স্বামী বাউলানন্দজীর ভ্রমণকালীন সময়ের ঘটনাসমূহ এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো। স্বামীজি ভদ্রাচলমে থাকাকালীন শিবরাত্রির সময় রাম শাস্ত্রীজীকে সাথে নিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে ধ্যানে বসেছিলেন । সারা রাত কেটে গিয়ে যখন সকাল হয়েছে, তখন সেখানে রাম শাস্ত্রীর মা গিয়ে দেখলেন যে, স্বামীজি এবং তার পুত্র শাস্ত্রীজী গভীর ধ্যানে নিমগ্ন । কিছুক্ষণ পর স্বামী বাউলানন্দজী চোখ খুললেন, তিনি দেখলেন রাম শাস্ত্রীর এক চোখ এবং নাকের একটা ছিদ্র দিয়ে জল পরছে এবং তার মা বেহুঁশ অবস্থায় ছেলের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্বামীজী রাম শাস্ত্রীর অবস্থা দেখে খুবই খুশি হলেন। এটা দেখে তিনি নীরব প্রশংসায় হাসতে লাগলেন। পরে রাম শাস্ত্রী ওনাকে বলেছিলেন যে, ওই অবস্থায় তিনি নাদ-ধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলেন! তিনি নাদ-ব্রহ্মের আনন্দ উপলব্ধি করছিলেন । রাম শাস্ত্রীজীর মা সাষ্টাঙ্গে স্বামীজীকে প্রণাম করে ছেলের যে রকম অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে, তারও যেন ঐরূপ অবস্থা প্রাপ্ত হয়__ তার জন্য স্বামীজীর নিকট প্রার্থনা করলেন । মায়ের কথা শুনে স্বামীজী হেসে বললেন, “মা ! তুমি আগেই ঈশ্বরের কৃপা প্রাপ্ত হয়েছো”! কিছুক্ষণ পরে রাম শাস্ত্রী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন। তিনি স্বামীজীকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন, তারপর তাঁর নিকট হতে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। সেদিন তিনি আর মন্দিরের কাজ করতে পারলেন না ।
এই ঘটনার পর রাম শাস্ত্রী মন্দিরের কাজ ছেড়ে দিয়ে তার জন্মভূমির গ্রামে ফিরে গেলেন । এরপর থেকে বাউলানন্দজীর সাথে তার আর কোন যোগাযোগ ছিল না ।
ভদ্রাচলম হোতে দূরে গোদাবরী নদীর মধ্যে এক ছোট্ট পাহাড়ের উপর একটি মন্দির ছিল। এই মন্দিরটি খুবই প্রাচীন! সেই মন্দিরেও শিবরাত্রির উৎসব হোত। স্থানটির নাম “মতিগেডা” । মন্দিরের পুরোহিত নদীর ধারে এক গ্রামে বাস করতেন । তিনিই প্রতিদিন মন্দিরে পূজা করতেন। শিবরাত্রি উৎসবে নিকটবর্তী গ্রাম থেকে অনেক লোক সেখানে পূজা দিতে যায়, সেদিন সেখানে অস্থায়ীভাবে বাজার বসে যায় । যাত্রীরা খাদ্য সামগ্রী সঙ্গে করে নিয়ে এসে এখানে রান্না করে খায়, বালুচরের উপর সারা রাত্রি যাপন করে পরের দিন তারা বাড়ি ফেরে। ফলে পরদিন সেখানে বেশি লোক থাকে না । চলে যাবার আগে অবশিষ্ট খাদ্য সামগ্রী তারা পুরোহিতের খাবার জন্য এই পাহাড়েই রেখে যায়। এই পাহাড়ে দু-একটা গুহা আছে, কথিত আছে বহুকাল থেকে সেখানে তপস্বীরা বাস