[*স্বামী বাউলানন্দের সহায়তায় আদিবাসীদের স্বধর্ম বজায় রেখে বেঁচে থাকার লড়াই।*]
স্বামীজীকে নূতন পােষাকে দেখে হেমেনডরফ বলে উঠলেন, “স্বামী, এই আশ্ৰম কি এখন কোন মিলিটারী সংস্থা ?”
–“না, এটা কোন মিলিটারী সংস্থা নয়, এটা আত্মরক্ষার কর্মস্থল।”
“আপনার কিসের ভয়, আর কিইবা আপনি রক্ষা করছেন ?”
“আমরা কাসিম রাজভী এবং তার গুণ্ডার ভয়ে ভীত। তাদের অত্যাচার যেন এই এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।”
“তাহলে আপনি কি চান ?”
“সরকার কাসিম রাজভীকে গ্রেপ্তার করে তার গুণ্ডাদের নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং আমাদের সমাজ এবং ধর্মের স্বাধীনতা বজায় রাখার আশ্বাস দিন।”
হেমেন ডরফ বললেন, “স্বামী, আপনি সন্ন্যাসী। ধর্মের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। ধর্ম-কর্মে মন দিন। রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছেন কেন?”
“মিঃ হেমেন ডরফ, আপনি যা বলছেন তা সত্য । সন্ন্যাসীর ধর্ম-কর্মেই মন দেয়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা ধর্ম বিষয়ে। আমাদের ধর্ম এখন বিপদগ্রস্ত। ধর্মপ্রচারক শুধু ধর্মই প্রচার করবে না, ধর্ম রক্ষা করাও তার কাজ। যে ধর্ম জনগণের জন্য কিছু করে না তা ধর্ম হতে পারে না। ধর্ম রক্ষা করার অর্থ ধর্ম অবলম্বনকারীকে রক্ষা করা। জনগণ মানে—মানুষ, তাদের জীবন, ধন-সম্পত্তি এবং তাদের মান-সম্ভ্রম ।
অন্য কোন ধর্ম আক্রমণ করলে ধর্ম প্রচারকের প্রাথমিক কাজ হবে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা যেন অন্য কোন ধর্মের দ্বারা প্রলুব্ধ এবং প্রভাবিত না হয় এবং সেই সঙ্গে ভীত সন্ত্রস্ত না হয় ।
যে ধর্ম সমাজের জন্য কিছু করতে না পারে সে ধর্ম ধর্মই নয়। সমাজের ঐক্য বজায় রাখার জন্য একটা আদর্শ এবং নীতি থাকা দরকার ।
ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কোন বিপদের সম্মুখীন হলে সমগ্র সমাজ বিপদগ্রস্ত হয়।
জীবন, সম্পত্তি এবং মান-সম্ভ্রম বজায় রাখতে গেলে একটা রাজনৈতিক সংগঠনের দরকার। রাজনৈতিক সহায়তা না পেলে কোন ধর্ম টিকতে পারে না, ধর্ম নষ্ট হলে সমাজ তার ঐক্য হারাবে। তখন সেই সমাজ থাকা আর না থাকা একই কথা।
এই রাজ্যে আমাদের জাতি দাসে পরিণত হয়েছে। মুসলমানেরা আমাদের ধর্ম আক্রমণ করছে। আমাদের ধর্মের কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। জোর করে ধর্মান্তরিত করার ফলে দিনের পর দিন আমাদের ধর্মের ক্ষতিই হচ্ছে। আমরা জীবন-মরণ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।
আমাদের এই সমস্ত প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য হল আমাদের জীবন এবং আমাদের ধর্ম রক্ষা করা এবং সেই সঙ্গে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের রক্ষা করা। আমাদের কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। আপনি আমাকে দীর্ঘ দিন ধরে জানেন। আমার হৃদয় কিরূপ তাও জানেন। এখানকার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথাও জানেন। কিন্তু তৎসত্ত্বেও আপনি হ্যাণ্ডব্যাগে রিভলভার নিয়ে এখানে এসেছেন। আপনি এর আগে অনেকবার এখানে এসেছেন। কোন রকম ভীত হননি। অস্ত্রশস্ত্র না নিয়েই আপনি অবাধে এখানে ঘােরাফেরা করেছেন। এখন যেহেতু আপনি আপনার নিরাপত্তা সম্বন্ধে সন্দিহান সেজন্য সঙ্গে করে রিভলভার নিয়ে এসেছেন।
আমরা এই রকম ভাবেই থাকছি। যতদিন সরকার আমাদের ধর্ম-বিশ্বাস, আমাদের সম্পত্তি এবং আমাদের মান-সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন ততদিন আমরা কোন অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিইনি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ধর্ম-বিশ্বাস, জীবন, সম্পত্তি—সবই নষ্ট হতে চলছে। মেয়েরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। সরকার আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেন না। আপনি কি মনে করেন নিজেকে রক্ষা করা অন্যায় ? যদি আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করি, ধর্ম রক্ষার চেষ্টা করি এবং ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের রক্ষার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের সন্ন্যাসত্বের কোন হানি হবে ?
