[রামরাজত্ব বিষয়ক আলোচনা।]
আগের দিন আমরা দেখেছিলাম যে স্বামীজী__ রামরাজত্ব বা প্রকৃত ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য কি কি শর্ত প্রয়োজন সে সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করেছিলেন। আজকে সেই আলোচনার বাকি অংশ।।
স্বামী বাউলানন্দ বলেছিলেন _”স্থুল স্বাধীনতা শরীরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং সূক্ষ্ম স্বাধীনতা মনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ! আমরা স্থুল স্বাধীনতা পেয়েছি । রামচন্দ্র ত্রেতা যুগে রামরাজ্য স্থাপন করেছিলেন এবং শ্রী কৃষ্ণ দ্বাপরযুগে ওই ধারা বজায় রেখেছিলেন । মানুষ যখন মনুষ্যত্বকে ভুলে ইন্দ্রিয়সুখের বশবর্তী হয়, তখনই তার জীবনে দুঃখ আসে । এই দুঃখকে অতিক্রম করতে হোলে মানুষের চিন্তাধারা, বাক্য এবং কাজ মানবোচিত হওয়া দরকার । সাধারণ জনগণের মধ্যে ঐক্য থাকাও খুবই প্রয়োজন। জনগণ এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্ক মধুর হওয়া দরকার । একমাত্র তখনই রাষ্ট্রের উৎপন্ন দ্রব্য সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে” ।
তাছাড়া উনি আরো বলেছিলেন _”জনগণের মধ্যে বিভেদ দেখা যায় দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে, প্রথমটি ঈশ্বর বা ধর্ম এবং দ্বিতীয়টি খাদ্য । এই দুটি জিনিসের উপরেই মানুষের জন্মগত অধিকার” ।
স্বামীজী দেবস্থান নির্মাণের কথাও বলেছিলেন দেবস্থান(মন্দির-মসজিদ ইত্যাদি) নির্মাণের ফলে মানুষের মধ্যে ঐক্যের বোধ জন্মায় । অনেক পণ্ডিত বলেন যে কোনো সময় রাম রামরাজত্ব ছিল কিন্তু এখন ওই রামরাজত্ব আর ফিরে আসবে না ! কথাটা আংশিক সত্য, কারণ রামরাজত্ব বলতে হাজার হাজার বছর আগে রঘুবংশীয় রাজা রামের রাজত্বের কথা বলা হোচ্ছে না । এখানে রামরাজত্ব বলতে একটা মানবসমাজের উপযোগী ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হোচ্ছে । যেখানে সকল প্রজারা সমানভাবে রাষ্ট্রের অধিকারসমূহ ভোগ করতে পারবে।
রামের সময় রাক্ষসরাও যথেষ্ট উন্নত ছিল । তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেদজ্ঞও ছিল । কিন্তু তবুও আমরা তাদের ঘৃণা করি। কারণ এদের কার্যকলাপ মানুষের নিরাপত্তার পরিপন্থী ছিল । সে জন্যই বলা হোচ্ছে যে, রামের যুগ চলে গেছে ! সেই রাম এবং সেই রাবণ নয়। কিন্তু রাম তত্ত্ব এবং রাবণ তত্ব এখনো রয়েছে । সমস্ত শ্রেণি এবং বর্ণের লোকের মধ্যে রাম এবং রাবণ বিদ্যমান ! সুতরাং কোনো রাষ্ট্রের রাজা যদি রামের ন্যায় সৎচরিত্র, জ্ঞানবান, গুনবান প্রশাসক হ’ন, তাহলে পুনরায় রামরাজত্ব হওয়া সম্ভব” !