করছেন! যাত্রীরা অতিরিক্ত খাদ্য সামগ্রী তাঁদের জন্যও ওখানে রেখে দেয়। তবে ওই সময় কোন তপস্বী না থাকলে সমস্ত দ্রব্যগুলি পুরোহিত তার বাড়ি নিয়ে যান । উৎসবের পরের দিন অমাবস্যা, সেদিন স্বামীজী মতিগেডার গুহায় গেলেন । পরমেশ্বর শিবকে পূজা করে তিনি গুহাতে ধ্যানে বসলেন। গুহায় যাবার সময় তিনি তীর্থযাত্রীদের অনুসৃত পথ ধরেই গেলেন। নদীর বাঁধ হোতে নামলেন, নদীর হাঁটুজল পার হয়ে বিস্তৃত বালুচর এর উপর দিয়ে হাঁটলেন_ তারপর পাহাড়ের উপর উঠলেন। এই পাহাড়ের উপরেই শিব মন্দির ।
এই ভ্রমণে স্বামীজী বেশ আনন্দ পেলেন। এই এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করলেন । মন্দিরে স্থিত পরমেশ্বর শিবের কৃপা লাভ করে তিনি ধন্য হোলেন। শীঘ্রই তিনি সেখানেই গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হোলেন। চরম আনন্দ উপলব্ধি করে গভীর রাত্রে হঠাৎ স্বামীজী চোখ খুললেন । তিনি দেখলেন সবকিছু উজ্জ্বল চন্দ্রালোকে ঢাকা । কিন্তু এটা ঠিক চন্দ্রালোক নয়। অসাধারণ দ্যুতি ! যদিও সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত ! তবুও তার চারপাশের সমস্ত স্থান উজ্জ্বল আলোকে ঢাকা ছিল! বালুচর, নদীর বাঁধ, মন্দির বা অন্য কিছুই তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন না ! একমাত্র তিনি দেখতে পেলেন চোখ ঝলসানো আলোর সমুদ্র ! এই আলোকের মধ্যেই দূরে রাম মন্দিরকে তিনি দেখলেন ছোট্ট দাগের মতো। ভদ্রাচলমের যে শিবমন্দিরে তিনি এ পর্যন্ত অবস্থান করছিলেন_ রাম মন্দির তার পাশেই অবস্থিত ছিল! হঠাৎ ওই মন্দিরে যাওয়ার জন্য তিনি হৃদয়ে একটা তাগিদ অনুভব করলেন এবং তৎক্ষণাৎ যাত্রা শুরু করলেন । বিস্তীর্ণ আলোক রাশির উপর দিয়ে তিনি দ্রুতগতিতে অগ্রসর হোতে লাগলেন । চলার পথে কোনো উঁচু নিচু স্থান ছিল না, কোনো রকম বাধাই ছিল না ! ধনুক হতে নিক্ষেপ করা শরের ন্যায়_ তিনি সোজা ঐ মন্দিরে চলে গেলেন । মন্দিরে পৌঁছানোর পর তিনি বুঝতে পারলেন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সেখানে পৌঁছে গেছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন, তখন দেখতে পেলেন দেওয়াল গুলি দৃষ্টির গতি রোধ করছে_যা আগে করছিল না। সেই রাত্রে তিনি ওখানেই ঘুমিয়ে গেলেন ।
পরের দিন সকালে সেই সোজাপথ অর্থাৎ যে পথ ধরে তিনি মন্দিরে এসেছিলেন_ সেটি দেখার ইচ্ছা হলো! কিন্তু তিনি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দেখলেন সেই পথটা কাঁটা-ঝোপ, পাহাড়, গহবর ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ! স্বামীজি ভাবতে লাগলেন এটা কি করে সম্ভব হোতে পারে ! কিন্তু এটা সম্ভব ! মানুষের পক্ষে এমনটি বোঝা যথেষ্ট দুরহ হোলেও __সাধকের পক্ষে এটি সত্য ! ঈশ্বরের কৃপায় সাধকদের জীবনে কত যে রহস্যময় ঘটনা ঘটে __কে তার পরিমাপ করতে পারবে??(ক্রমশঃ)
