গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন প্রথমবার ইউরোপ গিয়েছিলেন , তখন নরওয়েতেই প্রথমে উঠেছিলেন । ওখানে থাকাকালীন সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তরা আসতো ওনার সাথে দেখা করতে ! অনেকে এক জায়গা হলে ওনারা সকলে মিলে এখানে-ওখানে বেড়াতে যেতেন । নরওয়ে দেশের মানুষজনের একটা অন্যতম শখ হল ‘বেরি’ তুলতে যাওয়া ! ওই দেশে নানা রকমের ‘বেরি’ জন্মায় ৷ আমরা ইংরেজিতে ‘বেরি’ বলতে জাম বুঝি । কিন্তু এখানে Natural ভাবে বনেজঙ্গলে নানারকমের যে ‘বেরি’ হয় সেগুলি জাম নয় । সেগুলি অন্যরকম যেমন – স্ট্রবেরি , ব্লুবেরি , রেডবেরি ইত্যাদি । গুরু মহারাজকে নিয়ে স্থানীয় ভক্তরা ‘বেরি’ তুলতে গেলে শেষকালে দেখা গিয়েছিল গুরু মহারাজ সবার চেয়ে বেশি ‘বেরি’ Collection করেছেন ! ন’কাকা (শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) এ ব্যাপারে প্রায়ই একটা কথা বলতেন – ” বাবা পরমানন্দ হলো গুরুর গুরু – মহাগুরু ! ওর সঙ্গে কি অন্য কারো তুলনা হয় ! ও সবেতেই First ! মা জগদম্বা যে ওকে First করেই পাঠিয়েছে ! ওকে হারানো সাধ্য কার ? তবে হ্যাঁ – ও নিজে যদি কখনো কোনও ভক্তের কাছে হার স্বীকার করে নেয় – তাহলে সে কথা আলাদা । সেটাই ‘লীলা’ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকে ।”
গুরু মহারাজকে নিয়ে ওরা একবার গিয়েছিল একেবারে Northern Norway -তে , পৃথিবীর উত্তর মেরুর কাছাকাছি স্থানে । একেবারে উত্তর মেরুতে তো যাওয়া যায় না – তবে কাছাকাছি হেমারফেস্ট(!) বা ওই রকম একটি নামের স্থান পর্যন্ত গাড়ি যায় – ওখানকার ভক্তরা গুরু মহারাজকে আগে থেকে কিছু না জানিয়ে একেবারে ওই স্থানে নিয়ে গিয়েছিল ! সেখান থেকে মেরুজ্যোতিঃ বা অরোরা বেরিয়ালিস্ সবচাইতে ভালো দেখা যায় ৷ অন্য দেশ থেকে যারাই এখানে হঠাৎ করে আসে তারা প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেলা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় , অবাক হয়ে নৃত্য করতে থাকে ! গুরু মহারাজের ইউরোপীয় ভক্তরা ভেবেছিল যে , হঠাৎ করে এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে গুরু মহারাজও বোধহয় ওই ধরণেরই কোন Reaction করবেন – তাই নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে হঠাৎ করে ওরা গাড়ির দরজা খুলে গুরু মহারাজকে বাইরে নিয়ে আসে ! গুরু মহারাজ, ওনার ওই সময়কার Reaction আমাদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন – ” আমাকে ওরা (ইউরোপীয় ভক্তরা) আগে বলেনি যে ওরা আজকে আমাকে হেমারফেস্টের(!) কাছে একটা Point -এ নিয়ে গিয়ে অরোরা বোরিয়ালিস্ দেখাবে ! গাড়িতে ওরা আমার সাথে নানারকম গাল-গল্প করতে করতে যাচ্ছিল – ওদের মনের মধ্যে যে একটা plan রয়েছে – তা আমাকে জানতেই দেয়নি ! হঠাৎ করে এক জায়গায় গাড়ি থামতেই ওদের সাথে আমিও গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম । নামতেই দেখি ওখানে প্রচুর লোকজন – যারা ওই Point থেকে মেরুজ্যোতি বা অরোরা বোরিয়ালিস্ দেখতে এসেছিল ৷ সবার দৃষ্টি আকাশের দিকে! ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি – আকাশ জুড়ে সে কি অদ্ভুত আলোর খেলা ! আকাশের বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে নানান বর্ণের আলো হঠাৎ হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে – বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে , তারপর মিলিয়ে যাচ্ছে ! সাথে সাথে অন্য এক জায়গায় আবার আলোকরাশির উদ্ভব হচ্ছে এবং তা আবার বিস্তৃত হচ্ছে ! সত্যি সত্যিই ঘন্টার পর ঘন্টা এই আলোক মালার খেলা দেখা যায় ! সত্যি_ বিশ্বাস করো! প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেলা দেখতে দেখতে কখন সময় হুরহুর করে এগিয়ে যায় – মানুষ বুঝতেই পারেনা !”
