আমরা স্বামী বাউলানন্দজীর জীবনে ভ্রমণ কালীন সময়ের কিছু কথা এখানে আলোচনা করছিলাম। বাউলানন্দজী তাঁর এক সঙ্গী শাস্ত্রীজী কে নিয়ে বৃন্দাবন যাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ করে শাস্ত্রীজীর কলেরা রোগ দেখা দিয়েছিল। সেই সময় সমগ্র উত্তর ভারতে এই রোগ মহামারী আকার ধারণ করেছিল বলে সরকারিভাবে এই ধরনের রোগীদের আইসোলেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু যেহেতু সেখানে বেশিরভাগ রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছিল_ তাই স্বামী বাউলানন্দজী যে কোনোভাবে শাস্ত্রীজীকে পুলিশ বা স্বাস্থ্য কর্মীর হাতে তুলে না দিয়ে অত্যন্ত যত্নসহকারে ট্রেন-এ চাপিয়ে বৃন্দাবনে গিয়ে পৌঁছলেন। সেখানে এক ধর্মশালায় দুজনেই কিছুদিন কাটিয়ে দিলেন। ওখানে স্বামীজীর সেবা-শুশ্রূষায় শাস্ত্রীজী সম্পূর্ণরূপে রোগমুক্ত হয়েছিলেন।
ওখান থেকে স্বামীজীরা গিয়েছিলেন আগ্রায়।ওখানকার সব চাইতে বড় এবং বিলাসবহুল হোটেল ছিল তাজ। আগ্রা স্টেশনে পৌঁছানোর পর যে কোন কারনেই হোক তাজ হোটেলের দুজন কর্মচারী অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁদেরকে অনুরোধ করেন যেন তাঁরা তাজ হোটেলে গিয়ে ওঠেন । স্বামীজী কোন আপত্তি না করে সেই বিলাসবহুল হোটেলে গিয়েই উঠেছিলেন। সেখানে উনি শাস্ত্রীজীকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন ছিলেন এবং হোটেলের ভালো গাড়ি করে ওই অঞ্চলের সমস্ত দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেছিলেন। ওই হোটেলে সেই সময় একজন অন্ধ্রপ্রদেশের কোনো অঞ্চলের রাজাও এসেছিলেন । কোন কারণে একদিন ওই রাজার সাথে স্থানীয় অধিবাসীদের কোনো বিবাদ বেধে যায় এবং তাতে ওই রাজার সম্মান হানির আশংকা দেখা দিয়েছিল। এটা লক্ষ্য করে স্বামীজী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং রাজার পক্ষ অবলম্বন করে তাঁকে নিশ্চিত অপমানের হাত থেকে রক্ষা করেন । এতে ওই রাজা স্বামীজীর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন।
তাজ হোটেলে মাত্র দুদিন থাকার জন্য তাদেরকে তৎকালীন সময়ে 600 টাকা বিল দিতে হয়েছিল । কিন্তু স্বামীজীর কাছে সেই সময় অনেক অর্থ ছিল_ তাই এই বিল দেওয়া তাঁর পক্ষে কোন অসুবিধার সৃষ্টি করেনি।
এইসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার বহু পরে স্বামীজি যখন ভক্তদের কাছে ওই গুলি উপস্থাপনা করেছিলেন, তখন ভক্তরা খুবই বিস্মিত হয়েছিল এই ভেবে যে __যে স্বামীজি দিনের পর দিন দুপয়সার চা খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলেন _সেই স্বামীজি আগ্রা শহরের সবচাইতে বিলাসবহুল হোটেলেও কাটিয়েছিলেন!!