*MESSAGE TO HUMANITY*
~ _Swami Baulananda_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিশ্বসত্তার বিশ্বশরীর রূপে প্রকাশিত হবার পরে, বিশ্ব সত্তা নিজেকে ব্যক্তিসত্তায় প্রকাশ করতে শুরু কোরলো। এটা হোল অহং-এর মাধ্যমে এবং সর্বেসর্বা বা ঈশ্বরের চিরন্তন প্রকাশের সূত্রে ভৌতিক বস্তু এবং পঞ্চভূতের মাধ্যমে বিশ্বসত্তা কর্তৃক স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সূত্রপাত । এইরূপে ঈশ্বর নিজেকে বিশ্বমনরূপে প্রকাশ করলেন । ফলে অহং-এর উদ্ভব হল এবং এটাই হোল বিশ্বমনের অহং। এর সমন্বয়ে বিশ্বমন_বিশ্বসত্তায় পরিণত হয়েছিল । বিশ্ব অহং-এর মাধ্যমে বিশ্বমন নিজেকে ব্যক্তিমনরূপে প্রকাশ করল । এর সঙ্গে অহং যুক্ত থাকল এবং তার ফলে ব্যক্তিসত্তার উদ্ভব হোল। ব্যক্তিসত্তা নিজের জন্য অহং-এর মাধ্যমে ব্যক্তিশরীর (পুরুষ) গঠন কোরলো। নিজেকে নিজের নিকট উপস্থাপিত কোরলো এবং তৎকালীন বসবাসযোগ্য পৃথিবীর বর্তমান উচ্চ স্থানে বসবাস করতে লাগলো।
বিশ্বমনরূপে ঈশ্বরের প্রকাশের রীতিতে অথবা বিশ্বঅহং-এর সাথে মিলিত হয়ে বিশ্বমনের বিশ্বসত্তায় পরিণত হওয়া, অথবা বিশ্বসত্তার ব্যক্তিসত্তা হওয়ায় এবং সত্তার পুরুষ শরীর গঠনের রীতিতে ঈশ্বর তাঁর চিরন্তনতা হারালেন না বা চিরন্তনতার কিছুমাত্র ঘাটতি হলো না । তার ফলে তাঁর চিরন্তন প্রকাশের অবসান হলো না বা হ্রাস হোল না। বিশ্বে মহাপ্রলয়ের আগে পর্যন্ত বিশ্বসত্তাও তার স্থায়িত্ব, সর্বাবস্থায় তার অস্তিত্বের হারালো না বা এগুলোর হ্রাস হোল না । ঈশ্বর সমস্ত বিষয়বস্তু, সত্তা সহ এই জগতরূপে নিজেকে প্রকাশ করেছেন_ এই আত্মপ্রত্যয় থাকার ফলে ব্যক্তিসত্তা বিশ্বসত্তার সঙ্গে একত্ব হারালো না। এটা ঈশ্বরের সেই সিদ্ধান্ত যে সিদ্ধান্তের বলে মহাপ্রলয়ের সময় জড় অবস্থায় বর্তমান বিশ্বঅহং বিশ্বমনের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, এর ফলে বিশ্বমন বিশ্বসত্তার রূপ নিল । ঈশ্বরের এই সিদ্ধান্ত বা বিশ্বমন,ব্যক্তিমন এবং অহং সম্মিলিত হয়ে শরীর গঠন করলো। এইভাবে সম্মিলিত হওয়ার ফলে বিশ্বসত্তা এবং ব্যক্তিসত্তা_বিশ্ব অহং-এর মাধ্যমে শরীর গঠন করলেন এবং ইহার প্রকাশ ঘটালেন। ব্যক্তিসত্তারূপে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ধরনের সত্তার অর্থাৎ মানবিক, অমানবিক এবং উদ্ভিদের স্বতন্ত্রীকরন সমাপ্ত হোল। পুরুষ মানব শরীর গঠন সমাপ্ত হওয়ার পরই সকল প্রকার সত্তার একটি পুরুষ এবং একটি নারী বা স্ত্রী শরীর গঠন সমাপ্ত হোল।
