[আগের দুটো এপিসোড জুড়ে এই গল্পটি চলছে_এক রাজার মনে জাগা তিনটি জিজ্ঞাসার উত্তর জানার জন্য তিনি ছদ্মবেশে মন্ত্রীর সাথে রাজ্যের সীমানায় এক সন্ন্যাসীর আশ্রমে এসেছেন এবং সেখানে ঘটল নানান ঘটনা! ঘটনার মধ্যেই ছিল রাজার জিজ্ঞাসার উত্তর!!……]
……. – তোমার মনে তিনটে জিজ্ঞাসা ছিল :- ভাল কাজ কি , ভাল কাজ কখন করবে এবং কেন করবে — এই তো ? আমার এই বৃদ্ধ বয়সের ক্লান্তি দেখে তোমার মনে দয়া বা করুণার ভাব এসেছিল এবং সাথে সাথে তুমি অপরের ভার নিজের কাঁধে বইবার জন্য ব্রতী হলে – এটাই ভাল কাজ ৷ মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তো প্রকৃত মানুষের মতো কাজ!
আর তোমার দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা ছিল সেই ভালো কাজ তুমি কখন করবে –তাইতো! যে মুহূর্ত্তে তোমার অন্তঃকরণে প্রেরণা এ’ল – তখনই করবে ! তার আগেও নয় _পরেও নয়! সুতরাং অপরের প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত করাই ভাল কাজ আর যখনই মনে হবে তোমাকে কারও প্রয়োজন — সেই মুহূর্ত্তে তার পাশে দাঁড়াও , কারণ সেটাই শ্রেষ্ঠ সময় । পাঁজি-পুঁথি , দিনক্ষণ দেখে অপরের সব প্রয়োজন মেটানো যায় না! তোমার অঙ্গরক্ষীরা তোমার প্রাণ বাঁচানোর ক্ষেত্রে যদি কোনরকম দেরী করত (পাঁজি-পুঁথি , দিনক্ষণ দেখতে যেতো) — তাহলে কি সর্বনাশ হোত বল দেখি ? সুতরাং অপরের প্রয়োজনে তোমার অংশগ্রহণটাই ভাল কাজ আর তা যখন প্রয়োজন তৎক্ষণাৎ করবে – কোন রকম দেরী করবে না ৷
তোমার শেষ জিজ্ঞাসা ছিল _কেন ভাল কাজ করবে ? এটার উত্তর হচ্ছে — যার মধ্যে মনুষ্যত্বের বোধ জাগ্রত হয়েছে , যার অন্তঃকরণে ভাল কাজ (পরোপকার , নিঃস্বার্থ সেবা) করার মানসিকতা তৈরী হয়েছে – সে তো আর প্রশ্ন করবে না! তার কাছে “কেন করবো” এই ভাবনাটাই থাকবে না! সে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজে নেমে পড়বে! যেমন তুমি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে এবং সাহায্য করলেও ! তোমার অঙ্গরক্ষকরা যদিও বেতনভোগী তবু তারাও তাদের কর্ত্তব্য (যা করা উচিৎ) – কর্ম বিবেচনা করেই তো তৎক্ষণাৎ উদ্যত ছোরার সামনে এগিয়ে এসেছে!
তুমি রাজা _রাজ্যের প্রতি , রাজ্যবাসী প্রজাদের প্রতি তোমারও কর্ত্তব্য রয়েছে । তারা অসহায় , দুর্বল _ সবসময় তারা তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে! সুতরাং যাও , রাজ্যে ফিরে যাও! সদা-সর্বদা প্রজাদের সুখ-সুবিধার দিকে নজর দাও । প্রজাকল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ কর – তাহলেই তোমার ‘রাজা’ হবার সার্থকতা! অন্যথায় প্রজাদের ঘৃণা নিয়ে , তাদের দেওয়া অভিশাপ মাথায় নিয়ে রাজা সাজায় কি লাভ? পরবর্তী জীবনে তোমাকে চরম দুর্গতির মধ্যে কাটাতে হবে! অন্যান্য রাজাদের ইতিহাস দেখো – প্রজানুরঞ্জক রাজারাই মানুষের মনে স্থান করেছে , অত্যাচারী-আরামপ্রিয় বিলাসী রাজারা ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে ।”
রাজা সব বুঝতে পারল । সন্ন্যাসীর পদতলে মস্তক ঠেকিয়ে বলল – ” আমাকে আশীর্বাদ করুন যাতে আমি প্রজানুরঞ্জক রাজা হয়ে সারাজীবন অপরের প্রয়োজনে লাগতে পারি !” সন্ন্যাসী রাজাকে আশীর্বাদ করে বললেন – ” তথাস্তু !”
