গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের সিটিং-এ যে সব আলোচনা হোত — তাঁর প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল ৷ এসব আলোচনা তুলে বলার চেষ্টা করা হচ্ছিল যে – কোন প্রসঙ্গ উঠলেই – কোন নিস্তরঙ্গ জলাশয়ে ঢিল পড়লে যেমন তার তরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে ধীরে ধীরে চতুর্দিকে বিস্তৃত হয়ে যায় — তেমনি ওনার আলোচনাগুলি যেন সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে বিস্তৃতি লাভ করতে করতে সংসার , সমাজ , পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাবিশ্ব বা whole Universe -কে স্পর্শ্য করত ! গুরু মহারাজের কাছেই প্রথম শুনেছিলাম ব্রহ্ম অনুতে অনুস্যুত আবার বিভুরূপে সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে ওতপ্রোত ! উপনিষদের গল্পে রয়েছে — কোন ঋষির আশ্রমে শিষ্য জিজ্ঞাসা করেছিল – ” গুরুদেব ! ব্রহ্ম সবেতে ওতপ্রোত হয়ে রয়েছেন – এই ব্যাপারটা কি রকম ?” গুরুদেব শিষ্যকে একটা পাত্রে জল আনতে বলেছিলেন এবং কিছুটা লবণ ৷ তারপর উনি সেই শিষ্যকে জলে ঐ লবণটি কিছুক্ষণ ধরে নেড়ে নেড়ে সম্পূর্ণভাবে দ্রবীভূত করতে বললেন । এবার উনি ঐ শিষ্যকে জিজ্ঞাসা করলেন – ” বৎস ! ঐ পাত্রের জলের মধ্যে লবণটির অবস্থান কোথায় ?” শিষ্যটি বলল যে ‘লবণ’ জলের মধ্যেই দ্রবীভূত অবস্থায় রয়েছে ! এইবার গুরুদেব শিষ্যকে বললেন – “তুমি ঐ লবণজলের তলদেশ , মধ্যভাগ এবং উপরিঅংশ থেকে সামান্য পরিমাণ লবণজল তুলে নিয়ে আস্বাদ করে দেখো লবণ ঠিক কোথায় রয়েছে ?” শিষ্য গুরুর আদেশে পাত্রে থাকা লবণজলের বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে তুলে স্বাদ নিয়ে দেখল যে – আস্বাদ একইরকম ! সেইটা গুরুকে বলতেই গুরুদেব তখন বোঝালেন – “এটাকেই ‘ওতপ্রোত’ বলা হচ্ছে ! লবণ যেমন ঐ জলের সর্বস্থানে সমানভাবে বিরাজ করছে – ঠিক তেমনি ব্রহ্মও সমস্ত স্থানে, সমস্ত বস্তু বা বিষয়ে ঐরূপভাবে ওতপ্রোত হয়ে রয়েছে ! (যদিও গুরু মহারাজ এটাও বলেছিলেন যে – ঈশ্বরতত্ত্ব , ব্রহ্মতত্ত্ব ইত্যাদি আধ্যাত্মিক তত্ত্বসমূহের জাগতিক কোন বিষয় বা বস্তু দিয়ে উদাহরণ দেওয়া হয় বটে কিন্তু তা কখনই যথাযথ হয় না ৷ শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে মোটামুটি একটা ধারণা দেবার জন্য এই উদাহরণগুলি প্রয়োগ করা হয় মাত্র!) ।
যাইহোক, আমাদের আলোচনা হচ্ছিল ‘মাছ’ নিয়ে । উনি বলেছিলেন উন্নত দেশগুলির (ইউরোপীয়) মাছ রান্না বা খাওয়া , আর আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মাছ রান্না বা খাওয়ার কথা ! গুরু মহারাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছিলেন (ইংল্যান্ড , জার্মানী , নরওয়ে , সুইডেন , ইতালি , গ্রীস , তুরস্ক ইত্যাদি আরও অনেক দেশ) । সেখানে উনি দেখেছিলেন — ওইসব দেশে এখন বাড়িতে রান্না আর প্রায় হয়ই না ৷ কেউ কেউ সখ করে রান্না করে! উনি রেস্টুরেন্টগুলিতে দেখেছিলেন — টুথপেষ্টের মতো বিভিন্ন মাছের পেষ্ট রয়েছে টিউবে । ওখানকার মানুষজন কোন খাদ্যের সাথে ওই টিউব থেকে মাছের ‘পেষ্ট’ গলগল করে বের করে তাতে মাখিয়ে খেয়ে নেয় ! এছাড়া বিভিন্ন মাছের Preparation-ও রেষ্টুরেন্ট বা হোটেলে রয়েছে — কিন্তু বেশীরভাগই কাঁটামুক্ত ! তার মানে হচ্ছে মাছের মাংস খাওয়ার চল-ই বেশী !
