গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ যখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরছিলেন তখনকার কথা হচ্ছিল । এক সময় উনি জাহাজে করে সমুদ্রপথে গ্রীস ও ক্রীট দ্বীপ ভ্রমণ করছিলেন , হঠাৎ করে জাহাজের ডেকে একদল উচ্ছল-প্রাণচঞ্চল তরুণ-তরুণীর সাথে ওনার কথোপকথন বা জিজ্ঞাসা-উত্তরের আসর বসে গিয়েছিল ! ওই দলের মেয়েরা ভারতীয় নারীদের সম্বন্ধে গুরু মহারাজের কাছে শুনে বিশেষ কৌতুহলী হয়ে উঠেছিল ৷ এছাড়া ওরা গুরু মহারাজকে দেখে এবং ওনার শ্রীমুখের কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল ৷ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী হওয়ায় ওরা ওই দেশের আবহাওয়ায় মানুষ হয়েছে , বেড়ে উঠেছে – ফলে ভোগ-বিলাস , ঐশ্বর্য , উশৃংখলতা এগুলোতেই ওরা অভ্যস্ত – শরীরে যৌবন থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজে লাগিয়ে ভোগ-বিলাস করবে না , ত্যাগ বা সংযমে থাকবে – এই ব্যাপারটা ওরা ভাবতে পারছিল না , বুঝতেও পারছিল না ৷ ভারতীয় নারীরা একটা পুরুষকে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয় – এটাও ওরা মেনে নিতে পারছিল না ! তখন গুরুমহারাজ ওদেরকে ধীরে ধীরে ভারতবর্ষের প্রাচীনত্ব – এখানকার দর্শন , মানুষের জীবনযাত্রা , প্রাচীন শাস্ত্রাদিতে আদর্শ পুরুষ ও নারী চরিত্রের ভূমিকা – এইসব সম্বন্ধে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন । আর আশ্চর্যের বিষয় এই যে – ওই উচ্ছ্বল , প্রাণচঞ্চল এবং উশৃংখল ছেলেমেয়েগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ওনার শ্রীমুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে সব কথা শুনেছিল ! এখন উনি যা বলেছিলেন সেইগুলি আলোচনা করা যাক্ – !
ভারতীয় নারীরা কি করে একটা পুরুষকে নিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দেয় – এর উত্তর দিতে গিয়ে উনি বলেছিলেন – ” যে জাতি যত সুপ্রাচীন সেই জাতির তত প্রাচীন পরম্পরা থাকে এবং অনেক উন্নত আদর্শ থাকে সেই সমাজে ! ওইসব উন্নত আদর্শগুলিই পরবর্তী কালের সমাজের নারী-পুরুষের অনুসরণীয় হয় ! ভারতবর্ষের প্রাচীন গ্রন্থাবলীর মধ্যে একটি মহাকাব্যের নাম ‘রামায়ণ’ । সেখানে মুখ্যচরিত্র ‘রাম’-এর চরিত্র বর্ণনা করা আছে যিনি আদর্শ প্রজাবৎসল রাজা ছিলেন এবং যিনি এতই প্রজাবৎসল ছিলেন যে প্রজাদের মনোরঞ্জন করার জন্য নিজের স্ত্রীকেও বিসর্জন করতে কুন্ঠা করেন নি ! ওই গ্রন্থে আরও একটি চরিত্র রামচন্দ্রের ভাই ‘লক্ষণ’ – যিনি তাঁর বড় ভ্রাতার সুখে সুখী , তাঁর দুঃখে দুখী ! নিজের সুখ শান্তির কোনরকম পরোয়া না করে – যিনি শুধু তার বড় ভাইয়ের চির-অনুগত থেকে তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছে ! ওই গ্রন্থের মুখ্য নারীচরিত্র বা নায়িকা ‘সীতা’ যিনি রামের স্ত্রী – তিনি সারাজীবন ধরে পতিব্রতা