[পূর্ব প্রকাশিতের পর]
১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে শ্রীরামনবমী উপলক্ষে বিক্রম হলের সম্পাদক “রাম রাজ্য পরিষদ মহাসভা”-র আয়োজন করেছিলেন। ওই সভায় স্বামী বাউলানন্দ মহারাজকে সভাপতি হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাধারণত উৎসবের পর দরিদ্রদের সেবা করা হোতো । সেবার খরচ তোলাই ছিল ওই সভার লক্ষ্য । স্বামীজী এই আহ্বান সাদরে গ্রহণ করেছিলেন । সভা যথারীতি আরম্ভ হোলো, স্বামীজী সভাপতির চেয়ারে শ্রীরামকৃষ্ণের ফটো রেখে পার্শ্ববর্তী চেয়ারে বসলেন । পাঁচ দিন ধরে এই সভা চলেছিল । সভা উদযাপনের দিন প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছিল । ঐদিন শহরের বহু গণ্যমান্য লোক জমায়েত হয়েছিলেন । বিজয়ওয়াড়ার এক স্বনামধন্য পন্ডিত ছিলেন এই সভার প্রধান বক্তা । সংস্কৃত রামায়ন হোতে কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি রামরাজ্য সম্বন্ধে এক ভাবগম্ভীর আলোচনা করলেন । রামরাজত্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল তাও তিনি জনসমক্ষে তুলে ধরলেন । তিনি বললেন “বশিষ্ঠের মত ব্রহ্মর্ষিরা কেমন করে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম পালন করতেন, কেমন করে তাঁরা রাজনীতির উপর তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, কেমন ভাবে তাঁরা অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণ নির্ণয় করতেন এবং এইসব দুর্যোগ হতে অব্যাহতি পাওয়ার উপায় বলে দিতেন !
দেশকে সমৃদ্ধ করার উপায়ও তারাই বলে দিতেন । রাজা স্বেচ্ছাচারী হোলে_ তাঁকে সংযত করার জন্য মন্ত্রীমহল সিদ্ধান্ত নিতেন । তাঁদের সিদ্ধান্ত অবহেলা করা যেত না । মন্ত্রীমহলের উপরে ছিলেন কুলগুরু। তাঁর মতামতকে কোনো প্রকারেই উপেক্ষা করা যেত না । ওই সমস্ত কুলগুরুরা শাস্ত্র এবং বেদের অনুশাসন কঠোরভাবে পালন করতেন । যদি বৈদিক শিক্ষা সংস্কৃতি উপযুক্ত মর্যাদা পায়, যদি ধর্ম__ সরকার এবং জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তাহলে ‘রামরাজত্বে’-র জন্য ভিত্তি স্থাপন করা সম্ভব হবে ।
সে যুগে দেশের প্রতিরক্ষা, জনগণের রক্ষণাবেক্ষণ এবং বৈদিক ধর্ম সংরক্ষণের ভার ক্ষত্রিয় বীরদের উপর ন্যস্ত হোতো । যখন কুলগুরু মহর্ষি, কোনো পথকে বৈদিক বলে বিধান দিতেন তখন ক্ষত্রিয় শাসকগণ সেই বিধান মাথা পেতে নিতেন এবং তা কার্যকরী করার চেষ্টা করতেন । ধর্ম রক্ষার জন্য তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেন!