উনি বললেন – বাঙালীরা যেভাবে মাছের ‘কাঁটাচচ্চড়ি’ করে খায় বা ইলিশ জাতীয় মাছ অথবা চুনো মাছের কাঁটা বেছে খায় – এইরকম আর কোন দেশের লোকই খায় না ৷
গুরু মহারাজ পুকুরের মাছেদের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন – চ্যাঙ – ছিঙুরী জাতীয় ল্যাটা মাছেরা কোন জলাশয়ে ব্রাত্য ! মানুষের সমাজে যেমন ‘ছোটলোক – ভদ্রলোক’ আছে , এখানেও তেমনি ! ল্যাটা মাছেদের অন্যান্য মাছেরা সহ্য করতে পারে না! এরা যেন মৎস্যসমাজে ‘ছোটলোক’! এই জন্যই এরা পাড়ের কাছে , ঝোপে-ঝাড়ে ঘুরে বেড়ায়। উনি বলেছিলেন – মৃগেল (মিরিক) মাছ খুব চালাক। পুকুরে জাল ফেললেও চট্ করে ধরা দেয় না ৷ জলাশয়ের সমস্ত জল ছেঁচে – মেরে ফেললেও দেখা যায় শেষকালে দু-চারটে মৃগেল (মিরিক) মাছ রয়ে গেছে !
বোয়াল মাছকে উনি বলেছিলেন যেন জলাশয়ের গুন্ডা ৷ ওকে দেখলেই বাকী মাছেরা ভয়ে টটরস্থ হয়ে যায়!
কাতলা মাছ সম্বন্ধে উনি বলেছিলেন – এই মাছ একটু বোকা ধরণের এবং জলের উপরিতলে থাকে। জলাশয় জাল ফেললে এই মাছগুলিই আগে ধরা পড়ে ।
বর্তমানে নানান মিশ্র প্রজাতির মাছ(সংকর মাছ) আমদানি হচ্ছে – এগুলি মানুষের শরীরে নানা disturbance সৃষ্টি করছে – এগুলোকে ঠিক ঠিক ভাবে শরীরে adopted হতে তিন Generation লেগে যাবে ৷
প্রথম অবস্থায় সিলভার কার্প(হাইব্রিড, সংকর জাতির মাছ) যখন বাজারে আমদানি হয়েছিল _তখন তো সাধারণ মানুষ কিছুই জানতো না, ফলে সাধারণ মানুষ ভেবেছিল বোধহয় কম পয়সায় ইলিশ মাছ বাজারে এসেছে। কিন্তু অল্পদিন পরেই সবার সেই ভুল ভেঙে যায় _taste পাবার পর। আমাদের এখানে বাজারে যে সমস্ত মাছ আসে সেগুলির মধ্যে taste – এর দিক থেকে বিচার করলে ইলিশ মাছের কাছে আর কেউ আসে না! ইলিশ মাছ সামুদ্রিক হলেও এটি ডিম ছাড়ার জন্য বা প্রজননের জন্য মিষ্টিজলে অর্থাৎ নদীতে উঠে আসে_আর তখনই(বর্ষাকালে) এরা বেশি বেশি করে ধরা পড়ে। মিষ্টি জলে আসার পরেই ইলিশের taste পাল্টে যায়।
সমুদ্রের যে কোন মাছই স্বাদে সামান্য নোনতা কিন্তু মিষ্টিজলের মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। পুকুর বা যে কোন বদ্ধ জলাশয় অপেক্ষা স্রোতযুক্ত জলের মাছ আরও অধিক সুস্বাদু হয়।
মাছ ধরার কৌশল নিয়েও গুরুমহারাজ আমাদেরকে নানা কথা বলেছিলেন। উনি আমাদেরকে বোয়াল মাছ ধরার এমন কায়দা শিখিয়েছিলেন যে __যদি জলাশয়ে একটা মাত্র বোয়াল ও থাকে, তাহলেও তা ধরা পড়ে যাবে! কায়দাটা হোল__একটা খুব সরু মুখ বিশিষ্ট ডিমের খোলের মধ্যে একটা জ্যান্ত জোনাকি পোকা এবং একটা শক্ত সুতোয় বাঁধা বঁড়শি ঢুকিয়ে দিয়ে ময়দা দিয়ে খোলা মুখটা ভালো ভাবে আটকে দিতে হবে যাতে ভিতরে জল না ঢোকে। এরপর লম্বা শক্ত সূতোটি ছেড়ে ছেড়ে অন্ধকার রাতে ডিমের খোলটি জলে ভাসিয়ে দিতে হবে। এবার হবে কি _ডিমের খোলের মধ্যে থাকা জোনাকির আলোয় খোলটি জলে অন্ধকারের মধ্যেও দৃশ্যমান থাকবে এবং দুর থেকে বোয়াল মাছেরা এটি দেখে বড় হাঁ করে এগিয়ে এসে এটিকে গপ্ করে গিলে ফেলবে। আর গিলে ফেলা মানেই বঁড়শি গলায় আটকে যাওয়া! বঁড়শি গলায় আটকে গেলেই সুতোয় পড়বে টান_এবার শুধু টেনে টেনে পাড়ে তোলা!
