স্বামী বাউলানন্দজীর ভ্রমণকালীন সময়ের ঘটনাসমূহ এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। স্বামী বাউলানন্দজী বেশ কয়েক মাস ভদ্রাচলমে ছিলেন।সেখানে শেষের দিকে ভক্ত কামান্দ রাও এবং তার ভাই প্রতিদিন তাঁর সেবা করতেন। শ্রীনিবাস আচার্য নামে একজন স্থানীয় শিক্ষক প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যাবেলায় স্বামীজীর সাথে দার্শনিক তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে আসতেন । তাছাড়াও ওই অঞ্চলের কিছু ব্যক্তি এসে স্বামীজীর সামনে নীরবে বসে থাকতেন এবং তার আলোচনা শুনতেন। দর্শকদের যাতায়াত এবং মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় স্বামীজীর মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হতো না । তিনি এর সাথে সাথেই যথারীতি গভীরভাবে সাধনা চালিয়ে যেতে লাগলেন।
এইভাবে অনেক দিন কেটে গেল।রাজমন্দ্রিতে থাকাকালীন স্বামীজী যে খাতাতে ইংরাজী কবিতাগুলি লিখেছিলেন, সেই খাতাখানি নিয়ে একদিন উনি সন্ধ্যাবেলায় নদীতে স্নান করতে গেলেন। বালির স্তুপ এর উপর খাতাটি রেখে স্বামীজি স্নান সেরে উঠে ওইখানে তিনি আর তাঁর খাতাটি দেখতে পেলেন না। সেখানে সেই খাতার পরিবর্তে একমুঠো ছাই দেখতে পেলেন। ওই সময় ওই স্থানে অন্য কোন লোক ছিল না, সুতরাং কোন লোক যে ঐ কাজ করেছে _এরূপ ভাবার কোন সম্ভাবনাও ছিল না। তিনি এটাকে জগদম্বার ইচ্ছা বলে মেনে নিলেন এবং সযত্নে সেই ছাইগুলি তুলে নিয়ে তিনি মন্দিরে ফিরে এলেন এবং অচিরেই এ ব্যাপারে সবকিছু ভুলে গেলেন।
একদিন সন্ধ্যাবেলায় শিক্ষক শ্রীনিবাস আচার্য স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করতে এসে দেখেন যে স্বামীজি হাসছেন। কৌতুহলী হয়ে শিক্ষক মশাই স্বামীজীকে জিজ্ঞাসা করলেন _ “স্বামীজী ! আজকে কি আপনি মৌনব্রত ভঙ্গ করেছেন?” আচার্যের কথায় স্বামীজি বিস্মিত হলেন । উত্তরে স্বামীজী বললেন _”কই, সেরকম কোনো ব্যাপার তো নয়! এরকম তো আমি করি নাই ! একথা আপনি ভাবলেন কেমন করে?”
পন্ডিত মশাই উত্তর দিলেন _”আমি চার মাস যাবৎ প্রতিদিনই আপনার সঙ্গে এখানে দেখা করতে আসছি। আপনি এর মধ্যে কোনদিনই আমার সাথে কোনো কথা বলেননি। আমি এর কারণ কিছুই বুঝতে পারতাম না । মাঝে মাঝে দেখতাম_ কিছু লোক আপনার সামনে বসে আছে _আমি তাদেরকেও জিজ্ঞাসা করেছি । তারাও বলেছে যে আপনি কারো সঙ্গে কথা বলেন না। কামান্দ রাও একই কথা বলেন, এমনকি রাম শাস্ত্রী _যে আপনার নিমিত্ত প্রতিদিন খাবার আনে _সেও এই একই কথা বলেছে! আজকে আপনাকে হাসতে দেখছি, তাই আমি ভাবলাম তাহলে আপনি মৌনব্রত ভঙ্গ করেছেন ! সেইজন্য কথা বলতে সাহস করলাম “!
আচার্যজীর প্রতি এরূপ আচরণ করা হয়েছে শুনে স্বামীজী বিস্মিত হলেন ! আসলে তিনি যে দীর্ঘদিন এই মন্দিরে আছেন এবং মাঝখানটায় কয়েক মাস যাবৎ তিনি কারো সঙ্গে কথা বলছেন না __এই বিষয়ে তাঁর কোন খেয়ালই ছিল না! সময় যে কিভাবে অতিক্রান্ত হয়েছে তা তিনি জানতেন না ! তাঁর সামনে লোকের যাতায়াত এবং তাঁর নিজের শারীরনির্বাহী কার্যাবলী অর্থাৎ প্রাতঃকৃত্য সারা, নদীতে স্নান করতে যাওয়া, খাবার খাওয়া __ এ সমস্তই তাঁর অজ্ঞাতসারে ঘটেছে, এ কয়েক মাস আত্মচিন্তায় তিনি বিভোর ছিলেন এবং গভীরভাবে ধ্যান করে গেছেন_এটা জানতে পেরে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করলেন।(ক্রমশঃ)
=========================
*MESSAGE TO HUMANITY*
~ _Swami Baulananda_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
