গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ গিরি মহারাজকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল – ” আচ্ছা গুরু মহারাজ ! ব্রহ্মচর্য , বীর্য্যধারণ ইত্যাদি নানা কথা বা উপদেশ যেগুলি দেওয়া হয় – সেগুলি সবই তো পুরুষদের জন্য ! নারীদের জন্য তাহলে কি বিধান ? নারীদের কি ব্রহ্মচর্য হয় না ? আত্মদর্শন-ঈশ্বরদর্শনের জন্য কি পুরুষ শরীরই একমাত্র উপযুক্ত ? নারী শরীর কি সেই অর্থে অসম্পূর্ণ ? এই জন্যেই কি বাইবেল বা কোরানে ‘নারীর আত্মা নাই’ , ‘নারী পুরুষের শরীর থেকে সৃষ্ট’ – ‘পুরুষের মনোরঞ্জন বা সন্তুষ্টি বিধানই নারীর আধ্যাত্মিক উন্নতির একমাত্র উপায়’ – এসব কথা বলা হয়েছে ? তাহলে ঐ কথাগুলি কি যথার্থ ?”
এই ধরণের জিজ্ঞাসাসমূহ এলেই গুরু মহারাজ সাথে সাথেই নারীর দলে চলে যেতেন ! তীব্র কণ্ঠে এই সমস্ত নারীবিরোধী মতামতগুলিকে খন্ডন করে – নারীদের প্রতি প্রচন্ড সহানুভূতিশীল হয়ে জিজ্ঞাসাগুলির উত্তর দিতেন । যে কোন ব্যাপারে পুরুষ-নারীর সম্পর্কের কথা উঠলে – বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উনি নারীর পক্ষ অবলম্বন করতেন (দু-একটা ব্যাপারে ছাড়া) ! আমরা এক এক সময় ভাবতাম – তাহলে গুরু মহারাজ কি নারীবাদী (faminist) ? কিন্তু এই ধরণের কোন বিশেষণ তো ওনার ক্ষেত্রে টেঁকে না ! কারণ উনি তো শূন্য – উনি তো আকাশ ! উনিই বলেছিলেন – ” সব কিছুতে আকাশের ছায়া পড়ে , কিন্তু আকাশে কোন কিছুর ছায়া পড়ে না !”
উনি নারীর বিরুদ্ধে মাত্র যে কয়টা কথা বলেছিলেন তারমধ্যে হ’ল – (১)_ ” ‘নারীর গায়ে হাত দিতে নেই’ , ‘নারী অবধ্য’ — ইত্যাদি যে কথাগুলি রয়েছে সেগুলি ‘দুষ্টা নারী’-র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ! ভগবান কৃষ্ণ পুতনা বধ করে , ভগবান রাম তাড়কা-কে বধ করে এটা দেখিয়ে গেছেন যে প্রয়োজনে দুষ্টা নারীদের শাস্তি দেওয়া যায় ৷” (২) _”পুরুষরাই যে নারীদেরকে অত্যাচার করে তা নয় , বহুক্ষেত্রে নারীদের দ্বারা পুরুষেরাও অত্যাচারিত হয় । আমার এখানে আসে এমন অনেক বিবাহিত পুরুষেরা আছে – যারা পরিবারে স্ত্রীদের দ্বারা খুবই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় । ভদ্রলোক বলে হয়তো অশান্তি করে না , না হলে ফাটাফাটি হয়ে যেতো ! জানো – হুগলীর এক ভক্ত গত সপ্তাহে এসেছিল , তাকে তার স্ত্রী সারারাত বাড়ীর বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল – ভিতরে ঢুকতেই দেয়নি ! কারণটা কি – না , ছেলেটি অফিস থেকে ফিরে পাড়ার ক্লাবে তাস খেলতে যেতো – সেদিন ফিরতে একটু দেরী হয়ে গেছিল ! এই ধরনের স্ত্রীরা আর যাইহোক সহধর্মিনী নয় ।” (৩) _ “লজ্জাহীনা নারী খুবই ভয়ঙ্কর হয় , ওরা যে কোন পুরুষ মানুষকে চরম বিপদে ফেলে দিতে পারে !” (৪)_ “দেখবি কথা বলতে বলতে যে মহিলা মাটিতে পা ঘষছে বা কাপড়ের আঁচল পাকাচ্ছে , আর মিটিমিটি হাসছে – জানবি Dangerous । সত্ত্বর তার সংসর্গ ত্যাগ না করলে ঝামেলায় পড়ে যাবি ” – এই ধরণের কয়েকটা মাত্র ! বাকী যা কিছু বলতেন সবটাই নারী বা মহিলাদের favor-এ !