বণিক সম্প্রদায়, ধর্মকে সামনে রেখে ব্যবসা কোরতো । তারা জনগণকে ঠকাতো না । ধর্ম দ্বারা পরিচালিত হয়ে তারা ব্যবসায় প্রভূত মুনাফা পেতো।
কৃষি ও কলকারখানার কর্মীরা দেব-দ্বিজে ভক্তি রেখে জীবনযাপন কোরতো”___ ইত্যাদি বক্তব্য ঐ পন্ডিত ব্যক্তি রেখেছিলেন ।
অন্যান্য বক্তারাও প্রায় একই রকম ভাষণ দিয়েছিলেন । সবার শেষে স্বামী বাউলানন্দজী ভাষণ দেওয়ার জন্য উঠলেন । তিনি বললেন _”রাম রাজ্য অর্থাৎ প্রকৃত ধর্মরাজ্য স্থাপন করতে হোলে তিনটি জিনিস বিশেষ প্রয়োজন ! এক) _দেশে উর্বর জমি থাকবে! দুই) _ জনগণের কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না এবং তিন) _ জনদরদী এবং সকল প্রজার প্রতি সমমনোভাবাপন্ন সরকার হোতে হবে । তবেই দেশে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা হবে অর্থাৎ সরকারের দ্বারা প্রকৃত প্রজানুরঞ্জন-কার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।। (ক্রমশঃ)
১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে শ্রীরামনবমী উপলক্ষে বিক্রম হলের সম্পাদক “রাম রাজ্য পরিষদ মহাসভা”-র আয়োজন করেছিলেন। ওই সভায় স্বামী বাউলানন্দ মহারাজকে সভাপতি হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাধারণত উৎসবের পর দরিদ্রদের সেবা করা হোতো । সেবার খরচ তোলাই ছিল ওই সভার লক্ষ্য । স্বামীজী এই আহ্বান সাদরে গ্রহণ করেছিলেন । সভা যথারীতি আরম্ভ হোলো, স্বামীজী সভাপতির চেয়ারে শ্রীরামকৃষ্ণের ফটো রেখে পার্শ্ববর্তী চেয়ারে বসলেন । পাঁচ দিন ধরে এই সভা চলেছিল । সভা উদযাপনের দিন প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছিল । ঐদিন শহরের বহু গণ্যমান্য লোক জমায়েত হয়েছিলেন । বিজয়ওয়াড়ার এক স্বনামধন্য পন্ডিত ছিলেন এই সভার প্রধান বক্তা । সংস্কৃত রামায়ন হোতে কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি রামরাজ্য সম্বন্ধে এক ভাবগম্ভীর আলোচনা করলেন । রামরাজত্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল তাও তিনি জনসমক্ষে তুলে ধরলেন । তিনি বললেন “বশিষ্ঠের মত ব্রহ্মর্ষিরা কেমন করে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম পালন করতেন, কেমন করে তাঁরা রাজনীতির উপর তাদের প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, কেমন ভাবে তাঁরা অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণ নির্ণয় করতেন এবং এইসব দুর্যোগ হতে অব্যাহতি পাওয়ার উপায় বলে দিতেন !
দেশকে সমৃদ্ধ করার উপায়ও তারাই বলে দিতেন । রাজা স্বেচ্ছাচারী হোলে_ তাঁকে সংযত করার জন্য মন্ত্রীমহল সিদ্ধান্ত নিতেন । তাঁদের সিদ্ধান্ত অবহেলা করা যেত না । মন্ত্রীমহলের উপরে ছিলেন কুলগুরু। তাঁর মতামতকে কোনো প্রকারেই উপেক্ষা করা যেত না । ওই সমস্ত কুলগুরুরা শাস্ত্র এবং বেদের অনুশাসন কঠোরভাবে পালন করতেন । যদি বৈদিক শিক্ষা সংস্কৃতি উপযুক্ত মর্যাদা পায়, যদি ধর্ম__ সরকার এবং জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তাহলে ‘রামরাজত্বে’-র জন্য ভিত্তি স্থাপন করা সম্ভব হবে ।
সে যুগে দেশের প্রতিরক্ষা, জনগণের রক্ষণাবেক্ষণ এবং বৈদিক ধর্ম সংরক্ষণের ভার ক্ষত্রিয় বীরদের উপর ন্যস্ত হোতো । যখন কুলগুরু মহর্ষি, কোনো পথকে বৈদিক বলে বিধান দিতেন তখন ক্ষত্রিয় শাসকগণ সেই বিধান মাথা পেতে নিতেন এবং তা কার্যকরী করার চেষ্টা করতেন । ধর্ম রক্ষার জন্য তারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেন!
বণিক সম্প্রদায়, ধর্মকে সামনে রেখে ব্যবসা কোরতো । তারা জনগণকে ঠকাতো না । ধর্ম দ্বারা পরিচালিত হয়ে তারা ব্যবসায় প্রভূত মুনাফা পেতো।
কৃষি ও কলকারখানার কর্মীরা দেব-দ্বিজে ভক্তি রেখে জীবনযাপন কোরতো”___ ইত্যাদি বক্তব্য ঐ পন্ডিত ব্যক্তি রেখেছিলেন ।
অন্যান্য বক্তারাও প্রায় একই রকম ভাষণ দিয়েছিলেন । সবার শেষে স্বামী বাউলানন্দজী ভাষণ দেওয়ার জন্য উঠলেন । তিনি বললেন _”রাম রাজ্য অর্থাৎ প্রকৃত ধর্মরাজ্য স্থাপন করতে হোলে তিনটি জিনিস বিশেষ প্রয়োজন ! এক) _দেশে উর্বর জমি থাকবে! দুই) _ জনগণের কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না এবং তিন) _ জনদরদী এবং সকল প্রজার প্রতি সমমনোভাবাপন্ন সরকার হোতে হবে । তবেই দেশে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা হবে অর্থাৎ সরকারের দ্বারা প্রকৃত প্রজানুরঞ্জন-কার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।। (ক্রমশঃ)