যে পুরুষ মানবশরীর সর্বপ্রথম পৃথিবীতে অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার অমানবীয় সত্তার সঙ্গে বসবাস শুরু করেছিল __সে, যে সমস্ত সম্পদ দিয়ে তার শরীর গঠিত তা জানতে বা তা কাজে লাগানোর জন্য উদগ্রীব হোল । এই প্রবণতার ফলে ব্যক্তির মধ্যে অহং দেখা দিল । মনের সঙ্গে সহ-অবস্থানের ফলে অহং _ মনে ‘মন’ রূপে দেখা দিলো। এই হলো বস্তুর ভিতরে বস্তুর নীতি এবং বস্তুর ভিতরে বস্তুর কাজ। সত্তার এই প্রবণতার ফলে স্ত্রী-মনুষ্য শরীরের উদ্ভব হোল। পুনরায় দীর্ঘদিন ক্রমাগত সঙ্ঘবদ্ধ থাকার ফলে তাদের সন্তান সন্ততি হোল। এই সন্তানেরা তাদের পূর্ব পুরুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মালো।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান সুমেরু পর্বতের ভিত্তিভূমি হোল হিমালয় পর্বতমালা। হিমালয় পর্বতমালার ভিত্তিভূমি হলো সমভূমি,যা “ভারত” নামে খ্যাত ! পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়কে এই পাঠে ” Emperor Mount” বা “গিরিরাজ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে ! অদৃশ্য সুমেরু চূড়া সহ পর্বতমালা আদি পিতা মাতার বাসস্থান । সেইহেতু এটা অন্যান্য সমস্ত সত্তাসহ মনুষ্যজাতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বাসস্থান ।
মনুষ্যজাতির ভারতের বাইরে গমন এবং ভারতের ভিতর অনুপ্রবেশের যে নথিপত্র পাওয়া যায় তা মাত্র 5 হাজার বৎসরের। যদিও এই নথিপত্র অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ। এই সময়ের পূর্বে যে সমস্ত মানুষ ভারতের বাইরে গিয়েছিলো তারা কোন স্থান হতে গিয়েছিল _তা ভুলে গেল! ঠিক একইভাবে যে সমস্ত মানুষ ভারতের বাইরে গেল না, বর্তমান সময় পর্যন্ত ভারতে বসবাস করতে লাগলো _ তারাও ভারতের বাইরে চলে যাওয়া মানুষকে ভুলে গেল। যে সমস্ত মানুষ ভারতের বাইরে গিয়ে বসতি স্থাপন না করে তাদের মাতৃভূমিতে বসবাস করতে লাগলো _ তারাই বর্তমানে “ভারতবাসী” নামে খ্যাত! সুতরাং, সমগ্র মানবজাতি তাদের পূর্বপুরুষ সম্বন্ধে অবগত হোক্। সমগ্র মানবজাতি তাদের পূর্বপুরুষদের নিঃসঙ্গতা সম্বন্ধে অবহিত হোক ।
[Messege To Humanity__ এখানেই শেষ! এরপর Spiritual Enquiry_শুরু হবে।]
এই ঘটনার পর রাম শাস্ত্রী মন্দিরের কাজ ছেড়ে দিয়ে তার জন্মভূমির গ্রামে ফিরে গেলেন । এরপর থেকে বাউলানন্দজীর সাথে তার আর কোন যোগাযোগ ছিল না ।
