[ন’কাকা যখন শ্রীরামপুর, হুগলি যেতেন_তখন ওনার সাথে অনেক আধ্যাত্মিক মানুষজনেরা দেখা করতে আসতো। সেইসব আলোচনা এখানে করা হচ্ছিল! বিশেষত তথাগত নামে এক তরুণ সন্ন্যাসী আমাদেরকে খুবই সম্পর্কের বাঁধনে বেঁধেছিল! তার কথা এখন বলা হচ্ছে!]
তখন (২০১৩ – ২০১৭) ন’কাকা বছরে ৩ /৪ বার করে শ্রীরামপুর যেতেন ওখানকার ভক্তদের আমন্ত্রণে ৷ ফলে প্রথম দর্শনের পর থেকে তথাগতের সাথে আমাদের এরপরে বহু বার দেখা হয়েছে! কারণ ন’কাকা শ্রীরামপুরে গেলেই ও আমাদের ওই দলে Join করতো, এমনকি ন’কাকার সাথে সাথে বিভিন্ন ভক্ত-বাড়িও ঘুরতো(বিশেষত সুদর্শন মাষ্টারমশাই এর বাড়ি কয়েকবারই গেছিলো) !
তথাগত কিন্তু সাধন-ভজনের দ্বারা আধ্যাত্মিক ভাবে অনেকটাই উন্নত হয়েছিল! একথা কেনো বলছি _তার দু-একটা উদাহরন দিতে পারি ! এক নম্বর হলো – ন’কাকার সাথে ওর প্রথম সাক্ষাতের সময়কার কথোপকথন । দুই নম্বর – একটি ঘটনার উল্লেখ করছি , যেটা বললে আপনারাও ওর Level সম্বন্ধে ধারণা করতে পারবেন ! সুদর্শন বাবুকে কেন্দ্র করে যে ভক্তমণ্ডলী ন’কাকার গুণমুগ্ধ হয়ে উঠেছিল – ওই দলে সুনীল বাবু নামে একজন retired person ছিলেন , যিনি যৌবন বয়স থেকেই বরাবর খুব ধ্যান করতেন ৷ ধ্যান করাকালীন সুনীলবাবুর এমন তন্ময়তা আসতো যে ওনার বাহ্য জ্ঞান থাকতো না – এটা ওনার বন্ধুরা(সুদর্শন বাবু, মানিক বাবু,শংকর দাস, জহর বাবু প্রমুখরা) সবাই জানতো ! ওরা সকলে একসাথে ধ্যানে বসতোmass-meditation)_৩০মিনিট,৪৫মিনিট,১ ঘন্টার মধ্যে একে একে সবাই আসন ছেড়ে উঠে আসতো কিন্তু সুনীল বাবু সহজে উঠতেই পারতো না। ওরা কতবার দেখেছে যে সুনীলদার হাতে _মুখে মশা ছেঁকে ধরেছে _তবু তার হুঁশ নাই!
সুনীল বাবুর কাছে শুনেছিলাম – যে ওই অবস্থায় ওনার অভ্যন্তরে একটা আনন্দের লহর চলতো – উনি যেন এক জ্যোতির্ময় লোকে বিরাজ করতেন! তাই সেখান থেকে ফিরতে চাইতেন না।
যাইহোক, বয়স বাড়ার কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণে – বেশ কিছুদিন যাবৎ সুনীলবাবুর ধ্যানের সময় ঐ “আনন্দের বোধ”-টি আর আসছিল না ! ধনী ব্যক্তি হঠাৎ করে ‘ধন’ হারিয়ে গরীব হয়ে গেলে যেমন সবসময় একটা অব্যক্ত যন্ত্রনায় অন্তরে গুমরে মরে, অথচ বাইরের কাউকে বলতেও পারে না – সুনীলবাবুর অবস্থা হয়েছিল তেমন-ই! একদিন ওদের সমবেত বৈঠকে (তথাগত-ও সেখানে ছিল) সুনীলবাবু নিজের এই দুর্বিসহ যন্ত্রনার কথা ব্যক্ত করেছিল। তথাগত ওনার যন্ত্রণার ব্যাপারটা বুঝে সুনীলবাবুকে ডেকে নিয়ে যায় পাশের একটা ফাঁকা ঘরে ৷ সেখানে সে একটা আসনে সুনীলবাবুকে পদ্মাসনে বসিয়ে দিয়ে – দুই ভ্রূর মধ্যিখানে ডান হাতের বুড়ো আঙুল রেখে ওকে মনঃসংযোগ করতে বলে ! মিনিট পাঁচেক বাদে বাইরে বেরিয়ে এল তথাগত – কিন্তু সুনীলবাবু বেরোলো অন্ততঃ আধঘন্টা পর — কাঁদতে কাঁদতে ! বলল – “বহুদিন পর আজ আমি আমার হারানো সম্পদ ফিরে পেলাম !”
