গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ ইউরোপ থেকে ফিরে এসে ওখানকার মানুষ , তাদের মানসিকতা , ওসব দেশের অর্থনীতি , সমাজনীতি , ধর্মনীতি – ইত্যাদির বিস্তৃত আলোচনা করেছিলেন ৷ মাত্র বছরখানেকের (প্রথম বছর) জন্য ইউরোপের মাত্র কয়েকটি দেশ পরিভ্রমণ করে (নরওয়ে , ইতালি , জার্মানি , স্পেন , গ্রিস , ফ্রান্স , সুইডেন , ইংল্যান্ড , যুগোস্লোভিয়া ইত্যাদি আরও কয়েকটি দেশ) কি করে যে উনি ওখানকার খুঁটিনাটি সমস্তকিছু বলে দিতেন তা শুনে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে যেত ! বহু ইতিহাস পড়া ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি – ” উনি এসব কথা কোন বই থেকে পড়েছেন – তাই বুঝতে পারছি না !” আসলে উনি তো বই পড়া পন্ডিত নন – যা কিছু বলছেন সব দেখে দেখেই বলছেন – তাঁর বিরাট চক্ষু দিয়ে গোটা পৃথিবীকে ক্ষুদ্র আকারে দেখছেন । কোথাও না গিয়েই সে দেশের সম্বন্ধে উনি বলতে পারেন – কিন্তু তবুও পৃথিবী গ্রহের ধর্ম বজায় রাখতেই_ যাওয়া ! এইযে ব্যাখ্যা দিলাম – এগুলো আমাদেরও বুঝতে অনেক সময় লেগেছে । প্রথম প্রথম আমরা খুবই সন্দেহপ্রবণ , অতি চালাক , অতি বুদ্ধিমান ছিলাম! আর ওই কম্মো করতে গিয়েই আমাদের বহু সময় নষ্টও হয়েছিল !
সে যাই হোক, ফিরে আসি গুরু মহারাজের বলা – ইউরোপের কথায় ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ওখানকার অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম কারণ হ’ল প্রাকৃতিক বা খনিজ সম্পদ এবং অত্যধিক কম জনসংখ্যা । ভারতবর্ষের প্রধান সমস্যা অত্যধিক জনসংখ্যা ! যেখানে ২০-টি ইঁদুর ধরে সেখানে ৮০/১oo টি ইঁদুর রাখা হলে যা অসুবিধা হবার তাই এখানে হয়েছে ! সেই জন্যেই ভারতবর্ষে শুধু সমস্যা , সমস্যা আর সমস্যা !! যে কোন ইউরোপীয় যখন ভারতবর্ষে বেড়াতে আসে, তখন ওরা দেখে দিল্লী-মুম্বাই-কলকাতার বিমানবন্দরে বা রেলওয়ে ষ্টেশনগুলোতে লোকজন পিলপিল করছে – শুধু মানুষের কালো কালো মাথা । তখন ওরা অবাক হয়ে যায় ! আমাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওরা এই একই কথা বলেছে! ইউরোপের মুসলিম দেশগুলি (যেমন- তুরস্ক ইত্যাদি)-তেও জনসংখ্যা খুবই কম । তবে নরওয়ের সঙ্গে অন্য দেশগুলির তুলনাই হবে না । ওখানে এক একটা বাড়ি অনেক দূরে দূরে ৷ পাহাড়ের কোলে , ঝরনার ধারে , জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে একটা একটা বাড়ী ছবির মতো লাগে !