হয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন । স্বামী রামচন্দ্র তাকে যখন যেভাবে রেখেছেন – সীতা সেইভাবেই থেকেছেন – স্বামীর কোনো কাজের কখনোই কোন প্রতিবাদ করেননি ৷ রামায়ণে এক বীর চরিত্র রয়েছে ‘হনুমান’ , যিনি তাঁর প্রভুর মুখের কথা বেরোনো মাত্র সেই কাজ তা যতই দুরূহ হোক তিনি তা সম্পন্ন করতেন । কথায় বলা হয় তিনি প্রভু রামচন্দ্রের আদেশে গন্ধমাদন পর্বত (অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে যা অসম্ভব) মাথায় করে নিয়ে এসেছিলেন ! এইরকম আর একটি মহাকাব্য রয়েছে যার নাম ‘মহাভারত’ , এছাড়া আরো অনেক প্রাচীন গ্রন্থাদি যেগুলি ‘পুরান’ নামে ভারতবর্ষে প্রচলিত – সেইসব গ্রন্থাদিতেও অনেক মহান পুরুষ এবং মহীয়সী নারীদের চরিত্র চিত্রায়িত করা হয়েছে – যেগুলি ভারতীয় সমাজের কোনে কোনে মানুষের মুখে মুখে পুরুষানুক্রমে(গল্পকারে দাদু-ঠাকুমা-দিদিমাদের দ্বারা) প্রচারিত হয়ে আসছে । এরফলে এই বিশাল দেশ ভারতবর্ষের অনেক বৈচিত্রতা থাকলেও তার প্রাচীনত্বের বন্ধন – তাকে একটা মহান ‘ঐক্য’ এনে দিয়েছে (অর্থাৎ ভারতবর্ষের সব প্রান্তের মানুষের কাছেই এনারা আদর্শ) ৷ ভারতবর্ষের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ সমস্ত প্রান্তের যেকোন সমাজের পরিবারের বড় ভাই ‘রাম’-এর মতো , ছোট ভাই ‘লক্ষণ’-এর মতো , বাড়ির বউ মা সীতা-সাবিত্রী-র মতো , যে কোন বড় মানুষের ভৃত্য, কর্মচারী, সেবকেরা হনুমানের মতো বিশ্বাসী ও আজ্ঞাবহ হবার চেষ্টা করে ! এইভাবে প্রাচীন ভারতের উন্নত চরিত্রগুলিকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করাতেই ভারতবর্ষের নারী ও পুরুষের মধ্যে একটা ত্যাগ ভাব এসেছে বা ভোগের প্রতি অত্যাধিক আস্পৃহাটা নষ্ট হয়ে গেছে ।”
গুরুমহারাজ ওদেরকে আরো বলেছিলেন —“কিন্তু তোমাদের প্রাশ্চাত্তের বেশিরভাগ দেশেরই কোন প্রাচীন ইতিহাস নাই। তাই ওইসব দেশে বংশপরম্পরায় কোন উন্নত আদর্শের কথা লোকের মুখে মুখে প্রচারিতও হয় না! সুতরাং তোমরা যারা new generation _তারা কি করবে! না__চোখের সামনে কোন ‘স্টার’_তা সে ফিল্মস্টারই হোক বা রকস্টার _সে ই তোমাদের আদর্শ হবে! আর হচ্ছেও তাই! এইভাবেই তোমাদের যুবসমাজ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলছে! কিন্তু এর পরিনতি কি? এই যে তোমাদের রাষ্ট্র তোমাদেরকে উশৃঙ্খলতার অবাধ অনুমতি দিয়েছে, sex ফ্রি করে দিয়েছে _এর ভবিষ্যত কি ভেবে দেখেছ? একজন মানুষের সাথে অন্য একজনের প্রেমের সম্পর্ক, শ্রদ্ধা – স্নেহ – ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠছে না _ফলে প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত নারী বা পুরুষ উভয়েরই জীবন বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে না কি? ভয়ঙ্কর ব্যাধিসমূহ তোমাদের সমাজে এসে বাসা বাঁধছে! এখন তোমরাই বল _এর কি কোন উত্তর তোমাদের কাছে আছে??”