যে জিজ্ঞাসা দিয়ে আলোচনা শুরু করা হয়েছিল – সেখানে ফিরে যাওয়া যাক্ । ওই জিজ্ঞাসা গুলির উত্তরে গুরু মহারাজ নারী সম্বন্ধে গভীর শ্রদ্ধাশীল কন্ঠে বলতেন – ” নারী আজন্ম ব্রহ্মচারিণী ! নারী হ’ল শক্তি বা প্রকৃতি ! তাই প্রকৃতির পৃথকভাবে শক্তিলাভ করার কোন প্রয়োজন-ই হয় না – তার সবকিছু হয়ে-ই আছে । কোন নারীর কোন পদস্খলন ঘটলেও একবার ঋতুস্নান করলেই সে আবার ব্রহ্মচারিণী , শুদ্ধ-পবিত্র ! কোন পুরুষের সাধ্য নাই নারীকে অপবিত্র করে, যদি না সে মনে অপবিত্র হয় কারণ নারী চির-পবিত্র ।
স্বামী এবং সন্তানের উদাহরণ টেনে গুরুমহারাজ বলতেন _”আদিম মানবসমাজ তৈরি হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত relation-এর ভিত্তিতে বিচার করলে নারীকে মর্যাদা দিয়েছে ‘সন্তান’ __’স্বামী’ নয়! কোন মহাপুরুষ, ঋষিরা বা দু-একটা উন্নত মানবের উদাহরণ বাদ দিয়ে, সমাজের দিকে তাকালেই আমার কথার সত্যতা বুঝতে পারবে!
সন্তান যখন নারীকে ‘মা’ বলে ডেকেছে _তখনই নারী মাতৃত্বের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়েছে! এইজন্যই শাশ্ত্রকারেরা বলেছেন _’মাতৃত্বলাভই নারীজীবনের সার্থকতা’! যদিও কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ ভিন্ন __সেখানে বলা হয়েছে, কোন নারীর মধ্যে যদি মাতৃত্বসত্তার প্রকাশ ঘটে, যেমনটা সারদামায়ের ক্ষেত্রে ঘটেছিল _সেটাই নারীর পূর্ণত্ব!! তখনই বলা যায় _”আমি পাতানো মা নই, আমি সত্যিকারের ‘মা’! অথবা বলতে পারা যায় _”আমি আমজাদেরও মা আবার শরতেরও মা!” সাধারণ মানববুদ্ধি দিয়ে বিচার করলে কোন নারী কোনদিনই এই কথাগুলির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারবে না!”
গুরুমহারাজ আরও বলেছিলেন _” যেহেতু বর্তমানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, তাই কোন পুরুষ_ পরিবারে বা সমাজে যেরকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, যদি নারীদের ঠিক ঠিক সেই একই সুযোগ দেওয়া হয় __তাহলে যে কোন কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে যাবে!”
নারীরা পুরুষদের চাইতে Natural-ভাবেই introvert! তাই _নারী পুরুষ একসাথে ধ্যান করতে বসলে _দেখা যাবে মেয়েটির ধ্যান দ্রুত জমে যাচ্ছে!তেমন ভাবে পড়াশোনা ইত্যাদি যে কোন ক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়া হলে নারীরা চট্ চট্ এগিয়ে আসবে! ইউরোপ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলিতে মেয়েরা যথেষ্ট এগিয়ে এসেছে _ভারতবর্ষেও তার সূচনা হয়েছে, খুব শিগ্গির সমস্ত ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও স্থান করে নেবে!
