[রেড্ডি ও কোয়া উপজাতির মানুষদের সমস্যা এবং তার সমাধান।]
তারা সমবেতভাবে স্বামীজীর নিকট এসে বলল “স্বামী, আমরা কি করব ?”
স্বামীজী সমস্ত পরিস্থিতিটা পর্যালােচন করে বুঝতে পারলেন কারও নিকট হোতে কোনো সাহায্য আসার সম্ভাবনা নেই। অত্যাচার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সরকার দায়িত্বহীন। কার কাছে অভিযােগ জানানাে হবে ?—মানুষকে নিজের শক্তির উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
সমস্ত উপজাতি এবং আশে-পাশের সকল গ্রামের যুবকদের নিয়ে বাহিনী তৈরী করা হোল । প্রত্যেক গ্রামে বাহিনী মোতায়েন করা হোল। তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করা উপজাতিদের মজ্জাগত। তাদের তীরের লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। আশ্রমেও প্রতিরােধ বাহিনী গঠিত হোল ।
গুণ্ডার দল রুদ্রমকোটা পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। যে কোনো মুহূর্তে তারা আশ্রম আক্রমণ করতে পারে। সেজন্য পপি পাহাড়ের অন্য দিকে কুটীর নির্মাণ করে সেখানে আশ্রমবাসীদের স্থানান্তরিত করা হোল।
গ্রামবাসীরা যে কোনো মুহূর্তের আক্রমণের জন্য সতর্ক রইলো। তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গুণ্ডাদের প্রতিরােধ করবে। তারা জীবন উৎসর্গ করতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। এখন তারা নির্ভীক। যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত। সমস্ত সম্ভাব্য স্থান হোতে অস্ত্র সংগ্রহ করা হোতে লাগলো। জয়ের আশা তাদের মধ্যে তীব্র। ধনুক, ভােজালি, বল্লম, বর্শা তারা নিজেরাই তৈরী করতে লাগলো। গােলাগুলিও সংগ্রহ করলো ।
স্বামীজী হোলেন তাদের রক্ষা কর্তা, তারা স্বামীজীর নিকট আশ্রয় চেয়েছিল । স্বামীজী তাদের অভয় দিলেন। ধর্মের ধ্বজা উঁচু রাখার জন্য সারা জীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। সেই ধর্ম রক্ষার জন্য এখন তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত। তিনি নবগঠিত বাহিনীর নেতৃত্ব দিলেন।
পেরেন্টাপল্লী আশ্রম এখন অস্ত্র-তৈরীর কারখানায় পরিণত হোল। উপজাতি অধ্যুষিত সমস্ত গ্রাম দূর্গে পরিণত হোল ।
‘আখরোপেটা’ নামে একস্থান হোতে আরম্ভ করে বুঁগুম পাহাড় পর্যন্ত এখন এই রক্ষী বাহিনীর অধীনে। সরকারের অচল অবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমস্ত রকম কাজকর্ম বন্ধ।
বন্যজাত খাবার খেয়ে এখন তাদের জীবন ধারণ করতে হচ্ছিলো। সম্ভব হলে কর্মীরা কিছু বাঁশ এবং কাঠ সংগ্রহ করে রাজমুন্দ্রী পাঠিয়ে তা হোতে খাবার এবং গােলা কিনতো।
প্রতিরক্ষা বাহিনী সুন্দরভাবে গঠিত হোল । গুণ্ডারা এই এলাকায় ঢুকতে সাহস করলো না।
নিজাম সরকার এই সমস্ত কার্যকলাপ জানতে পারলেন। ঐ এলাকায় একটা সশস্ত্র যুদ্ধের আশঙ্কাও করলেন।
প্রাথমিক সংবাদ সংগ্রহের জন্য হেমেনডরফ সস্ত্রীক আশ্রমে এলেন। এসে দেখলেন স্বামীজী সাধুর বেশে নেই, তিনি এখন মিলিটারী পােষাকে সজ্জিত। তিনি স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করলেন। তাঁর অজান্তে সশস্ত্র যুবকেরা তাকে অনুসরণ করতে লাগলো। এই যুবকদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে চিনতাে। তারা তাঁর কোনোরকম ক্ষতি করলো না। (ক্রমশঃ)