[বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনের একজন অন্যতম পুরোনো ভক্ত পঙ্কজ বাবু বা পঙ্কজ মহারাজ অথবা স্বামী পরমাত্মানন্দ(উনি বানপ্রস্থ সন্ন্যাস নিয়েছিলেন) গত 2রা আগষ্ট স্থুলশরীর ছেড়ে পরমানন্দধামে গমন করেছেন। বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে তাঁর ভান্ডারা! এইজন্য পঙ্কজ বাবুর স্মৃতিচারণকল্পে পরপর দুদিন “ন’কাকা প্রসঙ্গে” প্রকাশিত হবে।।]
গত কয়েকদিন আগে (২-রা আগষ্ট) বনগ্রাম আশ্রমের প্রথম দিকের একজন ভক্ত পঙ্কজ বাবু (পঙ্কজ মণ্ডল) পরমানন্দলোকে চলে গেলেন । আগামী শনিবার (17/08/2019)তারিখে বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে ওনার ভান্ডারার আয়োজন করা হয়েছে ! পঙ্কজ বাবু ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন ! ওনার স্ত্রী মন্দিরা মন্ডলও হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন ! ওনার দুই কন্যাও রয়েছে – তারাও উচ্চশিক্ষিতা এবং সম্ভবতঃ ওনাদের মধ্যে একজন শিক্ষকতা করেন ৷ আমরা প্রথম থেকেই দেখেছি পঙ্কজ বাবু গুরুমহারাজকে স্বয়ং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হিসাবেই দেখতেন এবং সবার কাছে সেভাবেই বর্ণনা করতেন। গুরু মহারাজের পর উনি ন’কাকাকে এবং মধ্যমগ্রামের পুতুল মাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন ! বনগ্রাম আশ্রমের প্রথম দিকে পঙ্কজ বাবুকে আমরা প্রায় প্রতি সপ্তাহে শনিবার আশ্রমে আসতে দেখতাম ! উনি এলে আশ্রমের ব্রহ্মচারী , সন্ন্যাসীদের মধ্যে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে যেতো ! কারণ কি – না , উনি সঙ্গে করে পোস্ত আনতেন ! তখন আশ্রমে সারাবছর ধরে বরাদ্দ ছিল __দুপুরের খাবারে কুমড়োর তরকারি আর রাত্রে সোয়াবিন ! ফলে আশ্রমিকদের কাছে তখন সপ্তাহে একদিন বা পনেরো দিনে একদিন পোস্তর তরকারি খেতে পাওয়াটা সত্যি সত্যিই খুবই আনন্দের ব্যাপার ছিল !
যাইহোক, এই পঙ্কজ বাবু (পরবর্তীকালে বানপ্রস্থী সন্ন্যাস নেবার পর ওনার নাম হয় স্বামী পরমাত্মানন্দ) ন’কাকাকে “বনগ্রামের বুড়োশিব” বা “তারাপীঠের ভৈরব” – হিসাবেই সকলের কাছে উপস্থাপনা করতেন ! কোন কোন সময় ন’কাকাকে উনি “ঋষি বশিষ্ঠ” – বলেও বর্ণনা করতেন ! ন’কাকার সাথে ওনার খুবই মধুর সম্পর্কের ব্যাপারটা আমি খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছিলাম ৷ স্থূল শরীরের বিচারে ন’কাকা এবং পঙ্কজ বাবুর মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুব একটা ছিল না । কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতের বিচিত্র বিধান ! সেখানে স্থূল শরীরের বয়সের বিচারে তো Senior-junior হয় না – হয় আধ্যাত্মিকতার বিচারে! চেতনার জগতে কোন মানুষ কতটা উপরে অবস্থান করছেন – সেই বিচারে ! চেতনার জগতে যে মানুষ যত উপরে থাকেন , তাঁর কাছে জগতের রহস্য , জীবনের রহস্যের সমস্ত জট খুলে যায় । তখন তাঁকে আমরা অর্থাৎ সাধারণ মানুষেরা যোগী , জ্ঞানী , ঋষি , মহাপুরুষ ইত্যাদি নানান আখ্যায় আখ্যায়িত করি ! এই ভাবেই পঙ্কজ বাবু ন’কাকাকে কখনো “ঋষি বশিষ্ঠ” বা কখনো “মহাভৈরব” অথবা “বনগ্রামের বুড়ো শিব” বলে বর্ণনা করতেন !