ধর্ম নেতা যদি ধর্মপ্রাণদের রক্ষ করতে না পারে তাহলে সেটা লজ্জার ব্যাপার !
খ্রীষ্টাদি ধর্মের নামে এবং ধর্ম প্রচারের জন্য কত যুদ্ধই না করা হয়েছে ! ধরিত্রীর বুকে কত রক্তপাতই না হয়েছে !
কিন্তু আমাদের এই প্রচেষ্টর লক্ষ্য ধর্মপ্রচারের জন্য নয়।
আপনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। আপনি আমাদেরকে এই আশ্বাস দিয়ে যান যেন রাজাকাররা আমাদের এই এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।
যদি আপনি কোন আশ্বাস দিতে পারেন তাহলে মুহূর্তের মধ্যে আমরা এই সমস্ত প্রত্যাহার করে নেব।”(ক্রমশঃ)
স্বামীজীকে নূতন পােষাকে দেখে হেমেনডরফ বলে উঠলেন, “স্বামী, এই আশ্ৰম কি এখন কোন মিলিটারী সংস্থা ?”
–“না, এটা কোন মিলিটারী সংস্থা নয়, এটা আত্মরক্ষার কর্মস্থল।”
“আপনার কিসের ভয়, আর কিইবা আপনি রক্ষা করছেন ?”
“আমরা কাসিম রাজভী এবং তার গুণ্ডার ভয়ে ভীত। তাদের অত্যাচার যেন এই এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।”
“তাহলে আপনি কি চান ?”
“সরকার কাসিম রাজভীকে গ্রেপ্তার করে তার গুণ্ডাদের নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং আমাদের সমাজ এবং ধর্মের স্বাধীনতা বজায় রাখার আশ্বাস দিন।”
হেমেন ডরফ বললেন, “স্বামী, আপনি সন্ন্যাসী। ধর্মের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। ধর্ম-কর্মে মন দিন। রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছেন কেন?”
