এক দেশে এক সন্ন্যাসী গুরু ছিলেন। গুরুদেবের অনেক ব্রহ্মচারী – সন্ন্যাসী শিষ্যদের মধ্যে দুজন ব্রহ্মচারী শিষ্যকে উনি সেবক হিসাবে রেখেছিলেন। তারা দুজনেই গুরুদেবকে খুবই শ্রদ্ধা-ভক্তি কোরতো, এবং সবসময় গুরুদেবের কাছেই থাকতো৷ সারাদিনের কাজের শেষে তারা দুজনে গুরুদেবের পা অথবা গা-হাত টিপে দিতো , পায়ে তেলমালিশ করে দিতো! শিষ্য দুজনের ভক্তির অন্ত ছিল না , কিন্তু একটা সমস্যাও ছিল – তারা দুজনেই একটু মাথামোটা বা বোকা ধরণের ছিল! আর এই কারণে গুরুদেব প্রায়শই কোন না কোন মুস্কিলে পড়ে যেতেন!
কিন্তু একদিন সেই সমস্যা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছালো যে গুরুদেবের প্রাণান্তকর অবস্থা ! ঘটনাটা বলছি শোন __
সেদিন কোন কারণে দুজন ব্রহ্মচারীর মধ্যে সকাল থেকেই নানা কারণে ঝগড়া চলছিল! সেই ঝগড়া সারাদিন ধরে চলেও শেষ হোল না – রাত্রি পর্যন্ত Continued হোল! রাত্রে খাওয়া দাওয়া সারার পর ওরা দুজনে নিত্যদিনের মতো গুরুদেবের ঘরে ঢুকল_ গুরুসেবা করার জন্য! একজন গুরুদেবের বাঁ পা টা কোলে তুলে নিয়ে টিপতে শুরু করল, অার অন্যজন ডান পা! কোন কারণে যে শিষ্যটি গুরুদেবের বাঁ পা টিপছিল, তার হাত গুরুদেবের ডান পা টায় অসাবধানবশতঃ সামান্য একটু Touch করে গেল ৷ যে ডান পা টিপছিল তার তো সকাল থেকেই অন্যজনের উপর রাগ ছিল। যেই না প্রথমজনের হাত গুরুদেবের ডান পায়ে Touch করেছে, অমনি সে বলে উঠল , “তুই আমার পা টায় হাত লাগালি ? দ্যাখ্ এবার আমি কি করি!! আমি তোর পা টায় কিল মেরে দেবো !” এই বলে সে গুরুদেবের বাঁ পায়ে কষিয়ে একটা কিল মেরে দিল!
বাঁ পা টেপা শিষ্য (প্রথমজন) এটা দেখে বলে উঠল – ” তুই আমার পায়ে কিল মারলি – দ্যাখ্ তোর পা টায় কি করি ?” এই বলে সে দমাদ্দম গোটাকয়েক ঘুষি গুরুদেবের ডান পায়ে লাগিয়ে দিল! এদিকে গুরুদেব আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে আর্ত চিৎকার করতে করতে ওদের দুজনকেই থামার জন্য বলতে লাগলেন – কিন্তু কে শোনে কার কথা ! দুই শিষ্যই প্রবলভাবে কিল-চড়-ঘুষি-লাথি প্রয়োগ করে যেতে লাগল ।
বৃদ্ধ গুরুদেব দুজনের কাউকেই নিরস্ত করতে পারছিলেন না ৷ এমন সময় একজন শিষ্য প্রচন্ড রেগেমেগে বলে উঠল – “দাঁড়া ! আমার পায়ে তুই লাথি-ঘুষি সবকিছু মারলি তো – এবার তোর পা-টা আমি কেটেই ফেলব।” এই বলে সে উঠে গিয়ে পাশের ঘর থেকে একটা বিশাল রাম-দা নিয়ে এসে হাজির ! সেই না দেখে বৃদ্ধ অসুস্থ গুরুদেব প্রাণভয়ে তড়াক্ করে লাফিয়ে ঝেড়েমেরে উঠে হুঙ্কার দিয়ে বলল- ” করছিস কি তোরা ! এই দুটো তোদের পা – না আমার পা ! মেরে মেরে আমার পা দুটো ফুলিয়ে দিলি – অপগন্ডের দল ! বেরো আমার আশ্রম থেকে ! তোদের আর মুখদর্শন করতে চাই না !” গোলমাল শুনে পাশাপাশি লোকজন বা অন্যান্য শিষ্য-ভক্তরা জুটে গেল ৷ সকলে মিলে ব্যাপারটা সামাল দিতে গুরুদেব সে যাত্রা যাইহোক প্রাণে বেঁচে গেল।
গল্পটি এখানে শেষ করে গুরুমহারাজ বলতে শুরু করলেন _
” এই তো ব্রহ্মচারী – সন্ন্যাসী শিষ্যদের অবস্থা! Individual Ego -থেকে মুক্ত হতে পারছে না!” অহং-মম”__এর বাইরে যেতে পারছে না। গুরুকর্ম করছে – কিন্তু মনে অভিমান , ভাবছে “আমার কাজ”, ভাবতে পারছে না _”গুরুর কাজ”। তাই কর্মফল তৈরী হয়ে যাচ্ছে! কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া আর হয়ে উঠছে না! কিন্তু যখন সাধক এই কর্মরহস্যের ব্যাপারটা – ঠিক বুঝতে পারবে, তখন তার আর অভিমান থাকবে না! নিরভিমানী হয়ে সেই সাধক তার সামর্থ্য অনুযায়ী গুরুর কাজ এক মনে – এক ধ্যানে করে যাবে! গুরুকে প্রসন্ন করাই তো গুরুসেবার উদ্দেশ্য ! সেটা না করে অহেতুক আত্মাভিমানী হয়ে গুরুকে রুষ্ট করা হচ্ছে! জেনে রাখবে, নিরভিমান সেবায় গুরু প্রসন্ন হ’ন! আর গুরু প্রসন্ন হলেই তো হয়ে গেল — তিনি ঠিক শিষ্যকে মুক্তির পথ দেখাবেন! ঠিক হাত ধরে পৌঁছে দেবেন অন্তিম লক্ষ্যে । [ক্রমশঃ]