এইভাবে বহু জায়গা ঘুরে স্বামীজী এবং শাস্ত্রীজী দক্ষিণ ভারতের দিকে পা বাড়ান। সেখানে তাঁরা তিরুপতি বালাজি মন্দির দর্শন করেছিলেন। ঐ স্থান থেকে শাস্ত্রীজীর জন্মস্থান ‘কুডাপ্পা’ খুবই কাছে_তাই শাস্ত্রীজী তার জন্মভূমি কুডাপ্পায় ফিরে যেতে চাইলেন কিন্তু স্বামীজি রাজমন্দ্রীতে এসে পুষ্কর ঘাটের নিকট এক বালাজি মন্দিরে থাকতে লাগলেন । শাস্ত্রীজীর কিন্তু জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া হলো না _কারণ তিনি যেহেতু অরবিন্দের ভক্ত ছিলেন তাই তাঁর ইচ্ছা হলো যে পন্ডিচেরি গিয়ে স্বামী অরবিন্দকে তিনি দর্শন করেন ! শাশ্ত্রীজী পন্ডিচেরি গিয়ে পৌঁছেছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁর অরবিন্দ দর্শন হয়নি! এমনকি তিনি আশ্রম থেকে প্রসাদও পাননি! তাই হতাশ হয়ে তিনি তাঁর বাড়ি ফিরে এসেছিলেন।
এদিকে স্বামীজি রাজমন্দ্রীর যে মন্দিরে ছিলেন_ সেখানে একদিন এক অপরিচিত ব্যক্তি এসে তাঁর হাতে একটি মোরক ধরিয়ে দিয়ে তাঁকে প্রণাম করে বললেন যে, ঋষি অরবিন্দ স্বামীজীর জন্য এই প্রসাদী ফুল এবং প্রসাদ পাঠিয়েছেন!
স্বামীজী অরবিন্দের প্রসাদ পেয়ে আনন্দে অভিভূত হয়ে গেলেন! তিনি অবাক হয়ে গেলেন এইজন্য যে, অরবিন্দের দয়ায় এই নিভৃত স্থানে প্রসাদ তাঁর কাছে এসে পৌছালো ! সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফুল এবং প্রসাদ_ অরবিন্দের ভক্ত এবং অরবিন্দের দর্শন-অনুরাগী শাস্ত্রীজীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
তিরুপতিতে থাকাকালীন স্বামীজী এবং শাস্ত্রীজী অনেকসময় অরবিন্দের আলোচনা করে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন কিন্তু শাস্ত্রীজী অরবিন্দকে দেখার একান্ত যে ইচ্ছা ছিল, তা তিনি কখনও স্বামীজীকে জানাননি! অথচ সেই স্বামীজীর হাত দিয়েই তিনি অরবিন্দের প্রসাদ পেলেন_ এইটা ভেবে শাশ্ত্রীজীর নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হল । তৎক্ষণাৎ তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাজমন্দ্রীর উদ্দেশ্যে ছুটলেন। স্বামীজি তাঁর সঙ্গীকে পুনরায় পেয়ে খুবই আহ্লাদিত হলেন। অরবিন্দের কৃপার কথা আলোচনা করতে করতে তারা বেশ কয়েকদিন সেখানেই কাটিয়ে দিলেন।।(ক্রমশঃ)
*MESSAGE TO HUMANITY*
~ _Swami Baulananda_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঊর্ধ্ব শক্তি মানবসত্তার সাধারণ শক্তি। ঊর্ধ্ব প্রগতির ক্ষেত্রে অমানবীয় শরীর নিয়ে ব্যক্তিসত্তা, অমানবীয় সত্তার ন্যায় বহু জন্ম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অসংখ্য পরিবর্তনের সম্মুখীন হয় এবং ঊর্ধ্ব শক্তি প্রাপ্ত হয়ে মানবসত্তায় রূপান্তরিত হয়। ওই ঊর্ধ্ব শক্তিকে কার্যকরী করার জন্য যে চেতনা দরকার তা অমানবীয় সত্তা এবং শরীরে অনুপস্থিত। মানবীয় সত্তা এবং শরীর এমন ভাবে তৈরি হয় যাতে করে সে একজন্মেই লক্ষ্য সাধন করতে পারে। যে মানব সত্তা ঊর্ধ্বগতির দ্বারা তার লক্ষ্য সাধন করে