“মিঃ হেমেন ডরফ, আপনি যা বলছেন তা সত্য । সন্ন্যাসীর ধর্ম-কর্মেই মন দেয়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তা ধর্ম বিষয়ে। আমাদের ধর্ম এখন বিপদগ্রস্ত। ধর্মপ্রচারক শুধু ধর্মই প্রচার করবে না, ধর্ম রক্ষা করাও তার কাজ। যে ধর্ম জনগণের জন্য কিছু করে না তা ধর্ম হতে পারে না। ধর্ম রক্ষা করার অর্থ ধর্ম অবলম্বনকারীকে রক্ষা করা। জনগণ মানে—মানুষ, তাদের জীবন, ধন-সম্পত্তি এবং তাদের মান-সম্ভ্রম ।
অন্য কোন ধর্ম আক্রমণ করলে ধর্ম প্রচারকের প্রাথমিক কাজ হবে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা যেন অন্য কোন ধর্মের দ্বারা প্রলুব্ধ এবং প্রভাবিত না হয় এবং সেই সঙ্গে ভীত সন্ত্রস্ত না হয় ।
যে ধর্ম সমাজের জন্য কিছু করতে না পারে সে ধর্ম ধর্মই নয়। সমাজের ঐক্য বজায় রাখার জন্য একটা আদর্শ এবং নীতি থাকা দরকার ।
ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কোন বিপদের সম্মুখীন হলে সমগ্র সমাজ বিপদগ্রস্ত হয়।
জীবন, সম্পত্তি এবং মান-সম্ভ্রম বজায় রাখতে গেলে একটা রাজনৈতিক সংগঠনের দরকার। রাজনৈতিক সহায়তা না পেলে কোন ধর্ম টিকতে পারে না, ধর্ম নষ্ট হলে সমাজ তার ঐক্য হারাবে। তখন সেই সমাজ থাকা আর না থাকা একই কথা।
এই রাজ্যে আমাদের জাতি দাসে পরিণত হয়েছে। মুসলমানেরা আমাদের ধর্ম আক্রমণ করছে। আমাদের ধর্মের কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। জোর করে ধর্মান্তরিত করার ফলে দিনের পর দিন আমাদের ধর্মের ক্ষতিই হচ্ছে। আমরা জীবন-মরণ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি।
আমাদের এই সমস্ত প্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য হল আমাদের জীবন এবং আমাদের ধর্ম রক্ষা করা এবং সেই সঙ্গে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের রক্ষা করা। আমাদের কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। আপনি আমাকে দীর্ঘ দিন ধরে জানেন। আমার হৃদয় কিরূপ তাও জানেন। এখানকার পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথাও জানেন। কিন্তু তৎসত্ত্বেও আপনি হ্যাণ্ডব্যাগে রিভলভার নিয়ে এখানে এসেছেন। আপনি এর আগে অনেকবার এখানে এসেছেন। কোন রকম ভীত হননি। অস্ত্রশস্ত্র না নিয়েই আপনি অবাধে এখানে ঘােরাফেরা করেছেন। এখন যেহেতু আপনি আপনার নিরাপত্তা সম্বন্ধে সন্দিহান সেজন্য সঙ্গে করে রিভলভার নিয়ে এসেছেন।
আমরা এই রকম ভাবেই থাকছি। যতদিন সরকার আমাদের ধর্ম-বিশ্বাস, আমাদের সম্পত্তি এবং আমাদের মান-সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন ততদিন আমরা কোন অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিইনি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ধর্ম-বিশ্বাস, জীবন, সম্পত্তি—সবই নষ্ট হতে চলছে। মেয়েরা লাঞ্ছিত হচ্ছে। সরকার আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেন না। আপনি কি মনে করেন নিজেকে রক্ষা করা অন্যায় ? যদি আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করি, ধর্ম রক্ষার চেষ্টা করি এবং ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের রক্ষার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের সন্ন্যাসত্বের কোন হানি হবে ?
ধর্ম নেতা যদি ধর্মপ্রাণদের রক্ষ করতে না পারে তাহলে সেটা লজ্জার ব্যাপার !
খ্রীষ্টাদি ধর্মের নামে এবং ধর্ম প্রচারের জন্য কত যুদ্ধই না করা হয়েছে ! ধরিত্রীর বুকে কত রক্তপাতই না হয়েছে !
কিন্তু আমাদের এই প্রচেষ্টর লক্ষ্য ধর্মপ্রচারের জন্য নয়।
আপনি একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। আপনি আমাদেরকে এই আশ্বাস দিয়ে যান যেন রাজাকাররা আমাদের এই এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।
যদি আপনি কোন আশ্বাস দিতে পারেন তাহলে মুহূর্তের মধ্যে আমরা এই সমস্ত প্রত্যাহার করে নেব।”(ক্রমশঃ)