স্বামী বাউলানন্দজীর ভ্রমণকালীন সময়ের ঘটনাসমূহ এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। আমরা আগের দিন দেখেছিলাম যে, একটি শিব মন্দিরে এক বৃদ্ধা স্বামীজীকে খাবারের সঙ্গে এমন কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলেন_ যার ফলে স্বামীজি অসহায়ের মত চুপচাপ পড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন ! কিন্তু তাঁর অন্তরে সব রকম জ্ঞান কাজ করছিল। এই অবস্থায় গভীর রাত্রে তাঁর একটি অদ্ভুত দর্শন লাভ হলো, উনি দেখলেন হঠাৎ মন্দিরের দরজার তালা খুলে গেল এবং দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল । অন্ধকার গর্ভগৃহের ভেতর থেকে একজন বৃদ্ধ পুরুষ ও একজন বৃদ্ধা স্ত্রীলোক বেরিয়ে এলেন । তাঁরা স্বামীজীর পাশে এসে বসলেন এবং স্বামীজীর মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিয়ে কৃপা বর্ষণ করলেন । তারপর বৃদ্ধ পুরুষটি (শিব)স্নেহভরে স্বামীজীকে বললেন,” বৎস যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেবে, সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকরী করবে! আজ সকালে তুমি এই স্থান ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলে কিন্তু মহিলার অনুরোধে রয়ে গেলে এবং তোমার নিজস্ব চিন্তাধারার বদল করে ফেললে! এরকম করা তোমার উচিত হয় নাই ! ভবিষ্যতে এরকম ভুল আর কোরো না!”
তারপর সেই দুজনে তাঁকে তাঁর বর্তমান অসুবিধা সম্বন্ধে সমস্ত কিছুই বললেন এবং তাঁকে ঘিরে যারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের নাম, এমনকি সিনেমায় যেমন দেখা যায় ঠিক তেমনি তাদের মূর্তিও দেখিয়ে দিলেন ! স্বামীজি ঐ সমস্ত লোক এবং তাদের বাসস্থানও দেখলেন। কেমন করে তারা এই কর্ম করছে এবং কেনই বা করছে _তা সবই বুঝতে পারলেন। তারপর বৃদ্ধা অর্থাৎ মা পার্বতী বললেন,” বৎস তোমার কোন ক্ষতি হবে না! তবে তুমি সতর্ক থেকো! ওঠার মতো গায়ের বল পেলেই এখান থেকে চলে যেও!”
বৃদ্ধ পুরুষটি অর্থাৎ মহেশ্বর শিব, স্বামীজীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, “যা সংকল্প করবে, তা কখনো পরিবর্তন করবে না!” বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অর্থাৎ শিব ও পার্বতীর কথায় স্বামীজি বল এবং সাহস পেলেন তিনি দেখলেন_ তিনি একটু পাশ ফিরতে পারছেন ! স্বামীজীকে কৃপা করে হর-পার্ব্বতী আবার নীরবে যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন স্বামীজী কৃতজ্ঞতা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁদের গমনপথের দিকে চেয়েছিলেন। ওনারা যেই মন্দিরের ভিতরে ঢুকে গেলেন অমনি দরজা বন্ধ হয়ে গেল- তালাও পূর্ববৎ আটকে গেল !
ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধা জাদুকরী মহিলা উদ্বিগ্ন হয়ে_ যেদিক দিয়ে তার লোকজন তার কাছে আসবে, সেই দিকে চেয়ে অপেক্ষা করছিল। গভীর নিশীথ রাত্রি ! স্বামীজি এখন পাশ ফিরতে পারছিলেন! তাঁর এবং রাস্তার মধ্যে দূরত্ব প্রায় 10 থেকে 15 গজ। তিনি দূরে গলার স্বর শুনতে পাচ্ছিলেন এবং সেই স্বর ক্রমশ নিকটবর্তী হতে লাগল! শীঘ্রই একদল লোককে মন্দির প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেখা গেল। তারা বলছিল, “আমরা ভাগবৎ! আমরা নেলোর থেকে আসছি! রাত্রে শোবার মত একটা জায়গা পাবো?”
