুনেই স্বামীজী বলে উঠলেন “জয় শ্রীরামকৃষ্ণ”, এবং এরপরই সভার কাজ সমাপ্ত হোল ।
এই ঘটনার পর বিশ্বাসম দু-এক বছর আশ্রমের ভক্ত নিবাসে রইলেন । প্রত্যেক সোমবার তিনি মৌন থাকতেন । সপ্তাহের অন্যদিনও তিনি বেশি কথা বলতেন না । অল্প কিছুদিন পর তাঁর মধ্যে ভাবের পরিবর্তন দেখা গেল ! তিনি সকলের মধ্যে ভগবান বাসুদেবকে দেখতে পেতেন !
আশ্রমে দু-এক বছর থাকার পর তাঁর শরীর ভেঙে গেল । তিনি কাঁকিনাড়া(দক্ষিন ভারতের)-য় তাঁর বাড়িতে ফিরে গেলেন । ওখানে গিয়ে তিনি একেবারেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন । কয়েকদিন শয্যাশায়ী থাকার পর তিনি তাঁর নশ্বর শরীর ত্যাগ করে রামকৃষ্ণলোকে চলে গেলেন। (ক্রমশঃ)