গুরু মহারাজ (স্বামী পরমানন্দ) বলেছিলেন – ” ছোটবেলায় নির্জনে ফাঁকা জায়গায় জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিতে চাঁদের দিকে চেয়ে থাকতাম । চাঁদকে আমার ভগ্নি বা বোন মনে হোত । চাঁদের স্নিগ্ধ কিরণ আমার গায়ে-মাথায় , সর্বাঙ্গে ঝরে পড়ত আর আমার মনে হোত যেন ভগিনীর স্নেহ স্পর্শ্য ! চাঁদের দিকে যখন চেয়ে থাকতাম তখন মনকে বলতাম – এই মুহূর্ত্তে গোটা পৃথিবীতে যত মানুষ চাঁদকে দেখছে – হে আমার মন ! এই মুহূর্ত্তটুকুতে সেইসব মানুষের মনের সাথে যুক্ত হয়ে যাও , চন্দ্রকিরণের Reflection-এর মতো আমার মনও সবার মনের সাথে মিলিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ুক ! এইভাবে খুব ছোট থেকেই আমি আমার মনকে নিয়ে খেলা করতাম ! তাকে স্ববশে এনে তাকে নিয়ে নানারকম Experiment করতাম !”
গুরু মহারাজকে নিয়ে এই যে লেখা – এও যেন খানিকটা সেই সুরেরই উপসুর ! লিখতেই যদি হয় – তাহলে গুরু মহারাজকে নিয়েই লেখ , কিছু কথা যদি বলতেই হয় তাহলে গুরু মহারাজকে নিয়েই বল , চলতেই যদি হয় – গুরু মহারাজের কথার সুর যেখানে অনুরণিত হচ্ছে সেদিক পানেই চল ! আর কি ! এটাই সাধনা হোক ! চক্ষু মুদে , অঙ্গ টিপেই কি শুধু সাধনা হয় – সমগ্র জীবনই তো সাধনা ! জীবনের চলা-ফেরায় , শ্বাসে-প্রশ্বাসে , সুখে-দুখে শুধু সাধনাই হয়ে চলেছে ! কারো মধ্যে তার আস্বাদন আছে – কারো হয়তো আস্বাদন হচ্ছে না – এই যা তফাৎ !
তাই গুরু মহারাজের কথাই হোক ! গুরু মহারাজকে অর্থাৎ স্বয়ং ভগবানকে ভগবানই একমাত্র ঠিক ঠিক জানেন , ঠিক ঠিক তার সবকিছুকে ব্যাখ্যা করতে পারেন – অন্য কেউ কি করে পারবে ? অন্য কেউ সেগুলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বরং আরও বেশী উল্টোপাল্টা করে ফেলবে – লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ্য বড় হয়ে যাবে! এইভাবেই শুধু নতুন নতুন মতের সৃষ্টি হয, নতুন নতুন দল-উপদল সৃষ্টি হয় এবং ভগবান যা বলে গেলেন সে সবকিছুই গোলমাল হয়ে যায় !
অথচ গুরুমহারাজ ই বলেছিলেন _’গোলের মধ্যেই মাল’ আছে ! কিন্তু ‘গোলে’র মধ্যেই যে ‘মাল’টি রয়েছে তা আর পাওয়া হয়ে ওঠে না ! চরম বিশৃঙ্খলায় ভরে যায় মানুষের সমাজ !