বৃদ্ধা যাদুকরী মহিলা তার নিজের লোকেদের জন্য অর্থাৎ যারা স্বামীজীকে ধ্বজা স্তম্ভের নিকট নিয়ে গিয়ে বলিদান করবে __তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল! কিন্তু আগন্তকদের হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিত আগমনে সে বিব্রত হয়ে পড়লো। সে তাদের নিকট গিয়ে ঝাঁজিয়ে উঠে বলল _”এখানে কোন জায়গা হবে না, বেড়িয়ে যাও!” কিন্তু তারা, কোথাও না গিয়ে সেখানেই থাকার চেষ্টা করতে লাগলো। বৃদ্ধা এতে খুব রাগান্বিত হয়ে চিৎকার করে আবার তাদেরকে চলে যেতে বললো ।
স্বামীজী তাঁর পরিস্থিতির ক্রমোন্নতি উপলব্ধি করতে লাগলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন_ঈশ্বর তাঁকে সাহায্য করার জন্য অনধিকার প্রবেশকারীদের সেখানে এনেছেন ! তিনি কথা বলতে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু পারছিলেন না! নবাগতরা মন্দিরে ঢুকে পড়লো_ এখন তারা তাঁর নিকট হতে ছয় গজের মধ্যেই ছিল। তারা বৃদ্ধাকে জানালো_ ‘এই অসময়ে তারা আর কোথাও যেতে পারবেনা !সেখানেই তারা রাত্রিতে শুয়ে থাকবে!’
এদের মধ্যে একজন বৃদ্ধার নিকট হতে একটু খাবার জল চাইলো। বৃদ্ধা সুযোগ পেয়ে গেল! সে জল দিতে রাজি হোল এবং ভেতরে গিয়ে জল নিয়ে এলো । স্বামীজি যথাসাধ্য চিৎকার করে বললেন_ “ওই জল খেও না! নদীতে যাও!” স্বামীজীর কথা তাদের কর্ণগোচর হওয়ার আগেই দু’একজন বৃদ্ধার দেওয়া জল খেয়ে ফেলেছিল। জল দিতে দিতে বৃদ্ধা আবার আগন্তুকদের চলে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলো । স্বামীজী অনুভব করলেন তিনি এখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন। তিনি চেষ্টা করে দাঁড়িয়ে পড়লেন । তাঁর এক লাফে আগন্তুকদের নিকট যেতে ইচ্ছা হলো। বৃদ্ধার জল যারা খেয়েছিল তারা বমি করতে লাগলো। তাদেরকে বমি করতে দেখে স্বামীজি কর্মতৎপর হোলেন। তাঁর সমস্ত অলসভাব ছুটে গেল ! কিন্তু বৃদ্ধা তাঁকে বাধা দিতে এলো_ স্বামীজী তাকে ধাক্কা দিয়ে পাশে সরিয়ে দিয়ে আগন্তুকদের দলে যোগ দিলেন!(ক্রমশঃ)
*আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা*
~~~~~~~~~~~~~~~
_স্বামী বাউলানন্দ_
জিজ্ঞাসা:–আমার এখন ৬০ বছর বয়স_ আমার বেশিরভাগ জীবনটা বৃথাই নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় আমি কি বাকি জীবনটার সদ্ব্যবহার করতে পারবো?
স্বামীজী:—যখন আমরা কোনো জিজ্ঞাসা করি তখন আমাদের বিবেচনা করা উচিত কতখানি আন্তরিকতা নিয়ে আমি জিজ্ঞাসাটা করছি! আমরা প্রকৃতপক্ষে আমরা কি ওটা চাই ? এটা আপনি নিজেই বিচার করুন_ আপনার কি বিশ্বাস হয় আপনি বাকি জীবনটা আধ্যাত্মিক চিন্তায় কাটাবেন? যদি আপনার এই ইচ্ছা প্রকৃত এবং যথার্থ হয় তাহলে আপনি কোন কিছু ত্যাগ করতে অর্থাৎ সম্পদ শারীরিক সুখ এবং পারিবারিক সুখ ত্যাগ করতে ইতস্তত করবেন না। সমস্ত জিনিস তুচ্ছ_ আপনি কি এরকম ভাবতে পারেন? আপনি কি ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত? না_ আপনি কখনোই তা পারবেন না! সুখে জীবন কাটাতে কাটাতে, কোনরকম স্বাচ্ছন্দ্য না হারিয়ে ঈশ্বর দর্শন হলে_ তবে আপনার ভালো লাগবে, অন্যথায় নয় ! এইতো আপনার ইচ্ছা!