এইভাবে স্বামীজী সেদিন সভায় রামরাজত্বের ভিত্তি স্থাপন করার কথা বলে _তাঁর বক্তব্য শেষ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হোতেই শ্রোতৃবর্গের মধ্যে একটা হইচই পড়ে গিয়েছিল। ওনার কথা শুনে তাদের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে তর্ক-বিতর্ক চলতেই থাকলো । এই অবস্থায় সভার আহ্বায়ক সভার সমাপ্তি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ।
স্বামীজী সভামঞ্চ ছেড়ে বিশ্রামের জন্য ঘরে চলে গেলেন । একদল হরিজন তাঁর সামনে গিয়ে জমায়েত হলো । স্বামীজী তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন _”তোমরা মন্দিরে গিয়ে মূর্তি দর্শন করতে চাও?” তারা সকলে বললো _” হ্যাঁ” ! “তাহলে এখনই চলো” _ এই বলে স্বামীজী তাদেরকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। হরিজন ভক্তরা, কয়েকজন নগরবাসী, হরি, কৃপা, আদ্যম এবং আমি(লেখক) _ কলা এবং নারকেল হাতে নিয়ে ওনার পিছুপিছু যেতে লাগলাম। প্রথমে আমরা অঞ্জনেয়া মন্দিরে, পরে মার্কণ্ডেয় এবং বেনুগোপাল স্বামীর মন্দিরে গেলাম । সব মন্দিরেই হরিজনদের নামে পুজা দেওয়া হোলো। পূজা শেষে সমবেত সকলকে তীর্থম্ এবং প্রসাদ দেওয়া হোলো।
উচ্চবর্ণের গণ্যমান্য লোকেরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও _এই ঘটনার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারলেন না । কিন্তু অন্তরে তারা এর ঘোর বিরোধী ! তারা ভীত হোলো এই ভেবে যে, চিরাচরিত প্রথার পরিবর্তন করে _ওরা হয়তো ঈশ্বরের কোপে পড়বে ! তাদের আশঙ্কা হোলো _হয়তো ওদের তথা সমগ্র শহরবাসীর ওপর বিরাট দুর্দিন নেমে আসবে! চিরাচরিত প্রথা পরিবর্তনের যোগ্য ওরা নয় ! এরূপ করলে ওরা নিজেদের দুঃখ নিজেরাই ডেকে আনবে !
কিন্তু স্বামীজী তাঁর সংকল্প কার্যকরী করার জন্য তৎপর হোলেন এবং সেই কার্য সমাধাও করলেন। (ক্রমশঃ)
আগের দিন আমরা দেখেছিলাম যে স্বামীজী__ রামরাজত্ব বা প্রকৃত ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য কি কি শর্ত প্রয়োজন সে সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করেছিলেন। আজকে সেই আলোচনার বাকি অংশ।।
স্বামী বাউলানন্দ বলেছিলেন _”স্থুল স্বাধীনতা শরীরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং সূক্ষ্ম স্বাধীনতা মনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ! আমরা স্থুল স্বাধীনতা পেয়েছি । রামচন্দ্র ত্রেতা যুগে রামরাজ্য স্থাপন করেছিলেন এবং শ্রী কৃষ্ণ দ্বাপরযুগে ওই ধারা বজায় রেখেছিলেন । মানুষ যখন মনুষ্যত্বকে ভুলে ইন্দ্রিয়সুখের বশবর্তী হয়, তখনই তার জীবনে দুঃখ আসে । এই দুঃখকে অতিক্রম করতে হোলে মানুষের চিন্তাধারা, বাক্য এবং কাজ মানবোচিত হওয়া দরকার । সাধারণ জনগণের মধ্যে ঐক্য থাকাও খুবই প্রয়োজন। জনগণ এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্ক মধুর হওয়া দরকার । একমাত্র তখনই রাষ্ট্রের উৎপন্ন দ্রব্য সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাবে” ।
তাছাড়া উনি আরো বলেছিলেন _”জনগণের মধ্যে বিভেদ দেখা যায় দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে, প্রথমটি ঈশ্বর বা ধর্ম এবং দ্বিতীয়টি খাদ্য । এই দুটি জিনিসের উপরেই মানুষের জন্মগত অধিকার” ।