গল্প এখানেই শেষ । এবার গুরু মহারাজ বললেন — শ্রীমদ্ভগবদগীতাতে কর্ম নিয়ে যেভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ রয়েছে – এমনটা পৃথিবীর আর কোথাও হয় নি ৷ সৎকর্ম কি , অসৎকর্ম কি , কি কর্ম করা উচিৎ , কেন করা উচিৎ — এসব জিজ্ঞাসার একমাত্র সদুত্তর পাওয়া যায় শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ৷ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীরা গীতার কর্মযোগ follow করেন ৷ ওসব দেশের অনেক পন্ডিত ব্যক্তিরা গীতার জ্ঞান আত্নস্থ করে বহু গ্রন্থও প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে ইউরোপ বা আমেরিকার বহু দেশ তাদের Academic Course -এর মধ্যে গীতাপাঠ বা ব্যাখ্যা Compalsory করছে।
গীতায় তিন প্রকার কর্মের কথা বলা হয়েছে _সঞ্চিত কর্ম, প্রারব্ধ কর্ম এবং ক্রিয়মান কর্ম। মানুষের জন্মজন্মান্তরের কৃতকর্মরাশি জমে পাহাড়প্রমাণ হয়ে রয়েছে । এগুলি “সঞ্চিত কর্ম” । এর মধ্যে গত জন্মের যে অতৃপ্ত বাসনাগুলি প্রবল ছিল , সেগুলির মেটানোর স্পৃহায় এখনকার এই শরীর , যা “প্রারব্ধকর্ম”বশতঃ পাওয়া! এই জীবনের ক্রিয়মান কর্মগুলির দ্বারা ঐ সঞ্চিত কর্মের ক্ষয় করা যায় অথবা সঞ্চয়ের পরিমাণ আবার বাড়ানো যায়! সুতরাং মানুষের এটুকু স্বাধীনতা রয়েছে যে , সে তার বর্ত্তমান জীবনের “ক্রিয়মান কর্মে”র দ্বারা_ Positive work বা Negative work করবে ৷ গীতায় বলা হয়েছে একমাত্র নিষ্কাম কর্মের দ্বারাই কর্মক্ষয় হয় । নিষ্কাম কর্মটি আবার কি ! যে কর্ম বা কাজ তিলমাত্র আত্মসুখের বাসনা না রেখে শুধুমাত্র পরহিতে সম্পন্ন করা হয় — তাই নিষ্কামকর্ম । একে শাস্ত্রে “ভগবদ্ প্রীত্যর্থে কর্ম”-ও বলেছে! অনেকে পূজা-অর্চনা , দেবসেবা , ঠাকুর সাজানো , ভোগ-রাগ ইত্যাদিকে ভগবৎপ্রীতি উৎপাদনের জন্য কাজ বা কর্ম বলে মনে করেন ৷ নিষ্ঠা ভরে পূজাপাঠ (মুসলিমদের নমাজ , খ্রীষ্টানদের গীর্জায় প্রার্থনা) , মন্ত্রোচ্চারন -এর মাধ্যমেও কিছু কাজ হয় কিন্তু জেনে রাখবে_নিঃস্বার্থ মানবসেবাই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপাসনা!