কিছুক্ষণ এই অদ্ভুত দৃশ্য পর ইউরোপীয় ভক্তরা গুরুমহারাজকে জিজ্ঞাসা করেছিল _”গুরুজী! আপনি জীবনে প্রথম এই অপূর্ব দৃশ্য দেখলেন _হটাৎ করে এটা দেখে আপনি অবাক হয়ে গেছেন, তাই না!!”
গুরুমহারাজ উত্তর দিয়েছিলেন _” দ্যাখো, পৃথিবী গ্রহে এমন কি আর আছে _যা আমাকে অবাক করতে পারে! এই সমগ্র নক্ষত্রমন্ডলে কত শত সহস্র এইরকম বা এর চেয়ে উন্নত গ্রহাদি রয়েছে, আর সেই সমস্ত স্থানে কত মহাজাগতিক ঘটনাসমূহ ঘটে চলেছে, যার তুলনায় পৃথিবীর রহস্যরাজি তো সামান্য!”
গুরুমহারাজের কথা শুনে ওরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চুপ করে গেছিল। তবে এইসব ঘটনার কথা পরবর্ত্তীতে গুরুমহারাজ যখন আমাদেরকে বনগ্রাম আশ্রমে বলছিলেন, তখন কিন্তু বললেন _” জানিস তো _অরোরা বেরিয়ালিসের দৃশ্য সত্যিই বড় অপূর্ব!! যেদিকে চোখ যাচ্ছে _সেদিকেই শুধু আলোর খেলা! এক জায়গাতেই হচ্ছে _তা তো নয়! সমগ্র আকাশ জুড়ে হচ্ছে _এদিকে _ওদিকে _সবদিকে! আর এক রঙের আলো নয় _বিভিন্ন বর্নের আলো! বিভিন্ন রকম ডিজাইনে বিন্যস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে!!
বাংলায় একে মেরুজ্যোতিঃ বলা হয়েছে _তা নামকরণটা ঠিকই, কারণ পৃথিবীর দুটি মেরুঅঞ্চল(কুমেরু ও সুমেরু) ছাড়া তো এই ধরনের ঘটনা অন্য কোথাও ঘটে না _তাই মেরুজ্যোতিঃ!!সুমেরুতে(নরওয়ের সন্নিকট) এর নাম অরোরা বেরিয়ালিস এবং কুমেরুতে ঐ ধরণের জ্যোতির নাম অরোরা অষ্ট্রালিস্।”
পৃথিবীর চৌম্বক
মেরুর প্রবল আকর্ষণ এবং আয়নমন্ডলের মধ্যে interaction, এছাড়া পৃথিবীর ভৌগলিক মেরুর প্রচন্ড gravitational force _এইগুলি একসাথে ঐরূপ ঘটনা ঘটতে সাহায্য করে(বৈজ্ঞানিক কারণ বা ব্যাখ্যা কি তা আমি জানি না, গুরুমহারাজের কাছে যা শুনেছিলাম, তার যতটুকু মনে আছে _তাই বলা হোল)!