তাই এই জগতে কজনের প্রকৃত ইচ্ছা আছে ঈশ্বর দর্শন করার? অর্থ, সম্পদ প্রভৃতির উন্নতির জন্য লোকে চোখের জল ফেলে। কিন্তু ঈশ্বর দর্শনের জন্য তারা চোখের জল ফেলে না! যদি আপনার ঈশ্বর দর্শনের জন্য ব্যাকুলতা প্রকৃত এবং যথার্থ হয়_ তাহলে আপনার নিশ্চিত ঈশ্বর দর্শন হবে!
এইমাত্র আপনি বললেন_ আপনার সমস্ত জীবনটা বৃথা নষ্ট হয়েছে! মনে করুন, আপনার ছেলে আপনার পাশে বসে এই কথাগুলো শুনছে এবং সে এসে আপনাকে বললো _”বাবা তোমার জীবনটা বৃথা নষ্ট হয়েছে এবং তুমি ভুল করেছো বলে দুঃখ করছো । এক ই ভুল আমি করতে চাই না _ সুতরাং সত্যের সন্ধানে আমাকে হিমালয়ে যেতে দাও। ঈশ্বর দর্শন হলে আমি ফিরে আসবো।” আপনি তখন তাকে কি বলবেন? তাকে কি আপনি আশীর্বাদ দিয়ে যাবার অনুমতি দেবেন? অন্তত তার অগ্রগতিতে বাধা না দিয়ে কি আপনি থাকতে পারবেন ?
না _আপনার ভয় হবে যে, সে আপনার অজ্ঞাতসারে পালিয়ে যাবে! তখন বরং যাতে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গৃহবন্দি থাকে সে বিষয়ে আপনি যত্নশীল হবেন। আর আপনার মতো এইরূপ চিন্তা বেশিরভাগ ব্যক্তির হওয়ার জন্যই এই জগতের অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে না ।
আমি বলছি না যে সব কথাগুলো আপনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । এগুলো সমগ্র মানবজাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমাদের ইচ্ছার মধ্যে দৃঢ়তা, আস্থা এবং প্রত্যয়ের অভাব । সেজন্য সাধারণ মানুষের ইচ্ছাশক্তি দূর্বল অপরপক্ষে সূক্ষ্মশক্তি সৃষ্টি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যদি ব্রহ্মচর্য পালন করা যায় তাহলে সূক্ষ্ম চিন্তা আসবে,এর ফলে অগ্রগতি ফলপ্রসূ হবে।(ক্রমশঃ)
তারপর সেই দুজনে তাঁকে তাঁর বর্তমান অসুবিধা সম্বন্ধে সমস্ত কিছুই বললেন এবং তাঁকে ঘিরে যারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের নাম, এমনকি সিনেমায় যেমন দেখা যায় ঠিক তেমনি তাদের মূর্তিও দেখিয়ে দিলেন ! স্বামীজি ঐ সমস্ত লোক এবং তাদের বাসস্থানও দেখলেন। কেমন করে তারা এই কর্ম করছে এবং কেনই বা করছে _তা সবই বুঝতে পারলেন। তারপর বৃদ্ধা অর্থাৎ মা পার্বতী বললেন,” বৎস তোমার কোন ক্ষতি হবে না! তবে তুমি সতর্ক থেকো! ওঠার মতো গায়ের বল পেলেই এখান থেকে চলে যেও!”
বৃদ্ধ পুরুষটি অর্থাৎ মহেশ্বর শিব, স্বামীজীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, “যা সংকল্প করবে, তা কখনো পরিবর্তন করবে না!” বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অর্থাৎ শিব ও পার্বতীর কথায় স্বামীজি বল এবং সাহস পেলেন তিনি দেখলেন_ তিনি একটু পাশ ফিরতে পারছেন ! স্বামীজীকে কৃপা করে হর-পার্ব্বতী আবার নীরবে যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন স্বামীজী কৃতজ্ঞতা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁদের গমনপথের দিকে চেয়েছিলেন। ওনারা যেই মন্দিরের ভিতরে ঢুকে গেলেন অমনি দরজা বন্ধ হয়ে গেল- তালাও পূর্ববৎ আটকে গেল !
ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধা জাদুকরী মহিলা উদ্বিগ্ন হয়ে_ যেদিক দিয়ে তার লোকজন তার কাছে আসবে, সেই দিকে চেয়ে অপেক্ষা করছিল। গভীর নিশীথ রাত্রি ! স্বামীজি এখন পাশ ফিরতে পারছিলেন! তাঁর এবং রাস্তার মধ্যে দূরত্ব প্রায় 10 থেকে 15 গজ। তিনি দূরে গলার স্বর শুনতে পাচ্ছিলেন এবং সেই স্বর ক্রমশ নিকটবর্তী হতে লাগল! শীঘ্রই একদল লোককে মন্দির প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেখা গেল। তারা বলছিল, “আমরা ভাগবৎ! আমরা নেলোর থেকে আসছি! রাত্রে শোবার মত একটা জায়গা পাবো?”
বৃদ্ধা যাদুকরী মহিলা তার নিজের লোকেদের জন্য অর্থাৎ যারা স্বামীজীকে ধ্বজা স্তম্ভের নিকট নিয়ে গিয়ে বলিদান করবে __তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল! কিন্তু আগন্তকদের হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিত আগমনে সে বিব্রত হয়ে পড়লো। সে তাদের নিকট গিয়ে ঝাঁজিয়ে উঠে বলল _”এখানে কোন জায়গা হবে না, বেড়িয়ে যাও!” কিন্তু তারা, কোথাও না গিয়ে সেখানেই থাকার চেষ্টা করতে লাগলো। বৃদ্ধা এতে খুব রাগান্বিত হয়ে চিৎকার করে আবার তাদেরকে চলে যেতে বললো ।
স্বামীজী তাঁর পরিস্থিতির ক্রমোন্নতি উপলব্ধি করতে লাগলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন_ঈশ্বর তাঁকে সাহায্য করার জন্য অনধিকার প্রবেশকারীদের সেখানে এনেছেন ! তিনি কথা বলতে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু পারছিলেন না! নবাগতরা মন্দিরে ঢুকে পড়লো_ এখন তারা তাঁর নিকট হতে ছয় গজের মধ্যেই ছিল। তারা বৃদ্ধাকে জানালো_ ‘এই অসময়ে তারা আর কোথাও যেতে পারবেনা !সেখানেই তারা রাত্রিতে শুয়ে থাকবে!’
এদের মধ্যে একজন বৃদ্ধার নিকট হতে একটু খাবার জল চাইলো। বৃদ্ধা সুযোগ পেয়ে গেল! সে জল দিতে রাজি হোল এবং ভেতরে গিয়ে জল নিয়ে এলো । স্বামীজি যথাসাধ্য চিৎকার করে বললেন_ “ওই জল খেও না! নদীতে যাও!” স্বামীজীর কথা তাদের কর্ণগোচর হওয়ার আগেই দু’একজন বৃদ্ধার দেওয়া জল খেয়ে ফেলেছিল। জল দিতে দিতে বৃদ্ধা আবার আগন্তুকদের চলে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলো । স্বামীজী অনুভব করলেন তিনি এখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন। তিনি চেষ্টা করে দাঁড়িয়ে পড়লেন । তাঁর এক লাফে আগন্তুকদের নিকট যেতে ইচ্ছা হলো। বৃদ্ধার জল যারা খেয়েছিল তারা বমি করতে লাগলো। তাদেরকে বমি করতে দেখে স্বামীজি কর্মতৎপর হোলেন। তাঁর সমস্ত অলসভাব ছুটে গেল ! কিন্তু বৃদ্ধা তাঁকে বাধা দিতে এলো_ স্বামীজী তাকে ধাক্কা দিয়ে পাশে সরিয়ে দিয়ে আগন্তুকদের দলে যোগ দিলেন!(ক্রমশঃ)
*আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা*
~~~~~~~~~~~~~~~
_স্বামী বাউলানন্দ_
জিজ্ঞাসা:–আমার এখন ৬০ বছর বয়স_ আমার বেশিরভাগ জীবনটা বৃথাই নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় আমি কি বাকি জীবনটার সদ্ব্যবহার করতে পারবো?