সমস্তু ধর্মমতের সারকথা বা শেষ কথা আত্মবোধ ৷ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে ধার্মিক ব্যক্তির উচিৎ নিজের চেতনার উত্তরণ ঘটানো , চেতনাকে চৈতন্যে রূপান্তর করা! এরকম হলে তবেই তো সে ‘মানব’ থেকে ‘মহামানবে’ রূপান্তরিত হবে! আর এটাই মানবজীবন লাভের উদ্দেশ্য ।। [ক্রমশঃ]
……. – তোমার মনে তিনটে জিজ্ঞাসা ছিল :- ভাল কাজ কি , ভাল কাজ কখন করবে এবং কেন করবে — এই তো ? আমার এই বৃদ্ধ বয়সের ক্লান্তি দেখে তোমার মনে দয়া বা করুণার ভাব এসেছিল এবং সাথে সাথে তুমি অপরের ভার নিজের কাঁধে বইবার জন্য ব্রতী হলে – এটাই ভাল কাজ ৷ মানুষের প্রয়োজনে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তো প্রকৃত মানুষের মতো কাজ!
আর তোমার দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা ছিল সেই ভালো কাজ তুমি কখন করবে –তাইতো! যে মুহূর্ত্তে তোমার অন্তঃকরণে প্রেরণা এ’ল – তখনই করবে ! তার আগেও নয় _পরেও নয়! সুতরাং অপরের প্রয়োজনে নিজেকে নিয়োজিত করাই ভাল কাজ আর যখনই মনে হবে তোমাকে কারও প্রয়োজন — সেই মুহূর্ত্তে তার পাশে দাঁড়াও , কারণ সেটাই শ্রেষ্ঠ সময় । পাঁজি-পুঁথি , দিনক্ষণ দেখে অপরের সব প্রয়োজন মেটানো যায় না! তোমার অঙ্গরক্ষীরা তোমার প্রাণ বাঁচানোর ক্ষেত্রে যদি কোনরকম দেরী করত (পাঁজি-পুঁথি , দিনক্ষণ দেখতে যেতো) — তাহলে কি সর্বনাশ হোত বল দেখি ? সুতরাং অপরের প্রয়োজনে তোমার অংশগ্রহণটাই ভাল কাজ আর তা যখন প্রয়োজন তৎক্ষণাৎ করবে – কোন রকম দেরী করবে না ৷
তোমার শেষ জিজ্ঞাসা ছিল _কেন ভাল কাজ করবে ? এটার উত্তর হচ্ছে — যার মধ্যে মনুষ্যত্বের বোধ জাগ্রত হয়েছে , যার অন্তঃকরণে ভাল কাজ (পরোপকার , নিঃস্বার্থ সেবা) করার মানসিকতা তৈরী হয়েছে – সে তো আর প্রশ্ন করবে না! তার কাছে “কেন করবো” এই ভাবনাটাই থাকবে না! সে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কাজে নেমে পড়বে! যেমন তুমি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে এবং সাহায্য করলেও ! তোমার অঙ্গরক্ষকরা যদিও বেতনভোগী তবু তারাও তাদের কর্ত্তব্য (যা করা উচিৎ) – কর্ম বিবেচনা করেই তো তৎক্ষণাৎ উদ্যত ছোরার সামনে এগিয়ে এসেছে!
তুমি রাজা _রাজ্যের প্রতি , রাজ্যবাসী প্রজাদের প্রতি তোমারও কর্ত্তব্য রয়েছে । তারা অসহায় , দুর্বল _ সবসময় তারা তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে! সুতরাং যাও , রাজ্যে ফিরে যাও! সদা-সর্বদা প্রজাদের সুখ-সুবিধার দিকে নজর দাও । প্রজাকল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ কর – তাহলেই তোমার ‘রাজা’ হবার সার্থকতা! অন্যথায় প্রজাদের ঘৃণা নিয়ে , তাদের দেওয়া অভিশাপ মাথায় নিয়ে রাজা সাজায় কি লাভ? পরবর্তী জীবনে তোমাকে চরম দুর্গতির মধ্যে কাটাতে হবে! অন্যান্য রাজাদের ইতিহাস দেখো – প্রজানুরঞ্জক রাজারাই মানুষের মনে স্থান করেছে , অত্যাচারী-আরামপ্রিয় বিলাসী রাজারা ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে ।”
রাজা সব বুঝতে পারল । সন্ন্যাসীর পদতলে মস্তক ঠেকিয়ে বলল – ” আমাকে আশীর্বাদ করুন যাতে আমি প্রজানুরঞ্জক রাজা হয়ে সারাজীবন অপরের প্রয়োজনে লাগতে পারি !” সন্ন্যাসী রাজাকে আশীর্বাদ করে বললেন – ” তথাস্তু !”
