গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) স্বয়ং ভগবান হওয়া সত্ত্বেও এবং সারা বিশ্বজুড়ে তাঁর ঘরে বাইরে শত সহস্র কাজ থাকা সত্ত্বেও আমাদের মতন সাধারণ ভক্তদের প্রতি কতটা স্নেহময় ছিলেন , Caring ছিলেন সেইসব আলোচনা আগের আগের episode-এ হচ্ছিল ৷ বাংলায় একটা কথা আছে – “একদিন প্রতিদিন”। গুরু মহারাজের করুণার কথা বলার ক্ষেত্রে বলা যায় – “একজন প্রতিজন”! অর্থাৎ “একজনের প্রতি বা মাত্র কয়েক জনের প্রতি গুরু মহারাজ Caring ছিলেন , অন্যদের প্রতি নয়”– এমনটি কিন্তু নয় ! গুরু মহারাজের যে লক্ষ লক্ষ ভক্ত রয়েছে – তাদের প্রত্যেকের প্রতিই গুরুমহারাজ একইরকম caring ছিলেন। তাই তারা প্রত্যেকেই তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারে! তাদের প্রত্যেকের জীবনে এমন বহু ঘটনাই রয়েছে যেখানে গুরু মহারাজের করুণার কথা বলতে বলতে তাদেরও চোখের জল বাঁধ মানে না ! এইটাই বোধয় ভগবানের ভগবানত্ত্ব ! এইটা একমাত্র স্বয়ং ভগবান-ই ঘটাতে পারেন – অন্য কেউ নয় !
চক্ষণজাদীর টগরদা এবং তার পরিবারের লোকেরা গুরু মহারাজের বহু লীলার সাক্ষী – এরাও তাঁর লীলা সহচর ! (কিন্তু মহামুস্কিল হোল এই যে টগরদা নিজের কথা প্রকাশিত হোক তা একদমই চান না!! তাই এই ব্যাপারটা এখানেই শেষ করতে হবে। এখন আপনারাই পারেন সকলে মিলে অনুরোধ জানিয়ে টগরদা র কাছে শোনা ঘটনা সমুহ লেখার অনুমতি আদায় করতে। কমেন্টে অনুরোধ লিখুন!!)
আগের episode-এ টগরদার মুখে শোনা জগাদার (রায়না) মায়ের কথা হচ্ছিল ৷ টগরদা জগাদার মা-য়ের অলৌকিকত্ত্ব বা অতিলৌকিকত্ত্ব সম্বন্ধেও কিছু আলোচনা করছিলেন ৷ উনি বললেন – প্রথম প্রথম যখন দাদা-র (গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ! গুরু মহারাজকে টগরদা-রা ‘দাদা’ বলেই সম্বোধন করতেন এবং গুরু মহারাজও এই পরিচয়েই পরিচিত হতে চাইতেন) সাথে রায়নায় জগাদার বাড়ী যেতাম তখন দেখেছিলাম – ওরা খুবই গরীব মানুষ ৷ জগাদার কামারশালা ছিল , সেই কামারশালার রোজগারে সংসার চালানো খুবই মুস্কিল ছিল ! তখনকার দিনে (১৯৭৭-৭৮ সালে) গ্রামের কামারশালায় কত আর কাজ থাকতো !(পরে অবশ্য গুরুমহারাজ ইলেক্ট্রিফিকেশনের অনেক কাজ জগাদাকে পাইয়ে দিতেন)। যাইহোক , সেই অবস্থায় নিজেদের পরিবারের সকলের মুখে দুবেলা দুমুঠো অন্ন যোগানোই তখন মুস্কিল ছিল – এদিকে গুরু মহারাজ প্রায়শঃই নিজে এবং সঙ্গে আরও দু-চারজনকে নিয়ে জগাদার বাড়ীতে উঠতেন ৷ এতে ঐ পরিবারে আরও চাপ আসতো!
গুরুজীর কাছে শুনেছি সময়ে সময়ে ঐ পরিবারের লোকজন (চাল কেনার সামর্থ্য না থাকায়) চালের খুদ কিনে এনে বা যোগাড় করে খুদঘাঁটা খেয়ে দিন কাটাতো । এমনকি গুরু মহারাজ গিয়েও আনন্দ সহকারে সেই খাবার সবার সাথে ভাগ করে খেয়েছিলেন!