না, সেও মৃত্যুর পর পুনরায় মানব শরীর ধারণ করে। লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি পুনঃপুনঃ চলতে থাকে, তাতে শরীরের সংখ্যা যতই হোক না কেন ? এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নাই। এই পুনরাবর্তনের জন্য যে সীমা তা হোল লক্ষ্য সাধন। একবার মনুষ্য শরীর ধারণ করলে আর অমানবীয় শরীর ধারণ করতে হয় না । কারণ অমানবীয় শরীর-চেতনা বা কান্ডজ্ঞানকে কার্যকরী করার জন্য গঠিত নয়। সমস্ত পর্যায়ের শরীরের মৃত্যুর পর সৃজনাত্মক এবং প্রজননাত্মক চেতনা চলে যায় । কান্ডজ্ঞান মানবসত্তায়, থাকে মানব শরীরে নয়। ঊর্ধ্ব প্রগতির সমাপ্তিতেই অমানবীয় সত্তার কান্ডজ্ঞান লাভ হয়। ওই সত্তা কান্ডজ্ঞান প্রাপ্তি এবং মানব সত্তায় রূপান্তরিত হওয়ার পর_ লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যত শরীরই ধারণ করুক না কেন_ মানব মানবই হতে থাকবে।
যে অবস্থা মানবকে এক জন্ম এবং মৃত্যুর পর যে অশরীরী অবস্থা __এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ করতে দেয় না এবং পুনঃপুনঃ শরীর ধারণ করতে বাধ্য করে _তা হোল অজ্ঞানতা! এই অজ্ঞানতা হোল তার এবং অমানবীয় সত্তার মধ্যে পৃথকীকরণের অজ্ঞানতা। এই অজ্ঞানতা মানবীয় সত্তাকে সে ও তার শরীর যে এক _তা ভাবতে বাধ্য করে ।অমানবীয় সত্তায় থাকাকালীন এই সত্তা এরূপই ধারণা করতো। এরূপ ধারণা অমানবীয় স্বভাবেরই ধারাবাহিকতা। সৃজনাত্মক এবং প্রজননাত্মক চেতনাকে সুখ দিয়ে কি করে শারীরিক আরাম ও সুখ পাওয়া যায় সেই দিকেই অমানবীয় সত্তার সবসময় মন থাকে।
নিজ নিজ সত্তার অবর্তমানে কোন শরীর আরামবোধ ও সুখ ভোগ করতে পারে না। শরীর বস্তু, যদিও শারীরিক সুখ ও আরামের দিকে সত্তার মনোযোগ থাকে, তথাপি সত্তার জন্যই আরাম ও সুখ __শরীরের জন্য নয়! শারীরিক আরাম ও সুখের প্রতি মনোযোগী হয়ে এবং সে বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে মানব বস্তু,বিষয় ও সততার সঙ্গে আচরণে অমানবীয় সত্তার ন্যায় একই স্বভাব এবং আচরণের বশবর্তি হচ্ছে। এর ফলে সে প্রগতি থেকে সরে আসে এবং একটা নির্দিষ্ট মনোভাব গড়ে তোলে।
শরীরকে আরাম ও সুখ দিতে গিয়ে সত্তাগুলি যেমন আরাম ও সুখ ভোগ করে _তেমনি দুঃখ-কষ্টও ভোগ করে।ঔ মানুষ যে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভোগ করে তার মধ্যে ক্ষুদ্রতম হোল তার শরীরের মৃত্যুর আগে যে সমস্ত দুঃখ কষ্ট পায়! প্রত্যেক মানুষ আগেভাগে তার দেহাবসান এর কথা জানতে পারে। কেউ কয়েক বছর আগে, কেউ কয়েক মাস আগে, কেউ কয়েক সপ্তাহ আগে, কেউ কয়েকদিন আগে, কেউ বা অন্তত কয়েক ঘন্টা আগে _জানতে পারে! এমনকি প্রত্যেক সত্তা আকস্মিক দুর্ঘটনায় তার শরীর পতনের কথাও _পূর্বেই জানতে পারে! আগামী ঘটনা অবগত হওয়ার মুহূর্ত থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত না স্মৃতিশক্তি লোপ এবং দেহের অবসান হয়, ততক্ষণ প্রগতি বহির্ভূত মানুষের দুঃখ-কষ্টই সবচেয়ে বেশি দুঃসহ।