কইমাছ ধরার একটা সহজ এবং অদ্ভুত কায়দা শিখিয়েছিলেন গুরুমহারাজ! উনি বলেছিলেন _কইমাছ সাধারণত অল্পজলে(কম উচ্চতায়) এবং জলের উপরিতলে বাস করে। ওরা যেখানে থাকে সেখানে ক্রমাগত জল নাড়া দিয়ে দিয়ে ওদের উপস্থিতির জানান দেয়।
এবার এই মাছগুলিকে ধরার জন্য লাগে খুবই সামান্য উপকরণ। piece piece করে কাটা ঘুরঘুরি পোকা (এই পোকার অন্য নাম হয়তো আছে, এই পোকাগুলো বেশিরভাগ সারকুড় বা শুকনো আবর্জনায় বেশি থাকে), আর দুই – আড়াই ইঞ্চি লম্বা কঞ্চি বা চাঁচাছোলা বাকারির (কাবারি) সরু সরু flexible টুকরো।
ঘুরঘুরি পোকার শরীরের (মাথা বাদে) গোল গোল টুকরোগুলো যথেষ্ট elastic! কঞ্চি বা বাকারির সরু টুকরো গুলোকে বাঁকিয়ে দুমুখ একজায়গা করে ঐ ঘুরঘুরির গোল গোল করে কাটা ‘রিং’-এর মধ্যে ঢুকিয়ে আটকে দিতে হবে(এমনভাবে __যাতে রিং-টা খুলে নিলেই কাঠিটা সোজা হয়ে যাবে অথবা সোজা হবার চেষ্টা করবে।)। এবার ঐরকম সব কাঠিগুলোর দুমাথা একজায়গা করে, এক একটা ঘুরঘুরির রিং-এর মতো টুকরো আটকে _যেখানে অনেক কইমাছ নড়াচড়া করছে, সেখানে (একহাঁটু জলে নেমে) জলে ভাসিয়ে দিয়ে পাড়ে এসে 5/10-মিনিট বসতে না বসতেই দেখা যাবে কইমাছ জলের উপরে ‘হাঁ’ করে ভেসে ওঠতে থাকবে।
ব্যাপারটা কি হবে জানেন__কইমাছ ঘুরঘুরির দেহের মাংস(গোল গোল করে কাটা রিং-এর মতো অংশ) যেই টেনে নিয়ে খেতে যাবে অমনি__ দুমুখ একজায়গা করা কাঠি সোজা হবার চেষ্টায় কইমাছটির মুখের চোয়ালে আটকে মাছের মুখটাকে হাঁ করে দেবে। ঐ অবস্থায় মাছটি আর জলের তলায় চলে যেতে পারবে না – ভেসেই থাকবে। অনেকগুলো ভাসতে শুরু করলে শুধু জলে নেমে ধরে আনলেই হবে। (ক্রমশঃ)
যাইহোক, আমাদের আলোচনা হচ্ছিল ‘মাছ’ নিয়ে । উনি বলেছিলেন উন্নত দেশগুলির (ইউরোপীয়) মাছ রান্না বা খাওয়া , আর আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মাছ রান্না বা খাওয়ার কথা ! গুরু মহারাজ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছিলেন (ইংল্যান্ড , জার্মানী , নরওয়ে , সুইডেন , ইতালি , গ্রীস , তুরস্ক ইত্যাদি আরও অনেক দেশ) । সেখানে উনি দেখেছিলেন — ওইসব দেশে এখন বাড়িতে রান্না আর প্রায় হয়ই না ৷ কেউ কেউ সখ করে রান্না করে! উনি রেস্টুরেন্টগুলিতে দেখেছিলেন — টুথপেষ্টের মতো বিভিন্ন মাছের পেষ্ট রয়েছে টিউবে । ওখানকার মানুষজন কোন খাদ্যের সাথে ওই টিউব থেকে মাছের ‘পেষ্ট’ গলগল করে বের করে তাতে মাখিয়ে খেয়ে নেয় ! এছাড়া বিভিন্ন মাছের Preparation-ও রেষ্টুরেন্ট বা হোটেলে রয়েছে — কিন্তু বেশীরভাগই কাঁটামুক্ত ! তার মানে হচ্ছে মাছের মাংস খাওয়ার চল-ই বেশী !
