[প্রভার্টি রিলিফ সোসাইটির সংকটকাল ও সংকটের সমাধান।।]
{স্বামী বাউলানন্দজী শ্রীসুন্দরম্ কে বলছিলেন} ….. “এটা হোল শ্রীরামকৃষ্ণের কর্মসূচী। পৃথিবীর কোনো শক্তি এই কর্মসূচী বন্ধ করতে পারবে না। বর্তমান সঙ্কট সাময়িক। রামকৃষ্ণের আদেশ এবং নির্দেশ এই সংগঠনের ভিত্তিভূমি। রামকৃষ্ণ হলেন দীনবন্ধু। তিনি শক্তির পূর্ণ প্রকাশ। তিনি সর্বজ্ঞ এবং সমগ্র বিশ্বের বিদ্যাকল্পদ্রুম।
যাদের অর্থ এবং সেবা তাঁর কাজে লাগবে তারা ভাগ্যবান। তাদের বুঝা উচিত যে বহু জন্মের পুণ্যের ফলে তারা এই সুযােগ পেয়েছে ।
এই রাজমুন্দ্ৰী শহরে অনেক ব্যবসায়ী এবং বড় বড় অফিসার আছে। সকলেই প্রভাব, প্রতিপত্তি এবং মর্যাদার দিক থেকে তোমার চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু তোমার মত রামকৃষ্ণের কাজ
করার ভাগ্য সকলের নেই। তুমি যে কাজের ভার নিতে যাচ্ছো, তা হালকা কাজ নয়! এই কাজ আয়াসসাধ্য নয়, বরং কঠিন এবং জটিল। যদি তুমি ডুবন্ত লােককে সাহায্য করতে চাও, তাহলে তােমাকে নীচে ডুবে তাকে সাহায্য করতে হবে এবং ডাঙ্গায় তুলতে হবে। সমভাবে সম্মুখীন হতে হবে। একমাত্র তখনই বুঝা যাবে–প্রকৃত সুখ কি । কারণ_ যারা কেবল সুখ ভোগ করেছে এবং কখনই দুঃখ ভােগ করেনি–তারা প্রকৃত সুখ ভােগ করেনি। এবং তারা পরিতৃপ্তও হয়নি। যারা দুঃখ ভােগ করেছে তারা সামান্যতম সুখেই পরিতৃপ্ত হয়। পরিতৃপ্তি হতে আসে আনন্দ। সুতরাং দুঃখের সম্মুখীন হওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর হতে হবে । যে ভাবনা তোমার মনে উদয় হচ্ছে, তা তোমার ভেবো না–ওটা শ্রীরামকৃষ্ণের কর্মসূচী।
শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের কাজ নিজেই করছেন। এই বিরাট যজ্ঞে, এই পবিত্র কর্মধারায় আমরা যন্ত্র মাত্র। এই কর্মধারায় তুমি যন্ত্ররূপে কাজে লাগলে তুমি ভাগ্যবান।”
__শ্রীসুন্দরম স্বামীজীর কথাগুলি মন দিয়ে শুনলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে তার বুদ্ধি খুব তীক্ষ্ণ। এতে তার বুদ্ধি পারদের মত দ্রুত কাজ করে । নতুন কর্মের প্রবর্তন করা এবং একটা সংগঠনকে বহুমুখী করে তোলার কথা তাঁকে বেশ আনন্দ দিল । যে কাজ তাঁর আছে তাতে তিনি তৃপ্ত নন। পূর্বে যেমন ছিলেন এখন তেমনই থাকা তাঁর লক্ষ্য নয় । তাঁর উন্নত মস্তিষ্ক সবসময় নূতন কিছু প্রবর্তন এবং উন্নয়নের দিকে ছােটে। সমস্ত বাধা-বিপত্তি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হোলেও তিনি ওসবের পরোয়া করেন না। সমগ্র উদ্যম এবং প্রচেষ্টা নিয়ে তিনি ঐ সমস্ত বাধা জয় করেন। বাধা পেলেও যে কোনো প্রকারে বাধা কাটানো যাবে–এটা তার দূঢ় বিশ্বাস। তিনি অনুভব করতেন—কিছুই অসম্ভব নয়। অসম্ভবকে সম্ভব করতে তিনি পারঙ্গম।
স্বামীজী সুন্দরমকে ‘সাধ্যম’ বলে ডাকতেন। স্বামীজীর সংস্পর্শে এসে তিনি আরও ক্রিয়াশীল হয়ে উঠলেন। প্রথম সংস্পর্শে অবর্ণনীয় আনন্দ অনুভব করলেন। তিনি স্বামীজীর চরণে নিজেকে নিবেদন করলেন। সাষ্টাঙ্গে স্বামীজীকে প্রণাম করলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের নাম নিয়ে স্বামীজী তাকে তুলে জোৱ আলিঙ্গন করলেন। এই আলিঙ্গন সাধ্যমের শরীরে এক পুলক জাগল এবং তার মধ্যে একটা অসাধারণ উদ্যমের সঞ্চার করল। তার গায়ের লােম খাড়া হয়ে গেল। তার অনুভব হল যেন তিনি অন্য সত্তা। সে রাত্রে তিনি দ্বিগুণ উৎসাহ এবং শক্তি নিয়ে বাড়ী ফিরলেন ।(ক্রমশঃ)