আর এটা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক! বিশ্বপ্রকৃতির দিকে তাকিয়ে দেখো_সেখানে mother nature-ই তো ক্রিয়াশীল! সবকিছুর অন্তর্নিহিত তত্ত্বটি(ব্রহ্ম) তো স্থির! শিব __শব হয়ে স্থির রয়েছেন, কিন্তু কালী মহাকালের বুকে সতত নৃত্যরতা!! এই তত্ত্বটির স্থুল রূপ সাধক মাতৃমূর্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন, ভালো করে তাকিয়ে দেখবে কালী যেন সবসময় dancing mood-এ রয়েছেন! আরো ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে _কালীর চোখের দৃষ্টি কিন্তু মহাকালের চোখের দিকে! কালীর dance ততক্ষণই চলবে _যতক্ষণ শবরূপী শিবের ভালো লাগবে! শিবের ভ্রু একটু কুঁচকে গেলেই dance – এর ছন্দপতন! বহির্জগতে সেটাই প্রলয়, অথবা হয়তো মন্বন্তর!!
ভারতীয় ঋষিরা এইসব তত্ত্ব গল্পের আকারে, সংকেতের আকারে, চিহ্ন-প্রতীক-প্রতিমার মাধ্যমে__ সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্যে সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন! পরবর্ত্তীতে পরাধীন ভারতে(মুসলিম ও খ্রীষ্টানদের দ্বারা)উপযুক্ত সমাজশিক্ষক বা আচার্য্যের অভাবে _ঐ সব শিক্ষার ঠিকমতো ব্যাখ্যা হয়নি! তাই মানুষের কাছে এগুলির রহস্য ‘অধরা’ – ই থেকে গিয়েছে!
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”পৃথিবী গ্রহে বিবর্তনের ফলে প্রথম সৃষ্ট মানবশরীরটি ছিল নারীশরীর! বর্তমানের বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে এটি জানতে পেরেছে! ঐ নারীর গায়ের রঙ ছিল কালো! ইনি ই মানবের আদিমাতা!”
গুরুমহারাজের কথা শুনতে শুনতে কেমন যেন হয়ে যেতাম আমরা! চেতনার জগতে কোথায়.. প্রাচীনকালের কোন গহীন অরণ্যে হারিয়ে যেতো আমাদের অস্তিত্ব!! আর আমরা প্রত্যক্ষ করতাম ___বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ের কোলে পরিভ্রমনরতা একাকিনী সেই আদিমাতাকে!! তাছাড়া কতকাল আগে ঋষিদের উপলব্ধ সত্য অর্থাৎ বিশ্বজননী হিসাবে মা কালীর মূর্তরূপ যে আজকের বিজ্ঞান আবিস্কার করে মান্যতা দিচ্ছে _এগুলো শুনেও খুব ভালো লাগতো!!