চিন্তা, ভাবনা ও কার্যের দিক থেকে সব রকম অমানবীয় সত্তার কাজ সবসময় যথার্থ । এর ফলে তারা ঊর্ধ্ব প্রগতির দিকে, উচ্চতর শক্তি লাভের দিকে এবং মানুষ হওয়ার দিকে অগ্রসর হয় । যে চেতনা দিয়ে ভাল এবং মন্দ বিচার করা যায় সেই চেতনা দিয়ে তারা এবং তাদের শরীর গঠিত হয় না । শরীরের মৃত্যুর পর অমানবীয় সত্তা যাদের সাহচর্যে সাধারণ শক্তি পেয়েছে তাদের সঙ্গে অবস্থান করতে করতে কাণ্ডজ্ঞানের যোগে মানবীয় সত্তায় পরিণত হয় এবং মনুষ্য শরীর ধারণ করে । এই শরীর কান্ডজ্ঞানকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত। এইসময় হতে, কান্ডজ্ঞান(যা আদর্শ মানব-চেতনার মধ্যে অন্তর্নিহিত) যুক্ত হয়ে এবং ভালো-মন্দ বিচারে দক্ষ হয়ে মানবীয় সত্তা ও শরীর_ সেই সহজ অবস্থায় আসে, যেখানে সে পূর্বের মনোভাব, আচরণ এবং স্বভাব বর্জন করে মানবীয় মনোভাব, আচরণ এবং স্বভাবযুক্ত হয়ে _মানুষের মতো কাজ করে । যথার্থভাবে ঊর্ধ্ব প্রগতির দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় এসে পৌঁছায়। এই ঊর্ধ্ব প্রগতি তাকে তার লক্ষ্য সাধনের দিকে চালিত করে । বিশ্ব জাগতিক প্রয়োজনে এটাই মানুষের নিকট হতে আশা করা যায়। (ক্রমশঃ)
ওখান থেকে স্বামীজীরা গিয়েছিলেন আগ্রায়।ওখানকার সব চাইতে বড় এবং বিলাসবহুল হোটেল ছিল তাজ। আগ্রা স্টেশনে পৌঁছানোর পর যে কোন কারনেই হোক তাজ হোটেলের দুজন কর্মচারী অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁদেরকে অনুরোধ করেন যেন তাঁরা তাজ হোটেলে গিয়ে ওঠেন । স্বামীজী কোন আপত্তি না করে সেই বিলাসবহুল হোটেলে গিয়েই উঠেছিলেন। সেখানে উনি শাস্ত্রীজীকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন ছিলেন এবং হোটেলের ভালো গাড়ি করে ওই অঞ্চলের সমস্ত দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করেছিলেন। ওই হোটেলে সেই সময় একজন অন্ধ্রপ্রদেশের কোনো অঞ্চলের রাজাও এসেছিলেন । কোন কারণে একদিন ওই রাজার সাথে স্থানীয় অধিবাসীদের কোনো বিবাদ বেধে যায় এবং তাতে ওই রাজার সম্মান হানির আশংকা দেখা দিয়েছিল। এটা লক্ষ্য করে স্বামীজী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং রাজার পক্ষ অবলম্বন করে তাঁকে নিশ্চিত অপমানের হাত থেকে রক্ষা করেন । এতে ওই রাজা স্বামীজীর প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন।
তাজ হোটেলে মাত্র দুদিন থাকার জন্য তাদেরকে তৎকালীন সময়ে 600 টাকা বিল দিতে হয়েছিল । কিন্তু স্বামীজীর কাছে সেই সময় অনেক অর্থ ছিল_ তাই এই বিল দেওয়া তাঁর পক্ষে কোন অসুবিধার সৃষ্টি করেনি।
এইসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার বহু পরে স্বামীজি যখন ভক্তদের কাছে ওই গুলি উপস্থাপনা করেছিলেন, তখন ভক্তরা খুবই বিস্মিত হয়েছিল এই ভেবে যে __যে স্বামীজি দিনের পর দিন দুপয়সার চা খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলেন _সেই স্বামীজি আগ্রা শহরের সবচাইতে বিলাসবহুল হোটেলেও কাটিয়েছিলেন!!