ন’কাকা যে এই বিশেষণগুলি খুব একটা পছন্দ করতেন – তা হয়তো নয় , কিন্তু যেহেতু উনি পঙ্কজ বাবুকে খুবই স্নেহ করতেন, তাই কিছু মনে করতেন না । আসলে পঙ্কজ বাবু সহজ-সরল-সাদাসিধে মানুষ ছিলেন ৷ ওনার পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি তেমন খুব একটা নজর ছিল না । আশ্রমে আসা যে কোন মানুষের সাথে সহজভাবে মিশতেন , আশ্রমিকদের (ব্রহ্মচারী , সন্ন্যাসীদের) কিছু প্রয়োজন থাকলে – সেগুলিও মেটাতেন (অবশ্য তখন আশ্রমিকদের প্রয়োজন ছিল খুবই minimum – হয়তো কারো একজোড়া চটি , তাও টায়ার-কাটা চটি ! কারো হয়তো একটা গামছা – এই ধরণের সামগ্রী !) ।
যাইহোক , যে কথা বলছিলাম – ন’কাকা হয়তো পঙ্কজ বাবুর এই গুণগুলির জন্যই এতটা ভালোবাসতেন ! পঙ্কজ বাবু পরবর্তীকালে (Retairement-এর পর) গুরু মহারাজের নির্দেশে করিমপুর আশ্রমের দায়িত্ব নিয়ে চলে যান এবং সেখানে উনি প্রনতি মা-কে সঙ্গে নিয়ে গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ওখানকার আশ্রমের অনেকটাই Development ঘটিয়েছিলেন ! কিন্তু যে কোন কারণে উনি ওখান থেকে চলেও এসেছিলেন।
গুরু মহারাজ এবং ন’কাকার কাছ থেকে অনেক কথা শোনার পর আমরা এইটুকু বুঝেছি যে , এই জগৎসংসারে প্রতিটি ব্যক্তির একটা নির্দিষ্ট ‘Roll’ বা ‘ভূমিকা’ আছে মাত্র ! তার দ্বারা যেখানে যতটুকু কাজ হবার কথা – ঠিক সেইটুকুই হবে ! তার একচুল বেশিও নয় – কমও নয় ! যখন যার দ্বারা সেই নির্দিষ্ট কর্মটি সম্পন্ন হতে থাকে – তখন সেই ব্যক্তির মধ্যে একটা অহং বা অভিমান ভাব আসতেই পারে ! সে ভাবতে পারে যে , “এইসব কাজ আমিই করছি” ! কিন্তু সাধারণ মানুষ জানে না যে , ঐ নির্দিষ্ট কাজ গুলি শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির দ্বারা করিয়ে নেওয়া হচ্ছে মাত্র – করাচ্ছেন সেই ঈশ্বর! এখানে ঐ ব্যক্তির শুধুমাত্র ভূমিকাটুকু পালন করে যাবার কথা ! যিনি এইটা বুঝে কাজ করেন , তার কর্ম-অভিমান জন্মে না _ ফলে কর্মবন্ধনও হয় না এবং কর্মফল ভোগ করতে হয় না !
পঙ্কজ বাবু যখন চাকুরী করতেন অথবা পরবর্ত্তীতে যখন করিমপুর আশ্রমের দায়িত্বে ছিলেন – তখনও উনি Regular বনগ্রাম আশ্রমে আসতেন । আর ওখানে গেলে গুরু মহারাজের সাথে দেখা করে তাঁকে প্রনাম করা এবং কিছু কাজের কথা সেরে পঙ্কজ বাবু চরৈবেতি কার্যালয়ে যেতেন। কারণ চরৈবেতির সম্পাদক স্বামী স্বরূপানন্দ মহারাজের সাথে ওনার বন্ধুর মত খুবই সুসম্পর্ক ছিল ! এইসব সারা হলেই পঙ্কজ বাবু ছুটতেন ন’কাকার বাড়ি ! ন’কাকা , ন’কাকিমাকে উনি আন্তরিকভাবে দেব-দেবীর ন্যায় শ্রদ্ধা-ভক্তি করতেন _এটা আমি দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি! ন’কাকার সাথে দেখা হলে পঙ্কজ বাবু-ই বেশি কথা বলতেন – আর ন’কাকা মাঝে মাঝেই হাততালি দিয়ে হেসে উঠে পঙ্কজ বাবুকে উৎসাহিত করতেন!