স্বামীজী দেবস্থান নির্মাণের কথাও বলেছিলেন দেবস্থান(মন্দির-মসজিদ ইত্যাদি) নির্মাণের ফলে মানুষের মধ্যে ঐক্যের বোধ জন্মায় । অনেক পণ্ডিত বলেন যে কোনো সময় রাম রামরাজত্ব ছিল কিন্তু এখন ওই রামরাজত্ব আর ফিরে আসবে না ! কথাটা আংশিক সত্য, কারণ রামরাজত্ব বলতে হাজার হাজার বছর আগে রঘুবংশীয় রাজা রামের রাজত্বের কথা বলা হোচ্ছে না । এখানে রামরাজত্ব বলতে একটা মানবসমাজের উপযোগী ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হোচ্ছে । যেখানে সকল প্রজারা সমানভাবে রাষ্ট্রের অধিকারসমূহ ভোগ করতে পারবে।
রামের সময় রাক্ষসরাও যথেষ্ট উন্নত ছিল । তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেদজ্ঞও ছিল । কিন্তু তবুও আমরা তাদের ঘৃণা করি। কারণ এদের কার্যকলাপ মানুষের নিরাপত্তার পরিপন্থী ছিল । সে জন্যই বলা হোচ্ছে যে, রামের যুগ চলে গেছে ! সেই রাম এবং সেই রাবণ নয়। কিন্তু রাম তত্ত্ব এবং রাবণ তত্ব এখনো রয়েছে । সমস্ত শ্রেণি এবং বর্ণের লোকের মধ্যে রাম এবং রাবণ বিদ্যমান ! সুতরাং কোনো রাষ্ট্রের রাজা যদি রামের ন্যায় সৎচরিত্র, জ্ঞানবান, গুনবান প্রশাসক হ’ন, তাহলে পুনরায় রামরাজত্ব হওয়া সম্ভব” !
এইভাবে স্বামীজী সেদিন সভায় রামরাজত্বের ভিত্তি স্থাপন করার কথা বলে _তাঁর বক্তব্য শেষ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য শেষ হোতেই শ্রোতৃবর্গের মধ্যে একটা হইচই পড়ে গিয়েছিল। ওনার কথা শুনে তাদের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে তর্ক-বিতর্ক চলতেই থাকলো । এই অবস্থায় সভার আহ্বায়ক সভার সমাপ্তি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ।
স্বামীজী সভামঞ্চ ছেড়ে বিশ্রামের জন্য ঘরে চলে গেলেন । একদল হরিজন তাঁর সামনে গিয়ে জমায়েত হলো । স্বামীজী তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন _”তোমরা মন্দিরে গিয়ে মূর্তি দর্শন করতে চাও?” তারা সকলে বললো _” হ্যাঁ” ! “তাহলে এখনই চলো” _ এই বলে স্বামীজী তাদেরকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন। হরিজন ভক্তরা, কয়েকজন নগরবাসী, হরি, কৃপা, আদ্যম এবং আমি(লেখক) _ কলা এবং নারকেল হাতে নিয়ে ওনার পিছুপিছু যেতে লাগলাম। প্রথমে আমরা অঞ্জনেয়া মন্দিরে, পরে মার্কণ্ডেয় এবং বেনুগোপাল স্বামীর মন্দিরে গেলাম । সব মন্দিরেই হরিজনদের নামে পুজা দেওয়া হোলো। পূজা শেষে সমবেত সকলকে তীর্থম্ এবং প্রসাদ দেওয়া হোলো।
উচ্চবর্ণের গণ্যমান্য লোকেরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও _এই ঘটনার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারলেন না । কিন্তু অন্তরে তারা এর ঘোর বিরোধী ! তারা ভীত হোলো এই ভেবে যে, চিরাচরিত প্রথার পরিবর্তন করে _ওরা হয়তো ঈশ্বরের কোপে পড়বে ! তাদের আশঙ্কা হোলো _হয়তো ওদের তথা সমগ্র শহরবাসীর ওপর বিরাট দুর্দিন নেমে আসবে! চিরাচরিত প্রথা পরিবর্তনের যোগ্য ওরা নয় ! এরূপ করলে ওরা নিজেদের দুঃখ নিজেরাই ডেকে আনবে !
কিন্তু স্বামীজী তাঁর সংকল্প কার্যকরী করার জন্য তৎপর হোলেন এবং সেই কার্য সমাধাও করলেন। (ক্রমশঃ)