[সম্বশিব/সম্বম]
(পূর্ব প্রকাশিতের পর ……স্বামীজীর অনুমতি না নিয়ে আশ্রম থেকে চলে যাবার জন্য সম্বম লঞ্চে উঠতে গিয়ে প্রায় ডুবে মরতে বসেছিলেন। কিন্তু গুরু কৃপায় বেঁচে গিয়েছিলেন।)
ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সম্বমের স্ত্রী উদ্বেগ এবং অপরাধ দৃষ্টিতে তাঁর মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পরেই সম্বম নিজেকে সংযত করে মালপত্র নিয়ে আশ্রমে পৌঁছালেন। স্বামীজী তাঁর কুটিরে একাকী বসে ছিলেন । তাঁরা তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন । স্বামীজীর নিকট সম্বম পূর্বাপর সমস্ত ঘটনা সবিস্তারে জানালেন। কথাগুলি বলতে বলতে সম্বমের দুচোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো । স্বামীজী বললেন _”সব ঠিক আছে! এখন বিশ্রাম নাও!”
সম্বম আশ্রমে আরো দুদিন থাকলেন । তারপর তাঁরা তাঁর জন্মভূমি মাধিরা (খাম্মাম জেলা) রওনা হোলেন ।
সম্বম পরে কৃষ্ণা জেলার বুরগুড্ডেমে তাঁর বাসস্থান স্থানান্তরিত করেছিলেন । সেখানে তিনি কৃষিকার্য শুরু করলেন । এক বৎসর চাষের কাজ ক’রে তিনি প্রচুর ফসল পেয়েছিলেন। ফসল বিক্রির পয়সায় তাঁরা উত্তর ভারতে গিয়ে তীর্থ দর্শন করতে চাইলেন । তাঁদের প্রস্তাবিত তীর্থযাত্রার জন্য স্বামীজীর অনুমতি নেওয়ার মানসে, তিনি মহা শিবরাত্রির দিন পেরেন্টাপল্লী আশ্রমে এসে উপস্থিত হোলেন ।
তখন ওখানে নতুন মন্দির নির্মাণ কাজ চলছিল । মন্দিরে সকালে পূজার পর সম্বম রামকৃষ্ণ মন্দিরে বসলেন । সেখানে স্তোত্র পাঠ করলেন এবং গীতার কয়টি অধ্যায় পাঠ করলেন । সেখান হোতে এসে তিনি জলখাবার এবং চা খেলেন । তারপর তিনি যেখানে মেয়েরা ভজন গাইছিলেন সেখানে গেলেন ।
মেয়েদের ভজন গান শুনতে শুনতে তাঁর মনে সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছিলো ! ভজনে গাওয়া হচ্ছিলো_” তুমি কাশি, কাঞ্চি,গয়া এবং প্রয়াগ দর্শন করতে চাইছো কেন? গঙ্গা গৌতমী দর্শন করতে চাইছো কেন ? দিনে তিনবার করে তুমি মা কালীর মহিমা কীর্তন করছো না কেন ! তপশ্চর্যা এবং ধ্যান না করে কে কবে মুক্তি লাভ করতে পারে ? যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার শ্বাস আছে _ ততক্ষণ তুমি মা কালীর নাম গান করো!”
এই গান শুনে সম্বম বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন, __”তাহলে কি তীর্থযাত্রার দরকার নাই ? এই গানটি কি আমার জন্যই গাওয়া হোচ্ছে ? এই গানের মাধ্যমেই কি তিনি(গুরু বাউলানন্দজী) তীর্থে যেতে করতে নিষেধ করছেন ?
এদিকে তিনি যাত্রার সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন । তাঁর গ্রামবাসীরা বিশেষ ট্রেনে যাত্রা করেছেন । তাদের সহায়তায় তাঁর তীর্থ ভ্রমণ সুখপ্রদ হবে ___কিন্তু এই ভজন গান তাঁকে বিভ্রান্ত করে তুললো ।
অপরাহ্নে তিনি স্বামীজীর নিকট গিয়ে তাঁর সমস্যার কথা জানালেন এবং তাঁর উপদেশ শুনতে চাইলেন ! স্বামীজী হেসে তাঁকে বললেন _”সম্বম ! এই গান রামকৃষ্ণদেবের গাওয়া !এই গানের প্রকৃত অর্থ হোলো _”তীর্থ দর্শনের চেয়ে অন্তরের ভক্তি অধিকতর প্রয়োজন। ঈশ্বরকে ‘বোধে বোধ’ করার কয়েকটা উপায় আছে __যেমন কর্ম, ভক্তি,জ্ঞান ….! এইগুলির যেকোনো একটা অবলম্বন করলে তবেই তা সম্ভব হয় !
কেউ যদি জগদম্বাকে উপলব্ধি করতে পারে, তাহলে তার জ্ঞান ও ভক্তি দুই ই লাভ হয় ! সবিকল্প সমাধিতে তার হঠাৎ ঈশ্বরের রূপ দর্শন হয়, আর নির্বিকল্প সমাধিতে তার সচ্চিদানন্দের বোধ হবে ! এই স্থিতিতে কোনো নাম রূপ থাকে না। (ক্রমশঃ)