তখন আবার সেই ভগবানকেই অবতরণ করতে হয় সবকিছুকে ঠিক করার জন্য! Dis-order কে order-এ নিয়ে আসার জন্য! dis-harmony কে harmonise করার জন্য ! ” …সম্ভবামি যুগে যুগে ৷”
আবার চাঁদের দিকে চাওয়া ! আবার চাঁদের দিকে চেয়ে বলা – “হে আমার মন ! এই মুহূর্ত্তে যারা চাঁদকে দেখছে , তাদের সবার মনের সাথে যোগাযোগ করো!”__তিনি অবশ্যই এটাও জানতেন যে,_’এদের অনেকে আমার পার্ষদ , অনেকে আমার সহচর , আমার ভক্ত , আবার কেউ কেউ হয়তো আমার এই দীর্ঘ যাত্রাপথের রেলকামরায় ওঠা-নামা সহযাত্রীর মতো স্বল্পকালের সাথী ।’
ভগবান পরমানন্দ বলেছিলেন – ” আমি আসি মজতে আর মজাতে ৷” “মজা পেতে আসি” অথবা “মজা দিতে আসি” – একথা বললেন না ! কেন বললেন না! –কারন তাঁর যে শুধুই বেদনা – সমস্ত যাত্রাপথটাই বেদনাবিধুর! উনি মুখে বলছেন , “আমার শুধুই আনন্দ , আনন্দ আর আনন্দ !” কিন্তু এটাও বলেছিলেন – ” বেদনার মধ্যেও আনন্দ রয়েছে , আমি সেই আনন্দ-ও অনুভব করতে পারি ।”
ভগবানকে কে খুঁজে পায় ? উনিই সকলকে খুঁজে খুঁজে বের করেন । তারপর তাদেরকে কাজে লাগিয়ে দেন ৷ কার কি Roll – সে সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করিয়ে দেন , আর কাজে লাগিয়ে দেন!
কি সেই কাজ ? মঙ্গল সাধন করা, কল্যাণ করা ! জীবজগতের কল্যাণ – বাতাবরনের কল্যাণ – সবার সবকিছুর মঙ্গল সাধন ! মানুষ যেহেতু এই গ্রহের সবচাইতে উন্নত জীব – তাই তার চেতনার উন্নতি হলেই সবার মঙ্গল সাধন হবে! এইজন্যই ভগবান এসে মানুষের মঙ্গল সাধন করতে প্রাণপন চেষ্টা করেন! মানুষের চেতনার উত্তরণ ঘটিয়ে চেতনাকে চৈতন্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন!
ঋষিরা জ্ঞানের চরম ভুমিতে পৌঁছে তাইতো প্রার্থনা করলেন – ” অসদো মা সদ গময়ঃ , মৃত্যোর্মা অমৃতগময়ঃ , তমসো মা জ্যোর্তিগময়ঃ।৷”
সাধারণ মানুষ তো এতসব জানে না _তাদের অতো জানার প্রয়োজনও নাই!তারা সবাই হয়তো নিজের ভালোর জন্যেও প্রার্থনা করে না,তার না করলেও ঈশ্বরের অবতার, জীবের প্রতি করুনাবশতঃ ঐ কাজগুলিই করেন !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন , “গ্রীণরুম দেখে এসে যাত্রা শুনতে বসা”-র কথা ! অর্থাৎ কোন কোন মহাজ্ঞানী বা মহাযোগী _ঈশ্বরের অবতরণ ও লীলার ব্যাপারটা যোগলব্ধ দৃষ্টিতে দেখে নেবার ক্ষমতা রাখেন _কিন্তু তাঁরা লীলা প্রবিষ্ঠ হন না, বা লীলায় অংশগ্রহণ ও করেন না। তাঁরা চিরকাল থেকে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে! এঁদের কথা ভগবান স্বয়ং না বললে সাধারণ মানুষ কখনোই জানতে পারত না!
সিরডির সাইবাবার কথা এবং তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার কথা আমাদের অনেকেরই জানা রয়েছে। কিন্তু বহুকাল হোল তিনি স্থুলশরীর ছেড়েছেন_তাই এখন তাঁর অবস্থা ও অবস্থানের কথা _আমরা জানি না, আমাদের (সাধারণ মানুষের) জানার কথাও নয়! তাঁর বর্তমান অবস্থার কিছু অপ্রকাশিত কথা বললেন _স্বামী পরমানন্দ। ।
উনি বললেন _সিরডির সাইবাবার স্থুলশরীরের মৃত্যু হয়েছে অনেকদিন _কিন্তু তাঁর কাজ এখনও শেষ হয়নি, তাই ওনার বিদেহ-মুক্তি ঘটেনি। উনি সুক্ষে বা কারণশরীরে এই পৃথিবীর পরিমন্ডলেই রয়ে গেছেন(যদিও কারণশরীরের যাতায়াতের কোন time লাগে না। ইচ্ছামাত্রই বিশ্বব্রম্ভান্ডের যে কোন স্থানে প্রকট হওয়া যায়।)। ঐ মহাযোগী মহাপুরুষের বর্তমানকালে দুটো ক্রিয়াশীলতার উল্লেখ করেছিলেন গুরুমহারাজ!
1) ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের দক্ষিণেশ্বরের পঞ্চবটীতে সাধনকালে একবার এমন অবস্থা হয়েছিল যে __সর্বদাই তদ্গত অবস্থা! বাহ্য হুঁশ একেবারেই নেই! বাইরের কোন আহার্য গ্রহন করতে পারছিলেন না _ফলে শরীর রাখাই দায় হয়ে উঠেছিল! সেই অবস্থায় হটাৎ করে এক ফকিরের আবির্ভাব ঘটেছিল দক্ষিণেশ্বরে! সে এসেই তার হাতের লাঠি/চিমটি দিয়ে ঠাকুরের দেহে আঘাত করে করে, জোর করে মুখে গুঁজে গুঁজে খাওয়াতো। এইভাবে কিছুদিন করতে করতেই ধীরে ধীরে ঠাকুর সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু পরে সেই ফকিরকে আর কোথাও পাওয়া যায় নি! গুরুমহারাজ বলেছিলেন যে সেই ফকির ছিল সিরডির সাইবাবা।
2)_হৃষিকেশে শিবানন্দ সরস্বতীর তখন যোগগুরু হিসাবে খুব নামডাক! প্রচুর ভক্ত – শিষ্য – গুনমুগ্ধরা আশ্রমে সবসময় ভিড় জমিয়ে রাখতো। ওখানকার সাধুসমাজেও তখন শিবানন্দের প্রচুর খ্যাতি! ‘যোগবলে রোগ আরোগ্যে’ – র ব্যাপারটা তো উনিই প্রথম প্রচারের আলোয় এনেছিলেন _তাই এত নামডাক!
কিন্তু একদিন পরীক্ষামূলকভাবে কঠিন কঠিন যোগাভ্যাস করার সময় শরীরের অভ্যন্তরে অপানবায়ু আটকে যাওয়ায় ওনার প্রান সংকটকাল উপস্থিত হয়ে গিয়েছিল! বায়ু এমনভাবে আটকে গেছিল যে, _উনি শরীরের কোন অঙ্গ নড়াতে চড়াতে পারছিলেন না। ঐ অবস্থায় ব্যাঁকাচোড়া হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে যাচ্ছিলেন।না পারছিলেন শুতে, না পারছিলেন বসতে! ওনার ভক্ত-শিষ্যরা, অন্যান্য যোগের মহারাজরা, হরিদ্বার-হৃষিকেশের নবীন-প্রবীন অসংখ্য সাধুসন্ন্যাসীরা নানাভাবে 2/3-দিন ধরে চেষ্টা করেও ওনাকে একটুখানিও relief দিতে পারে নি!
সবাই ভেবেই নিয়েছিল যে _এই ভাবেই হয়তো উনি শরীর ছেড়ে দেবেন। তাই ওনার শিষ্য-ভক্তরা, এবং স্থানীয় আশ্রমের সাধু-মহাত্মারা ধুপ-ধুনো জ্বালিয়ে ঈশ্বরের কাছে ওনার জন্য প্রার্থনা করছিলেন আর শেষ সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। 2/3-দিন ঐভাবে কেটে যাবার পর অত লোকের সামনে হটাৎ করে ধূপ-ধুনোর ধোঁয়ার কুন্ডলী থেকে ওখানে এক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে গিয়েছিল ! যিনি প্রকট হয়েই তাঁর হাতের চিমটি দিয়ে বেঁকে-চুরে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্যুপথযাত্রী শিবানন্দের শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গে জোরে জোরে আঘাত করতে বলতে তিরস্কারের সূরে বলতে লাগল _”যোগ কা বালক! বিনা গুরু আপনে আপ যোগ কর্ রহা হ্যায়!”