যাইহোক আবার ফিরে আসি তাঁর কথায়, উনি এই ব্যাপারে আর যা বলেছিলেন, তা হোল__”আদিম মানবসমাজে নারীরাই পরিবারের কর্ত্রী ছিল (বাইরে নয়)! দীর্ঘকাল ধরে সমাজে মাতৃতান্ত্রিকতা চলেছিল। ঋষিদের দ্বারা পরিচালিত সমাজব্যবস্থাতেও নারীদের স্থান উচ্চে ছিল! কিন্তু পরে যখন রাজতন্ত্র_পুরোহিততন্ত্রের আঁতাত হোল এবং সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতার সূচনা হোল__তখন থেকেই পুরষসমাজ, ইচ্ছে করে, জোর করে, আইন – নিয়মের অনুশাসনে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল নারীসমাজকে, গৃহবন্দিকরে তুলল তাদের! কোন মহাপুরুষ নারীদের অসন্মান-অমর্যাদা করেন নি, নারীর অবমুল্যায়ন হয়_এমন কোন কথা কখনো বলেননি! এখন তোমরা শাশ্ত্রে যেগুলো পাও __ওগুলো পরে (মহাপুরুষের মৃত্যুর পরে) ঢোকানো হয়েছে! সব প্রক্ষিপ্ত! ঢুকিয়েছে পুরুষবাদী যাজক, পুরোহিত, মোল্লা-মৌলভীরা!!! (ক্রমশঃ)
এই ধরণের জিজ্ঞাসাসমূহ এলেই গুরু মহারাজ সাথে সাথেই নারীর দলে চলে যেতেন ! তীব্র কণ্ঠে এই সমস্ত নারীবিরোধী মতামতগুলিকে খন্ডন করে – নারীদের প্রতি প্রচন্ড সহানুভূতিশীল হয়ে জিজ্ঞাসাগুলির উত্তর দিতেন । যে কোন ব্যাপারে পুরুষ-নারীর সম্পর্কের কথা উঠলে – বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উনি নারীর পক্ষ অবলম্বন করতেন (দু-একটা ব্যাপারে ছাড়া) ! আমরা এক এক সময় ভাবতাম – তাহলে গুরু মহারাজ কি নারীবাদী (faminist) ? কিন্তু এই ধরণের কোন বিশেষণ তো ওনার ক্ষেত্রে টেঁকে না ! কারণ উনি তো শূন্য – উনি তো আকাশ ! উনিই বলেছিলেন – ” সব কিছুতে আকাশের ছায়া পড়ে , কিন্তু আকাশে কোন কিছুর ছায়া পড়ে না !”
উনি নারীর বিরুদ্ধে মাত্র যে কয়টা কথা বলেছিলেন তারমধ্যে হ’ল – (১)_ ” ‘নারীর গায়ে হাত দিতে নেই’ , ‘নারী অবধ্য’ — ইত্যাদি যে কথাগুলি রয়েছে সেগুলি ‘দুষ্টা নারী’-র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় ! ভগবান কৃষ্ণ পুতনা বধ করে , ভগবান রাম তাড়কা-কে বধ করে এটা দেখিয়ে গেছেন যে প্রয়োজনে দুষ্টা নারীদের শাস্তি দেওয়া যায় ৷” (২) _”পুরুষরাই যে নারীদেরকে অত্যাচার করে তা নয় , বহুক্ষেত্রে নারীদের দ্বারা পুরুষেরাও অত্যাচারিত হয় । আমার এখানে আসে এমন অনেক বিবাহিত পুরুষেরা আছে – যারা পরিবারে স্ত্রীদের দ্বারা খুবই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় । ভদ্রলোক বলে হয়তো অশান্তি করে না , না হলে ফাটাফাটি হয়ে যেতো ! জানো – হুগলীর এক ভক্ত গত সপ্তাহে এসেছিল , তাকে তার স্ত্রী সারারাত বাড়ীর বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল – ভিতরে ঢুকতেই দেয়নি ! কারণটা কি – না , ছেলেটি অফিস থেকে ফিরে পাড়ার ক্লাবে তাস খেলতে যেতো – সেদিন ফিরতে একটু দেরী হয়ে গেছিল ! এই ধরনের স্ত্রীরা আর যাইহোক সহধর্মিনী নয় ।” (৩) _ “লজ্জাহীনা নারী খুবই ভয়ঙ্কর হয় , ওরা যে কোন পুরুষ মানুষকে চরম বিপদে ফেলে দিতে পারে !” (৪)_ “দেখবি কথা বলতে বলতে যে মহিলা মাটিতে পা ঘষছে বা কাপড়ের আঁচল পাকাচ্ছে , আর মিটিমিটি হাসছে – জানবি Dangerous । সত্ত্বর তার সংসর্গ ত্যাগ না করলে ঝামেলায় পড়ে যাবি ” – এই ধরণের কয়েকটা মাত্র ! বাকী যা কিছু বলতেন সবটাই নারী বা মহিলাদের favor-এ !