পরবর্তীতে পঙ্কজ বাবু যখন শিলিগুড়িতে চলে গিয়ে ওখানে বিধাননগরে আশ্রম তৈরি করলেন, তখন একবার আশ্রমেরই কাছাকাছি কোন ভক্তের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী (অথবা অন্নপূর্ণা !) পূজা উপলক্ষে উপস্থিত থাকার জন্য পঙ্কজ বাবু ন’কাকাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানান ! সেই উপলক্ষে বনগ্রাম থেকে ন’কাকা , হরি মহারাজ এবং আমার ফ্যামিলি অর্থাৎ আমি , রুনু এবং বালক হর্ষ (হর্ষ তখন ক্লাস টেন-এ পড়ে) শিলিগুড়ি গিয়েছিলাম । ওখানে পঙ্কজ বাবু আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে দু-চারটে ঘরবাড়িও করেছিলেন এবং তখন আমরা দেখেছিলাম ওখানে বেশ বড়োসড়ো একটা মন্দির নির্মাণ হচ্ছিলো, যার ভিত অবধি গাঁথাও হয়ে গিয়েছিল! স্থানীয় কিছু ভক্তরা পঙ্কজ বাবুকে যথেষ্ট সম্মান কোরতো । এসব দেখে ন’কাকা খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন! উনি আমাকে চুপি চুপি বলেছিলেন – ” যাক্ ! পঙ্কজ এতদিনে একটু গুছিয়ে বসতে পেরেছে৷”
পঙ্কজ বাবু ন’কাকাকে ওখানকার বিভিন্ন ভক্তের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সকলের কাছে “মহাভৈরব” হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন ! এতে ন’কাকা একটু অস্বস্তিতে পড়েছিলেন বটে – কিন্তু ভক্তের অত্যাচার তো মহাপুরুষদের সহ্য করতেই হয় _ন’কাকা ও করছিলেন ! ওখান থেকে পঙ্কজ বাবু-ই ন’কাকা ও হরি মহারাজদের টিকিটের টাকা দিয়ে দার্জিলিং যাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ! অবশ্য পরে ন’কাকাকে নিয়ে আমরা ওখান থেকে নিজেরাই সিকিমের কিছুটা অংশও ঘুরে এসেছিলাম! (ক্রমশঃ)
গত কয়েকদিন আগে (২-রা আগষ্ট) বনগ্রাম আশ্রমের প্রথম দিকের একজন ভক্ত পঙ্কজ বাবু (পঙ্কজ মণ্ডল) পরমানন্দলোকে চলে গেলেন । আগামী শনিবার (17/08/2019)তারিখে বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে ওনার ভান্ডারার আয়োজন করা হয়েছে ! পঙ্কজ বাবু ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন ! ওনার স্ত্রী মন্দিরা মন্ডলও হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন ! ওনার দুই কন্যাও রয়েছে – তারাও উচ্চশিক্ষিতা এবং সম্ভবতঃ ওনাদের মধ্যে একজন শিক্ষকতা করেন ৷ আমরা প্রথম থেকেই দেখেছি পঙ্কজ বাবু গুরুমহারাজকে স্বয়ং ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হিসাবেই দেখতেন এবং সবার কাছে সেভাবেই বর্ণনা করতেন। গুরু মহারাজের পর উনি ন’কাকাকে এবং মধ্যমগ্রামের পুতুল মাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন ! বনগ্রাম আশ্রমের প্রথম দিকে পঙ্কজ বাবুকে আমরা প্রায় প্রতি সপ্তাহে শনিবার আশ্রমে আসতে দেখতাম ! উনি এলে আশ্রমের ব্রহ্মচারী , সন্ন্যাসীদের মধ্যে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে যেতো ! কারণ কি – না , উনি সঙ্গে করে পোস্ত আনতেন ! তখন আশ্রমে সারাবছর ধরে বরাদ্দ ছিল __দুপুরের খাবারে কুমড়োর তরকারি আর রাত্রে সোয়াবিন ! ফলে আশ্রমিকদের কাছে তখন সপ্তাহে একদিন বা পনেরো দিনে একদিন পোস্তর তরকারি খেতে পাওয়াটা সত্যি সত্যিই খুবই আনন্দের ব্যাপার ছিল !