মহাপুরুষের আঘাত খাওয়ার পড়েই ‘আঁক’ করে একটা শব্দ করে শিবানন্দ মাটিতে পড়ে গেলেন এবং পরে উনি ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ হতেই সেই মহাপুরুষ অন্তর্হিত হয়ে গিয়েছিলেন! তাকে দ্বিতীয়বার আর কেউ দেখতে পায় নি!
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _ঐ মহাপুরুষই ছিলেন সিড়ডির সাইবাবা!!এঁরা শুধু সাধু মহাত্মাদের রক্ষা করা বা সাহায্য করার জন্যই শরীরে না থেকেও কাজ করে চলেছেন!! (ক্রমশঃ)
গুরু মহারাজকে নিয়ে এই যে লেখা – এও যেন খানিকটা সেই সুরেরই উপসুর ! লিখতেই যদি হয় – তাহলে গুরু মহারাজকে নিয়েই লেখ , কিছু কথা যদি বলতেই হয় তাহলে গুরু মহারাজকে নিয়েই বল , চলতেই যদি হয় – গুরু মহারাজের কথার সুর যেখানে অনুরণিত হচ্ছে সেদিক পানেই চল ! আর কি ! এটাই সাধনা হোক ! চক্ষু মুদে , অঙ্গ টিপেই কি শুধু সাধনা হয় – সমগ্র জীবনই তো সাধনা ! জীবনের চলা-ফেরায় , শ্বাসে-প্রশ্বাসে , সুখে-দুখে শুধু সাধনাই হয়ে চলেছে ! কারো মধ্যে তার আস্বাদন আছে – কারো হয়তো আস্বাদন হচ্ছে না – এই যা তফাৎ !
তাই গুরু মহারাজের কথাই হোক ! গুরু মহারাজকে অর্থাৎ স্বয়ং ভগবানকে ভগবানই একমাত্র ঠিক ঠিক জানেন , ঠিক ঠিক তার সবকিছুকে ব্যাখ্যা করতে পারেন – অন্য কেউ কি করে পারবে ? অন্য কেউ সেগুলি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বরং আরও বেশী উল্টোপাল্টা করে ফেলবে – লক্ষ্যের চেয়ে উপলক্ষ্য বড় হয়ে যাবে! এইভাবেই শুধু নতুন নতুন মতের সৃষ্টি হয, নতুন নতুন দল-উপদল সৃষ্টি হয় এবং ভগবান যা বলে গেলেন সে সবকিছুই গোলমাল হয়ে যায় !
অথচ গুরুমহারাজ ই বলেছিলেন _’গোলের মধ্যেই মাল’ আছে ! কিন্তু ‘গোলে’র মধ্যেই যে ‘মাল’টি রয়েছে তা আর পাওয়া হয়ে ওঠে না ! চরম বিশৃঙ্খলায় ভরে যায় মানুষের সমাজ !
তখন আবার সেই ভগবানকেই অবতরণ করতে হয় সবকিছুকে ঠিক করার জন্য! Dis-order কে order-এ নিয়ে আসার জন্য! dis-harmony কে harmonise করার জন্য ! ” …সম্ভবামি যুগে যুগে ৷”
আবার চাঁদের দিকে চাওয়া ! আবার চাঁদের দিকে চেয়ে বলা – “হে আমার মন ! এই মুহূর্ত্তে যারা চাঁদকে দেখছে , তাদের সবার মনের সাথে যোগাযোগ করো!”__তিনি অবশ্যই এটাও জানতেন যে,_’এদের অনেকে আমার পার্ষদ , অনেকে আমার সহচর , আমার ভক্ত , আবার কেউ কেউ হয়তো আমার এই দীর্ঘ যাত্রাপথের রেলকামরায় ওঠা-নামা সহযাত্রীর মতো স্বল্পকালের সাথী ।’
ভগবান পরমানন্দ বলেছিলেন – ” আমি আসি মজতে আর মজাতে ৷” “মজা পেতে আসি” অথবা “মজা দিতে আসি” – একথা বললেন না ! কেন বললেন না! –কারন তাঁর যে শুধুই বেদনা – সমস্ত যাত্রাপথটাই বেদনাবিধুর! উনি মুখে বলছেন , “আমার শুধুই আনন্দ , আনন্দ আর আনন্দ !” কিন্তু এটাও বলেছিলেন – ” বেদনার মধ্যেও আনন্দ রয়েছে , আমি সেই আনন্দ-ও অনুভব করতে পারি ।”
ভগবানকে কে খুঁজে পায় ? উনিই সকলকে খুঁজে খুঁজে বের করেন । তারপর তাদেরকে কাজে লাগিয়ে দেন ৷ কার কি Roll – সে সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করিয়ে দেন , আর কাজে লাগিয়ে দেন!
