গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ যেদিন বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে সকালের সিটিং-এ জার্মানী বিষয়ক নানা আলোচনা করছিলেন , সেইদিনের কথা এখানে বলা হচ্ছিল ! জার্মানীর কথা বলতে গিয়ে ওই দেশের রাষ্ট্রনেতা , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সবচাইতে শক্তিশালী সমরনায়ক হিটলারের কথা স্বাভাবিকভাবেই এসে গিয়েছিল , এসেছিল হিটলারের সাথে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সাক্ষাতের ঘটনাও ! ওখানে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে সুভাষকে Contractual Marriage করতে হয়েছিল – শুধুমাত্র যতদিন না হিটলারের সাথে ওনার দেখা হয় – ততদিন নিরুপদ্রবে ওই দেশে থাকার জন্য ! গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ঐ contractual marriage -এর জন্য সুভাষের তো নয়-ই , ওই মেয়েটি (এমিলি শেঙ্কেল) -র জীবনেও এই ঘটনার কোন প্রভাব-ই পড়েনি ! নেতাজি ওনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অবিচল থেকে ওনার কার্যোদ্ধার করে ফিরে এসেছিলেন , আর ওই মেয়েটিও ওর নিজের জীবনে ফিরে গিয়েছিল এবং পরবর্ত্তীতে বিয়ে-থাও করে নিয়েছিল ! সেই দাম্পত্য জীবনের ফল-ই ওর মেয়েটি_ ‘অনিতা পাফ’, যাকে নেতাজি কন্যা হিসাবে ভারতবর্ষের একদল ক্ষমতালোভী মানুষ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে _এমনকি আজও চাইছে !!
যাইহোক , আমরা এবার পাকাপাকিভাবে ফিরে আসছি শুধুমাত্র হিটলারের কথায়….।
গুরু মহারাজ একবার প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে – “হিটলার ছিলেন পরম `বৈষ্ণব’!” যিনি পারিবারিক জীবনে সহজ-সরল মানুষ ছিলেন, নিরামিষ খাদ্য পছন্দ করতেন, নিজের হাতে নাকি একটা ‘মাছি’ মারতেও দুবার ভাবতেন_ইত্যাদি ইত্যাদি! গুরুমহারাজের মুখে এই কথা শুনে ওই সিটিংয়ে উপস্থিত অনেকেই একেবারে গুরুমহারাজের প্রতি ‘রে – রে’ করে উঠেছিল__ “এটা কি বলছেন গুরুমহারাজ ? যে লোকটা লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাকে আপনি এমনটা বলতে পারলেন ?” – ইত্যাদি অনেক শত প্রশ্নবান!
তখন গুরুমহারাজ পরপর যুক্তি স্থাপনা করে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে বিজয়ী দেশগুলির মানুষ _হিটলার লোকটিকে বা তার চরিত্রকে যেভাবে সকলের কাছে উপস্থাপনা করেছে – ব্যবহারিক জীবনে লোকটি ততটা নিষ্ঠুর বা অমানবিক ছিলেন না । উনি নিয়মিত ধ্যান-জপ , সাধন-ভজন করতেন । উনি শত কাজের মাঝেও নির্দিষ্ট তিথি-নক্ষত্রে পাহাড়ের ওপরে ওনার সাধন কুঠিতে গিয়ে একটা সাধক গ্রুপের সাথে বিশ্বশান্তি কামনায় একযোগে যাগ-যজ্ঞ বা তন্ত্র-ক্রিয়া করতেন ! ভারতীয় প্রাচীন শাস্ত্রাদিতে যে ‘স্বস্তিকা’ চিহ্ন বা মঙ্গলসূচক চিহ্ন [ ] রয়েছে , যেটি ভারতীয়রা আজও যে কোন শুভকাজে , মঙ্গলচিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করে আসছে – হিটলার ওই চিহ্ন টিকেই ওনার সাধন ক্ষেত্রে এবং নাজীদলের symbol -এ স্থান দিয়েছিলেন । কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক ওই স্বস্তিকা চিহ্নটি ওরা সামান্য হেলিয়ে অর্থাৎ একটু কোনাকুনি করে এবং কালো রঙ দিয়ে ব্যবহার করতো l অবশ্য অনেকের মতে ওরা ইচ্ছে করেই এই ধরনের উল্টো আচার এবং সাধনক্রিয়া করতো – যাতে Positive Energy -র বদলে Negative শক্তি লাভ করা যায় অর্থাৎ দেবশক্তি নয় অসুরশক্তিতে বলীয়ান হওয়া যায় !