মেরুজ্যোতিঃ দেখে অবাক হবার প্রশ্ন ওঠায় উনি ঐদিন আরো কিছু কথা বলেছিলেন! উনি বললেন _”জানো_আমি একসাথে সাতটা রামধনু উঠতে দেখেছি! তাতেই বা অবাক হবার কি আছে! পৃথিবীটা মহামায়ার মায়ার খেলা! মহামায়ার মায়া আমাকে মুগ্ধ করতে পারে না _বরং মহামায়াই আমাতে মুগ্ধ!! অনেক সময় আমি দেখি আমার পানে অবাক চোখে চেয়ে থাকতে গিয়ে _ও ওর নিজের কাজ করতেই ভুলে যাচ্ছে! তখন আমাকেই ওর কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়!!”(ক্রমশঃ)
গুরু মহারাজকে নিয়ে ওরা একবার গিয়েছিল একেবারে Northern Norway -তে , পৃথিবীর উত্তর মেরুর কাছাকাছি স্থানে । একেবারে উত্তর মেরুতে তো যাওয়া যায় না – তবে কাছাকাছি হেমারফেস্ট(!) বা ওই রকম একটি নামের স্থান পর্যন্ত গাড়ি যায় – ওখানকার ভক্তরা গুরু মহারাজকে আগে থেকে কিছু না জানিয়ে একেবারে ওই স্থানে নিয়ে গিয়েছিল ! সেখান থেকে মেরুজ্যোতিঃ বা অরোরা বেরিয়ালিস্ সবচাইতে ভালো দেখা যায় ৷ অন্য দেশ থেকে যারাই এখানে হঠাৎ করে আসে তারা প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেলা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় , অবাক হয়ে নৃত্য করতে থাকে ! গুরু মহারাজের ইউরোপীয় ভক্তরা ভেবেছিল যে , হঠাৎ করে এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে গুরু মহারাজও বোধহয় ওই ধরণেরই কোন Reaction করবেন – তাই নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে হঠাৎ করে ওরা গাড়ির দরজা খুলে গুরু মহারাজকে বাইরে নিয়ে আসে ! গুরু মহারাজ, ওনার ওই সময়কার Reaction আমাদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন – ” আমাকে ওরা (ইউরোপীয় ভক্তরা) আগে বলেনি যে ওরা আজকে আমাকে হেমারফেস্টের(!) কাছে একটা Point -এ নিয়ে গিয়ে অরোরা বোরিয়ালিস্ দেখাবে ! গাড়িতে ওরা আমার সাথে নানারকম গাল-গল্প করতে করতে যাচ্ছিল – ওদের মনের মধ্যে যে একটা plan রয়েছে – তা আমাকে জানতেই দেয়নি ! হঠাৎ করে এক জায়গায় গাড়ি থামতেই ওদের সাথে আমিও গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম । নামতেই দেখি ওখানে প্রচুর লোকজন – যারা ওই Point থেকে মেরুজ্যোতি বা অরোরা বোরিয়ালিস্ দেখতে এসেছিল ৷ সবার দৃষ্টি আকাশের দিকে! ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি – আকাশ জুড়ে সে কি অদ্ভুত আলোর খেলা ! আকাশের বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে নানান বর্ণের আলো হঠাৎ হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে – বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে , তারপর মিলিয়ে যাচ্ছে ! সাথে সাথে অন্য এক জায়গায় আবার আলোকরাশির উদ্ভব হচ্ছে এবং তা আবার বিস্তৃত হচ্ছে ! সত্যি সত্যিই ঘন্টার পর ঘন্টা এই আলোক মালার খেলা দেখা যায় ! সত্যি_ বিশ্বাস করো! প্রকৃতির এই অদ্ভুত খেলা দেখতে দেখতে কখন সময় হুরহুর করে এগিয়ে যায় – মানুষ বুঝতেই পারেনা !”