একটা কথা বলতে ভুলেই যাচ্ছি – গুরু মহারাজ নরওয়েতে এরোপ্লেনও চালিয়েছিলেন ! ঘটনাটা খুলেই বলি I ওখানে বেশিরভাগই ফাঁকা জায়গা বলে অনেক Flight Club রয়েছে । যেখানে ছোট ছোট প্লেন (টু-সিটার , ফোর-সিটার) চালানো শেখানো হয় বা একঘন্টা/দুঘন্টা আকাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়া পাওয়া যায় ! ওখানকার ভক্তরা গুরু মহারাজকে নিয়ে ওই রকম একটি ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিল – গুরু মহারাজকে আকাশপথে ঘোরানোর জন্য ! আকাশপথে ভ্রমণকালে হঠাৎ করেই গুরু মহারাজ পাইলটের কাছে Operation-এর কৌশল জানতে শুরু করেন ! খুব সম্ভবতঃ পাইলট যিনি ছিলেন তিনি আমাদের আশ্রমেরই ভক্ত ৷ ফলে উনি গুরু মহারাজকে ককপিটের বিভিন্ন যন্ত্রের function বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন । সেই সময় হঠাৎ করে গুরু মহারাজ তাকে বলেন – ‘ব্যাপারটা তিনি বুঝে গেছেন – এবার তাঁকে যদি অনুমতি দেওয়া হয় , তাহলে তিনি সেই প্লেনটি চালিয়েও দিতে পারেন’!
পাইলট ভদ্রলোক অবাক তো নিশ্চয়ই হয়েছিলেন – কিন্তু ওনাকে চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন (খুব সম্ভবতঃ ওই প্লেনগুলি যেহেতু চালানো শেখানো হয় – তাই দুটো সিটেই Operating System থাকে ! যে কেউ Operate করতে পারে ! কেউ একজন ভুল করলে – অন্যজনের সংশোধনের উপায় থাকে ৷ তাই এক্ষেত্রে পাইলট গুরু মহারাজকে সুযোগটা দিতে পেরেছিলেন) !
উনি বিদেশ থেকে যখন বনগ্রাম ফিরে এসেছিলেন _তখন যে কোন প্রকারে ঐ কথাটা আমরা জানতে পেরেছিলাম! সত্যি সত্যিই তখন “গুরুমহারাজ প্লেন চালিয়েছেন”__এই ঘটনাটা যে-ই শুনছি, সে-ই অবাক হয়ে যাচ্ছিল!
কিন্তু পরে আমরা মনে মনে ভেবেছিলাম যে _’কি আহাম্মক আমরা!! একদিকে বলছি _ ‘উনি ভগবান _উনি সর্বশক্তিমান _ওনার অসাধ্য কিছু নেই`!! __আবার সেই আমরাই ওনার এই ধরনের ঘটনায় অবাক হচ্ছি _সংশয় প্রকাশ করছি! এইজন্যই মহাপুরুষেরা আমাদেরকে নিচু হয়ে দেখেন__বা বলা ভালো ঐভাবে দেখতে বাধ্য হন! এত ক্ষুদ্র আমরা _এত ক্ষুদ্র আমাদের চেতনা যে আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ওনাদের কত যে কষ্ট সহ্য করতে হয় _তা স্মরণে এলেই চোখে জল ভরে আসে!!
এই প্রসঙ্গে ইউরোপের আর একটা কথাও মনে আসছে! গুরুমহারাজ তখন ইতালির ‘কারারা’ _তে একটা বড় হলঘরে সিটিং করছিলেন! ওনার আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ভারতবর্ষের প্রাচীনত্ব! বিশ্বের সমস্ত দেশের যাবতীয় শিক্ষা যে ভারতবর্ষ থেকেই এসেছে _উনি সেই প্রসঙ্গেই কথা বলছিলেন। সমরবিদ্যা নিয়ে আলোচনায় উনি বলেছিলেন _’বর্তমানের ক্যারাটে – কুম্ফু-তাই চি এগুলি সবই ভারতবর্ষ থেকেই বৌদ্ধ শ্রমনদের দ্বারা তিব্বত, চীন, জাপান এসব দেশে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ঐ সব দেশ থেকে আবার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।’ তাছাড়া এই মার্শাল আর্টগুলির বিজ্ঞান নিয়েও আলোচনা করছিলেন।