ভদ্রাচলম হোতে দূরে গোদাবরী নদীর মধ্যে এক ছোট্ট পাহাড়ের উপর একটি মন্দির ছিল। এই মন্দিরটি খুবই প্রাচীন! সেই মন্দিরেও শিবরাত্রির উৎসব হোত। স্থানটির নাম “মতিগেডা” । মন্দিরের পুরোহিত নদীর ধারে এক গ্রামে বাস করতেন । তিনিই প্রতিদিন মন্দিরে পূজা করতেন। শিবরাত্রি উৎসবে নিকটবর্তী গ্রাম থেকে অনেক লোক সেখানে পূজা দিতে যায়, সেদিন সেখানে অস্থায়ীভাবে বাজার বসে যায় । যাত্রীরা খাদ্য সামগ্রী সঙ্গে করে নিয়ে এসে এখানে রান্না করে খায়, বালুচরের উপর সারা রাত্রি যাপন করে পরের দিন তারা বাড়ি ফেরে। ফলে পরদিন সেখানে বেশি লোক থাকে না । চলে যাবার আগে অবশিষ্ট খাদ্য সামগ্রী তারা পুরোহিতের খাবার জন্য এই পাহাড়েই রেখে যায়। এই পাহাড়ে দু-একটা গুহা আছে, কথিত আছে বহুকাল থেকে সেখানে তপস্বীরা বাস করছেন! যাত্রীরা অতিরিক্ত খাদ্য সামগ্রী তাঁদের জন্যও ওখানে রেখে দেয়। তবে ওই সময় কোন তপস্বী না থাকলে সমস্ত দ্রব্যগুলি পুরোহিত তার বাড়ি নিয়ে যান । উৎসবের পরের দিন অমাবস্যা, সেদিন স্বামীজী মতিগেডার গুহায় গেলেন । পরমেশ্বর শিবকে পূজা করে তিনি গুহাতে ধ্যানে বসলেন। গুহায় যাবার সময় তিনি তীর্থযাত্রীদের অনুসৃত পথ ধরেই গেলেন। নদীর বাঁধ হোতে নামলেন, নদীর হাঁটুজল পার হয়ে বিস্তৃত বালুচর এর উপর দিয়ে হাঁটলেন_ তারপর পাহাড়ের উপর উঠলেন। এই পাহাড়ের উপরেই শিব মন্দির ।
এই ভ্রমণে স্বামীজী বেশ আনন্দ পেলেন। এই এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করলেন । মন্দিরে স্থিত পরমেশ্বর শিবের কৃপা লাভ করে তিনি ধন্য হোলেন। শীঘ্রই তিনি সেখানেই গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হোলেন। চরম আনন্দ উপলব্ধি করে গভীর রাত্রে হঠাৎ স্বামীজী চোখ খুললেন । তিনি দেখলেন সবকিছু উজ্জ্বল চন্দ্রালোকে ঢাকা । কিন্তু এটা ঠিক চন্দ্রালোক নয়। অসাধারণ দ্যুতি ! যদিও সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত ! তবুও তার চারপাশের সমস্ত স্থান উজ্জ্বল আলোকে ঢাকা ছিল! বালুচর, নদীর বাঁধ, মন্দির বা অন্য কিছুই তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন না ! একমাত্র তিনি দেখতে পেলেন চোখ ঝলসানো আলোর সমুদ্র ! এই আলোকের মধ্যেই দূরে রাম মন্দিরকে তিনি দেখলেন ছোট্ট দাগের মতো। ভদ্রাচলমের যে শিবমন্দিরে তিনি এ পর্যন্ত অবস্থান করছিলেন_ রাম মন্দির তার পাশেই অবস্থিত ছিল! হঠাৎ ওই মন্দিরে যাওয়ার জন্য তিনি হৃদয়ে একটা তাগিদ অনুভব করলেন এবং তৎক্ষণাৎ যাত্রা শুরু করলেন । বিস্তীর্ণ আলোক রাশির উপর দিয়ে তিনি দ্রুতগতিতে অগ্রসর হোতে লাগলেন । চলার পথে কোনো উঁচু নিচু স্থান ছিল না, কোনো রকম বাধাই ছিল না ! ধনুক হতে নিক্ষেপ করা শরের ন্যায়_ তিনি সোজা ঐ মন্দিরে চলে গেলেন । মন্দিরে পৌঁছানোর পর তিনি বুঝতে পারলেন অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সেখানে পৌঁছে গেছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন, তখন দেখতে পেলেন দেওয়াল গুলি দৃষ্টির গতি রোধ করছে_যা আগে করছিল না। সেই রাত্রে তিনি ওখানেই ঘুমিয়ে গেলেন ।