ওরা এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল _একটা অজানা আশঙ্কা যেন ওদের মুখমন্ডল গুলোকে গ্রাস করছিল!!
এরপর গুরুমহারাজ ওদেরকে বলছিলেন _’তোমরা যে বলছিলে _জীবন একটা এবং তা সংক্ষিপ্ত, সুতরাং যৌবনে ভোগ বিলাস করে নাও’! __এই কথাগুলিও ঠিক নয়। কারণ _তোমরা তো বিবর্তন(evolution) ব্যাপারটা জানো _যে কোনো জীব নিম্নতর অবস্থা থেকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে উন্নততর অবস্থা প্রাপ্ত হতে চায়! তাহলে আজ এই যে আমরা মনুষ্যশরীর পেয়েছি _তার মানে তো আমাদের বিভিন্ন নিম্নতর প্রানীশরীরের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে এবং সেই সব শরীরের সমস্ত গুন সুক্ষভাবে আমাদের মধ্যে রয়েছে। এইজন্যেই উপযুক্ত পরিবেশ (ঝগড়া, মারামারি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি) পেলেই আমাদের ভিতর থেকে পশুভাবগুলি বেড়িয়ে আসে!
আবার দ্যাখো _আমাদের চেয়েও উন্নত চেতনার মানুষেরা অর্থাৎ দার্শনিক, আর্টিস্ট, লেখক ইত্যাদিরা তো সমাজে রয়েছে! আবার lord যীশু,lord বুদ্ধ এনারাও জন্মেছিলেন এবং তাঁরা সমাজের মঙ্গলের জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন!! তাহলে আমরাও তো পারি আমাদের চেতনাকে উন্নত করতে, আমরাও পারি ওদের মতো হতে বা অন্তত ওদের মতো হবার চেষ্টা করতে !”
ওরা জিজ্ঞাসা করেছিল _” কি করে চেতনাকে উন্নত করা যায়?”
গুরুমহারাজ উত্তর দিয়েছিলেন _” সাধনার দ্বারা!” ছেলেমেয়েগুলি এই ‘সাধনা’ শব্দটি কোনদিন শোনেই নি! তাই জিজ্ঞাসা করেছিল _”সাধনা টা কি?”
গুরুমহারাজ হেসে উত্তর দিয়েছিলেন _”সাধনা শিখতে গেলে তোমাকে উন্নত চেতনার কোন মানুষের কাছে গিয়ে তাকে শিক্ষক (গুরু) হিসাবে গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে তাঁর দেওয়া শিক্ষার অনুশীলন করতে হবে। এই অনুশীলনটাই ‘সাধনা’! তাহলেই সাধারণ চেতনার মানুষ ধীরে ধীরে উন্নত চেতনার মানুষে পরিণত হয়।”(ক্রমশঃ)
ভারতীয় নারীরা কি করে একটা পুরুষকে নিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দেয় – এর উত্তর দিতে গিয়ে উনি বলেছিলেন – ” যে জাতি যত সুপ্রাচীন সেই জাতির তত প্রাচীন পরম্পরা থাকে এবং অনেক উন্নত আদর্শ থাকে সেই সমাজে ! ওইসব উন্নত আদর্শগুলিই পরবর্তী কালের সমাজের নারী-পুরুষের অনুসরণীয় হয় ! ভারতবর্ষের প্রাচীন গ্রন্থাবলীর মধ্যে একটি মহাকাব্যের নাম ‘রামায়ণ’ । সেখানে মুখ্যচরিত্র ‘রাম’-এর চরিত্র বর্ণনা করা আছে যিনি আদর্শ প্রজাবৎসল রাজা ছিলেন এবং যিনি এতই প্রজাবৎসল ছিলেন যে প্রজাদের মনোরঞ্জন করার জন্য নিজের স্ত্রীকেও বিসর্জন করতে কুন্ঠা করেন নি ! ওই গ্রন্থে আরও একটি চরিত্র রামচন্দ্রের ভাই ‘লক্ষণ’ – যিনি তাঁর বড় ভ্রাতার সুখে সুখী , তাঁর দুঃখে দুখী ! নিজের সুখ শান্তির কোনরকম পরোয়া না করে – যিনি শুধু তার বড় ভাইয়ের চির-অনুগত থেকে তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছে ! ওই গ্রন্থের মুখ্য নারীচরিত্র