[“বীরভূমে ন’কাকা” _এই নামে এখন আলোচনা চলছে। ন’কাকা বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক ভক্তদের বাড়ি বাড়ি যেতেন _বহু ভক্তদের সাথে সঙ্গ করতেন। সেই সব কথার সাথে সাথেই আবার বনগ্রামে ফিরে যাওয়া …]
ন’কাকা বীরভূমের সদর শহর সিউড়িতে বেশ কয়েকবার গেছেন। সিউড়িতেই সনৎ কাকুর ছোট জামাই তন্ময়দের বাড়ি ! তন্ময় মুখার্জীরা সিউড়ির বনেদী পরিবারের লোক । সিউড়ি ‘ত্রাণ সমিতি’ নামে একটি বড় নামকরা ক্লাব আছে , ওই পাড়াতেই ওদের বাড়ি ! ওদের দাদু খুব নামকরা লোক ছিলেন – যাঁর নামে ওখানে স্কুল রয়েছে, অর্থাৎ সমাজকল্যাণে তাঁর খুবই contribution ছিল!
যাইহোক, আগেই বলা হয়েছে, তন্ময় হলো ওই পূর্বে বর্ণিত সনৎ কাকুর জামাই , ওনার ছোট মেয়ে মিষ্টুর সাথে তন্ময়ের বিবাহ হয়েছিল !
আমি যখন থেকে বনগ্রামে যাই (১৯৮৩) – তখন থেকেই দেখতাম ন’কাকার কোনো সন্তানাদি নাই ৷ পরে অবশ্য এর আধ্যাত্মিক কারন এবং গুরু মহারাজের মুখ থেকে নানা কথা শুনে _আসল রহস্যটা বুঝে গিয়েছিলাম, তাই সেই নিয়ে কখনোই কোনো কৌতুহল প্রকাশ করিনি বা করার প্রয়োজনও বোধ করিনি!
গুরু মহারাজ একদিন বলেছিলেন – ” ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ জগতবাসীকে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন , স্বামী-স্ত্রী মানেই ভোগের জগতে গা ভাসানো নয় , স্ত্রী হচ্ছে প্রকৃত অর্থেই সহধর্মিনী! কিন্তু পৃথিবীগ্রহের মানুষ সেই ভাব এখনো নিতে পারেনি । এতদিন পর – ন’কাকা ঐরূপ জীবন যাপন করে , আবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন ৷ এরপর থেকে দেখা যাবে , এইরকম অনেকেই দাম্পত্য জীবন যাপন করবেন ।”
এসব কথা আমার মতো তখন অনেকেই শুনেছিল! তা সত্ত্বেও আমি শুনেছিলাম ‘ন’কাকীমা’ – আত্মীয়-স্বজন , পাড়া-পড়শির চাপে মনঃকষ্টে ভুগতেন ৷ আমার মনে পড়তো জগন্মাতা জননী সারদাদেবীর কথা ! যার করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – ” সন্তানের জন্য চিন্তা কি ! তোমার এত ছেলে মেয়ে হবে যে , তুমি ‘মা’ ডাকে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে !”
আমি ভাবতাম – এবারও কি সেইরকমই কিছু একটা হবে ? হলোও তাই !
ন’কাকার ঠিক ঠিক প্রথম ‘মেয়ে’ বা ‘কন্যা’ হিসাবে আমি দেখেছিলাম সনৎ কাকুর ছোট মেয়ে বা তন্ময়ের স্ত্রী ‘মিষ্ঠু’-কে ! সনৎ কাকুর বাড়ির জামাই হবার সুবাদে – ন’কাকা কীর্ণাহার গেলে, তন্ময়ও নিমন্ত্রিত হোত , সঙ্গে আসতো মিষ্ঠুও ! দু-একবার এইরকম যাতায়াতেই মিষ্ঠু কখন যে ন’কাকার ‘মেয়ে’ হয়ে উঠলো , অত কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও আমি বুঝতেই পারিনি !