স্বামীজী:—যখন আমরা কোনো জিজ্ঞাসা করি তখন আমাদের বিবেচনা করা উচিত কতখানি আন্তরিকতা নিয়ে আমি জিজ্ঞাসাটা করছি! আমরা প্রকৃতপক্ষে আমরা কি ওটা চাই ? এটা আপনি নিজেই বিচার করুন_ আপনার কি বিশ্বাস হয় আপনি বাকি জীবনটা আধ্যাত্মিক চিন্তায় কাটাবেন? যদি আপনার এই ইচ্ছা প্রকৃত এবং যথার্থ হয় তাহলে আপনি কোন কিছু ত্যাগ করতে অর্থাৎ সম্পদ শারীরিক সুখ এবং পারিবারিক সুখ ত্যাগ করতে ইতস্তত করবেন না। সমস্ত জিনিস তুচ্ছ_ আপনি কি এরকম ভাবতে পারেন? আপনি কি ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত? না_ আপনি কখনোই তা পারবেন না! সুখে জীবন কাটাতে কাটাতে, কোনরকম স্বাচ্ছন্দ্য না হারিয়ে ঈশ্বর দর্শন হলে_ তবে আপনার ভালো লাগবে, অন্যথায় নয় ! এইতো আপনার ইচ্ছা!
তাই এই জগতে কজনের প্রকৃত ইচ্ছা আছে ঈশ্বর দর্শন করার? অর্থ, সম্পদ প্রভৃতির উন্নতির জন্য লোকে চোখের জল ফেলে। কিন্তু ঈশ্বর দর্শনের জন্য তারা চোখের জল ফেলে না! যদি আপনার ঈশ্বর দর্শনের জন্য ব্যাকুলতা প্রকৃত এবং যথার্থ হয়_ তাহলে আপনার নিশ্চিত ঈশ্বর দর্শন হবে!
এইমাত্র আপনি বললেন_ আপনার সমস্ত জীবনটা বৃথা নষ্ট হয়েছে! মনে করুন, আপনার ছেলে আপনার পাশে বসে এই কথাগুলো শুনছে এবং সে এসে আপনাকে বললো _”বাবা তোমার জীবনটা বৃথা নষ্ট হয়েছে এবং তুমি ভুল করেছো বলে দুঃখ করছো । এক ই ভুল আমি করতে চাই না _ সুতরাং সত্যের সন্ধানে আমাকে হিমালয়ে যেতে দাও। ঈশ্বর দর্শন হলে আমি ফিরে আসবো।” আপনি তখন তাকে কি বলবেন? তাকে কি আপনি আশীর্বাদ দিয়ে যাবার অনুমতি দেবেন? অন্তত তার অগ্রগতিতে বাধা না দিয়ে কি আপনি থাকতে পারবেন ?
না _আপনার ভয় হবে যে, সে আপনার অজ্ঞাতসারে পালিয়ে যাবে! তখন বরং যাতে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গৃহবন্দি থাকে সে বিষয়ে আপনি যত্নশীল হবেন। আর আপনার মতো এইরূপ চিন্তা বেশিরভাগ ব্যক্তির হওয়ার জন্যই এই জগতের অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে না ।
আমি বলছি না যে সব কথাগুলো আপনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । এগুলো সমগ্র মানবজাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমাদের ইচ্ছার মধ্যে দৃঢ়তা, আস্থা এবং প্রত্যয়ের অভাব । সেজন্য সাধারণ মানুষের ইচ্ছাশক্তি দূর্বল অপরপক্ষে সূক্ষ্মশক্তি সৃষ্টি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যদি ব্রহ্মচর্য পালন করা যায় তাহলে সূক্ষ্ম চিন্তা আসবে,এর ফলে অগ্রগতি ফলপ্রসূ হবে।(ক্রমশঃ)