শ্রী শ্রী গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দের বলা কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল ৷ বেশ কিছুদিন ধরে আমরা গুরুমহারাজ যখন ইউরোপে ছিলেন, সেই সময়ের কথা আলোচনা করেছিলাম । সেখানে আমরা বলেছিলাম যে ইউরোপে তখন টিভিতে বিবিসি-র অনেক চ্যানেল দেখানো হোত , যেগুলি গুরুমহারাজ ওখানে থাকাকালীন নিয়মিত দেখতেন ৷
গুরুমহারাজ ইউরোপের সংবাদ-মাধ্যম বা Audio-visual মাধ্যমগুলিরও প্রশংসা করতেন, বলতেন_তুলনায় ভারতবর্ষের সংবাদমাধ্যম সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে না – এখানে Yellow journalism !
তবে, এখানে নানান প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে _এখানকার সংবাদমাধ্যমগুলির উপর নানা রকম Censor কাজ করে, তাই অনেক তথ্যই এডিটরকে চেপে-চুপে প্রকাশ করতে হয় । আর International সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারেও এখানকার সংবাদমাধ্যমগুলির যেন একটা অনীহা কাজ করে ৷দেশীয় বা স্থানীয় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য খবর পরিবেশন কোরেই এখানকার সংবাদমাধ্যম যেন তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করে !
অপরদিকে ইউরোপের উন্নত দেশগুলির সংবাদ-মাধ্যমগুলির অনেক বেশি স্বাধীনতা রয়েছে, ফলে তারা যে কোন ঘটনাকে বিস্তারিত দেখাতে পারে । ভারতবর্ষে যেমন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে একেবারেই প্রকাশ করা যায় না, চেপে-চুপে, ঢেকে-ঢুকে সামান্য কিছুটা প্রকাশ করতে হয় – এর কারণ হিসাবে বলা হয় যে ওই একটা ছোট্ট ঘটনার কথা সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হয়তো সারাদেশেই তার প্রভাব পড়বে এবং একটা ছোট্ট ঘটনা – একটা বিরাট কাণ্ডে রূপ নিতে পারে ! ইউরোপের উন্নত দেশগুলিতে এইসব সমস্যা নেই ! ওরা যে কোন ঘটনা বিস্তারিত দেখাতে পারে । গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “পূর্ব ইউরোপে যখন কমিউনিস্ট দুনিয়ার পরপর পতন ঘটছিল, তখন রোমানিয়াতেও তার প্রভাব পড়েছিল। আর এই সমস্ত ঘটনা ওখানকার টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলি ‘কভার’ করছিল। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট চাওসেস্কুর গণ-আদালতে মৃত্যুদন্ড দান এবং তার মৃত্যুদানের পুরো ঘটনাটা ওখানকার টেলিভিশনে বিবিসির সংবাদ চ্যানেল বেশ কয়েকদিন ধরে বারবার করে Live Telecast-টা দেখিয়েছিল ! কিভাবে চাওসেস্কুকে টেনে হিঁচড়ে সেনাবাহিনী তার প্রাসাদ থেকে বের করে নিয়ে আসছে, কিভাবে হাজার হাজার জনতার মাঝে একটা উঁচু স্থানে (বা উঁচু মঞ্চ তৈরী করে) সেনাবাহিনী গণ-আদালত বসিয়েছিল – এসব বিস্তারিতভাবে ওই চ্যানেল দেখিয়েছিল ।”
গুরুমহারাজ এরপর বলেছিলেন – “তারপর ওই উঁচু জায়গায় চাওসেস্কুকে তুলে একজন সেনা কম্যান্ডার গণ-আদালতে উপস্থিত হাজার হাজার জনগণের উদ্দেশ্যে হ্যান্ডমাইক নিয়ে চাওসেস্কু দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হয়েও জনগণকে বঞ্চিত করে কিভাবে নিজের ও তার পরিবারের সকলের উন্নতি করে নিয়েছে, নিজের বিলাসব্যসন বজায় রাখতে গিয়ে দেশকে কিভাবে সর্বনাশের পথে নিয়ে গিয়েছে – সেই সব বর্ণনা করল । তারপর সে জনগণের কাছে জানতে চাইল _ “বন্ধুগণ ! আপনারা এই লোকটি কি কি অপরাধ করেছে সব শুনলেন, এবার আপনারাই বলুন এই জঘন্য লোকটির শাস্তি কি ?” গণ-আদালতের জনগণ সমস্বরে বলে উঠলো – ” মৃ–ত্যু !” ব্যস ! গণ-আদালতের রায়দান হয়ে গেল । এবার ওই উঁচু মঞ্চেরই মাঝখানে দুটো শক্ত আংটার সঙ্গে চাওসেস্কুর দুটো হাত উঁচু করে বেঁধে দেওয়া হল – পা-দুটোও বেঁধে আটকে দেওয়া হলো ৷ এইবার মঞ্চে উপস্থিত সেনাবাহিনীর লোকেরা সরে এলো, শুধু একজন এক কর্ণার থেকে মেশিনগানের অসংখ্য গুলি চাওসেস্কুর উপর বর্ষণ করতে লাগল এবং হাজার হাজার মানুষের সামনে ওদের দেশের প্রেসিডেন্টের এইভাবে মৃত্যুর মতো একটা করুন পরিণতি ঘটেছিল !”
