{রেড্ডিজাতির সমাজব্যবস্থা}
(বীরাম্মা নামে একটি মেয়ের বিবাহ সংক্রান্ত আলোচনা চলছিল!)
সেই বৃদ্ধটি ভালোভাবেই জানতো অল্পবয়সী বীরাম্মা তার সঙ্গে বাস করতে রাজি নয় । সে তার মনকে মানিয়ে নিতে পারে নাই। তাই বুড়ো তার ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে লাগলো।
গ্রামবাসীরা বুড়োর পয়সায় মদ খেয়ে বিজয়োৎসব পালন করছিল । ওই দিন বীরাম্মার উপর সতর্ক দৃষ্টির একটু শিথিলতা দেখা গেলো । প্রায় সকলেই মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে ছিল ! একমাত্র বীরাম্মাই মদ খায় নাই । এই সুযোগ নিয়ে সে বুড়োর কুটীর থেকে বেরিয়ে গেল । কিন্তু কোথায় সে যাবে? সে বাবা-মার কাছেই ফিরে যেতে চাইলো । সুতরাং সে বাপের বাড়ির দিকে ছুটতে লাগলো। সে অনেকক্ষণ ধরে ছুটে পেরেন্টাপল্লীতে এসে পৌঁছে, সেখানে কিছুক্ষণ থামল এবং তার পরের পরিস্থিতির কথা সে বারবার চিন্তা করতে লাগলো। হুঁশ ফেরার পর বুড়ো এবং তার দল বুঝতে পারবে যে মেয়েটি পালিয়েছে, তারা সঙ্গে সঙ্গে বেল্লামামিডির দিকে ছুটবে । দেখা পেলেই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তার মা-বাবা এবং গ্রামবাসীরা কেউই তাকে রক্ষা করতে পারবে না।
সুতরাং সে ভাবলো বেল্লামামিডিতে গিয়ে কাজ নাই । তাহলে সে কোথায় যাবে ? এই বুড়োর কবল থেকে _কে তাকে রক্ষা করবে ? কিই বা করা যায় ? কোনো উত্তর সে পেল না !
তাকে রক্ষা করার মতো জগতে কেউ নাই। সে ভাবল যে বেঁচে থেকে তার আর কোনো লাভ নাই ! সে সংকল্প করলো_ সে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে !
কিন্তু মরা অত সহজ নয় । কি করবে ঠিক করতে না পেরে সে খুব ভীত হয়ে পড়ল, কাঁদতে লাগলো । এমন সময়েই স্বামীজী ওখানে পৌঁছে তাকে আশ্রমে নিয়ে এলেন এই হোল মেয়েটির দুঃখের কাহিনী ! একটি হতভাগ্য মেয়ে _যার বয়স 14 বছরও নয়, সে জীবন-মরণ সমস্যার সম্মুখীন !
স্বামীজী সমস্ত ঘটনা তার কাছ থেকে শুনলেন এবং কিছুক্ষণ চিন্তিত হোলেন। তিনি বীরাম্মাকে রক্ষা করার আশ্বাস দিলেন। পরের দিন তিনি বেল্লামামিডিতে তার বাবা-মার কাছে খবর পাঠালেন । বেল্লামামিডি গ্রামের লোক, ভ্রেপল্লী এবং পেরেন্টাপল্লীর লোকেদের তিনি খবর পাঠালেন । ওই তিনটি গ্রামের স্ত্রী-পুরুষ সকলে আশ্রমে এসে জমায়েত হোল। স্বামীজী বীরাম্মাকে দেখিয়ে তার কাহিনী সমবেত লোকজনকে বললেন ।
তিনি বললেন _”মেয়েটির অনিচ্ছায় জোর করে একটা বুড়ো লোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া অন্যায় ! একটা 14 বছরের কম বয়সের মেয়েকে, জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে _এমন এক বুড়োর হাতে তুলে দেওয়া, একটা বিরাট অপরাধ ! একটা ছোট মেয়েকে টেনে গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়াটা ডাকাতি, সম্মতিসূচক বিয়ে নয় ! স্বামী-স্ত্রীর বয়সের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত, এবং বিবাহটা পরস্পরের সম্মতি নিয়ে হওয়া উচিত, বলপ্রয়োগ করে নয়!”
সকলেই খুব মনোযোগের সঙ্গে স্বামীজীর কথাগুলো শুনছিল । স্বামীজী যা বললেন _তা তারা বুঝলো। তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল । একজন বৃদ্ধ লোক বললেন _” কিন্তু এটা খুব প্রাচীন দেশাচার! কেমন করে এটা পাল্টানো সম্ভব !”