এইভাবে বহু জায়গা ঘুরে স্বামীজী এবং শাস্ত্রীজী দক্ষিণ ভারতের দিকে পা বাড়ান। সেখানে তাঁরা তিরুপতি বালাজি মন্দির দর্শন করেছিলেন। ঐ স্থান থেকে শাস্ত্রীজীর জন্মস্থান ‘কুডাপ্পা’ খুবই কাছে_তাই শাস্ত্রীজী তার জন্মভূমি কুডাপ্পায় ফিরে যেতে চাইলেন কিন্তু স্বামীজি রাজমন্দ্রীতে এসে পুষ্কর ঘাটের নিকট এক বালাজি মন্দিরে থাকতে লাগলেন । শাস্ত্রীজীর কিন্তু জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া হলো না _কারণ তিনি যেহেতু অরবিন্দের ভক্ত ছিলেন তাই তাঁর ইচ্ছা হলো যে পন্ডিচেরি গিয়ে স্বামী অরবিন্দকে তিনি দর্শন করেন ! শাশ্ত্রীজী পন্ডিচেরি গিয়ে পৌঁছেছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁর অরবিন্দ দর্শন হয়নি! এমনকি তিনি আশ্রম থেকে প্রসাদও পাননি! তাই হতাশ হয়ে তিনি তাঁর বাড়ি ফিরে এসেছিলেন।
এদিকে স্বামীজি রাজমন্দ্রীর যে মন্দিরে ছিলেন_ সেখানে একদিন এক অপরিচিত ব্যক্তি এসে তাঁর হাতে একটি মোরক ধরিয়ে দিয়ে তাঁকে প্রণাম করে বললেন যে, ঋষি অরবিন্দ স্বামীজীর জন্য এই প্রসাদী ফুল এবং প্রসাদ পাঠিয়েছেন!