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” তবে জানিস ! ওই ঘটনাটা নিজের চোখে দেখে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে, চাওসেস্কু একটা কমিউনিস্ট দেশের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বের একটা অন্যতম তাবড় নেতা – ওকে যখন মঞ্চে তোলা হলো, তখনও বেশ হেঁটেই মঞ্চে উঠলো, কিন্তু যেইমাত্র গণ-আদালতের রায়ে ওর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হয়ে গেল – অমনি লোকটা থর থর করে কাঁপতে লাগলো,. মঞ্চের মাঝামাঝি স্থানে, যেখানে ওকে মারার জন্য বাঁধা হয়েছিল – সেইটুকু দূরত্বও ও আর নিজের পায়ে হেঁটে যেতে পারছিল না, পায়ে খুঁট্ দিতেই পারছিল না (ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিল না), সৈন্যরা ঘাড় ধরে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গেল চাওসেস্কুকে !”
এরপর গুরুমহারাজ বললেন – ” ওই দৃশ্য দেখে আমার মনে পড়ছিল – ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীদের কথা ! ফাঁসির মঞ্চে যারা বীরদর্পে উঠতো এবং ফাঁসির দড়িটি ফাঁসুড়ের হাত থেকে টেনে নিয়ে নিজেই নিজের গলায় পড়ে – গীতার শ্লোক বলতো_’বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়….’, সুউচ্চ কন্ঠে ধ্বনি তুলতো “বন্দে মাতরম”! তারাই ছিল প্রকৃত বীর, প্রকৃতপক্ষে মহান ব্যক্তি _এইসব নেতারা নয়!”
আসলে কি ব্যাপার হয় বলুন তো – যত বড় কমিউনিস্ট লিডার-ক্যাপিটালিস্ট লিডারই-হোক না কেন, এদের জীবন-যাপনে শৃঙ্খলা নাই – ব্রহ্মচর্য নাই – সাধনা নাই, তাই রাজনৈতিক দৃঢ়তা থাকলেও চারিত্রিক দৃঢ়তা তৈরি হয় না ! যখন মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর কার্যকাল উপস্থিত হয় – তখন বাহ্যিক ওই দৃঢ়তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন – “টিয়াপাখিকে ছোট থেকে ‘রাধা-কৃষ্ণ’ বুলি শেখালে তাই বলে, কিন্তু যেই বেড়ালে ধরতে আসে অমনি “ট্যাঁ – ট্যাঁ” করে !” অর্থাৎ শেখানো বুলি ভুলে গিয়ে তার আসল স্বভাবে ফিরে আসে । এক্ষেত্রেও তাই হয় ! রাজনৈতিক ভাবে উন্নত নেতা, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত মানুষ, আধুনিক শিক্ষায় অনেক ডিগ্রিধারী শিক্ষিত মানুষ – সবাই স্থুলভাবে উন্নত কিন্তু অন্তর্জগতে চরম অনুন্নত! পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেই, স্থুল উন্নতির সোপান ভেঙে গিয়ে হূড়মুরিয়ে নিচে পড়ে যায়! এইজন্যেই গুরুমহারাজ বলতেন _”ভারতীয় পরম্পরার ধারায় রয়েছে যে, ‘আমরা সোনার প্লেটে চানাচুর খেতে চাই না, আমরা শালপাতার ঠোঙায় রসগোল্লা খেতে চাই’।”
বাইরের উন্নতি, বাইরের চাকচিক্যে উন্নত হয়ে কি হবে _যদি না মানুষের অভ্যন্তরস্থ শক্তি জাগ্রত হয়! বিবেকের জাগরন এবং আত্মিক উত্তরণ না হোলে মানুষের জীবনে কোন উন্নতিই উন্নতি নয়!!