পরের দিন সকালে সেই সোজাপথ অর্থাৎ যে পথ ধরে তিনি মন্দিরে এসেছিলেন_ সেটি দেখার ইচ্ছা হলো! কিন্তু তিনি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দেখলেন সেই পথটা কাঁটা-ঝোপ, পাহাড়, গহবর ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ! স্বামীজি ভাবতে লাগলেন এটা কি করে সম্ভব হোতে পারে ! কিন্তু এটা সম্ভব ! মানুষের পক্ষে এমনটি বোঝা যথেষ্ট দুরহ হোলেও __সাধকের পক্ষে এটি সত্য ! ঈশ্বরের কৃপায় সাধকদের জীবনে কত যে রহস্যময় ঘটনা ঘটে __কে তার পরিমাপ করতে পারবে??(ক্রমশঃ)
*MESSAGE TO HUMANITY*
~ _Swami Baulananda_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিশ্বসত্তার বিশ্বশরীর রূপে প্রকাশিত হবার পরে, বিশ্ব সত্তা নিজেকে ব্যক্তিসত্তায় প্রকাশ করতে শুরু কোরলো। এটা হোল অহং-এর মাধ্যমে এবং সর্বেসর্বা বা ঈশ্বরের চিরন্তন প্রকাশের সূত্রে ভৌতিক বস্তু এবং পঞ্চভূতের মাধ্যমে বিশ্বসত্তা কর্তৃক স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সূত্রপাত । এইরূপে ঈশ্বর নিজেকে বিশ্বমনরূপে প্রকাশ করলেন । ফলে অহং-এর উদ্ভব হল এবং এটাই হোল বিশ্বমনের অহং। এর সমন্বয়ে বিশ্বমন_বিশ্বসত্তায় পরিণত হয়েছিল । বিশ্ব অহং-এর মাধ্যমে বিশ্বমন নিজেকে ব্যক্তিমনরূপে প্রকাশ করল । এর সঙ্গে অহং যুক্ত থাকল এবং তার ফলে ব্যক্তিসত্তার উদ্ভব হোল। ব্যক্তিসত্তা নিজের জন্য অহং-এর মাধ্যমে ব্যক্তিশরীর (পুরুষ) গঠন কোরলো। নিজেকে নিজের নিকট উপস্থাপিত কোরলো এবং তৎকালীন বসবাসযোগ্য পৃথিবীর বর্তমান উচ্চ স্থানে বসবাস করতে লাগলো।
বিশ্বমনরূপে ঈশ্বরের প্রকাশের রীতিতে অথবা বিশ্বঅহং-এর সাথে মিলিত হয়ে বিশ্বমনের বিশ্বসত্তায় পরিণত হওয়া, অথবা বিশ্বসত্তার ব্যক্তিসত্তা হওয়ায় এবং সত্তার পুরুষ শরীর গঠনের রীতিতে ঈশ্বর তাঁর চিরন্তনতা হারালেন না বা চিরন্তনতার কিছুমাত্র ঘাটতি হলো না । তার ফলে তাঁর চিরন্তন প্রকাশের অবসান হলো না বা হ্রাস হোল না। বিশ্বে মহাপ্রলয়ের আগে পর্যন্ত বিশ্বসত্তাও তার স্থায়িত্ব, সর্বাবস্থায় তার অস্তিত্বের হারালো না বা এগুলোর হ্রাস হোল না । ঈশ্বর সমস্ত বিষয়বস্তু, সত্তা সহ এই জগতরূপে নিজেকে প্রকাশ করেছেন_ এই আত্মপ্রত্যয় থাকার ফলে ব্যক্তিসত্তা বিশ্বসত্তার সঙ্গে একত্ব হারালো না। এটা ঈশ্বরের সেই সিদ্ধান্ত যে সিদ্ধান্তের বলে মহাপ্রলয়ের সময় জড় অবস্থায় বর্তমান বিশ্বঅহং বিশ্বমনের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন, এর ফলে বিশ্বমন বিশ্বসত্তার রূপ নিল । ঈশ্বরের এই সিদ্ধান্ত বা বিশ্বমন,ব্যক্তিমন এবং অহং সম্মিলিত হয়ে শরীর গঠন