গল্প এখানেই শেষ । এবার গুরু মহারাজ বললেন — শ্রীমদ্ভগবদগীতাতে কর্ম নিয়ে যেভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ রয়েছে – এমনটা পৃথিবীর আর কোথাও হয় নি ৷ সৎকর্ম কি , অসৎকর্ম কি , কি কর্ম করা উচিৎ , কেন করা উচিৎ — এসব জিজ্ঞাসার একমাত্র সদুত্তর পাওয়া যায় শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ৷ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীরা গীতার কর্মযোগ follow করেন ৷ ওসব দেশের অনেক পন্ডিত ব্যক্তিরা গীতার জ্ঞান আত্নস্থ করে বহু গ্রন্থও প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে ইউরোপ বা আমেরিকার বহু দেশ তাদের Academic Course -এর মধ্যে গীতাপাঠ বা ব্যাখ্যা Compalsory করছে।
গীতায় তিন প্রকার কর্মের কথা বলা হয়েছে _সঞ্চিত কর্ম, প্রারব্ধ কর্ম এবং ক্রিয়মান কর্ম। মানুষের জন্মজন্মান্তরের কৃতকর্মরাশি জমে পাহাড়প্রমাণ হয়ে রয়েছে । এগুলি “সঞ্চিত কর্ম” । এর মধ্যে গত জন্মের যে অতৃপ্ত বাসনাগুলি প্রবল ছিল , সেগুলির মেটানোর স্পৃহায় এখনকার এই শরীর , যা “প্রারব্ধকর্ম”বশতঃ পাওয়া! এই জীবনের ক্রিয়মান কর্মগুলির দ্বারা ঐ সঞ্চিত কর্মের ক্ষয় করা যায় অথবা সঞ্চয়ের পরিমাণ আবার বাড়ানো যায়! সুতরাং মানুষের এটুকু স্বাধীনতা রয়েছে যে , সে তার বর্ত্তমান জীবনের “ক্রিয়মান কর্মে”র দ্বারা_ Positive work বা Negative work করবে ৷ গীতায় বলা হয়েছে একমাত্র নিষ্কাম কর্মের দ্বারাই কর্মক্ষয় হয় । নিষ্কাম কর্মটি আবার কি ! যে কর্ম বা কাজ তিলমাত্র আত্মসুখের বাসনা না রেখে শুধুমাত্র পরহিতে সম্পন্ন করা হয় — তাই নিষ্কামকর্ম । একে শাস্ত্রে “ভগবদ্ প্রীত্যর্থে কর্ম”-ও বলেছে! অনেকে পূজা-অর্চনা , দেবসেবা , ঠাকুর সাজানো , ভোগ-রাগ ইত্যাদিকে ভগবৎপ্রীতি উৎপাদনের জন্য কাজ বা কর্ম বলে মনে করেন ৷ নিষ্ঠা ভরে পূজাপাঠ (মুসলিমদের নমাজ , খ্রীষ্টানদের গীর্জায় প্রার্থনা) , মন্ত্রোচ্চারন -এর মাধ্যমেও কিছু কাজ হয় কিন্তু জেনে রাখবে_নিঃস্বার্থ মানবসেবাই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ উপাসনা!
সমস্তু ধর্মমতের সারকথা বা শেষ কথা আত্মবোধ ৷ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে ধার্মিক ব্যক্তির উচিৎ নিজের চেতনার উত্তরণ ঘটানো , চেতনাকে চৈতন্যে রূপান্তর করা! এরকম হলে তবেই তো সে ‘মানব’ থেকে ‘মহামানবে’ রূপান্তরিত হবে! আর এটাই মানবজীবন লাভের উদ্দেশ্য ।। [ক্রমশঃ]