কিন্তু একদিন সেই সমস্যা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছালো যে গুরুদেবের প্রাণান্তকর অবস্থা ! ঘটনাটা বলছি শোন __
সেদিন কোন কারণে দুজন ব্রহ্মচারীর মধ্যে সকাল থেকেই নানা কারণে ঝগড়া চলছিল! সেই ঝগড়া সারাদিন ধরে চলেও শেষ হোল না – রাত্রি পর্যন্ত Continued হোল! রাত্রে খাওয়া দাওয়া সারার পর ওরা দুজনে নিত্যদিনের মতো গুরুদেবের ঘরে ঢুকল_ গুরুসেবা করার জন্য! একজন গুরুদেবের বাঁ পা টা কোলে তুলে নিয়ে টিপতে শুরু করল, অার অন্যজন ডান পা! কোন কারণে যে শিষ্যটি গুরুদেবের বাঁ পা টিপছিল, তার হাত গুরুদেবের ডান পা টায় অসাবধানবশতঃ সামান্য একটু Touch করে গেল ৷ যে ডান পা টিপছিল তার তো সকাল থেকেই অন্যজনের উপর রাগ ছিল। যেই না প্রথমজনের হাত গুরুদেবের ডান পায়ে Touch করেছে, অমনি সে বলে উঠল , “তুই আমার পা টায় হাত লাগালি ? দ্যাখ্ এবার আমি কি করি!! আমি তোর পা টায় কিল মেরে দেবো !” এই বলে সে গুরুদেবের বাঁ পায়ে কষিয়ে একটা কিল মেরে দিল!
বাঁ পা টেপা শিষ্য (প্রথমজন) এটা দেখে বলে উঠল – ” তুই আমার পায়ে কিল মারলি – দ্যাখ্ তোর পা টায় কি করি ?” এই বলে সে দমাদ্দম গোটাকয়েক ঘুষি গুরুদেবের ডান পায়ে লাগিয়ে দিল! এদিকে গুরুদেব আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে আর্ত চিৎকার করতে করতে ওদের দুজনকেই থামার জন্য বলতে লাগলেন – কিন্তু কে শোনে কার কথা ! দুই শিষ্যই প্রবলভাবে কিল-চড়-ঘুষি-লাথি প্রয়োগ করে যেতে লাগল ।
বৃদ্ধ গুরুদেব দুজনের কাউকেই নিরস্ত করতে পারছিলেন না ৷ এমন সময় একজন শিষ্য প্রচন্ড রেগেমেগে বলে উঠল – “দাঁড়া ! আমার পায়ে তুই লাথি-ঘুষি সবকিছু মারলি তো – এবার তোর পা-টা আমি কেটেই ফেলব।” এই বলে সে উঠে গিয়ে পাশের ঘর থেকে একটা বিশাল রাম-দা নিয়ে এসে হাজির ! সেই না দেখে বৃদ্ধ অসুস্থ গুরুদেব প্রাণভয়ে তড়াক্ করে লাফিয়ে ঝেড়েমেরে উঠে হুঙ্কার দিয়ে বলল- ” করছিস কি তোরা ! এই দুটো তোদের পা – না আমার পা ! মেরে মেরে আমার পা দুটো ফুলিয়ে দিলি – অপগন্ডের দল ! বেরো আমার আশ্রম থেকে ! তোদের আর মুখদর্শন করতে চাই না !” গোলমাল শুনে পাশাপাশি লোকজন বা অন্যান্য শিষ্য-ভক্তরা জুটে গেল ৷ সকলে মিলে ব্যাপারটা সামাল দিতে গুরুদেব সে যাত্রা যাইহোক প্রাণে বেঁচে গেল।
গল্পটি এখানে শেষ করে গুরুমহারাজ বলতে শুরু করলেন _
” এই তো ব্রহ্মচারী – সন্ন্যাসী শিষ্যদের অবস্থা! Individual Ego -থেকে মুক্ত হতে পারছে না!” অহং-মম”__এর বাইরে যেতে পারছে না। গুরুকর্ম করছে – কিন্তু মনে অভিমান , ভাবছে “আমার কাজ”, ভাবতে পারছে না _”গুরুর কাজ”। তাই কর্মফল তৈরী হয়ে যাচ্ছে! কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া আর হয়ে উঠছে না! কিন্তু যখন সাধক এই কর্মরহস্যের ব্যাপারটা – ঠিক বুঝতে পারবে, তখন তার আর অভিমান থাকবে না! নিরভিমানী হয়ে সেই সাধক তার সামর্থ্য অনুযায়ী গুরুর কাজ এক মনে – এক ধ্যানে করে যাবে! গুরুকে প্রসন্ন করাই তো গুরুসেবার উদ্দেশ্য ! সেটা না করে অহেতুক আত্মাভিমানী হয়ে গুরুকে রুষ্ট করা হচ্ছে! জেনে রাখবে, নিরভিমান সেবায় গুরু প্রসন্ন হ’ন! আর গুরু প্রসন্ন হলেই তো হয়ে গেল — তিনি ঠিক শিষ্যকে মুক্তির পথ দেখাবেন! ঠিক হাত ধরে পৌঁছে দেবেন অন্তিম লক্ষ্যে । [ক্রমশঃ]