কি সেই কাজ ? মঙ্গল সাধন করা, কল্যাণ করা ! জীবজগতের কল্যাণ – বাতাবরনের কল্যাণ – সবার সবকিছুর মঙ্গল সাধন ! মানুষ যেহেতু এই গ্রহের সবচাইতে উন্নত জীব – তাই তার চেতনার উন্নতি হলেই সবার মঙ্গল সাধন হবে! এইজন্যই ভগবান এসে মানুষের মঙ্গল সাধন করতে প্রাণপন চেষ্টা করেন! মানুষের চেতনার উত্তরণ ঘটিয়ে চেতনাকে চৈতন্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন!
ঋষিরা জ্ঞানের চরম ভুমিতে পৌঁছে তাইতো প্রার্থনা করলেন – ” অসদো মা সদ গময়ঃ , মৃত্যোর্মা অমৃতগময়ঃ , তমসো মা জ্যোর্তিগময়ঃ।৷”
সাধারণ মানুষ তো এতসব জানে না _তাদের অতো জানার প্রয়োজনও নাই!তারা সবাই হয়তো নিজের ভালোর জন্যেও প্রার্থনা করে না,তার না করলেও ঈশ্বরের অবতার, জীবের প্রতি করুনাবশতঃ ঐ কাজগুলিই করেন !
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন , “গ্রীণরুম দেখে এসে যাত্রা শুনতে বসা”-র কথা ! অর্থাৎ কোন কোন মহাজ্ঞানী বা মহাযোগী _ঈশ্বরের অবতরণ ও লীলার ব্যাপারটা যোগলব্ধ দৃষ্টিতে দেখে নেবার ক্ষমতা রাখেন _কিন্তু তাঁরা লীলা প্রবিষ্ঠ হন না, বা লীলায় অংশগ্রহণ ও করেন না। তাঁরা চিরকাল থেকে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে! এঁদের কথা ভগবান স্বয়ং না বললে সাধারণ মানুষ কখনোই জানতে পারত না!
সিরডির সাইবাবার কথা এবং তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার কথা আমাদের অনেকেরই জানা রয়েছে। কিন্তু বহুকাল হোল তিনি স্থুলশরীর ছেড়েছেন_তাই এখন তাঁর অবস্থা ও অবস্থানের কথা _আমরা জানি না, আমাদের (সাধারণ মানুষের) জানার কথাও নয়! তাঁর বর্তমান অবস্থার কিছু অপ্রকাশিত কথা বললেন _স্বামী পরমানন্দ। ।
উনি বললেন _সিরডির সাইবাবার স্থুলশরীরের মৃত্যু হয়েছে অনেকদিন _কিন্তু তাঁর কাজ এখনও শেষ হয়নি, তাই ওনার বিদেহ-মুক্তি ঘটেনি। উনি সুক্ষে বা কারণশরীরে এই পৃথিবীর পরিমন্ডলেই রয়ে গেছেন(যদিও কারণশরীরের যাতায়াতের কোন time লাগে না। ইচ্ছামাত্রই বিশ্বব্রম্ভান্ডের যে কোন স্থানে প্রকট হওয়া যায়।)। ঐ মহাযোগী মহাপুরুষের বর্তমানকালে দুটো ক্রিয়াশীলতার উল্লেখ করেছিলেন গুরুমহারাজ!
1) ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের দক্ষিণেশ্বরের পঞ্চবটীতে সাধনকালে একবার এমন অবস্থা হয়েছিল যে __সর্বদাই তদ্গত অবস্থা! বাহ্য হুঁশ একেবারেই নেই! বাইরের কোন আহার্য গ্রহন করতে পারছিলেন না _ফলে শরীর রাখাই দায় হয়ে উঠেছিল! সেই অবস্থায় হটাৎ করে এক ফকিরের আবির্ভাব ঘটেছিল দক্ষিণেশ্বরে! সে এসেই তার হাতের লাঠি/চিমটি দিয়ে ঠাকুরের দেহে আঘাত করে করে, জোর করে মুখে গুঁজে গুঁজে খাওয়াতো। এইভাবে কিছুদিন করতে করতেই ধীরে ধীরে ঠাকুর সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু পরে সেই ফকিরকে আর কোথাও পাওয়া যায় নি! গুরুমহারাজ বলেছিলেন যে সেই ফকির ছিল সিরডির সাইবাবা।
2)_হৃষিকেশে শিবানন্দ সরস্বতীর তখন যোগগুরু হিসাবে খুব নামডাক! প্রচুর ভক্ত – শিষ্য – গুনমুগ্ধরা আশ্রমে সবসময় ভিড় জমিয়ে রাখতো। ওখানকার সাধুসমাজেও তখন শিবানন্দের প্রচুর খ্যাতি! ‘যোগবলে রোগ আরোগ্যে’ – র ব্যাপারটা তো উনিই প্রথম প্রচারের আলোয় এনেছিলেন _তাই এত নামডাক!
কিন্তু একদিন পরীক্ষামূলকভাবে কঠিন কঠিন যোগাভ্যাস করার সময় শরীরের অভ্যন্তরে অপানবায়ু আটকে যাওয়ায় ওনার প্রান সংকটকাল উপস্থিত হয়ে গিয়েছিল! বায়ু এমনভাবে আটকে গেছিল যে, _উনি শরীরের কোন অঙ্গ নড়াতে চড়াতে পারছিলেন না। ঐ অবস্থায় ব্যাঁকাচোড়া হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে যাচ্ছিলেন।না পারছিলেন শুতে, না পারছিলেন বসতে! ওনার ভক্ত-শিষ্যরা, অন্যান্য যোগের মহারাজরা, হরিদ্বার-হৃষিকেশের নবীন-প্রবীন অসংখ্য সাধুসন্ন্যাসীরা নানাভাবে 2/3-দিন ধরে চেষ্টা করেও ওনাকে একটুখানিও relief দিতে পারে নি!
সবাই ভেবেই নিয়েছিল যে _এই ভাবেই হয়তো উনি শরীর ছেড়ে দেবেন। তাই ওনার শিষ্য-ভক্তরা, এবং স্থানীয় আশ্রমের সাধু-মহাত্মারা ধুপ-ধুনো জ্বালিয়ে ঈশ্বরের কাছে ওনার জন্য প্রার্থনা করছিলেন আর শেষ সময়ের অপেক্ষা করছিলেন। 2/3-দিন ঐভাবে কেটে যাবার পর অত লোকের সামনে হটাৎ করে ধূপ-ধুনোর ধোঁয়ার কুন্ডলী থেকে ওখানে এক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটে গিয়েছিল ! যিনি প্রকট হয়েই তাঁর হাতের চিমটি দিয়ে বেঁকে-চুরে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্যুপথযাত্রী শিবানন্দের শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গে জোরে জোরে আঘাত করতে বলতে তিরস্কারের সূরে বলতে লাগল _”যোগ কা বালক! বিনা গুরু আপনে আপ যোগ কর্ রহা হ্যায়!”
মহাপুরুষের আঘাত খাওয়ার পড়েই ‘আঁক’ করে একটা শব্দ করে শিবানন্দ মাটিতে পড়ে গেলেন এবং পরে উনি ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ হতেই সেই মহাপুরুষ অন্তর্হিত হয়ে গিয়েছিলেন! তাকে দ্বিতীয়বার আর কেউ দেখতে পায় নি!
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _ঐ মহাপুরুষই ছিলেন সিড়ডির সাইবাবা!!এঁরা শুধু সাধু মহাত্মাদের রক্ষা করা বা সাহায্য করার জন্যই শরীরে না থেকেও কাজ করে চলেছেন!! (ক্রমশঃ)