[“ঈশ্বরের অদ্ভুত ইচ্ছা”-র শেষাংশ!]
(পি আর এস-এর কাটা বাঁশ ডিপোয় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো)
ঠিক এই সময় বণিকদের সঙ্গে মেয়ে-মজুরদের ঝগড়া বেধে গেল ! মজুররা ধর্মঘটের ডাক দিল।
আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মীদের কোনো অভিযোগ ছিল না । কারণ বাজারের তুলনায় ওদেরকে আমরা বেশি মজুরি দিচ্ছিলাম। কিন্তু তাদেরকে ইউনিয়নের নির্দেশ পালন করতে হোলো। ফলে তারা কাজ বন্ধ করে দিল। স্বামীজীর নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কিন্তু বিলম্ব করতে চাইলাম না । সুতরাং আমরা অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে অন্য মজুর নিয়োগ করলাম । কাজের ভার কমাবার জন্য সারা দিনরাত কাজ করতে লাগলাম । বাঁশ আসতে লাগলো । ডিপো বাঁশেতে ভর্তি হয়ে গেল । ডিপোর বাইরেও বাঁশের স্তুপ হয়ে গেল । পথের দু’ধারে যতটা সম্ভব জায়গা আমরা দখল করে বাঁশ মজুত করতে লাগলাম। কাটা বাঁশ মজবুত করে বেঁধে বান্ডিল করে রাখা হোলো । ডিপোর বাইরে বাঁশের গগনচুম্বী স্তুপ হয়ে গেল । জুন মাসে একদিন রাত্রি দশটা নাগাদ আমরা কাজকর্ম সেরে নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরলাম । পরের দিন সকালে নদীর ধারে গিয়ে দেখলাম বানের জল নদীর পাড় ছাপিয়ে আমাদের যেখানে বাঁশের লগড়ি ছিল, সেখানে পৌঁছেছে ! আমরা, স্বামীজীর নির্দেশমতো অধিক মজুরি দিয়ে বেসরকারি মজুর নিয়োগ করার গুরুত্ব বুঝতে পারলাম।।
জুন মাসের শেষে পি আর এস এর 3 লক্ষ টাকারও বেশি মূল্যের বাঁশ মজুত করে ফেললো । ওই টাকায় ঋণ শোধ করা যাবে এবং বেশ কিছু লাভ পাওয়া যাবে । কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা করেও যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করার টাকা আমরা পেলাম না । আশা ছিল আমরা জুন মাসের শেষে ঋণ পরিশোধ করে ফেলব। ব্যাংকের অধ্যক্ষ বরাবর পি আর এসের বিরোধী ছিলেন । তিনি আমাদেরকে অপদস্ত করার সুযোগের অপব্যবহার করলেন না। আমরা নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি খুব খুশি হোলেন । তিনি এই মর্মে নোটিশ জারি করলেন যে, যেহেতু পি আর এস তার কথামতো নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারে নাই _সেহেতু ওই সংস্থাকে আর লোন দেওয়া হবে না! আমাদের সঙ্গীন অবস্থা দেখা দিলো। পি আর এস কে পুনরায় নোটিশ জারি করা হোলো । এই নোটিশে বলা হলো _পি আর এস-এর সমস্ত মজুত নিলামে বিক্রি করা হবে। ওই অর্থ দিয়ে ঋণ শোধ করা হবে । পি আর এস-এর প্রতিবাদ করে দুই মাসের মধ্যে সমস্ত ঋণ পরিশোধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিল । ইতিমধ্যে আমরা ঋণ পরিশোধের জন্য আরো দুই মাস সময় চেয়ে সরকারের নিকট অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিলাম ।
ব্যাংকের অধ্যক্ষ, সাধ্যম্ এবং পি আর এস-এর উপর প্রতিহিংসা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । তিনি সরকারের নিকট প্রমাণ করতে চাইলেন যে, পি আর এস-কে ঋণ দেওয়ার অনুমতি দিয়ে রেজিস্টার ভুল করেছেন! সুতরাং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বর্ধিত করার ব্যাপারে সরকারের জবাবের অপেক্ষা না করেই পি আর এস-এর মজুত _নিলামে বিক্রি করার দিন সময় ধার্য করে তিনি নোটিশ জারি করলেন।
আমরা পাল্টা নোটিশ দিয়ে জানালাম _পি আর এস-এর কোনোরকম ক্ষতি হলে সরকারই দায়ী হবেন, কারণ তাঁরা তাড়াতাড়ি ঋণ পরিশোধ করার জন্য পি আর এস এর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন ‌। সরকারের নিকট হোতে কোন জবাব এলো না । নিলামের দিন সকাল 7:30 মিনিটে ডিপোয় এসে সাধ্যম্ _”এখন বাঁশ বিক্রির নিলাম হচ্ছে না!” _জানিয়ে একটা নোটিশ টাঙিয়ে দিল । নরসাম্মা ডিপোয় এসে দেখলেন সেখানে কোনো ক্রেতাই নাই । তিনি সাধ্যমের এই কার্য দেখে বিরক্ত হোলেন। তাঁর রাগ‌ও হোলো খুব কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারলেন না। পরের দিনই সরকারের নিকট হতে _’ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে’ _এরূপ আদেশ পাওয়া গেল এবং সমস্যারও সমাধান হোলো।(ক্রমশঃ)