সেবার ন’কাকার সাথে সিউড়ি গেছি ! সিউড়িতে গেলে ন’কাকা তন্ময়দের বাড়িতেই থাকতেন । আমি আর নন্দ মহারাজ বেশিরভাগই থাকতাম মাসির বাড়িতে ৷’মাসি’ অর্থাৎ মিষ্ঠুর মাসি – তন্ময়ের মাসি শাশুড়ি । মাসিদের বাপের বাড়ি আমোদপুর , ওনার দাদা বাঁড়ুজ্জেমশাই হাই স্কুলের ইংলিশ টিচার , খাড়াখুড়ি-অনাপোষী মানুষ ! দুই ছেলে ভোলা এবং লাল্টু ! ন’কাকা ওদের বাড়ি আমোদপুরেও বেশ কয়েকবার গিয়েছিলেন ৷
যাইহোক, ন’কাকার সিউড়ীতে থাকাকালীন সময়কার কথা হচ্ছিল৷ সেবার সিউড়িতে অনেকের বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল ৷ দ্বারিকবাবুর (চাকপাড়ার মুখুজ্যেমশায়-এর ছোট মেয়ের শশুর) বাড়ী , মাসির বাড়ি (আগেই বলা হয়েছে) , তন্ময়-এর দুই মামার বাড়ি ( কঙ্কু মামি এবং আর একজন) , তপনবাবু ( রিটায়ার্ড মিলিটারি এবং বর্তমানে এলআইসি আই-এর এজেন্ট)-র বাড়ি , অসিতদা (কীর্ণাহার)-র মাসির বাড়ি – ইত্যাদি অনেকের বাড়ি যাওয়া হয়েছিল । দুদিন ওখানে থেকে এবার ফেরার পালা! সিউড়ি থেকে বর্ধমান আসার জন্য দুপুরের দিকে ‘হুল এক্সপ্রেস’- নামে একটি ট্রেন আছে। সেইটাতেই উঠে আমি আর ন’কাকা বসে আছি । তন্ময় এবং সনৎ কাকু ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিল ৷ ট্রেনটি ছাড়তে কিছু দেরি ছিল । সেই সময় হঠাৎ করে আমি দেখলাম – সনৎ কাকুর ছোট মেয়ে মিষ্ঠু ( তন্ময়ের স্ত্রী) কোথা থেকে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে উঠেই ন’কাকাকে জড়িয়ে ধরে _ওই কান্না ! ন’কাকা মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে যত সান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন – মিষ্ঠু তত কাঁদে ! কান্নার যেন শেষ নাই !
কম্পার্টমেন্টে উপস্থিত লোকজন বলতে লাগলো – “ও আপনার ‘মেয়ে’ বুঝি ! নতুন বিয়ে হয়েছে বোধহয় ! আপনি মেয়ের বাড়ি এসেছিলেন বুঝি ! চলে যাচ্ছেন তো – তাই মেয়ে কাঁদছে !”
মানুষজনের মন্তব্য শুনছিলাম – মেয়ে বাবার সুন্দর স্নেহ প্রীতির সম্পর্কের দৃশ্য দেখছিলাম – আর অবাক হচ্ছিলাম ! এ কোন ন’কাকা ? এই কদিনের আলাপে মিষ্ঠু ন’কাকার মেয়ে হয়ে উঠল কি করে ? তাহলে কি এরা সব ন’কাকার সাথে পূর্ব পূর্ব জীবনের লীলা সঙ্গী বা সেই সময় থেকেই কোনো না কোনো ভাবে সম্পর্কযুক্ত ! তন্ময়ের ‘জামাই’ হয়ে উঠতে কিন্তু একটু সময় লেগেছিল – অবশ্য এটাই স্বাভাবিক ! কারণ তন্ময় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সুদর্শন যুবক – চট্ করে গেঁয়ো , হাটুর উপর তোলা কাপড় , হাফ হাতা কম দামি পাঞ্জাবি পড়া একজন ব্যক্তি, খুব যে একটা বেদ-পুরাণ-শাস্ত্রের কথা ব্যাখা করেন _ তাও নয়__ তাহলে তাকে প্রথমেই মেনে নেয়া তো মুশকিল ! তাই ‘মেয়ে’ মিষ্ঠুর এতোটুকু দেরি না হোলেও তন্ময়ের একটু দেরি হয়েছিল । তবে, তন্ময় যখন ন’কাকাকে পিতা হিসাবে , গুরু হিসেবে গ্রহণ করে নিল – তখন থেকে অবশ্য আর পিছন ফিরে তাকায় নি ! ন’কাকিমা পেয়ে গেলেন সত্যি কারের ‘মেয়ে’ এবং পাঁচজনকে দেখানোর মত সুদর্শন , সুপুরুষ , শিক্ষিত যুবক ‘জামাই’ !(ক্রমশঃ)
ন’কাকা বীরভূমের সদর শহর সিউড়িতে বেশ কয়েকবার গেছেন। সিউড়িতেই সনৎ কাকুর ছোট জামাই তন্ময়দের বাড়ি ! তন্ময় মুখার্জীরা সিউড়ির বনেদী পরিবারের লোক । সিউড়ি ‘ত্রাণ সমিতি’ নামে একটি বড় নামকরা ক্লাব আছে , ওই পাড়াতেই ওদের বাড়ি ! ওদের দাদু খুব নামকরা লোক ছিলেন – যাঁর নামে ওখানে স্কুল রয়েছে, অর্থাৎ সমাজকল্যাণে তাঁর খুবই contribution ছিল!