এখন টগরদার অভিজ্ঞতার কথা বলি –! উনি বলেছিলেন – ” একদিন দাদার (গুরু মহারাজ) সাথে বা ওনার খোঁজে জগাদার বাড়ী গেছি ৷ দুপুরে খাবার সময় দেখলাম জগাদার মা থালায় করে এনে দিলেন মোটা চালের লাল লাল ভাত আর শাক-ডাঁটার একটা চচ্চড়ি জাতীয় সব্জি ৷ ছোটবেলা থেকে আমরা (টগরদা-রা) কখনই অভাব-অনটন ব্যাপারটা জানতাম না ! কারণ আমাদের গ্রামে অনেকটাই জমি-জমা , পুকুর-বাগান রয়েছে ৷ আর আমার বাবা তাঁর পরিবারের লোকজনদেরকে ভালো রাখা বা ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন ৷ সুতরাং ঐ ধরণের মোটা চালের লাল ভাত এবং একটা মাত্র তরকারী , তাও শাক-চচ্চড়ি দিয়ে ঐ ভাত খেতে হবে – দেখে আমার মনে খুবই শঙ্কা জাগলো ! ঐ দিয়ে এই ভাত আমি খেতে পারবো তো !”
এরপর টগরদা যা বললেন – তার কোন ব্যাখ্যা সাধারণভাবে দেওয়া যায় না – একমাত্র আধ্যাত্মিকভাবেই তা দেওয়া সম্ভব ! কথাটা বলি –– টগরদা ঈশ্বরকে স্মরণ করে যেইমাত্র শাক-চচ্চড়ি মাখিয়ে ঐ লাল মোটা চালের ভাত মেখে মুখে পুড়েছেন – অমনি দেখলেন সেই ভাত যেন মুখের মধ্যে ননীর মতো মিলিয়ে গেল ! আর অপরূপ এক স্বাদে মুখের ভেতরটা ভরে গেল । পরম আগ্রহে টগরদা সব ভাতকটা ঐ শাক-চচ্চড়ি দিয়ে খেয়ে নিয়েছিলেন ৷ আর শুধু সেই দিনের খাবারই নয় — পরে পরে টগরদা যতবার রায়না গিয়ে জগাদার বাড়ী গেছেন – প্রতিবারই সেই মায়ের হাতে রান্না করা খাবার খেয়ে উনি সেই একই স্বাদ পেয়েছেন ! টগরদা বলছিলেন – ” আমাদেরকে (গুরু মহারাজ এবং টগরদা) আসন পেতে , জলের গ্লাস Ready করে মা (জগাদার মা) থালায় করে খাবার হাতে করে নিয়ে এসে সাজিয়ে দিতেন ৷ তারপর একটা হাতপাখা (গ্রীষ্মকালে) নিয়ে এক হাতে পাখা করতেন , আর অন্য হাতে একবার দাদা (গুরু মহারাজ)-র গায়ে হাত বোলাতেন , একবার আমার (টগরদা) গায়ে মাথায় হাত বোলাতেন । ব্যস! ওতেই হয়ে গেল। ওনার ছোঁওয়া পাওয়া অবস্থায় যে কোন খাবারই মুখে দিতাম – তাই মনে হোত ননী-মাখন খাচ্ছি! অন্য কোন খাদ্যের কোন taste ই পেতাম না।
ভগবান যখন পৃথিবীতে শরীর গ্রহণ করেন _তখন কি আর তিনি একা একা আসেন! তিনি সঙ্গে করে সাথীদের নিয়ে আসেন। যুগ যুগ ধরে কত ভক্ত অপেক্ষা করে থাকেন, অহরহ প্রার্থনা করেন _”হে ভগবান! যখন তোমার নরতনু পৃথিবীতে লীলা করবেন _তখন যেন আমি তোমার সেই লীলা স্বচক্ষে দর্শন করতে পারি!”
যার যার প্রার্থনা grant হয়ে গেল তারাই ভগবানের লীলা চলাকালীন কোন না কোন নাম রূপে শরীর ধারণ করে, লীলা সহচর হোতে – লীলার স্বাদ আস্বাদন করতে।
একবার সিটিং-এ গুরুমহারাজ বলেছিলেন _” আমাদের আশ্রমেই অনেক মহাপুরুষ বৃক্ষ-লতা শরীরেও রয়েছে। গুরুমহারাজের লীলাভূমিতে বাস করার জন্য _তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল।
ভগবানের সাথে যারা আসে তারা দুরকমের হয়। এক দলের কথা আগেই বলা হোল – যারা প্রার্থনা করে এবং মন্জুরী পেলে তারা লীলা সহচর হিসাবে কাজ করে। আবার অনেকে আছেন যাদেরকে তিনি (ভগবান)-ই select করেন। তিনিই তাঁদেরকে সাথে করে নিয়ে আসেন এবং নির্দিষ্ট roll play করিয়ে নেন।
গুরুমহারাজ একবার বলেছিলেন _”ঈশ্বরের অবতরণের আগে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে যেন একটা মিটিং মতো হয়ে যায়! সেখানেই নির্দিষ্ট হয়ে যায় _কার কি roll ! তবে সবসময় সবাই যে ঠিক ঠিক roll play করতে পারে _তাও নয়! সেরকম হোলে পরবর্তী লীলায় roll change হয়ে যায়! আধ্যাত্মিক জগতের বিচিত্র বিধান!!! (ক্রমশঃ)