যাইহোক, এই পঙ্কজ বাবু (পরবর্তীকালে বানপ্রস্থী সন্ন্যাস নেবার পর ওনার নাম হয় স্বামী পরমাত্মানন্দ) ন’কাকাকে “বনগ্রামের বুড়োশিব” বা “তারাপীঠের ভৈরব” – হিসাবেই সকলের কাছে উপস্থাপনা করতেন ! কোন কোন সময় ন’কাকাকে উনি “ঋষি বশিষ্ঠ” – বলেও বর্ণনা করতেন ! ন’কাকার সাথে ওনার খুবই মধুর সম্পর্কের ব্যাপারটা আমি খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছিলাম ৷ স্থূল শরীরের বিচারে ন’কাকা এবং পঙ্কজ বাবুর মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুব একটা ছিল না । কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতের বিচিত্র বিধান ! সেখানে স্থূল শরীরের বয়সের বিচারে তো Senior-junior হয় না – হয় আধ্যাত্মিকতার বিচারে! চেতনার জগতে কোন মানুষ কতটা উপরে অবস্থান করছেন – সেই বিচারে ! চেতনার জগতে যে মানুষ যত উপরে থাকেন , তাঁর কাছে জগতের রহস্য , জীবনের রহস্যের সমস্ত জট খুলে যায় । তখন তাঁকে আমরা অর্থাৎ সাধারণ মানুষেরা যোগী , জ্ঞানী , ঋষি , মহাপুরুষ ইত্যাদি নানান আখ্যায় আখ্যায়িত করি ! এই ভাবেই পঙ্কজ বাবু ন’কাকাকে কখনো “ঋষি বশিষ্ঠ” বা কখনো “মহাভৈরব” অথবা “বনগ্রামের বুড়ো শিব” বলে বর্ণনা করতেন !
ন’কাকা যে এই বিশেষণগুলি খুব একটা পছন্দ করতেন – তা হয়তো নয় , কিন্তু যেহেতু উনি পঙ্কজ বাবুকে খুবই স্নেহ করতেন, তাই কিছু মনে করতেন না । আসলে পঙ্কজ বাবু সহজ-সরল-সাদাসিধে মানুষ ছিলেন ৷ ওনার পোশাক-পরিচ্ছদের প্রতি তেমন খুব একটা নজর ছিল না । আশ্রমে আসা যে কোন মানুষের সাথে সহজভাবে মিশতেন , আশ্রমিকদের (ব্রহ্মচারী , সন্ন্যাসীদের) কিছু প্রয়োজন থাকলে – সেগুলিও মেটাতেন (অবশ্য তখন আশ্রমিকদের প্রয়োজন ছিল খুবই minimum – হয়তো কারো একজোড়া চটি , তাও টায়ার-কাটা চটি ! কারো হয়তো একটা গামছা – এই ধরণের সামগ্রী !) ।
যাইহোক , যে কথা বলছিলাম – ন’কাকা হয়তো পঙ্কজ বাবুর এই গুণগুলির জন্যই এতটা ভালোবাসতেন ! পঙ্কজ বাবু পরবর্তীকালে (Retairement-এর পর) গুরু মহারাজের নির্দেশে করিমপুর আশ্রমের দায়িত্ব নিয়ে চলে যান এবং সেখানে উনি প্রনতি মা-কে সঙ্গে নিয়ে গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ওখানকার আশ্রমের অনেকটাই Development ঘটিয়েছিলেন ! কিন্তু যে কোন কারণে উনি ওখান থেকে চলেও এসেছিলেন।
গুরু মহারাজ এবং ন’কাকার কাছ থেকে অনেক কথা শোনার পর আমরা এইটুকু বুঝেছি যে , এই জগৎসংসারে প্রতিটি ব্যক্তির একটা নির্দিষ্ট ‘Roll’ বা ‘ভূমিকা’ আছে মাত্র ! তার দ্বারা যেখানে যতটুকু কাজ হবার কথা – ঠিক সেইটুকুই হবে ! তার একচুল বেশিও নয় – কমও নয় ! যখন যার দ্বারা সেই নির্দিষ্ট কর্মটি সম্পন্ন হতে থাকে – তখন সেই ব্যক্তির মধ্যে একটা অহং বা অভিমান ভাব আসতেই পারে ! সে ভাবতে পারে যে , “এইসব কাজ আমিই করছি” ! কিন্তু সাধারণ মানুষ জানে না যে , ঐ নির্দিষ্ট কাজ গুলি শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির দ্বারা করিয়ে নেওয়া হচ্ছে মাত্র – করাচ্ছেন সেই ঈশ্বর! এখানে ঐ ব্যক্তির শুধুমাত্র ভূমিকাটুকু পালন করে যাবার কথা ! যিনি এইটা বুঝে কাজ করেন , তার কর্ম-অভিমান জন্মে না _ ফলে কর্মবন্ধনও হয় না এবং কর্মফল ভোগ করতে হয় না !