যাইহোক, আগেই বলা হয়েছে, তন্ময় হলো ওই পূর্বে বর্ণিত সনৎ কাকুর জামাই , ওনার ছোট মেয়ে মিষ্টুর সাথে তন্ময়ের বিবাহ হয়েছিল !
আমি যখন থেকে বনগ্রামে যাই (১৯৮৩) – তখন থেকেই দেখতাম ন’কাকার কোনো সন্তানাদি নাই ৷ পরে অবশ্য এর আধ্যাত্মিক কারন এবং গুরু মহারাজের মুখ থেকে নানা কথা শুনে _আসল রহস্যটা বুঝে গিয়েছিলাম, তাই সেই নিয়ে কখনোই কোনো কৌতুহল প্রকাশ করিনি বা করার প্রয়োজনও বোধ করিনি!
গুরু মহারাজ একদিন বলেছিলেন – ” ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ জগতবাসীকে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন , স্বামী-স্ত্রী মানেই ভোগের জগতে গা ভাসানো নয় , স্ত্রী হচ্ছে প্রকৃত অর্থেই সহধর্মিনী! কিন্তু পৃথিবীগ্রহের মানুষ সেই ভাব এখনো নিতে পারেনি । এতদিন পর – ন’কাকা ঐরূপ জীবন যাপন করে , আবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন ৷ এরপর থেকে দেখা যাবে , এইরকম অনেকেই দাম্পত্য জীবন যাপন করবেন ।”
এসব কথা আমার মতো তখন অনেকেই শুনেছিল! তা সত্ত্বেও আমি শুনেছিলাম ‘ন’কাকীমা’ – আত্মীয়-স্বজন , পাড়া-পড়শির চাপে মনঃকষ্টে ভুগতেন ৷ আমার মনে পড়তো জগন্মাতা জননী সারদাদেবীর কথা ! যার করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন – ” সন্তানের জন্য চিন্তা কি ! তোমার এত ছেলে মেয়ে হবে যে , তুমি ‘মা’ ডাকে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে !”
আমি ভাবতাম – এবারও কি সেইরকমই কিছু একটা হবে ? হলোও তাই !
ন’কাকার ঠিক ঠিক প্রথম ‘মেয়ে’ বা ‘কন্যা’ হিসাবে আমি দেখেছিলাম সনৎ কাকুর ছোট মেয়ে বা তন্ময়ের স্ত্রী ‘মিষ্ঠু’-কে ! সনৎ কাকুর বাড়ির জামাই হবার সুবাদে – ন’কাকা কীর্ণাহার গেলে, তন্ময়ও নিমন্ত্রিত হোত , সঙ্গে আসতো মিষ্ঠুও ! দু-একবার এইরকম যাতায়াতেই মিষ্ঠু কখন যে ন’কাকার ‘মেয়ে’ হয়ে উঠলো , অত কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও আমি বুঝতেই পারিনি !