গুরুমহারাজ আরবের একজন মহাত্মার কথা বলেছিলেন _যিনি সাধনার চরম শিখরে পৌঁছে বোধ করেছিলেন – “আয়ানুল হক্” অর্থাৎ “আমিই সেই”, “আমিই সেই সত্যস্বরূপ”, “I AM THAT”! কিন্তু ইসলাম ধর্মমত অনুযায়ী এই কথা কোন মুসলমান বলতে পারে না। কারণ আল্ কোরানে রয়েছে _’আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় এবং হজরত মুহাম্মদ তাঁর একমাত্র প্রিয় রসুল।’ ফলে সেখানকার শাসক ঐ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যক্তির মুন্ডু কেটে ফেলা হলেও ঐ ব্যক্তির কাটামুন্ডু বলছিল_”আয়ানুল হক্”_” আয়ানুল হক্”!!! (ক্রমশঃ)
গুরুমহারাজ ইউরোপের সংবাদ-মাধ্যম বা Audio-visual মাধ্যমগুলিরও প্রশংসা করতেন, বলতেন_তুলনায় ভারতবর্ষের সংবাদমাধ্যম সঠিক সংবাদ পরিবেশন করে না – এখানে Yellow journalism !
তবে, এখানে নানান প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে _এখানকার সংবাদমাধ্যমগুলির উপর নানা রকম Censor কাজ করে, তাই অনেক তথ্যই এডিটরকে চেপে-চুপে প্রকাশ করতে হয় । আর International সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারেও এখানকার সংবাদমাধ্যমগুলির যেন একটা অনীহা কাজ করে ৷দেশীয় বা স্থানীয় তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য খবর পরিবেশন কোরেই এখানকার সংবাদমাধ্যম যেন তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করে !
অপরদিকে ইউরোপের উন্নত দেশগুলির সংবাদ-মাধ্যমগুলির অনেক বেশি স্বাধীনতা রয়েছে, ফলে তারা যে কোন ঘটনাকে বিস্তারিত দেখাতে পারে । ভারতবর্ষে যেমন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে একেবারেই প্রকাশ করা যায় না, চেপে-চুপে, ঢেকে-ঢুকে সামান্য কিছুটা প্রকাশ করতে হয় – এর কারণ হিসাবে বলা হয় যে ওই একটা ছোট্ট ঘটনার কথা সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হয়তো সারাদেশেই তার প্রভাব পড়বে এবং একটা ছোট্ট ঘটনা – একটা বিরাট কাণ্ডে রূপ নিতে পারে ! ইউরোপের উন্নত দেশগুলিতে এইসব সমস্যা নেই ! ওরা যে কোন ঘটনা বিস্তারিত দেখাতে পারে । গুরুমহারাজ বলেছিলেন – “পূর্ব ইউরোপে যখন কমিউনিস্ট দুনিয়ার পরপর পতন ঘটছিল, তখন রোমানিয়াতেও তার প্রভাব পড়েছিল। আর এই সমস্ত ঘটনা ওখানকার টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলগুলি ‘কভার’ করছিল। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট চাওসেস্কুর গণ-আদালতে মৃত্যুদন্ড দান এবং তার মৃত্যুদানের পুরো ঘটনাটা ওখানকার টেলিভিশনে বিবিসির সংবাদ চ্যানেল বেশ কয়েকদিন ধরে বারবার করে Live Telecast-টা দেখিয়েছিল ! কিভাবে চাওসেস্কুকে টেনে হিঁচড়ে সেনাবাহিনী তার প্রাসাদ থেকে বের করে নিয়ে আসছে, কিভাবে হাজার হাজার জনতার মাঝে একটা উঁচু স্থানে (বা উঁচু মঞ্চ তৈরী করে) সেনাবাহিনী গণ-আদালত বসিয়েছিল – এসব বিস্তারিতভাবে ওই চ্যানেল দেখিয়েছিল ।”