স্বামীজী কিছু বিধান দিলেন । সে সব শুনে উপস্থিত মেয়েরা খুব খুশি হোলো। পুরুষরা রাজী হোলো না। কারণ যে প্রথা প্রচলিত আছে_তা পুরুষের অনুকূলে,তাই তাদের কোনো অসুবিধা নাই । পুরুষরা চিন্তা করতে লাগলো । একজন বৃদ্ধ বললো _”আমাদের স্ত্রীর দরকার হলে আমরা কি করবো ? কোনো মেয়ে আমাদের বিয়ে করতে চাইবে না এবং কোনো বাবা-মা তাদের মেয়েকে আমাদের সঙ্গে বিয়ে দেবে না । তাহলে আমাদের পক্ষে স্ত্রী পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে । এই প্রস্তাবিত পরিবর্তন আমাদেরকে অধিকার হতে বঞ্চিত করবে । সুতরাং এটা আমাদের গ্রহণ করা উচিত নয়।”
পুরুষরা তাদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন। তারা তাদের ক্ষতিতে ভয় পাচ্ছে । কিন্তু তাদের নিজেদের মেয়েদের প্রতি না আছে ভালোবাসা, না আছে তার সুখ এবং নিরাপত্তা সম্বন্ধে চিন্তা করার মানসিকতা ! এই সমস্ত লোক ভালোবাসা এবং জ্ঞানশুন্য। এদের মধ্যে স্বার্থবোধ খুব বেশি। এরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। এমনকি নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যার স্বার্থটাও বোঝে না ।
পুরুষরা তার প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না দেখে স্বামীজী আরেকটা প্রস্তাব দিলেন _”যদি তোমরা আমার প্রস্তাব মেনে নাও অর্থাৎ বিচার করে যদি প্রবীণরা ছেলে ও মেয়ে উভয়পক্ষের মতামত নিয়ে বিয়ে ঠিক করে, তারপর “পাসুপু ও কুমকুম” (বিবাহ চুক্তির লক্ষণ) _গুলো বিনিময় করে এবং শেষে প্রথা অনুযায়ী বর যদি কনেকে টেনে নিয়ে গ্রামের শেষ সীমানায় নিয়ে যায় _ তাহলে আশ্রম ওই বিয়ের খরচ বহন করবে ! আশ্রম 35 টাকা করে দেবে । ঐ টাকা দান স্বরূপ।”
প্রত্যেক মহিলাকে নিরতিশয় খুশি দেখাচ্ছিলো । পুরুষদেরও মত পরিবর্তন হোলো। কারণ, তাদের এই ঋণ শোধ করতে হবে না।।
(বীরাম্মা নামে একটি মেয়ের বিবাহ সংক্রান্ত আলোচনা চলছিল!)
সেই বৃদ্ধটি ভালোভাবেই জানতো অল্পবয়সী বীরাম্মা তার সঙ্গে বাস করতে রাজি নয় । সে তার মনকে মানিয়ে নিতে পারে নাই। তাই বুড়ো তার ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে লাগলো।
গ্রামবাসীরা বুড়োর পয়সায় মদ খেয়ে বিজয়োৎসব পালন করছিল । ওই দিন বীরাম্মার উপর সতর্ক দৃষ্টির একটু শিথিলতা দেখা গেলো । প্রায় সকলেই মদ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে ছিল ! একমাত্র বীরাম্মাই মদ খায় নাই । এই সুযোগ নিয়ে সে বুড়োর কুটীর থেকে বেরিয়ে গেল । কিন্তু কোথায় সে যাবে? সে বাবা-মার কাছেই ফিরে যেতে চাইলো । সুতরাং সে বাপের বাড়ির দিকে ছুটতে লাগলো। সে অনেকক্ষণ ধরে ছুটে পেরেন্টাপল্লীতে এসে পৌঁছে, সেখানে কিছুক্ষণ থামল এবং তার পরের পরিস্থিতির কথা সে বারবার চিন্তা করতে লাগলো। হুঁশ ফেরার পর বুড়ো এবং তার দল বুঝতে পারবে যে মেয়েটি পালিয়েছে, তারা সঙ্গে সঙ্গে বেল্লামামিডির দিকে ছুটবে । দেখা পেলেই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তার মা-বাবা এবং গ্রামবাসীরা কেউই তাকে রক্ষা করতে পারবে না।
সুতরাং সে ভাবলো বেল্লামামিডিতে গিয়ে কাজ নাই । তাহলে সে কোথায় যাবে ? এই বুড়োর কবল থেকে _কে তাকে রক্ষা করবে ? কিই বা করা যায় ? কোনো উত্তর সে পেল না !
তাকে রক্ষা করার মতো জগতে কেউ নাই। সে ভাবল যে বেঁচে থেকে তার আর কোনো লাভ নাই ! সে সংকল্প করলো_ সে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে !
কিন্তু মরা অত সহজ নয় । কি করবে ঠিক করতে না পেরে সে খুব ভীত হয়ে পড়ল, কাঁদতে লাগলো । এমন সময়েই স্বামীজী ওখানে পৌঁছে তাকে আশ্রমে নিয়ে এলেন এই হোল মেয়েটির দুঃখের কাহিনী ! একটি হতভাগ্য মেয়ে _যার বয়স 14 বছরও নয়, সে জীবন-মরণ সমস্যার সম্মুখীন !
স্বামীজী সমস্ত ঘটনা তার কাছ থেকে শুনলেন এবং কিছুক্ষণ চিন্তিত হোলেন। তিনি বীরাম্মাকে রক্ষা করার আশ্বাস দিলেন। পরের দিন তিনি বেল্লামামিডিতে তার বাবা-মার কাছে খবর পাঠালেন । বেল্লামামিডি গ্রামের লোক, ভ্রেপল্লী এবং পেরেন্টাপল্লীর লোকেদের তিনি খবর পাঠালেন । ওই তিনটি গ্রামের স্ত্রী-পুরুষ সকলে আশ্রমে এসে জমায়েত হোল। স্বামীজী বীরাম্মাকে দেখিয়ে তার কাহিনী সমবেত লোকজনকে বললেন ।
তিনি বললেন _”মেয়েটির অনিচ্ছায় জোর করে একটা বুড়ো লোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া অন্যায় ! একটা 14 বছরের কম বয়সের মেয়েকে, জীবনের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে _এমন এক বুড়োর হাতে তুলে দেওয়া, একটা বিরাট অপরাধ ! একটা ছোট মেয়েকে টেনে গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়াটা ডাকাতি, সম্মতিসূচক বিয়ে নয় ! স্বামী-স্ত্রীর বয়সের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকা উচিত, এবং বিবাহটা পরস্পরের সম্মতি নিয়ে হওয়া উচিত, বলপ্রয়োগ করে নয়!”
সকলেই খুব মনোযোগের সঙ্গে স্বামীজীর কথাগুলো শুনছিল । স্বামীজী যা বললেন _তা তারা বুঝলো। তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল । একজন বৃদ্ধ লোক বললেন _” কিন্তু এটা খুব প্রাচীন দেশাচার! কেমন করে এটা পাল্টানো সম্ভব !”
স্বামীজী কিছু বিধান দিলেন । সে সব শুনে উপস্থিত মেয়েরা খুব খুশি হোলো। পুরুষরা রাজী হোলো না। কারণ যে প্রথা প্রচলিত আছে_তা পুরুষের অনুকূলে,তাই তাদের কোনো অসুবিধা নাই । পুরুষরা চিন্তা করতে লাগলো । একজন বৃদ্ধ বললো _”আমাদের স্ত্রীর দরকার হলে আমরা কি করবো ? কোনো মেয়ে আমাদের বিয়ে করতে চাইবে না এবং কোনো বাবা-মা তাদের মেয়েকে আমাদের সঙ্গে বিয়ে দেবে না । তাহলে আমাদের পক্ষে স্ত্রী পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠবে । এই প্রস্তাবিত পরিবর্তন আমাদেরকে অধিকার হতে বঞ্চিত করবে । সুতরাং এটা আমাদের গ্রহণ করা উচিত নয়।”
পুরুষরা তাদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন। তারা তাদের ক্ষতিতে ভয় পাচ্ছে । কিন্তু তাদের নিজেদের মেয়েদের প্রতি না আছে ভালোবাসা, না আছে তার সুখ এবং নিরাপত্তা সম্বন্ধে চিন্তা করার মানসিকতা ! এই সমস্ত লোক ভালোবাসা এবং জ্ঞানশুন্য। এদের মধ্যে স্বার্থবোধ খুব বেশি। এরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। এমনকি নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যার স্বার্থটাও বোঝে না ।
পুরুষরা তার প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না দেখে স্বামীজী আরেকটা প্রস্তাব দিলেন _”যদি তোমরা আমার প্রস্তাব মেনে নাও অর্থাৎ বিচার করে যদি প্রবীণরা ছেলে ও মেয়ে উভয়পক্ষের মতামত নিয়ে বিয়ে ঠিক করে, তারপর “পাসুপু ও কুমকুম” (বিবাহ চুক্তির লক্ষণ) _গুলো বিনিময় করে এবং শেষে প্রথা অনুযায়ী বর যদি কনেকে টেনে নিয়ে গ্রামের শেষ সীমানায় নিয়ে যায় _ তাহলে আশ্রম ওই বিয়ের খরচ বহন করবে ! আশ্রম 35 টাকা করে দেবে । ঐ টাকা দান স্বরূপ।”
প্রত্যেক মহিলাকে নিরতিশয় খুশি দেখাচ্ছিলো । পুরুষদেরও মত পরিবর্তন হোলো। কারণ, তাদের এই ঋণ শোধ করতে হবে না।।