বা নায়িকা ‘সীতা’ যিনি রামের স্ত্রী – তিনি সারাজীবন ধরে পতিব্রতা হয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন । স্বামী রামচন্দ্র তাকে যখন যেভাবে রেখেছেন – সীতা সেইভাবেই থেকেছেন – স্বামীর কোনো কাজের কখনোই কোন প্রতিবাদ করেননি ৷ রামায়ণে এক বীর চরিত্র রয়েছে ‘হনুমান’ , যিনি তাঁর প্রভুর মুখের কথা বেরোনো মাত্র সেই কাজ তা যতই দুরূহ হোক তিনি তা সম্পন্ন করতেন । কথায় বলা হয় তিনি প্রভু রামচন্দ্রের আদেশে গন্ধমাদন পর্বত (অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে যা অসম্ভব) মাথায় করে নিয়ে এসেছিলেন ! এইরকম আর একটি মহাকাব্য রয়েছে যার নাম ‘মহাভারত’ , এছাড়া আরো অনেক প্রাচীন গ্রন্থাদি যেগুলি ‘পুরান’ নামে ভারতবর্ষে প্রচলিত – সেইসব গ্রন্থাদিতেও অনেক মহান পুরুষ এবং মহীয়সী নারীদের চরিত্র চিত্রায়িত করা হয়েছে – যেগুলি ভারতীয় সমাজের কোনে কোনে মানুষের মুখে মুখে পুরুষানুক্রমে(গল্পকারে দাদু-ঠাকুমা-দিদিমাদের দ্বারা) প্রচারিত হয়ে আসছে । এরফলে এই বিশাল দেশ ভারতবর্ষের অনেক বৈচিত্রতা থাকলেও তার প্রাচীনত্বের বন্ধন – তাকে একটা মহান ‘ঐক্য’ এনে দিয়েছে (অর্থাৎ ভারতবর্ষের সব প্রান্তের মানুষের কাছেই এনারা আদর্শ) ৷ ভারতবর্ষের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ সমস্ত প্রান্তের যেকোন সমাজের পরিবারের বড় ভাই ‘রাম’-এর মতো , ছোট ভাই ‘লক্ষণ’-এর মতো , বাড়ির বউ মা সীতা-সাবিত্রী-র মতো , যে কোন বড় মানুষের ভৃত্য, কর্মচারী, সেবকেরা হনুমানের মতো বিশ্বাসী ও আজ্ঞাবহ হবার চেষ্টা করে ! এইভাবে প্রাচীন ভারতের উন্নত চরিত্রগুলিকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করাতেই ভারতবর্ষের নারী ও পুরুষের মধ্যে একটা ত্যাগ ভাব এসেছে বা ভোগের প্রতি অত্যাধিক আস্পৃহাটা নষ্ট হয়ে গেছে ।”
গুরুমহারাজ ওদেরকে আরো বলেছিলেন —“কিন্তু তোমাদের প্রাশ্চাত্তের বেশিরভাগ দেশেরই কোন প্রাচীন ইতিহাস নাই। তাই ওইসব দেশে বংশপরম্পরায় কোন উন্নত আদর্শের কথা লোকের মুখে মুখে প্রচারিতও হয় না! সুতরাং তোমরা যারা new generation _তারা কি করবে! না__চোখের সামনে কোন ‘স্টার’_তা সে ফিল্মস্টারই হোক বা রকস্টার _সে ই তোমাদের আদর্শ হবে! আর হচ্ছেও তাই! এইভাবেই তোমাদের যুবসমাজ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলছে! কিন্তু এর পরিনতি কি? এই যে তোমাদের রাষ্ট্র তোমাদেরকে উশৃঙ্খলতার অবাধ অনুমতি দিয়েছে, sex ফ্রি করে দিয়েছে _এর ভবিষ্যত কি ভেবে দেখেছ? একজন মানুষের সাথে অন্য একজনের প্রেমের সম্পর্ক, শ্রদ্ধা – স্নেহ – ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠছে না _ফলে প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত নারী বা পুরুষ উভয়েরই জীবন বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে না কি? ভয়ঙ্কর ব্যাধিসমূহ তোমাদের সমাজে এসে বাসা বাঁধছে! এখন তোমরাই বল _এর কি কোন উত্তর তোমাদের কাছে আছে??”