উনি বললেন – বাঙালীরা যেভাবে মাছের ‘কাঁটাচচ্চড়ি’ করে খায় বা ইলিশ জাতীয় মাছ অথবা চুনো মাছের কাঁটা বেছে খায় – এইরকম আর কোন দেশের লোকই খায় না ৷
গুরু মহারাজ পুকুরের মাছেদের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন – চ্যাঙ – ছিঙুরী জাতীয় ল্যাটা মাছেরা কোন জলাশয়ে ব্রাত্য ! মানুষের সমাজে যেমন ‘ছোটলোক – ভদ্রলোক’ আছে , এখানেও তেমনি ! ল্যাটা মাছেদের অন্যান্য মাছেরা সহ্য করতে পারে না! এরা যেন মৎস্যসমাজে ‘ছোটলোক’! এই জন্যই এরা পাড়ের কাছে , ঝোপে-ঝাড়ে ঘুরে বেড়ায়। উনি বলেছিলেন – মৃগেল (মিরিক) মাছ খুব চালাক। পুকুরে জাল ফেললেও চট্ করে ধরা দেয় না ৷ জলাশয়ের সমস্ত জল ছেঁচে – মেরে ফেললেও দেখা যায় শেষকালে দু-চারটে মৃগেল (মিরিক) মাছ রয়ে গেছে !
বোয়াল মাছকে উনি বলেছিলেন যেন জলাশয়ের গুন্ডা ৷ ওকে দেখলেই বাকী মাছেরা ভয়ে টটরস্থ হয়ে যায়!
কাতলা মাছ সম্বন্ধে উনি বলেছিলেন – এই মাছ একটু বোকা ধরণের এবং জলের উপরিতলে থাকে। জলাশয় জাল ফেললে এই মাছগুলিই আগে ধরা পড়ে ।
বর্তমানে নানান মিশ্র প্রজাতির মাছ(সংকর মাছ) আমদানি হচ্ছে – এগুলি মানুষের শরীরে নানা disturbance সৃষ্টি করছে – এগুলোকে ঠিক ঠিক ভাবে শরীরে adopted হতে তিন Generation লেগে যাবে ৷
প্রথম অবস্থায় সিলভার কার্প(হাইব্রিড, সংকর জাতির মাছ) যখন বাজারে আমদানি হয়েছিল _তখন তো সাধারণ মানুষ কিছুই জানতো না, ফলে সাধারণ মানুষ ভেবেছিল বোধহয় কম পয়সায় ইলিশ মাছ বাজারে এসেছে। কিন্তু অল্পদিন পরেই সবার সেই ভুল ভেঙে যায় _taste পাবার পর। আমাদের এখানে বাজারে যে সমস্ত মাছ আসে সেগুলির মধ্যে taste – এর দিক থেকে বিচার করলে ইলিশ মাছের কাছে আর কেউ আসে না! ইলিশ মাছ সামুদ্রিক হলেও এটি ডিম ছাড়ার জন্য বা প্রজননের জন্য মিষ্টিজলে অর্থাৎ নদীতে উঠে আসে_আর তখনই(বর্ষাকালে) এরা বেশি বেশি করে ধরা পড়ে। মিষ্টি জলে আসার পরেই ইলিশের taste পাল্টে যায়।
সমুদ্রের যে কোন মাছই স্বাদে সামান্য নোনতা কিন্তু মিষ্টিজলের মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। পুকুর বা যে কোন বদ্ধ জলাশয় অপেক্ষা স্রোতযুক্ত জলের মাছ আরও অধিক সুস্বাদু হয়।