এইসব কথা চলাকালীন হটাৎ করে ঐ সভাতেই বসে থাকা একটি সুঠাম চেহারার যুবক গুরুমহারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে _”আপনি যে কথাগুলো বললেন, অর্থাৎ’ এগুলি ভারতের প্রাচীন পরম্পরা’_ তা আপনি নিজে কি সেগুলি জানেন না শুধু মুখে ফুটানি করছেন! ”
ওর কথার উত্তরে গুরুমহারাজ বলেছিলেন _উনি যখন ছোটবয়সে হিমালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন একদল তিব্বতী যোগী ওনাকে সমস্ত ধরনের মার্শাল আর্ট শিখিয়েছিলেন।
গুরুমহারাজের কথা শেষ হতে না হতেই ঐ শক্তিমান ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টশার্ট খুলে গুরুমহারাজকে দ্বন্দযুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছিল! গুরুমহারাজ ওর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন এবং লড়াইও হয়েছিল _ আবার দু তিন-মিনিটের মধ্যে সেই লড়াই থেমেও গিয়েছিল! ছেলেটি স্বামী পরমানন্দকেই গুরু হিসেবে গ্রহণও করেছিল! পুরো ঘটনাটা পরের দিন!! (ক্রমশঃ)
সে যাই হোক, ফিরে আসি গুরু মহারাজের বলা – ইউরোপের কথায় ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ওখানকার অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম কারণ হ’ল প্রাকৃতিক বা খনিজ সম্পদ এবং অত্যধিক কম জনসংখ্যা । ভারতবর্ষের প্রধান সমস্যা অত্যধিক জনসংখ্যা ! যেখানে ২০-টি ইঁদুর ধরে সেখানে ৮০/১oo টি ইঁদুর রাখা হলে যা অসুবিধা হবার তাই এখানে হয়েছে ! সেই জন্যেই ভারতবর্ষে শুধু সমস্যা , সমস্যা আর সমস্যা !! যে কোন ইউরোপীয় যখন ভারতবর্ষে বেড়াতে আসে, তখন ওরা দেখে দিল্লী-মুম্বাই-কলকাতার বিমানবন্দরে বা রেলওয়ে ষ্টেশনগুলোতে লোকজন পিলপিল করছে – শুধু মানুষের কালো কালো মাথা । তখন ওরা অবাক হয়ে যায় ! আমাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওরা এই একই কথা বলেছে! ইউরোপের মুসলিম দেশগুলি (যেমন- তুরস্ক ইত্যাদি)-তেও জনসংখ্যা খুবই কম । তবে নরওয়ের সঙ্গে অন্য দেশগুলির তুলনাই হবে না । ওখানে এক একটা বাড়ি অনেক দূরে দূরে ৷ পাহাড়ের কোলে , ঝরনার ধারে , জঙ্গলাকীর্ণ স্থানে একটা একটা বাড়ী ছবির মতো লাগে !
একটা কথা বলতে ভুলেই যাচ্ছি – গুরু মহারাজ নরওয়েতে এরোপ্লেনও চালিয়েছিলেন ! ঘটনাটা খুলেই বলি I ওখানে বেশিরভাগই ফাঁকা জায়গা বলে অনেক Flight Club রয়েছে । যেখানে ছোট ছোট প্লেন (টু-সিটার , ফোর-সিটার) চালানো শেখানো হয় বা একঘন্টা/দুঘন্টা আকাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়া পাওয়া যায় ! ওখানকার ভক্তরা গুরু মহারাজকে নিয়ে ওই রকম একটি ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিল – গুরু মহারাজকে আকাশপথে ঘোরানোর জন্য ! আকাশপথে ভ্রমণকালে হঠাৎ করেই গুরু মহারাজ পাইলটের কাছে Operation-এর কৌশল জানতে শুরু করেন ! খুব সম্ভবতঃ পাইলট যিনি ছিলেন তিনি আমাদের আশ্রমেরই ভক্ত ৷ ফলে উনি গুরু মহারাজকে ককপিটের বিভিন্ন যন্ত্রের function বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন । সেই সময় হঠাৎ করে গুরু মহারাজ তাকে বলেন – ‘ব্যাপারটা তিনি বুঝে গেছেন – এবার তাঁকে যদি অনুমতি দেওয়া হয় , তাহলে তিনি সেই প্লেনটি চালিয়েও দিতে পারেন’!