করলো। এইভাবে সম্মিলিত হওয়ার ফলে বিশ্বসত্তা এবং ব্যক্তিসত্তা_বিশ্ব অহং-এর মাধ্যমে শরীর গঠন করলেন এবং ইহার প্রকাশ ঘটালেন। ব্যক্তিসত্তারূপে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ধরনের সত্তার অর্থাৎ মানবিক, অমানবিক এবং উদ্ভিদের স্বতন্ত্রীকরন সমাপ্ত হোল। পুরুষ মানব শরীর গঠন সমাপ্ত হওয়ার পরই সকল প্রকার সত্তার একটি পুরুষ এবং একটি নারী বা স্ত্রী শরীর গঠন সমাপ্ত হোল।
যে পুরুষ মানবশরীর সর্বপ্রথম পৃথিবীতে অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার অমানবীয় সত্তার সঙ্গে বসবাস শুরু করেছিল __সে, যে সমস্ত সম্পদ দিয়ে তার শরীর গঠিত তা জানতে বা তা কাজে লাগানোর জন্য উদগ্রীব হোল । এই প্রবণতার ফলে ব্যক্তির মধ্যে অহং দেখা দিল । মনের সঙ্গে সহ-অবস্থানের ফলে অহং _ মনে ‘মন’ রূপে দেখা দিলো। এই হলো বস্তুর ভিতরে বস্তুর নীতি এবং বস্তুর ভিতরে বস্তুর কাজ। সত্তার এই প্রবণতার ফলে স্ত্রী-মনুষ্য শরীরের উদ্ভব হোল। পুনরায় দীর্ঘদিন ক্রমাগত সঙ্ঘবদ্ধ থাকার ফলে তাদের সন্তান সন্ততি হোল। এই সন্তানেরা তাদের পূর্ব পুরুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মালো।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান সুমেরু পর্বতের ভিত্তিভূমি হোল হিমালয় পর্বতমালা। হিমালয় পর্বতমালার ভিত্তিভূমি হলো সমভূমি,যা “ভারত” নামে খ্যাত ! পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়কে এই পাঠে ” Emperor Mount” বা “গিরিরাজ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে ! অদৃশ্য সুমেরু চূড়া সহ পর্বতমালা আদি পিতা মাতার বাসস্থান । সেইহেতু এটা অন্যান্য সমস্ত সত্তাসহ মনুষ্যজাতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বাসস্থান ।
মনুষ্যজাতির ভারতের বাইরে গমন এবং ভারতের ভিতর অনুপ্রবেশের যে নথিপত্র পাওয়া যায় তা মাত্র 5 হাজার বৎসরের। যদিও এই নথিপত্র অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ। এই সময়ের পূর্বে যে সমস্ত মানুষ ভারতের বাইরে গিয়েছিলো তারা কোন স্থান হতে গিয়েছিল _তা ভুলে গেল! ঠিক একইভাবে যে সমস্ত মানুষ ভারতের বাইরে গেল না, বর্তমান সময় পর্যন্ত ভারতে বসবাস করতে লাগলো _ তারাও ভারতের বাইরে চলে যাওয়া মানুষকে ভুলে গেল। যে সমস্ত মানুষ ভারতের বাইরে গিয়ে বসতি স্থাপন না করে তাদের মাতৃভূমিতে বসবাস করতে লাগলো _ তারাই বর্তমানে “ভারতবাসী” নামে খ্যাত! সুতরাং, সমগ্র মানবজাতি তাদের পূর্বপুরুষ সম্বন্ধে অবগত হোক্। সমগ্র মানবজাতি তাদের পূর্বপুরুষদের নিঃসঙ্গতা সম্বন্ধে অবহিত হোক ।
[Messege To Humanity__ এখানেই শেষ! এরপর Spiritual Enquiry_শুরু হবে।]