[ প্রোভার্টি রিলিফ সোসাইটির সমস্যা ও সমাধানের রাস্তা]
আইনজীবী ভিয়ান্নার কথামতো__ স্বামীজী, ভিয়ান্না পান্তুলু এবং সাধ্যম্ দেখা করলেন কো-অপারেটিভ সোসাইটির সচিব শ্রী সত্যনারায়ণের সঙ্গে । তিনি খুব ধৈর্যের সঙ্গে সমস্যার কথাগুলো শুনলেন । তারপর তিনি বললেন _”হ্যাঁ স্বামীজী! আদিবাসীদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দায়িত্ব সরকারেরই নেওয়া উচিত! তাই আপনাদের প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করা সরকারি কর্তব্য । তিনি স্বামীজীর সই করা দরখাস্তের উপর নিজের মতামত জানিয়ে সই করে দিলেন এবং সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন ।
রাজ্যপালের উপদেষ্টা শ্রীরামামূর্তি__ স্বামীজী এবং তাঁর কাজকর্মের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই অবহিত ছিলেন । পুলিশ এবং সিআইডি থেকে তাঁকে যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল, তাতে সমস্ত তথ্য ছিল । স্বামীজীকে তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে স্বাগত জানালেন, বললেন_”বলুন স্বামীজী_ আপনার কি নির্দেশ !”এই কথা শুনে স্বামীজী শুধু হাসলেন ।
ভিয়ান্না পান্তলু সমস্যাটা বিশদভাবে খুলে বললেন। সব শুনে রামামূর্তি বললেন _”স্বামীজী! যেহেতু আপনি আমাদের কাজটা করছেন, সরকারি সহযোগিতা আপনার পাওয়া উচিত!”
নিজের সরকারি শ্রী শিবশংকরের সাথে আলোচনা করে তখনই শ্রী রামামূর্তি লিখিতভাবে অর্ডার পাস করিয়ে দিলেন এবং তাঁর নির্দেশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেও জানিয়ে দেওয়া হোলো!
স্বামীজী আরেকবার হেসে কৃতজ্ঞতা জানালেন এবং শ্রী রামামূর্তির বিবেচনা, উদারতা, বিচারবোধ এবং কর্মতৎপরতার জন্য তাঁকে প্রভূত আশীর্বাদ করলেন!
এত কম প্রচেষ্টায় এবং এত কম সময়ের মধ্যে সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়_ এরকম নজির বিরল ! মাদ্রাজ সরকারের ইতিহাসে প্রথম এবং সম্ভবত শেষ এরকমটা হোলো ! সকলেই খুব খুশি হোলেন। কিন্তু খুশি হোলেন না কেবল ব্যাংকের ম্যানেজার, যিনি প্রথম থেকেই এর বিরোধ করার চেষ্টা করছিলেন। যখন টাকার অভাবে পি আর এস-এর কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল _তখন তিনি মনে মনে খুব খুশী হচ্ছিলেন ! কিন্তু যখনই তিনি দু লাখ টাকা ঋণের জন্য সরকারি গ্যারান্টি হাতে পেলেন, তখন তাঁর মাথায় যেন বজ্রপাত হোল!
কারুর মনে কোনো সন্দেহ রইল না যে, ‘স্বামীজীর মধ্যে বিশেষ ভগবৎ শক্তি রয়েছে! তিনি পারেন ‘পাশবিকতাকে দেবতা’-য় রূপান্তর করতে! এই ভগবৎ শক্তির বিরুদ্ধে কার‌ই বা লড়াই করার ক্ষমতা আছে !
কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা নাস্তিক এবং ‘ভগবৎ ইচ্ছা বলে যে কিছু আছে’_ একথা তাঁরা মানেন না ! তাঁদের মতে মনুষ্য বুদ্ধিই শ্রেষ্ঠ ! ব্যাঙ্ক ম্যানেজার মনে করলেন যে, যদিও বা দৈব বলে কিছু থাকে __তাকে সর্বশক্তি দিয়ে বিরোধ করতে হবে !
“জঙ্গলে যেসব বাঁশ কেটে নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেগুলো যদি সিকিউরিটি হিসাবে গণ্য হয় __তবে তা সরকারী টাকা জলে ফেলে দেবার মতো ব্যাপার হচ্ছে” _ সরকারি স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে তিনি সরাসরি এইসব কথা বলে বিরোধ করতে লাগলেন এবং টাকা পেতে যথাসম্ভব দেরী করিয়ে দেওয়া যায় _ তার জন্য সচেষ্ট হোলেন!
ব্যাংক ম্যানেজারের এই ধরনের অসহযোগিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পি আর এস লিখিতভাবে কো-অপারেটিভ সমিতির সচিবকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ জানালেন। সমিতির যুগ্ম সচিব সুব্রহ্মনিয়ম নাইডু কে পাঠানো হোল ! যার এই সমস্ত বিষয়ে অসাধারণ প্রশাসনিক দক্ষতা ছিল! স্টেশনে তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা এবং হরি,যিনি স্বামীজীর তরফ থেকে তাঁকে একটা গোলাপফুল উপহার দিয়েছিলেন ! এটা পেয়ে যুগ্মসচিব বলেছিলেন যে,_” এই গোলাপ ফুলের মূল্য সোনার চেয়েও বেশি!”
এরপর ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে তাঁর দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়েছিল । সমস্যার সবগুলো দিক ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সরকারের উন্নয়নের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এই সমস্ত সৎকর্মে নীতি-রীতি, নিয়ম-কানুনের বেড়াজাল অতিক্রম করে সরকারের উচিত তৎপর হওয়া! প্রয়োজন হলে আইন সংশোধন করে কাজ যাতে দ্রুত এগিয়ে যায়_ সেই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিৎ ! কিন্তু সরকারি অফিসের কর্মচারীরা অকারণ ছিদ্র বের করে, যাতে সরকারি অনুমোদন প্রয়োগ না হয় সেদিকে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন ! সকলের বোঝা উচিত যে, যাতে জনগণের কল্যাণ তাতে সরকারের‍ও মঙ্গল। তাই সাধারন মানুষের সাথে যখন অবিচার করা হয় তখন তাতে সরকারেরও স্বার্থহানি হয়!(ক্রমশঃ)