[সম্বশিব/সম্বম]
(পুর্ব প্রকাশিতের পর)
…. একবার কোনো একটি উৎসবে সম্বম, তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে পেরেন্টাপল্লী আশ্রমে এসেছিলেন। সাধারণত তিনি উৎসবের চারদিন আশ্রমে থাকতেন এবং পঞ্চম দিনে বাড়ি রওনা হোতেন। কিন্তু সে বৎসর দেখা গেল সম্বমের স্ত্রী তৃতীয় দিনে আশ্রম হোতে চলে যাবার জন্য জেদ ধরলো। তখন সম্বম স্বামীজীর নিকট গিয়ে তাঁর অনুমতি চাইলেন। স্বামীজী কোনো উত্তর দিলেন না । ঐদিন সম্বমের ওইখানেই থাকা উচিত ছিল ! স্বামীজীর অনুমতি না হোলে কেউ ওই স্থান ছেড়ে যায়না! সম্বম পুনরায় স্বামীজীর নিকটে গিয়ে অনুমতি চাইলেন । স্বামীজী উত্তরে বললেন _”এতো তাড়া কেন? আগামীকাল যাবে!” সম্বম বললো _ “আমার স্ত্রী একদিন ভদ্রাচলমে থাকতে চায়, সেজন্য আমরা আজ‌ই যেতে চাই!” স্বামীজী তাঁর কথার কোনো উত্তর দিলেন না ।
ঠিক এই সময়ে আপ লঞ্চ অর্থাৎ ভদ্রাচলম্-গামী লঞ্চের শব্দ শোনা গেল । স্বামীজীর সম্মতির অপেক্ষা না করেই সম্বমের স্ত্রী নদীর দিকে যাত্রা করলেন । স্বামীজীকে প্রণাম করে সম্বমও তল্পিতল্পা নিয়ে চললেন। নদীর ধারে পৌঁছাবার আগেই তাঁর স্ত্রী লঞ্চে উঠে পড়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী তাঁর দিকে তাকিয়ে তাঁকে তাড়াতাড়ি আসার জন্য নির্দেশ দিতে লাগলেন।
লঞ্চটি একটা ছোট নৌকার পাশে দাঁড়িয়েছিল। নৌকায় উঠে মালপত্র লঞ্চের ছাদে ছুঁড়ে দিয়ে দিতে হবে এবং লঞ্চের সঙ্গে লাগানো পাঠায় লাফিয়ে উঠতে হবে । লাফাতে গিয়ে সম্বমের পা পিছলে গেল এবং তিনি নৌকা এবং লঞ্চের মধ্যস্থলে গভীর জলে পড়ে গেলেন ! নৌকার মাঝি সব লক্ষ্য করছিল ! সে ছুটে ওই স্থানে গেল। অলৌকিকভাবে ঠিক সেই সময় সম্বম ভেসে উঠলেন। মাঝি তাঁকে ধরে ফেলল এবং টেনে নৌকার উপর তুলে নিল । ডুবে গেলেও সম্বম জল খাননি, তাঁর শ্বাসকষ্ট‌ও হয় নি! সুতরাং কোনো বিপদের আশঙ্কা ছিল না । কিন্তু জলে ডুবে যাওয়া, উপরে ওঠা __এ সমস্ত পরিস্থিতিতে তিনি বেশ আঘাত পেলেন ! তাঁর বুক ধরফর করতে লাগলো ! “আমি আজকে আর যাচ্ছি না” _ বলে তিনি নৌকা থেকে নেমে বাঁধে উঠে পড়লেন ! তাঁর দেখাদেখি তাঁর স্ত্রীও বাঁধে উঠে পড়লেন ।
সম্বম বললেন _”স্বামীজীর অনুমতি না নিয়ে আমাদের যাত্রা করা উচিত হয়নি ! আমি অনেকবার তাঁর নিকট অনুমতি চাওয়া সত্ত্বেও তিনি দেননি ! তুমি জেদ করলে বলেই আমরা যাত্রা শুরু করলাম এবং লঞ্চে উঠলাম ! দেখতে পেলে তো _ কি ঘটলো! এটা অনুমান করেই স্বামীজী আমাদেরকে অনুমতি দেননি । স্বামীজীর কৃপাতে আমি এখনও জীবিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি !” তাঁর স্ত্রী বললেন _”মাঝি বেশ দক্ষ এবং বুদ্ধিমান লোক ! খুব সাহসী ! সে তোমার শার্ট ধরে তুলে ফেললো ! সেই তোমাকে বাঁচালো!”
“হ্যাঁ, এটাই ঘটনা ! কিন্তু তুমি জানো না যে, যে লোক জলে ডুবে যাচ্ছিলো _ সে কেমন করে জলে ভেসে উঠলো! ঈশ্বর রূপ গুরুই আমাকে জলের নিচ থেকে উপরে তুলে ধরলেন । সেই জন্যই আমি জলে ভেসে উঠলাম। আমরা গুরুর অনুমতি না নিয়েই যাত্রা করেছিলাম । আমি বারবার প্রার্থনা করা সত্ত্বেও তিনি অনুমতি দেননি ! তিনি জানতেন যে,এমন কিছু ঘটবে। কিন্তু তুমি জেদ করলে ! তোমার জেদ হলো ‘কারণ’ এবং আমার জলে ডুবে যাওয়া ‘ফল’ ! গুরু বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জানেন ! তিনি সূক্ষ্ম শরীরে আমাদের সঙ্গে এসেছিলেন এবং জলের নিচে গিয়ে আমাকে উপরে ঠেলে দিলেন । তিনি করুণার প্রতিমূর্তি, ভক্তের রক্ষক, অসীম সহানুভূতিসম্পন্ন ব্যক্তি ! তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় এই শরীরটা জীবন নিয়ে জলে ভেসে উঠলো!”_ এই কথা বলতে বলতে সম্বমের গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।(ক্রমশঃ)