ওরা এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল _একটা অজানা আশঙ্কা যেন ওদের মুখমন্ডল গুলোকে গ্রাস করছিল!!
এরপর গুরুমহারাজ ওদেরকে বলছিলেন _’তোমরা যে বলছিলে _জীবন একটা এবং তা সংক্ষিপ্ত, সুতরাং যৌবনে ভোগ বিলাস করে নাও’! __এই কথাগুলিও ঠিক নয়। কারণ _তোমরা তো বিবর্তন(evolution) ব্যাপারটা জানো _যে কোনো জীব নিম্নতর অবস্থা থেকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে উন্নততর অবস্থা প্রাপ্ত হতে চায়! তাহলে আজ এই যে আমরা মনুষ্যশরীর পেয়েছি _তার মানে তো আমাদের বিভিন্ন নিম্নতর প্রানীশরীরের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে এবং সেই সব শরীরের সমস্ত গুন সুক্ষভাবে আমাদের মধ্যে রয়েছে। এইজন্যেই উপযুক্ত পরিবেশ (ঝগড়া, মারামারি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি) পেলেই আমাদের ভিতর থেকে পশুভাবগুলি বেড়িয়ে আসে!
আবার দ্যাখো _আমাদের চেয়েও উন্নত চেতনার মানুষেরা অর্থাৎ দার্শনিক, আর্টিস্ট, লেখক ইত্যাদিরা তো সমাজে রয়েছে! আবার lord যীশু,lord বুদ্ধ এনারাও জন্মেছিলেন এবং তাঁরা সমাজের মঙ্গলের জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন!! তাহলে আমরাও তো পারি আমাদের চেতনাকে উন্নত করতে, আমরাও পারি ওদের মতো হতে বা অন্তত ওদের মতো হবার চেষ্টা করতে !”
ওরা জিজ্ঞাসা করেছিল _” কি করে চেতনাকে উন্নত করা যায়?”
গুরুমহারাজ উত্তর দিয়েছিলেন _” সাধনার দ্বারা!” ছেলেমেয়েগুলি এই ‘সাধনা’ শব্দটি কোনদিন শোনেই নি! তাই জিজ্ঞাসা করেছিল _”সাধনা টা কি?”
গুরুমহারাজ হেসে উত্তর দিয়েছিলেন _”সাধনা শিখতে গেলে তোমাকে উন্নত চেতনার কোন মানুষের কাছে গিয়ে তাকে শিক্ষক (গুরু) হিসাবে গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে তাঁর দেওয়া শিক্ষার অনুশীলন করতে হবে। এই অনুশীলনটাই ‘সাধনা’! তাহলেই সাধারণ চেতনার মানুষ ধীরে ধীরে উন্নত চেতনার মানুষে পরিণত হয়।”(ক্রমশঃ)