সেবার ন’কাকার সাথে সিউড়ি গেছি ! সিউড়িতে গেলে ন’কাকা তন্ময়দের বাড়িতেই থাকতেন । আমি আর নন্দ মহারাজ বেশিরভাগই থাকতাম মাসির বাড়িতে ৷’মাসি’ অর্থাৎ মিষ্ঠুর মাসি – তন্ময়ের মাসি শাশুড়ি । মাসিদের বাপের বাড়ি আমোদপুর , ওনার দাদা বাঁড়ুজ্জেমশাই হাই স্কুলের ইংলিশ টিচার , খাড়াখুড়ি-অনাপোষী মানুষ ! দুই ছেলে ভোলা এবং লাল্টু ! ন’কাকা ওদের বাড়ি আমোদপুরেও বেশ কয়েকবার গিয়েছিলেন ৷
যাইহোক, ন’কাকার সিউড়ীতে থাকাকালীন সময়কার কথা হচ্ছিল৷ সেবার সিউড়িতে অনেকের বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল ৷ দ্বারিকবাবুর (চাকপাড়ার মুখুজ্যেমশায়-এর ছোট মেয়ের শশুর) বাড়ী , মাসির বাড়ি (আগেই বলা হয়েছে) , তন্ময়-এর দুই মামার বাড়ি ( কঙ্কু মামি এবং আর একজন) , তপনবাবু ( রিটায়ার্ড মিলিটারি এবং বর্তমানে এলআইসি আই-এর এজেন্ট)-র বাড়ি , অসিতদা (কীর্ণাহার)-র মাসির বাড়ি – ইত্যাদি অনেকের বাড়ি যাওয়া হয়েছিল । দুদিন ওখানে থেকে এবার ফেরার পালা! সিউড়ি থেকে বর্ধমান আসার জন্য দুপুরের দিকে ‘হুল এক্সপ্রেস’- নামে একটি ট্রেন আছে। সেইটাতেই উঠে আমি আর ন’কাকা বসে আছি । তন্ময় এবং সনৎ কাকু ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিল ৷ ট্রেনটি ছাড়তে কিছু দেরি ছিল । সেই সময় হঠাৎ করে আমি দেখলাম – সনৎ কাকুর ছোট মেয়ে মিষ্ঠু ( তন্ময়ের স্ত্রী) কোথা থেকে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে উঠেই ন’কাকাকে জড়িয়ে ধরে _ওই কান্না ! ন’কাকা মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে যত সান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন – মিষ্ঠু তত কাঁদে ! কান্নার যেন শেষ নাই !
কম্পার্টমেন্টে উপস্থিত লোকজন বলতে লাগলো – “ও আপনার ‘মেয়ে’ বুঝি ! নতুন বিয়ে হয়েছে বোধহয় ! আপনি মেয়ের বাড়ি এসেছিলেন বুঝি ! চলে যাচ্ছেন তো – তাই মেয়ে কাঁদছে !”
মানুষজনের মন্তব্য শুনছিলাম – মেয়ে বাবার সুন্দর স্নেহ প্রীতির সম্পর্কের দৃশ্য দেখছিলাম – আর অবাক হচ্ছিলাম ! এ কোন ন’কাকা ? এই কদিনের আলাপে মিষ্ঠু ন’কাকার মেয়ে হয়ে উঠল কি করে ? তাহলে কি এরা সব ন’কাকার সাথে পূর্ব পূর্ব জীবনের লীলা সঙ্গী বা সেই সময় থেকেই কোনো না কোনো ভাবে সম্পর্কযুক্ত ! তন্ময়ের ‘জামাই’ হয়ে উঠতে কিন্তু একটু সময় লেগেছিল – অবশ্য এটাই স্বাভাবিক ! কারণ তন্ময় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সুদর্শন যুবক – চট্ করে গেঁয়ো , হাটুর উপর তোলা কাপড় , হাফ হাতা কম দামি পাঞ্জাবি পড়া একজন ব্যক্তি, খুব যে একটা বেদ-পুরাণ-শাস্ত্রের কথা ব্যাখা করেন _ তাও নয়__ তাহলে তাকে প্রথমেই মেনে নেয়া তো মুশকিল ! তাই ‘মেয়ে’ মিষ্ঠুর এতোটুকু দেরি না হোলেও তন্ময়ের একটু দেরি হয়েছিল । তবে, তন্ময় যখন ন’কাকাকে পিতা হিসাবে , গুরু হিসেবে গ্রহণ করে নিল – তখন থেকে অবশ্য আর পিছন ফিরে তাকায় নি ! ন’কাকিমা পেয়ে গেলেন সত্যি কারের ‘মেয়ে’ এবং পাঁচজনকে দেখানোর মত সুদর্শন , সুপুরুষ , শিক্ষিত যুবক ‘জামাই’ !(ক্রমশঃ)