স্বামীজী অরবিন্দের প্রসাদ পেয়ে আনন্দে অভিভূত হয়ে গেলেন! তিনি অবাক হয়ে গেলেন এইজন্য যে, অরবিন্দের দয়ায় এই নিভৃত স্থানে প্রসাদ তাঁর কাছে এসে পৌছালো ! সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফুল এবং প্রসাদ_ অরবিন্দের ভক্ত এবং অরবিন্দের দর্শন-অনুরাগী শাস্ত্রীজীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
তিরুপতিতে থাকাকালীন স্বামীজী এবং শাস্ত্রীজী অনেকসময় অরবিন্দের আলোচনা করে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন কিন্তু শাস্ত্রীজী অরবিন্দকে দেখার একান্ত যে ইচ্ছা ছিল, তা তিনি কখনও স্বামীজীকে জানাননি! অথচ সেই স্বামীজীর হাত দিয়েই তিনি অরবিন্দের প্রসাদ পেলেন_ এইটা ভেবে শাশ্ত্রীজীর নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হল । তৎক্ষণাৎ তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাজমন্দ্রীর উদ্দেশ্যে ছুটলেন। স্বামীজি তাঁর সঙ্গীকে পুনরায় পেয়ে খুবই আহ্লাদিত হলেন। অরবিন্দের কৃপার কথা আলোচনা করতে করতে তারা বেশ কয়েকদিন সেখানেই কাটিয়ে দিলেন।।(ক্রমশঃ)
*MESSAGE TO HUMANITY*
~ _Swami Baulananda_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঊর্ধ্ব শক্তি মানবসত্তার সাধারণ শক্তি। ঊর্ধ্ব প্রগতির ক্ষেত্রে অমানবীয় শরীর নিয়ে ব্যক্তিসত্তা, অমানবীয় সত্তার ন্যায় বহু জন্ম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অসংখ্য পরিবর্তনের সম্মুখীন হয় এবং ঊর্ধ্ব শক্তি প্রাপ্ত হয়ে মানবসত্তায় রূপান্তরিত হয়। ওই ঊর্ধ্ব শক্তিকে কার্যকরী করার জন্য যে চেতনা দরকার তা অমানবীয় সত্তা এবং শরীরে অনুপস্থিত। মানবীয় সত্তা এবং শরীর এমন ভাবে তৈরি হয় যাতে করে সে একজন্মেই লক্ষ্য সাধন করতে পারে। যে মানব সত্তা ঊর্ধ্বগতির দ্বারা তার লক্ষ্য সাধন করে না, সেও মৃত্যুর পর পুনরায় মানব শরীর ধারণ করে। লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই পদ্ধতি পুনঃপুনঃ চলতে থাকে, তাতে শরীরের সংখ্যা যতই হোক না কেন ? এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নাই। এই পুনরাবর্তনের জন্য যে সীমা তা হোল লক্ষ্য সাধন। একবার মনুষ্য শরীর ধারণ করলে আর অমানবীয় শরীর ধারণ করতে হয় না । কারণ অমানবীয় শরীর-চেতনা বা কান্ডজ্ঞানকে কার্যকরী করার জন্য গঠিত নয়। সমস্ত পর্যায়ের শরীরের মৃত্যুর পর সৃজনাত্মক এবং প্রজননাত্মক চেতনা চলে যায় । কান্ডজ্ঞান মানবসত্তায়, থাকে মানব শরীরে নয়। ঊর্ধ্ব প্রগতির সমাপ্তিতেই অমানবীয় সত্তার কান্ডজ্ঞান লাভ হয়। ওই সত্তা কান্ডজ্ঞান প্রাপ্তি এবং মানব সত্তায় রূপান্তরিত হওয়ার পর_ লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যত শরীরই ধারণ করুক না কেন_ মানব মানবই হতে থাকবে।