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তে হিটলারের অন্তর্ধানের পর (যেহেতু তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি) তার ঘর Search করে কিছু চিঠিপত্র পাওয়া গিয়েছিল , কিছু চিঠিপত্র, Photograph-ও পাওয়া গিয়েছিল – যাতে দেখা যায় উনি ওনার Family Member দের সাথে অত্যন্ত স্নেহপূর্ণ-ভালোবাসায় ভরা সম্পর্ক ছিল ! তার মানে তিনি তার নিকটজনদের প্রতি খুবই Caring ছিলেন ৷ ঘরে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ছিল খুবই সাধারণ – অর্থাৎ বিলাসবর্জিত জীবন ছিল তাঁর !
কিন্তু যেহেতু হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন এবং জার্মানী সম্পূর্ণভাবে পর্যদুস্ত হয়েছিল – তাই ওই জাতির হাতে “বারবার মার খাওয়া”– ইউরোপের দেশগুলি ওদের বিরুদ্ধে এমন এমন নীতি গ্রহণ করেছিল , যাতে করে ওই দেশটি আর বহুদিন পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে ৷ আর তাছাড়াও মানুষের মন থেকে ইউরোপীয় দের ত্রাস হিটলারের নাম মুছে দেবার জন্য আমেরিকাসহ ইউরোপের বিজয়ী দেশগুলি (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ীরা) – হিটলারের ভাবমূর্তি নানাভাবে বিকৃত করার , Maline করার চেষ্টা করেছে ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নানান সাহিত্যে , চিত্রে , সিনেমায় , হিটলারের আদলে চরিত্র সৃষ্টি করে – তাতে নানা রকম অবগুণ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এটা করা হয়েছে সম্পূর্ণ ইচ্ছা করেই !
হিটলার ইহুদিদের বিরোধী এবং তাদের হত্যাকারী বলেও দায়ী করা হয়েছে , কিন্তু আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যদেশগুলি অর্থাৎ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী যে কোনো দেশই বা এই ব্যাপারে কম কি ! খ্রিস্টান দেশগুলি ইহুদিদের খুবই ঘৃনা করে ! ইউরোপের বিভিন্ন সাহিত্যে-নাটক-নভেলে যত ‘ভিলেন’– Character রয়েছে সেগুলিকে ইচ্ছা করে কোন না কোন ইহুদিকে রাখা হয়েছে । এমনকি শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন নাটকে অত্যাচারী , অনাচারী , কুসীদজীবীর চরিত্রগুলি কোন না কোন ইহুদির । সুতরাং ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা বা অত্যাচারের জন্য একা হিটলারকে দায়ী করা ঠিক নয় ৷ এটা খ্রিস্টান এবং ইসলামীয় উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই করে থাকে ৷ ইহুদিদের প্রতি এই মনোভাব প্রদর্শন যেন ওদের অস্থিতে-মজ্জায় প্রবেশ করে গেছে !
আমি আগেই বলেছিলাম , গুরুমহারাজ হিটলারের স্বপক্ষে আরো অনেক কথা বলেছিলেন , অনেক যুক্তি দেখিয়েছিলেন , সেগুলো সব আমার মনে নাই
তবু যেটুকু মনে পড়ছে _সেগুলো বলার চেষ্টা করলাম। আমার বেশ মনে আছে উনি বলেছিলেন _”হিটলারকে ইহুদী নিধনকারী হিসাবে যতই চিহ্নিত করা হোক না কেন _প্রকৃতপক্ষে ওনার সাহায্যেই বহু ইহুদীরা ওদেশ ছেড়ে চলে যেতে পেরেছিল! আর এই যে একসাথে কয়েকলক্ষ ইহুদী ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল _তার জন্যেই পরবর্তীতে ওরা একটা নিজস্ব দেশ লাভ করতে পেরেছিল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আপাত খারাপের মধ্যেও একটা বিশাল ‘ভালো’ কিছু লুকিয়ে ছিল!!”(ক্রমশঃ)