:কিভাবে মানুষ সৃষ্টি হল:~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিশ্বে স্থুল, সূক্ষ্ম, কারণ (আধ্যাত্মিক)_ এই তিন বস্তু আছে । বিভিন্ন স্থিতিতে প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে রয়েছে পঞ্চভূত। এই তিন বস্তুর বিভিন্ন অবস্থায় পঞ্চভূত কাজ করে। পঞ্চভূতের প্রত্যেকটি বিশেষ বিশেষ পদার্থ+substance) দ্বারা গঠিত। পদার্থের মধ্যে রয়েছে প্রেম, জ্ঞান এবং সামর্থ্য এই তিন ধরনের শক্তি। এই তিন শক্তির প্রত্যেকটিতে নিজ নিজ সচেতনতা রয়েছে। প্রত্যেক সচেতনতার মধ্যে আবার সজ্ঞান আছে ।সজ্ঞান সহ ওই তিন শক্তি অখন্ড ভাবে পঞ্চভূতের মধ্যে আবির্ভূত হয় এবং পঞ্চভূত_ স্থুল, সূক্ষ্ম এবং কারণ এই তিন বস্তুর মধ্যে আবির্ভূত হয়। অনাদি অতীতে যা ছিল, বর্তমানে যা আছে এবং অনন্ত ভবিষ্যতে যা থাকবে। যিনি নিজেকে বস্তু, পঞ্চভূত, পদার্থ এবং শক্তি রূপে প্রকাশ করেছেন, যিনি সমস্ত অভিব্যক্তিকে ধরে আছেন, যিনি প্রকাশের লক্ষণ সমূহকে প্রেম(love) জ্ঞান(knowledge) এবং শক্তি(strength)এই তিন শক্তির মধ্যে, তিন শক্তির জ্ঞানের মধ্যে সজ্ঞানের মধ্যে এবং তিন বস্তুর মৌলিক উপাদানের মধ্যে অপ্রকাশিত রাখেন __তিনিই হোলেন সর্বত্র বিদ্যমান, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বেসর্বা বা ঈশ্বর। মানসিক, পদার্থগত এবং শক্তিগত সদৃশ এবং বিশদৃশ কর্মের যে চাপ _সেই চাপের সংঘর্ষের ফলে এই বিশ্বে অস্বাভাবিক তাপের সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে পৃথিবীতে প্রলয় দেখা দিয়েছিল । এই নিমজ্জন বা নিদ্রালু অবস্থা হলো মানসিক, পদার্থগত এবং শক্তিগত কর্মের, বিশ্ব চৈতন্যের কর্মের এবং বিশ্ব চৈতন্যের বিশ্ব বিশ্রাম অবস্থা। কিন্তু মহাকাশ রয়ে গেল। এখন এর বিশ্রাম‌ও নাই _আবার কাজ‌ও নাই। বিশ্ব চৈতন্য যখন কাজ করছিল তখনো এর কাজ বা বিশ্রাম কিছুই ছিল না। বিশ্বে এই মহাকাশ থাকে অনন্তকাল। এই কালের কোন বিশ্রাম বা কর্ম থাকেনা। এই দুয়ের কোন ঊর্ধ্ব-অধঃ থাকেনা ।এই বিরামহীন, কর্মহীন এবং অনন্ত সহ অবস্থানকারী মহাকাশ এবং কালের মধ্যেই হলেন সর্বেসর্বা ঈশ্বর ।
যেমন প্রত্যেক সত্তা দিনে একবার বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়_ ঠিক সেইরূপ বিশ্বচৈতন্যের দীর্ঘ সময়ব্যাপী কর্মের স্বাভাবিক অবস্থায় এই বিশ্ব বিশ্রাম বা বিশ্বের অচৈতন্য অবস্থার একটা সীমা ছিল । এই অচৈতন্য অবস্থা গত হলে চৈতন্য এবং ইহার কর্ম,মৌলিক বস্তু, বস্তু এবং শক্তি তাদের নিদ্রালু এবং বিশ্রাম অবস্থা থেকে জেগে উঠলো । একই সময়ে এই বিশ্বের পরিস্থিতির (অর্থাৎ বিশ্ব চৈতন্যের জাগরণ)ফলে প্লাবন কমতে লাগলো। যখন প্লাবন কমতে লাগলো তখন বিশ্বের নিমজ্জিত স্থানের উপরিভাগ জেগে উঠলো। এইভাবে জেগে ওঠা স্থানে পঞ্চভুত তাদের প্রত্যেকের শক্তি সহ নিদ্রালু অবস্থা থেকে জেগে উঠল। যতটা সময় বিশ্ব নিমজ্জিত অবস্থায় ছিল_ বন্যা অপসারিত হতেও প্রায় একই সময় লাগলো । বিশ্বে এই প্রলয়ের ফলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে এবং উপরিভাগে যত বস্তু-সামগ্রী ছিল _সব দ্রবীভূত হল । যখন বন্যা কমতে শুরু করল পঞ্চভূত তাদের উপাদান সহ জেগে উঠলো _সেই সময় থেকে ডুবে যাওয়া মহাকাশে পৃথিবীর আকার পেতে থাকলো। যখন বন্যা অপসারিত হোল তখন মহাকাশে পুনর্গঠিত জগতের উপরিভাগ অর্থাৎ প্রথম কঠিন স্তর জেগে উঠলো। এর নাম হলো কৈলাসগিরি বা মাউন্ট সুমেরু যা আজও দেখা যাচ্ছে।
এই সময় হতে বিশ্রামকারী বিশ্বচৈতন্য(Universal dynamism) যা প্রলয়ের শেষে জেগে উঠেছিল কিন্তু কঠিন স্তরের আবির্ভাবের পূর্বেও নিষ্ক্রিয় ছিল __তা কাজ করতে শুরু করলো।
প্রলয়কালে অহং সহ বিশ্ব জাগতিক মন, বস্তু এবং মৌলিক বস্তু বিশ্রাম অবস্থায় ছিল । তাদের জাগরণের কালটা হোল_ বিশ্বে “চৈতন্য অবস্থা”। বিশ্বে তাদের এবং পৃথিবীর উপরিভাগের জাগরনে পৃথিবীর কর্মের সূচনা হলো। … [ক্রমশঃ]