যে অবস্থা মানবকে এক জন্ম এবং মৃত্যুর পর যে অশরীরী অবস্থা __এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ করতে দেয় না এবং পুনঃপুনঃ শরীর ধারণ করতে বাধ্য করে _তা হোল অজ্ঞানতা! এই অজ্ঞানতা হোল তার এবং অমানবীয় সত্তার মধ্যে পৃথকীকরণের অজ্ঞানতা। এই অজ্ঞানতা মানবীয় সত্তাকে সে ও তার শরীর যে এক _তা ভাবতে বাধ্য করে ।অমানবীয় সত্তায় থাকাকালীন এই সত্তা এরূপই ধারণা করতো। এরূপ ধারণা অমানবীয় স্বভাবেরই ধারাবাহিকতা। সৃজনাত্মক এবং প্রজননাত্মক চেতনাকে সুখ দিয়ে কি করে শারীরিক আরাম ও সুখ পাওয়া যায় সেই দিকেই অমানবীয় সত্তার সবসময় মন থাকে।
নিজ নিজ সত্তার অবর্তমানে কোন শরীর আরামবোধ ও সুখ ভোগ করতে পারে না। শরীর বস্তু, যদিও শারীরিক সুখ ও আরামের দিকে সত্তার মনোযোগ থাকে, তথাপি সত্তার জন্যই আরাম ও সুখ __শরীরের জন্য নয়! শারীরিক আরাম ও সুখের প্রতি মনোযোগী হয়ে এবং সে বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে মানব বস্তু,বিষয় ও সততার সঙ্গে আচরণে অমানবীয় সত্তার ন্যায় একই স্বভাব এবং আচরণের বশবর্তি হচ্ছে। এর ফলে সে প্রগতি থেকে সরে আসে এবং একটা নির্দিষ্ট মনোভাব গড়ে তোলে।
শরীরকে আরাম ও সুখ দিতে গিয়ে সত্তাগুলি যেমন আরাম ও সুখ ভোগ করে _তেমনি দুঃখ-কষ্টও ভোগ করে।ঔ মানুষ যে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভোগ করে তার মধ্যে ক্ষুদ্রতম হোল তার শরীরের মৃত্যুর আগে যে সমস্ত দুঃখ কষ্ট পায়! প্রত্যেক মানুষ আগেভাগে তার দেহাবসান এর কথা জানতে পারে। কেউ কয়েক বছর আগে, কেউ কয়েক মাস আগে, কেউ কয়েক সপ্তাহ আগে, কেউ কয়েকদিন আগে, কেউ বা অন্তত কয়েক ঘন্টা আগে _জানতে পারে! এমনকি প্রত্যেক সত্তা আকস্মিক দুর্ঘটনায় তার শরীর পতনের কথাও _পূর্বেই জানতে পারে! আগামী ঘটনা অবগত হওয়ার মুহূর্ত থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত না স্মৃতিশক্তি লোপ এবং দেহের অবসান হয়, ততক্ষণ প্রগতি বহির্ভূত মানুষের দুঃখ-কষ্টই সবচেয়ে বেশি দুঃসহ।
চিন্তা, ভাবনা ও কার্যের দিক থেকে সব রকম অমানবীয় সত্তার কাজ সবসময় যথার্থ । এর ফলে তারা ঊর্ধ্ব প্রগতির দিকে, উচ্চতর শক্তি লাভের দিকে এবং মানুষ হওয়ার দিকে অগ্রসর হয় । যে চেতনা দিয়ে ভাল এবং মন্দ বিচার করা যায় সেই চেতনা দিয়ে তারা এবং তাদের শরীর গঠিত হয় না । শরীরের মৃত্যুর পর অমানবীয় সত্তা যাদের সাহচর্যে সাধারণ শক্তি পেয়েছে তাদের সঙ্গে অবস্থান করতে করতে কাণ্ডজ্ঞানের যোগে মানবীয় সত্তায় পরিণত হয় এবং মনুষ্য শরীর ধারণ করে । এই শরীর কান্ডজ্ঞানকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত। এইসময় হতে, কান্ডজ্ঞান(যা আদর্শ মানব-চেতনার মধ্যে অন্তর্নিহিত) যুক্ত হয়ে এবং ভালো-মন্দ বিচারে দক্ষ হয়ে মানবীয় সত্তা ও শরীর_ সেই সহজ অবস্থায় আসে, যেখানে সে পূর্বের মনোভাব, আচরণ এবং স্বভাব বর্জন করে মানবীয় মনোভাব, আচরণ এবং স্বভাবযুক্ত হয়ে _মানুষের মতো কাজ করে । যথার্থভাবে ঊর্ধ্ব প্রগতির দিকে অগ্রসর হওয়ার মতো অবস্থায় এসে পৌঁছায়। এই ঊর্ধ্ব প্রগতি তাকে তার লক্ষ্য সাধনের দিকে চালিত করে । বিশ্ব জাগতিক প্রয়োজনে এটাই মানুষের নিকট হতে আশা করা যায়। (ক্রমশঃ)