যে জিজ্ঞাসা দিয়ে আলোচনা শুরু করা হয়েছিল – সেখানে ফিরে যাওয়া যাক্ । ওই জিজ্ঞাসা গুলির উত্তরে গুরু মহারাজ নারী সম্বন্ধে গভীর শ্রদ্ধাশীল কন্ঠে বলতেন – ” নারী আজন্ম ব্রহ্মচারিণী ! নারী হ’ল শক্তি বা প্রকৃতি ! তাই প্রকৃতির পৃথকভাবে শক্তিলাভ করার কোন প্রয়োজন-ই হয় না – তার সবকিছু হয়ে-ই আছে । কোন নারীর কোন পদস্খলন ঘটলেও একবার ঋতুস্নান করলেই সে আবার ব্রহ্মচারিণী , শুদ্ধ-পবিত্র ! কোন পুরুষের সাধ্য নাই নারীকে অপবিত্র করে, যদি না সে মনে অপবিত্র হয় কারণ নারী চির-পবিত্র ।
স্বামী এবং সন্তানের উদাহরণ টেনে গুরুমহারাজ বলতেন _”আদিম মানবসমাজ তৈরি হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত relation-এর ভিত্তিতে বিচার করলে নারীকে মর্যাদা দিয়েছে ‘সন্তান’ __’স্বামী’ নয়! কোন মহাপুরুষ, ঋষিরা বা দু-একটা উন্নত মানবের উদাহরণ বাদ দিয়ে, সমাজের দিকে তাকালেই আমার কথার সত্যতা বুঝতে পারবে!
সন্তান যখন নারীকে ‘মা’ বলে ডেকেছে _তখনই নারী মাতৃত্বের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়েছে! এইজন্যই শাশ্ত্রকারেরা বলেছেন _’মাতৃত্বলাভই নারীজীবনের সার্থকতা’! যদিও কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ ভিন্ন __সেখানে বলা হয়েছে, কোন নারীর মধ্যে যদি মাতৃত্বসত্তার প্রকাশ ঘটে, যেমনটা সারদামায়ের ক্ষেত্রে ঘটেছিল _সেটাই নারীর পূর্ণত্ব!! তখনই বলা যায় _”আমি পাতানো মা নই, আমি সত্যিকারের ‘মা’! অথবা বলতে পারা যায় _”আমি আমজাদেরও মা আবার শরতেরও মা!” সাধারণ মানববুদ্ধি দিয়ে বিচার করলে কোন নারী কোনদিনই এই কথাগুলির মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারবে না!”
গুরুমহারাজ আরও বলেছিলেন _” যেহেতু বর্তমানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, তাই কোন পুরুষ_ পরিবারে বা সমাজে যেরকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, যদি নারীদের ঠিক ঠিক সেই একই সুযোগ দেওয়া হয় __তাহলে যে কোন কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে যাবে!”
নারীরা পুরুষদের চাইতে Natural-ভাবেই introvert! তাই _নারী পুরুষ একসাথে ধ্যান করতে বসলে _দেখা যাবে মেয়েটির ধ্যান দ্রুত জমে যাচ্ছে!তেমন ভাবে পড়াশোনা ইত্যাদি যে কোন ক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়া হলে নারীরা চট্ চট্ এগিয়ে আসবে! ইউরোপ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দেশগুলিতে মেয়েরা যথেষ্ট এগিয়ে এসেছে _ভারতবর্ষেও তার সূচনা হয়েছে, খুব শিগ্গির সমস্ত ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও স্থান করে নেবে!
