পি আর এস জানালো যে, তাদের কাছে প্রচুর কাটা বাঁশ আছে, যার বাজারে অনেক মুল্য! ব্যাংক ম্যানেজার বললেন যে, রাজামুন্দ্রী পৌঁছালে সেই বাঁশের মূল্য পাওয়া যায়, নইলে কোনো মূল্য নাই ! শ্রীনাইডু একথায় একমত হোলেন । ম্যানেজার জানালেন _”প্রথম কিস্তি শোধ না হলে বাঁশ বার করা যাবেনা!”
তখন শ্রী সত্যনাথন তাঁর সিদ্ধান্ত জানালেন_ “বনবিভাগের অফিসাররা গিয়ে দেখে আসবেন কতটা বাঁশ কেটে রাখা আছে এবং রাজামুন্দ্রিতে আনলে সেই বাঁশ থেকে কত টাকা দাম পাওয়া যাবে ! সেই অনুযায়ী ঋণ দিতে আমাদের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়!”
ম্যানেজার বললেন,_ “এইভাবে মূল্য ধার্য করা সম্ভব নয়!” এই কথায় শ্রী সত্যনাথন স্পষ্টতই বিরক্ত হলেন ! তিনি বললেন _”সেটা আমরা বিচার করে আপনাকে জানাবো! সরকারি স্বার্থ দেখা আমাদের কাজ, যারা সরকারি কর্মচারী! এ দায়িত্ব আপনাদের একার দায়িত্বে পড়ে না ! বন বিভাগের অফিসারদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এই ঋণ দেওয়া হবে।”
ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বললেন _”পি আর এস-এর উৎপাদনের ব্যাপারে কোনো অধিকার নাই!” এই কথা শুনে সত্যনাথন রেগে গিয়ে বললেন _”যে টাকাটা আমরা দেব, সেখান থেকেই যাতে প্রথম কিস্তিটা ফেরৎ করা হয়, সেটা আমরা দেখব! যাইহোক, কোনো কারণে যেন কাজ শুরু করতে দেরি না হয় ! টাকাটা দেওয়ার জন্য আপনারা প্রস্তুত হন! যদি অহেতুক দেরি করেন _তবে তার পরিণতির জন্য আপনার ব্যাংক‌ই দায়ী হবে!”
পরদিন সকালে বনবিভাগের অফিসাররা তদন্ত করে ফিরে এলেন। দুপুরে পৌঁছালেন পেরেন্টাপল্লীতে । বনবিভাগের অফিসারদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে এক লক্ষ চুরাশি হাজার টাকা স্বামীজীর হাতে তুলে দেওয়া হবে । সত্যনাথন বললেন _”স্বামীজী! আপনি যদি এখন আমাদের সাথে রাজামুন্দ্রীতে আসেন, তবে ওই টাকাটা আমরা আপনাকে দিয়ে দেব । বাকি ষোল হাজার টাকা যদি প্রয়োজন হয়, পরে ব্যবস্থা হয়ে যাবে !” স্বামীজী রাজি হোলেন।
আধঘন্টা পরে আমরা দেবীপট্রনম্ থেকে রাজামুন্দ্রি রওনা হোলাম কয়েকটি গাড়িতে। মাঝপথে একটি জায়গায় দেখি কিছু মানুষ একটা তেঁতুল গাছের তলায় বসে জটলা করছে, আর ধূমপান করছে । একটি 18 বছরের মেয়েকে নিয়ে দু’দল লোক টানাটানি করছে ! মেয়েটি কাঁদছে_ কিন্তু কারও ভ্রুক্ষেপ নাই! স্বামীজী গাড়ি থেকে নেমে গর্জন করে বললেন _”এই মা-কে তোমরা ছেড়ে দাও!”স্বামীজীর গর্জন শুনে লোকগুলো হতভম্ব হয়ে গেল ! তখন আমরা এগিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলাম _”ইনি পেরেন্টাপল্লীর স্বামীজী”! একথা শুনে অনেকেই স্বামীজীকে নমস্কার কোরলো । স্বামীজী জিজ্ঞাসা করলেন _”এখানে কি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে?”
ওরা যা বলল,তা হোল__এক যুবকের সাথে এই মেয়েটির সম্পর্ক আছে ! দুজনেই দুজনকে ভালোবাসে এবং বিয়ে করতে আগ্রহী ! এদিকে মেয়েটির এক পিসতুতো ভাই আছে, যার সাথে পারিবারিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিয়ে হবার কথা! কিন্তু মেয়েটি এই বিয়েতে রাজি নয় ! এই ঘটনা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ! স্বামীজী মেয়েটিকে প্রশ্ন করলেন_”তুমি কি চাও?” মেয়েটি জানালো যে, সে ওই যুবককে বিয়ে করতে চায়। যুবকটিকে প্রশ্ন করে করতে সেও জানালো যে, সে মেয়েটিকে বিয়ে করতে রাজি আছে ! স্বামীজী বললেন _”ঠিক আছে, তোমরা দুজনেই গাড়িতে উঠে পড়ো!” তাদের রাজামুন্দ্রিতে নিয়ে আসা হোল!
পরদিন সকালে ওই দম্পতিকে কাছে ডেকে স্বামীজী বললেন _”যদি ইচ্ছা হয়, তোমরা আমাদের সাথে পেরেন্টাপল্লীতে থাকতে পারো । জঙ্গলে কাজ করলে মজুরি পাবে এবং থাকা খাওয়ার কোনো অসুবিধা হবে না ! যদি অন্য কোথাও চলে যেতে চাও, তাহলে তোমাদের যাবার ভাড়া দিয়ে দেওয়া হবে । তোমরা গ্রামে আর ফিরে যাবার চেষ্টা করোনা। ওরা তোমাদের পেলে মেরে ফেলবে!” চার-পাঁচ দিন ওখানে থেকে ওই দম্পতি চলে গেল । স্বামীজী ওদের যাবার ভাড়া, শাড়ি, ধুতি ইত্যাদি দিয়ে দিলেন‌। চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে ওই সমস্ত উচ্চপদস্থ অফিসারেরা বুঝলেন যে, এই দুস্থ অসহায় দরিদ্র আদিবাসীদের জন্য স্বামীজীই হচ্ছেন উপযুক্ত! কি কারনে এই সরল অশিক্ষিত আদিবাসীরা স্বামীজীকে ভগবানের মতো মনে করে _সেটাও বোঝা গেল ! রাজামুন্দ্রিতে স্বামীজীকে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া হোলো। প্রথম সরকারি কিস্তি শোধ করা হলো । সরকারি কোষাগারে এবং আরো কিছু প্রয়োজনীয় প্রাপ্য মিটিয়ে স্বামীজী বাকি টাকাটা নিয়ে পেরেন্টাপল্লী ফিরে গেলেন।
আরো একবার প্রমাণিত হয়ে গেল যে, দৈবশক্তির কাছে আর সমস্ত কিছু তুচ্ছ হয়ে যায় ! যথাকালে দৈবশক্তির প্রকাশ ঘটে এবং তখন অন্যান্য অশুভ শক্তির আস্ফালন বন্ধ হয়ে যায়!(ক্রমশঃ)