[ন’কাকার সঙ্গে প্রেতযোনীদের মুক্তিলাভের একটা সম্পর্ক ছিল _সেই ব্যাপারে কথা হচ্ছিল। আমরা বিভিন্ন ঘটনা উপস্থাপনা করে পাঠকদেরকে এটাই বোঝাতে চেয়েছি! আরো দু-একটা এইরকম ঘটনা আজ বলার চেষ্টা করা যাক।]
……. এরপরে আসছি জাবুইডাঙার লক্ষ্মী-মায়ের কথায় ! আশ্রমের পুরোনো ভক্তরা জাবুই-এর লক্ষ্মী-মাকে চেনেন না এমন বোধহয় খুব কমজনই আছেন ! গুরু মহারাজ স্থূল শরীরে থাকতে প্রায় প্রতিদিন বিকালের দিকে (প্রায় কিছু না কিছু খাবার তৈরি করে নিয়ে যেতেন) লক্ষীদি(আমরা এখনো লক্ষীমা-কে লক্ষীদি-ই বলি!) পৌঁছে যেতো বনগ্রাম মিশনে ! গুরু মহারাজের স্থূল শরীর ছাড়ার পরেও লক্ষ্মী-মার বনগ্রামে যাওয়া-আসায় ভাটা পড়েনি ! উনি গুরু মহারাজের ঘরে প্রণাম করে এবং মহারাজদের সাথে দেখা করে এসেই উঠতেন ন’কাকার বাড়িতে ৷ হাতে করে যা হোক কিছু না কিছু আনতেন ন’কাকার জন্য ৷ চরম শ্রদ্ধা করতেন ন’কাকাকে ! সেই হেন লক্ষ্মী-মার বাড়িতেও সূক্ষ্ম শরীরধারী Spirit-এর আনাগোনা ছিল ! বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা তেমন না বুঝতে পারলেও লক্ষ্মী মা ওই Spirit-টির existence প্রায়শই টের পেত (সাধারণতঃ, আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা খুব সহজেই স্পিরিটদের existence টের পায়)!
লক্ষ্মী-মা মাঝেমাঝেই ন’কাকাকে এই প্রসঙ্গ তুলতো, ন’কাকা বলতেন – “তোমার কোন চিন্তা নাই মা ! ও তোমার কাছে মাঝে মাঝে আসে ওর নিজের মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন করতে!” লক্ষ্মী-মা সেকথা শুনে ন’কাকাকে চেপে ধরেন – ” তাহলে ওর মুক্তির ব্যবস্থা আপনিই করে দিন !” ন’কাকা লক্ষী মা-কে বলেন – ” ওই শরীরটি কোন স্থানীয় মানুষের নয় , ও বহিরাগত ! ওর নামে ‘গয়ায় পিন্ড’ দিলেই ওর মুক্তি ঘটবে ৷ এখানে কোনো ক্রিয়া করলে ওর কোনো কাজ হবে না।” এরপর ন’কাকা লক্ষী মা-কে বলেন – ওদের পরিবারের কেউ বা অন্য কোনো আত্মীয়-বন্ধুরা কেউ গয়া-য় গেলে , যেন ন’কাকার সাথে লক্ষী মা যোগাযোগ করে , তখন ন’কাকা তাকে ওই Spirit-টির নাম-ধাম-গোত্র সব বলে দেবেন ! পাঠকবর্গ অবাক হলেও একথা সত্যি যে , সত্যি সত্যিই যখন লক্ষ্মী মার পরিবারের কেউ একজন গয়া-য় তার নিজের বাবা-মার জন্য পিণ্ড দিতে গিয়েছিল, সেইসময় ন’কাকা ঐ spirit-টির নাম ও গোত্র একটা কাগজে লিখে দিয়েছিলেন!
নিম্নচেতনায় থাকা প্রেতযোনী নিয়ে অনেক আলোচনা হোল ,না হয় পরে আবার কোন সময় বাকিটা হবে! এবার এখন উচ্চচেতনার ব্যক্তিদের সাথে ন’কাকার অনায়াস যোগাযোগের কথাও কিছু হোক্ । যদিও অবশ্য আগে মাঝে মাঝেই এই ধরনের আলোচনা হয়েছে , তবু কিছু তো বাকি থেকেই যায় ! বনগ্রামে গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ আসার আগে প্রতিদিন ভোরে এবং সন্ধ্যায় একটা নির্দিষ্ট সময়ে হঠাৎ সৃষ্টি হ‌ওয়া সোঁ-সোঁ করে একটা জোরে হাওয়া বয়ে যেতো ! এই ব্যাপারটা সেই সময়ের বনগ্রামের লোকজনেরা সবাই জানতো । গুরুমহারাজ বনগ্রামে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে ওই বিশেষ ঘটনাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ! তাহলে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে – ওই ব্যাপারটা কি ছিল ? কে দেবে এর উত্তর – অবশ্যই ন’কাকা !
একদিন বনগ্রামের নগেন এবং আমি সুযোগ বুঝে ন’কাকাকে ধরলাম – “ন’কাকা ! নিত্যনৈমিত্তিক ঘটে যাওয়া ঐ ঘটনাটি কি ছিল?” ন’কাকা হাসিমুখে উত্তর দিয়েছিলেন – ” ওরা ছিল তিনজন মহাসাধক ব্যক্তি ! যাঁরা প্রতিদিন ভোরের দিকে গঙ্গায় স্নান করে বিভিন্ন পূণ্যস্থানে তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কর্ম (অন্যান্য উচ্চ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ,স্থানমাহাত্ম্য তৈরি , বিভিন্ন সাধকদের রক্ষা করা ইত্যাদি) সম্পন্ন করতেন এবং সন্ধ্যার সময় আবার তাঁদের নিজের জায়গায় ফিরে যেতেন !”
এইসব কথা এখন যখন আপনাদের কাছে বলছি, তখন মনে হচ্ছে – ‘ওঁরা কোথায় থাকতেন’ , ‘ওনাদের নাম কি ছিল’ , ‘ওনারা কত শত বছর বা কত হাজার বছর ধরে এই ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন’ – এইসব জিজ্ঞাসা করলেও হয়তো আমরা ন’কাকার কাছ থেকে উত্তর পেয়ে যেতাম ! কিন্তু জিজ্ঞাসা করা হয়নি – তাই উত্তরও পাইনি ! এখন আর এই জিজ্ঞাসার উত্তর পাওয়াও যাবে না !(ক্রমশঃ)