কিছুক্ষণ এই অদ্ভুত দৃশ্য পর ইউরোপীয় ভক্তরা গুরুমহারাজকে জিজ্ঞাসা করেছিল _”গুরুজী! আপনি জীবনে প্রথম এই অপূর্ব দৃশ্য দেখলেন _হটাৎ করে এটা দেখে আপনি অবাক হয়ে গেছেন, তাই না!!”
গুরুমহারাজ উত্তর দিয়েছিলেন _” দ্যাখো, পৃথিবী গ্রহে এমন কি আর আছে _যা আমাকে অবাক করতে পারে! এই সমগ্র নক্ষত্রমন্ডলে কত শত সহস্র এইরকম বা এর চেয়ে উন্নত গ্রহাদি রয়েছে, আর সেই সমস্ত স্থানে কত মহাজাগতিক ঘটনাসমূহ ঘটে চলেছে, যার তুলনায় পৃথিবীর রহস্যরাজি তো সামান্য!”
গুরুমহারাজের কথা শুনে ওরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চুপ করে গেছিল। তবে এইসব ঘটনার কথা পরবর্ত্তীতে গুরুমহারাজ যখন আমাদেরকে বনগ্রাম আশ্রমে বলছিলেন, তখন কিন্তু বললেন _” জানিস তো _অরোরা বেরিয়ালিসের দৃশ্য সত্যিই বড় অপূর্ব!! যেদিকে চোখ যাচ্ছে _সেদিকেই শুধু আলোর খেলা! এক জায়গাতেই হচ্ছে _তা তো নয়! সমগ্র আকাশ জুড়ে হচ্ছে _এদিকে _ওদিকে _সবদিকে! আর এক রঙের আলো নয় _বিভিন্ন বর্নের আলো! বিভিন্ন রকম ডিজাইনে বিন্যস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে!!
বাংলায় একে মেরুজ্যোতিঃ বলা হয়েছে _তা নামকরণটা ঠিকই, কারণ পৃথিবীর দুটি মেরুঅঞ্চল(কুমেরু ও সুমেরু) ছাড়া তো এই ধরনের ঘটনা অন্য কোথাও ঘটে না _তাই মেরুজ্যোতিঃ!!সুমেরুতে(নরওয়ের সন্নিকট) এর নাম অরোরা বেরিয়ালিস এবং কুমেরুতে ঐ ধরণের জ্যোতির নাম অরোরা অষ্ট্রালিস্।”
পৃথিবীর চৌম্বক
মেরুর প্রবল আকর্ষণ এবং আয়নমন্ডলের মধ্যে interaction, এছাড়া পৃথিবীর ভৌগলিক মেরুর প্রচন্ড gravitational force _এইগুলি একসাথে ঐরূপ ঘটনা ঘটতে সাহায্য করে(বৈজ্ঞানিক কারণ বা ব্যাখ্যা কি তা আমি জানি না, গুরুমহারাজের কাছে যা শুনেছিলাম, তার যতটুকু মনে আছে _তাই বলা হোল)!
মেরুজ্যোতিঃ দেখে অবাক হবার প্রশ্ন ওঠায় উনি ঐদিন আরো কিছু কথা বলেছিলেন! উনি বললেন _”জানো_আমি একসাথে সাতটা রামধনু উঠতে দেখেছি! তাতেই বা অবাক হবার কি আছে! পৃথিবীটা মহামায়ার মায়ার খেলা! মহামায়ার মায়া আমাকে মুগ্ধ করতে পারে না _বরং মহামায়াই আমাতে মুগ্ধ!! অনেক সময় আমি দেখি আমার পানে অবাক চোখে চেয়ে থাকতে গিয়ে _ও ওর নিজের কাজ করতেই ভুলে যাচ্ছে! তখন আমাকেই ওর কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়!!”(ক্রমশঃ)