মাছ ধরার কৌশল নিয়েও গুরুমহারাজ আমাদেরকে নানা কথা বলেছিলেন। উনি আমাদেরকে বোয়াল মাছ ধরার এমন কায়দা শিখিয়েছিলেন যে __যদি জলাশয়ে একটা মাত্র বোয়াল ও থাকে, তাহলেও তা ধরা পড়ে যাবে! কায়দাটা হোল__একটা খুব সরু মুখ বিশিষ্ট ডিমের খোলের মধ্যে একটা জ্যান্ত জোনাকি পোকা এবং একটা শক্ত সুতোয় বাঁধা বঁড়শি ঢুকিয়ে দিয়ে ময়দা দিয়ে খোলা মুখটা ভালো ভাবে আটকে দিতে হবে যাতে ভিতরে জল না ঢোকে। এরপর লম্বা শক্ত সূতোটি ছেড়ে ছেড়ে অন্ধকার রাতে ডিমের খোলটি জলে ভাসিয়ে দিতে হবে। এবার হবে কি _ডিমের খোলের মধ্যে থাকা জোনাকির আলোয় খোলটি জলে অন্ধকারের মধ্যেও দৃশ্যমান থাকবে এবং দুর থেকে বোয়াল মাছেরা এটি দেখে বড় হাঁ করে এগিয়ে এসে এটিকে গপ্ করে গিলে ফেলবে। আর গিলে ফেলা মানেই বঁড়শি গলায় আটকে যাওয়া! বঁড়শি গলায় আটকে গেলেই সুতোয় পড়বে টান_এবার শুধু টেনে টেনে পাড়ে তোলা!
কইমাছ ধরার একটা সহজ এবং অদ্ভুত কায়দা শিখিয়েছিলেন গুরুমহারাজ! উনি বলেছিলেন _কইমাছ সাধারণত অল্পজলে(কম উচ্চতায়) এবং জলের উপরিতলে বাস করে। ওরা যেখানে থাকে সেখানে ক্রমাগত জল নাড়া দিয়ে দিয়ে ওদের উপস্থিতির জানান দেয়।
এবার এই মাছগুলিকে ধরার জন্য লাগে খুবই সামান্য উপকরণ। piece piece করে কাটা ঘুরঘুরি পোকা (এই পোকার অন্য নাম হয়তো আছে, এই পোকাগুলো বেশিরভাগ সারকুড় বা শুকনো আবর্জনায় বেশি থাকে), আর দুই – আড়াই ইঞ্চি লম্বা কঞ্চি বা চাঁচাছোলা বাকারির (কাবারি) সরু সরু flexible টুকরো।
ঘুরঘুরি পোকার শরীরের (মাথা বাদে) গোল গোল টুকরোগুলো যথেষ্ট elastic! কঞ্চি বা বাকারির সরু টুকরো গুলোকে বাঁকিয়ে দুমুখ একজায়গা করে ঐ ঘুরঘুরির গোল গোল করে কাটা ‘রিং’-এর মধ্যে ঢুকিয়ে আটকে দিতে হবে(এমনভাবে __যাতে রিং-টা খুলে নিলেই কাঠিটা সোজা হয়ে যাবে অথবা সোজা হবার চেষ্টা করবে।)। এবার ঐরকম সব কাঠিগুলোর দুমাথা একজায়গা করে, এক একটা ঘুরঘুরির রিং-এর মতো টুকরো আটকে _যেখানে অনেক কইমাছ নড়াচড়া করছে, সেখানে (একহাঁটু জলে নেমে) জলে ভাসিয়ে দিয়ে পাড়ে এসে 5/10-মিনিট বসতে না বসতেই দেখা যাবে কইমাছ জলের উপরে ‘হাঁ’ করে ভেসে ওঠতে থাকবে।
ব্যাপারটা কি হবে জানেন__কইমাছ ঘুরঘুরির দেহের মাংস(গোল গোল করে কাটা রিং-এর মতো অংশ) যেই টেনে নিয়ে খেতে যাবে অমনি__ দুমুখ একজায়গা করা কাঠি সোজা হবার চেষ্টায় কইমাছটির মুখের চোয়ালে আটকে মাছের মুখটাকে হাঁ করে দেবে। ঐ অবস্থায় মাছটি আর জলের তলায় চলে যেতে পারবে না – ভেসেই থাকবে। অনেকগুলো ভাসতে শুরু করলে শুধু জলে নেমে ধরে আনলেই হবে। (ক্রমশঃ)