এটা খুব একটা ছোট খাটো ব্যাপার নয় ! যেকোনো সাধক তার সাধনার জোরে একটা Level পর্যন্ত উঠতেই পারে ৷ কিন্তু অপরকে ধ্যানের জগতে তার নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়া বা পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারাটা – বড় সহজ কথা নয় !!
তিন নম্বরে উল্লেখ করা যায় – তথাগতর ‘মা’ ওর সম্বন্ধে যা যা কথা বলেছিল সেইগুলি ! তথাগতর কি দর্শন হ’ত সেটা জানা যায় না – কিন্তু মা তাঁর স্থূল চোখে অনেক দেব-দেবী বা মহাত্মা-মহাপুরুষদের তথাগতের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছেন, এমনকি গুরুমহারাজকেও স্থুল চোখে দেখেছিলেন! আরো বড় কথা যে , তথাগত আগেই মাকে বলে রেখেছিল যে __ মা অনেক কিছু দেখবেন , যেন তিনি ভয় না পান !
আমাদের আশ্রমের (পরমানন্দ মিশন) ভক্ত অরুন মুখার্জী(ছোট্টু) শ্রীরামপুরের লোক ছিল ৷ও গুরুমহারাজের কাছে দীক্ষা নিয়েছিল অনেক দিন, তবে শেষের দিকে (২০০০ সালের পরে) ও পরমানন্দ মিশন থেকে স্বামী পরমেশ্বরানন্দের কাছ থেকে ব্রহ্মচর্য নিয়েছিল। তখন থেকেই ও সাদা কাপড় পড়া ব্রহ্মচারী হিসেবেই থাকতো! অরুণ ব্রহ্মচারীও ন’কাকার খুবই একনিষ্ঠ অনুরাগী ছিল ৷
শ্রীরামপুরের বিখ্যাত প্রাচীন রাধাবল্লব মন্দিরের অনেক সেবাইতের মধ্যে অরুণদের পরিবারের লোকজনেরাও ছিল । রাধাবল্লভের সারাবছরই সেবা-ভোগের ব্যবস্থা রয়েছে এবং একদিন রাধাবল্লভের সেবা-ভোগের ‘ভার’ পাবার জন্য শ্রীরামপুরের বড় বড় ধনী ব্যক্তিরাও মুখিয়ে থাকে ! ব্যাপারটা clear করে বলতে গেলে বলতে হয় যে , – ধরুন , সেবাইতদের যেকোনো একজনের বৎসরান্তে দুইদিন পালা – সেই ব্যক্তি যদি ‘পালা’ চালানোর সামর্থ্য না থাকে তাহলে বহু ধনী ব্যক্তিরা ঐদিন ‘পালা’-টা চালিয়ে দেবার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে – তার জন্য যত খরচা হয় – করতেও রাজি থাকে !
অরুণ ব্রহ্মচারীও শেষের দলের লোক ছিল ৷ ওর যেদিন ‘পালা’ থাকতো , সেদিন ও উৎসাহী দু-একজনকে ঐরকম ‘ভার’ দিয়ে দিতো ! এটার বিনিময়ে ও শর্ত করে নিতো যে, ওর দশজন বা কুড়িজন অতিথি ঐদিন মন্দিরে প্রসাদ পাবে ! হ্যাঁ – এ কথাটা বলাই হয়নি , রাধাবল্লবের সেবা-ভোগ মানে ‘এলাহি ব্যাপার’ ! ফ্রায়েড রাইস থেকে শুরু করে কুড়ি-পঁচিশ রকমের ব্যঞ্জনসহ ভোগ _ অর্থাৎ typical বৈষ্ণব পরম্পরার ভোগ!! আর সেই ভোগ পাবার জন্য বহু লোকের লাইন পরে , ফলে প্রয়োজনে মানুষ অনেক টাকা প্রণামী দিয়েও ভোগ পাবার চেষ্টা করে! ন’কাকার দৌলতে , গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের কৃপায় আমরা (ন’কাকার ভক্তমন্ডলী , পুরো দলটা) বেশ কয়েকবার রাধাবল্লবের ভোগ-প্রসাদ লাভ করেছিলাম।এখানেই তথাগত একটা ঘটনা ঘটিয়েছিল! (ক্রমশঃ)