গুরু মহারাজের (স্বামী পরমানন্দ) কথা আলোচনা করতে গিয়ে নানা প্রসঙ্গ এসে যাচ্ছে । আমরা ছিলাম রায়নায় জগাদার মায়ের কাছে ৷ কিন্তু Facebook-এ একটা Post দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ওই ব্যাপারে একটু আলোচনা করা যাক্ ! আসলে ভগবানের মুখের কথা তিনভাবে প্রচারিত হয় — (১) সরাসরি যারা ভগবানের শ্রীমুখ থেকে শুনেছে তাদের দ্বারা , (২) যারা সরাসরি শুনেছে তাদের মুখ থেকে শুনে অন্য কেউ প্রচার করে – এইভাবে সেকেন্ড হ্যান্ডদের দ্বারা , আর (৩) পরবর্ত্তী গবেষকরা সেইস্থানে গিয়ে (ভগবানের লীলাস্থান) ক্ষেত্র সমীক্ষা করে , স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে অনেক তথ্য যোগাড় করে একটা সিদ্ধান্ত করে নেয় এবং পুস্তকাকারে লিপিবদ্ধ করে – এইগুলির দ্বারা ৷
আমাদের সৗেভাগ্য , এখনও আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা First Hand অর্থাৎ সরাসরি গুরু মহারাজের মুখ থেকে অনেক কথা শুনেছিল এবং সেগুলি তারা বলতে পারে । 2nd hand অর্থাৎ যারা সরাসরি গুরু মহারাজের কাছে শোনেনি, কিন্তু যারা শুনেছে– তাদের মুখ থেকে শুনেও যারা লিখছে বা লিখতে পারে অথবা তারা গুরু মহারাজকে নিয়ে নিজেরাই সিটিংও করতে পারে! Social Network -এও আমি এমন অনেক দ্বিতীয় প্রজন্ম-দের দেখছি যারা গুরু মহারাজের কোন বক্তব্য লিখতে গিয়ে লিখছে “গুরু মহারাজ বলতেন –” , ভাবটা এমন যে ঐ ছেলেটি যেন স্বয়ং সেখানে শরীরে উপস্থিত ছিল ! চেতনায় উপস্থিত হওয়াটা সূক্ষ্মজগতের ব্যাপার – কিন্তু স্থূলে উপস্থিত তো ছিল না ! তাই , যদি বলা হোত – “আমরা আমাদের সিনিয়র দের/আমাদের গুরুদেবের কাছে শুনেছি যে গুরু মহারাজ বলতেন – – – -” তাহলে সঠিক হোত বা শুনতে ভালো লাগতো! কিন্তু এটাও ঠিক — জগৎ-সংসার তার নিজের নিয়মে চলবে , আমি কি কারো মনোজগৎ পাল্টাতে পারবো ! ভগবানরাই যুগে যুগে শরীর নিচ্ছে — আর কেঁদে কেটে মানুষকে মানুষ করার জন্য কত চেষ্টা করছে,___ পরিনামে মার খাচ্ছে অথবা অত্যাচারিত হচ্ছে, হয়তো মারাও যাচ্ছে ।
কথা হচ্ছিল facebook-এ post-টাকে নিয়ে ৷ আজিমগঞ্জ কনশাস স্পিরিচ্যুয়ালের বর্তমান মহারাজ স্বামী কৃষ্ণানন্দের page-এ কোন ভক্ত ‘জনৈক বাবু’ পোষ্ট-টি করেছেন ।
আজিমগঞ্জে শিবমন্দিরের ব্যাপারে আজিমগঞ্জে এবং বনগ্রামে বেশ কয়েকবার গুরু মহারাজের আলোচনা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল ৷ আমার মনে হয় পুরোনো ভক্ত যারা সেই সময় ঐ দু-জায়গায় নিয়মিত যেতেন , তারা অনেকেই গুরু মহারাজের এই সংক্রান্ত Sitting শুনেছিলেন এবং তাদের মনেও আছে । বর্তমানে কি ঘটেছে , – কারো পক্ষ অবলম্বন করা বা কারো বিরোধিতা করা আমার উদ্দেশ্য নয় । গুরু মহারাজ তখন বিভিন্ন sitting -এ যা বলেছিলেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি । এটা অবশ্য “কথা প্রসঙ্গে”- কোন না কোন সময় প্রকাশিত হোত-ই – সেটাই এখন এই পেজে হচ্ছে ! একদিন আজিমগঞ্জে কনশাস্ স্পিরিচ্যুয়াল সেন্টারে সকালের দিকের sitting -এ গুরু মহারাজ আলোচনা করেছিলেন – “আজিমগঞ্জ আশ্রমটির বাতাবরণ খুব ভালো ৷ একে তো গঙ্গার তীর , তার উপর দূষণমুক্ত পরিবেশ ৷ এখন রাস্তায় যে ধূলো দেখছ – এই রাস্তাটা পাকা হয়ে গেলে (এখন হয়ে গেছে) আর অতটা ধূলো থাকবে না ৷ এখানকার গঙ্গাও অনেকটা দূষণমুক্ত । আমি এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা গঙ্গার জলে কাটিয়ে দেখেছি আমার গায়ে কোন Rash (র‍্যাশ্) বেরোয় না । (তখন গুরুমহারাজ গঙ্গায় স্নান করতে নেমে 2/3 – ঘন্টা জলে কাটাতেন) আমার গায়ের চামড়া (ত্বক) এত sensitive যে সামান্য ক্যেমিক্যাল-এ React করে – তাই বলতে পারলাম ।
জানো , এইজন্যই আমি ভেবেছি এখানে একটা বৃদ্ধাশ্রম হবে আর একটা শিবমন্দির থাকবে । গঙ্গার ধার তো ! Clean পরিবেশ ৷ এখানে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা খুব ভালো থাকবে । আশ্রমে যারা আছে তারা ডাক্তারের ব্যাবস্থা রাখবে – যিনি Regular ওনাদের Health Check-up করবেন ৷
দ্যাখো, হিন্দু মানসিকতায় রয়েছে যে বুড়োবয়সে মানুষের মধ্যে ধর্মকর্ম করার একটা প্রবনতা জন্মে। সারাজীবনে হয়তো কম্যুনিস্ট পার্টি করেছে কিংবা rationalist অথবা বিষয়-আসয়, সংসার নিয়ে মজে থেকেছে, ধর্মকর্ম করা হয়নি _কিন্তু বুড়োবয়সে এসে করে। আজিমগন্জের বৃদ্ধাশ্রমের বুড়োবুড়িরা হাতের কাছে গঙ্গা পাবে__গঙ্গার তীরে বাস, প্রত্যহ গঙ্গাস্নান! এবার গঙ্গাস্নান করে ছোট একটা পাত্রে গঙ্গার জল নিয়ে শিবলিঙ্গের মাথায় ঢেলে নিজে নিজে শিবপূজা করতে পারলে _তারা মনে মনে ভীষণ শান্তি পাবে। যেন অর্ধেক মোক্ষ হয়েই গেল!!
মানুষের এই যে mentality _এটা বিবেচনা করেই আমার মনে হয়েছে যে আজিমগঞ্জ আশ্রমই হোল এর উপযুক্ত জায়গা!
আমি কয়েকবছর ধরে এই আশ্রমের কর্মকর্তাদেরকে বলে আসছি _মন্দির এবং বৃদ্ধাশ্রমের কাজ শুরু করে দিতে! কিন্তু এদের কোন হেলদোল ই নাই! উত্তর ভারতের কিছু ভক্তরা (C. L. শর্মা, নারানজী, ত্যাগীজী প্রমুখেরা) আমার এই ইচ্ছার কথা শুনে ওখান থেকে একটা সাদা শিবলিঙ্গ এনেও দিয়েছে(প্রায় 20/21-বছর আগের কথা)। ওটা এখন গোডাউনে (আশ্রমের রান্নাঘর যেতে স্টোররুম) রাখা আছে _তোমরা বনগ্রামে গেলেই দেখতে পাবে।” (এটাও শুনেছিলাম যে উত্তর ভারতের ভক্তরা শুধুমাত্র লিঙ্গ ই নয় _ওরা কিছু টাকাও মন্দিরের কাজ শুরু করার জন্যে ওখানকার কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।)
এরপরে আজিমগন্জের শিব বা শিবমন্দির নিয়ে পরবর্তী আলোচনা শুনেছিলাম বনগ্রাম আশ্রমে। সেবার আজিমগন্জ (বহরমপুর) অঞ্চলের একদল ভক্ত এসেছিল আশ্রমে। ওদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন __সেনগুপ্ত বাবু(সুব্রত ব্রহ্মচারী র বাবা ), ডাক্তার বাবু (বিধান ডাক্তার ), বিজয় দা, মানিক ব্রহ্ম, জগন্নাথ দা(আজিমগন্জ আশ্রমের একনিষ্ঠ কর্মী) প্রমুখেরা। ওনাদের দেখেই গুরুমহারাজ আজিমগন্জ আশ্রমের কথা শুরু করে দিলেন এবং বললেন _”তোমরা আমার কথা শুনছ না, তোমরা divine plan – এর মর্যাদা দিচ্ছ না!”(ক্রমশঃ)