আর এটা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক! বিশ্বপ্রকৃতির দিকে তাকিয়ে দেখো_সেখানে mother nature-ই তো ক্রিয়াশীল! সবকিছুর অন্তর্নিহিত তত্ত্বটি(ব্রহ্ম) তো স্থির! শিব __শব হয়ে স্থির রয়েছেন, কিন্তু কালী মহাকালের বুকে সতত নৃত্যরতা!! এই তত্ত্বটির স্থুল রূপ সাধক মাতৃমূর্তির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন, ভালো করে তাকিয়ে দেখবে কালী যেন সবসময় dancing mood-এ রয়েছেন! আরো ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে _কালীর চোখের দৃষ্টি কিন্তু মহাকালের চোখের দিকে! কালীর dance ততক্ষণই চলবে _যতক্ষণ শবরূপী শিবের ভালো লাগবে! শিবের ভ্রু একটু কুঁচকে গেলেই dance – এর ছন্দপতন! বহির্জগতে সেটাই প্রলয়, অথবা হয়তো মন্বন্তর!!
ভারতীয় ঋষিরা এইসব তত্ত্ব গল্পের আকারে, সংকেতের আকারে, চিহ্ন-প্রতীক-প্রতিমার মাধ্যমে__ সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্যে সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন! পরবর্ত্তীতে পরাধীন ভারতে(মুসলিম ও খ্রীষ্টানদের দ্বারা)উপযুক্ত সমাজশিক্ষক বা আচার্য্যের অভাবে _ঐ সব শিক্ষার ঠিকমতো ব্যাখ্যা হয়নি! তাই মানুষের কাছে এগুলির রহস্য ‘অধরা’ – ই থেকে গিয়েছে!
গুরুমহারাজ বলেছিলেন _”পৃথিবী গ্রহে বিবর্তনের ফলে প্রথম সৃষ্ট মানবশরীরটি ছিল নারীশরীর! বর্তমানের বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে এটি জানতে পেরেছে! ঐ নারীর গায়ের রঙ ছিল কালো! ইনি ই মানবের আদিমাতা!”
গুরুমহারাজের কথা শুনতে শুনতে কেমন যেন হয়ে যেতাম আমরা! চেতনার জগতে কোথায়.. প্রাচীনকালের কোন গহীন অরণ্যে হারিয়ে যেতো আমাদের অস্তিত্ব!! আর আমরা প্রত্যক্ষ করতাম ___বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ের কোলে পরিভ্রমনরতা একাকিনী সেই আদিমাতাকে!! তাছাড়া কতকাল আগে ঋষিদের উপলব্ধ সত্য অর্থাৎ বিশ্বজননী হিসাবে মা কালীর মূর্তরূপ যে আজকের বিজ্ঞান আবিস্কার করে মান্যতা দিচ্ছে _এগুলো শুনেও খুব ভালো লাগতো!!
যাইহোক আবার ফিরে আসি তাঁর কথায়, উনি এই ব্যাপারে আর যা বলেছিলেন, তা হোল__”আদিম মানবসমাজে নারীরাই পরিবারের কর্ত্রী ছিল (বাইরে নয়)! দীর্ঘকাল ধরে সমাজে মাতৃতান্ত্রিকতা চলেছিল। ঋষিদের দ্বারা পরিচালিত সমাজব্যবস্থাতেও নারীদের স্থান উচ্চে ছিল! কিন্তু পরে যখন রাজতন্ত্র_পুরোহিততন্ত্রের আঁতাত হোল এবং সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতার সূচনা হোল__তখন থেকেই পুরষসমাজ, ইচ্ছে করে, জোর করে, আইন – নিয়মের অনুশাসনে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল নারীসমাজকে, গৃহবন্দিকরে তুলল তাদের! কোন মহাপুরুষ নারীদের অসন্মান-অমর্যাদা করেন নি, নারীর অবমুল্যায়ন হয়_এমন কোন কথা কখনো বলেননি! এখন তোমরা শাশ্ত্রে যেগুলো পাও __ওগুলো পরে (মহাপুরুষের মৃত্যুর পরে) ঢোকানো হয়েছে! সব প্রক্ষিপ্ত! ঢুকিয়েছে পুরুষবাদী যাজক, পুরোহিত, মোল্লা-মৌলভীরা!!! (ক্রমশঃ)