পঙ্কজ বাবু যখন চাকুরী করতেন অথবা পরবর্ত্তীতে যখন করিমপুর আশ্রমের দায়িত্বে ছিলেন – তখনও উনি Regular বনগ্রাম আশ্রমে আসতেন । আর ওখানে গেলে গুরু মহারাজের সাথে দেখা করে তাঁকে প্রনাম করা এবং কিছু কাজের কথা সেরে পঙ্কজ বাবু চরৈবেতি কার্যালয়ে যেতেন। কারণ চরৈবেতির সম্পাদক স্বামী স্বরূপানন্দ মহারাজের সাথে ওনার বন্ধুর মত খুবই সুসম্পর্ক ছিল ! এইসব সারা হলেই পঙ্কজ বাবু ছুটতেন ন’কাকার বাড়ি ! ন’কাকা , ন’কাকিমাকে উনি আন্তরিকভাবে দেব-দেবীর ন্যায় শ্রদ্ধা-ভক্তি করতেন _এটা আমি দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি! ন’কাকার সাথে দেখা হলে পঙ্কজ বাবু-ই বেশি কথা বলতেন – আর ন’কাকা মাঝে মাঝেই হাততালি দিয়ে হেসে উঠে পঙ্কজ বাবুকে উৎসাহিত করতেন!
পরবর্তীতে পঙ্কজ বাবু যখন শিলিগুড়িতে চলে গিয়ে ওখানে বিধাননগরে আশ্রম তৈরি করলেন, তখন একবার আশ্রমেরই কাছাকাছি কোন ভক্তের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী (অথবা অন্নপূর্ণা !) পূজা উপলক্ষে উপস্থিত থাকার জন্য পঙ্কজ বাবু ন’কাকাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানান ! সেই উপলক্ষে বনগ্রাম থেকে ন’কাকা , হরি মহারাজ এবং আমার ফ্যামিলি অর্থাৎ আমি , রুনু এবং বালক হর্ষ (হর্ষ তখন ক্লাস টেন-এ পড়ে) শিলিগুড়ি গিয়েছিলাম । ওখানে পঙ্কজ বাবু আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে দু-চারটে ঘরবাড়িও করেছিলেন এবং তখন আমরা দেখেছিলাম ওখানে বেশ বড়োসড়ো একটা মন্দির নির্মাণ হচ্ছিলো, যার ভিত অবধি গাঁথাও হয়ে গিয়েছিল! স্থানীয় কিছু ভক্তরা পঙ্কজ বাবুকে যথেষ্ট সম্মান কোরতো । এসব দেখে ন’কাকা খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন! উনি আমাকে চুপি চুপি বলেছিলেন – ” যাক্ ! পঙ্কজ এতদিনে একটু গুছিয়ে বসতে পেরেছে৷”
পঙ্কজ বাবু ন’কাকাকে ওখানকার বিভিন্ন ভক্তের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সকলের কাছে “মহাভৈরব” হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন ! এতে ন’কাকা একটু অস্বস্তিতে পড়েছিলেন বটে – কিন্তু ভক্তের অত্যাচার তো মহাপুরুষদের সহ্য করতেই হয় _ন’কাকা ও করছিলেন ! ওখান থেকে পঙ্কজ বাবু-ই ন’কাকা ও হরি মহারাজদের টিকিটের টাকা দিয়ে দার্জিলিং যাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ! অবশ্য পরে ন’কাকাকে নিয়ে আমরা ওখান থেকে নিজেরাই সিকিমের কিছুটা অংশও ঘুরে এসেছিলাম! (ক্রমশঃ)