পাইলট ভদ্রলোক অবাক তো নিশ্চয়ই হয়েছিলেন – কিন্তু ওনাকে চালানোর অনুমতি দিয়েছিলেন (খুব সম্ভবতঃ ওই প্লেনগুলি যেহেতু চালানো শেখানো হয় – তাই দুটো সিটেই Operating System থাকে ! যে কেউ Operate করতে পারে ! কেউ একজন ভুল করলে – অন্যজনের সংশোধনের উপায় থাকে ৷ তাই এক্ষেত্রে পাইলট গুরু মহারাজকে সুযোগটা দিতে পেরেছিলেন) !
উনি বিদেশ থেকে যখন বনগ্রাম ফিরে এসেছিলেন _তখন যে কোন প্রকারে ঐ কথাটা আমরা জানতে পেরেছিলাম! সত্যি সত্যিই তখন “গুরুমহারাজ প্লেন চালিয়েছেন”__এই ঘটনাটা যে-ই শুনছি, সে-ই অবাক হয়ে যাচ্ছিল!
কিন্তু পরে আমরা মনে মনে ভেবেছিলাম যে _’কি আহাম্মক আমরা!! একদিকে বলছি _ ‘উনি ভগবান _উনি সর্বশক্তিমান _ওনার অসাধ্য কিছু নেই`!! __আবার সেই আমরাই ওনার এই ধরনের ঘটনায় অবাক হচ্ছি _সংশয় প্রকাশ করছি! এইজন্যই মহাপুরুষেরা আমাদেরকে নিচু হয়ে দেখেন__বা বলা ভালো ঐভাবে দেখতে বাধ্য হন! এত ক্ষুদ্র আমরা _এত ক্ষুদ্র আমাদের চেতনা যে আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ওনাদের কত যে কষ্ট সহ্য করতে হয় _তা স্মরণে এলেই চোখে জল ভরে আসে!!
এই প্রসঙ্গে ইউরোপের আর একটা কথাও মনে আসছে! গুরুমহারাজ তখন ইতালির ‘কারারা’ _তে একটা বড় হলঘরে সিটিং করছিলেন! ওনার আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ভারতবর্ষের প্রাচীনত্ব! বিশ্বের সমস্ত দেশের যাবতীয় শিক্ষা যে ভারতবর্ষ থেকেই এসেছে _উনি সেই প্রসঙ্গেই কথা বলছিলেন। সমরবিদ্যা নিয়ে আলোচনায় উনি বলেছিলেন _’বর্তমানের ক্যারাটে – কুম্ফু-তাই চি এগুলি সবই ভারতবর্ষ থেকেই বৌদ্ধ শ্রমনদের দ্বারা তিব্বত, চীন, জাপান এসব দেশে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ঐ সব দেশ থেকে আবার পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।’ তাছাড়া এই মার্শাল আর্টগুলির বিজ্ঞান নিয়েও আলোচনা করছিলেন।
এইসব কথা চলাকালীন হটাৎ করে ঐ সভাতেই বসে থাকা একটি সুঠাম চেহারার যুবক গুরুমহারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে _”আপনি যে কথাগুলো বললেন, অর্থাৎ’ এগুলি ভারতের প্রাচীন পরম্পরা’_ তা আপনি নিজে কি সেগুলি জানেন না শুধু মুখে ফুটানি করছেন! ”
ওর কথার উত্তরে গুরুমহারাজ বলেছিলেন _উনি যখন ছোটবয়সে হিমালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন একদল তিব্বতী যোগী ওনাকে সমস্ত ধরনের মার্শাল আর্ট শিখিয়েছিলেন।
গুরুমহারাজের কথা শেষ হতে না হতেই ঐ শক্তিমান ছেলেটি উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টশার্ট খুলে গুরুমহারাজকে দ্বন্দযুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছিল! গুরুমহারাজ ওর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন এবং লড়াইও হয়েছিল _ আবার দু তিন-মিনিটের মধ্যে সেই লড়াই থেমেও গিয়েছিল! ছেলেটি স্বামী পরমানন্দকেই গুরু হিসেবে গ্রহণও করেছিল! পুরো ঘটনাটা পরের দিন!! (ক্রমশঃ)