গুরুমহারাজ এরপর বলেছিলেন – “তারপর ওই উঁচু জায়গায় চাওসেস্কুকে তুলে একজন সেনা কম্যান্ডার গণ-আদালতে উপস্থিত হাজার হাজার জনগণের উদ্দেশ্যে হ্যান্ডমাইক নিয়ে চাওসেস্কু দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হয়েও জনগণকে বঞ্চিত করে কিভাবে নিজের ও তার পরিবারের সকলের উন্নতি করে নিয়েছে, নিজের বিলাসব্যসন বজায় রাখতে গিয়ে দেশকে কিভাবে সর্বনাশের পথে নিয়ে গিয়েছে – সেই সব বর্ণনা করল । তারপর সে জনগণের কাছে জানতে চাইল _ “বন্ধুগণ ! আপনারা এই লোকটি কি কি অপরাধ করেছে সব শুনলেন, এবার আপনারাই বলুন এই জঘন্য লোকটির শাস্তি কি ?” গণ-আদালতের জনগণ সমস্বরে বলে উঠলো – ” মৃ–ত্যু !” ব্যস ! গণ-আদালতের রায়দান হয়ে গেল । এবার ওই উঁচু মঞ্চেরই মাঝখানে দুটো শক্ত আংটার সঙ্গে চাওসেস্কুর দুটো হাত উঁচু করে বেঁধে দেওয়া হল – পা-দুটোও বেঁধে আটকে দেওয়া হলো ৷ এইবার মঞ্চে উপস্থিত সেনাবাহিনীর লোকেরা সরে এলো, শুধু একজন এক কর্ণার থেকে মেশিনগানের অসংখ্য গুলি চাওসেস্কুর উপর বর্ষণ করতে লাগল এবং হাজার হাজার মানুষের সামনে ওদের দেশের প্রেসিডেন্টের এইভাবে মৃত্যুর মতো একটা করুন পরিণতি ঘটেছিল !”
গুরু মহারাজ বলেছিলেন – ” তবে জানিস ! ওই ঘটনাটা নিজের চোখে দেখে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে, চাওসেস্কু একটা কমিউনিস্ট দেশের প্রেসিডেন্ট, বিশ্বের একটা অন্যতম তাবড় নেতা – ওকে যখন মঞ্চে তোলা হলো, তখনও বেশ হেঁটেই মঞ্চে উঠলো, কিন্তু যেইমাত্র গণ-আদালতের রায়ে ওর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হয়ে গেল – অমনি লোকটা থর থর করে কাঁপতে লাগলো,. মঞ্চের মাঝামাঝি স্থানে, যেখানে ওকে মারার জন্য বাঁধা হয়েছিল – সেইটুকু দূরত্বও ও আর নিজের পায়ে হেঁটে যেতে পারছিল না, পায়ে খুঁট্ দিতেই পারছিল না (ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিল না), সৈন্যরা ঘাড় ধরে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গেল চাওসেস্কুকে !”
এরপর গুরুমহারাজ বললেন – ” ওই দৃশ্য দেখে আমার মনে পড়ছিল – ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবীদের কথা ! ফাঁসির মঞ্চে যারা বীরদর্পে উঠতো এবং ফাঁসির দড়িটি ফাঁসুড়ের হাত থেকে টেনে নিয়ে নিজেই নিজের গলায় পড়ে – গীতার শ্লোক বলতো_’বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়….’, সুউচ্চ কন্ঠে ধ্বনি তুলতো “বন্দে মাতরম”! তারাই ছিল প্রকৃত বীর, প্রকৃতপক্ষে মহান ব্যক্তি _এইসব নেতারা নয়!”
আসলে কি ব্যাপার হয় বলুন তো – যত বড় কমিউনিস্ট লিডার-ক্যাপিটালিস্ট লিডারই-হোক না কেন, এদের জীবন-যাপনে শৃঙ্খলা নাই – ব্রহ্মচর্য নাই – সাধনা নাই, তাই রাজনৈতিক দৃঢ়তা থাকলেও চারিত্রিক দৃঢ়তা তৈরি হয় না ! যখন মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর কার্যকাল উপস্থিত হয় – তখন বাহ্যিক ওই দৃঢ়তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ! ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন – “টিয়াপাখিকে ছোট থেকে ‘রাধা-কৃষ্ণ’ বুলি শেখালে তাই বলে, কিন্তু যেই বেড়ালে ধরতে আসে অমনি “ট্যাঁ – ট্যাঁ” করে !” অর্থাৎ শেখানো বুলি ভুলে গিয়ে তার আসল স্বভাবে ফিরে আসে । এক্ষেত্রেও তাই হয় ! রাজনৈতিক ভাবে উন্নত নেতা, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত মানুষ, আধুনিক শিক্ষায় অনেক ডিগ্রিধারী শিক্ষিত মানুষ – সবাই স্থুলভাবে উন্নত কিন্তু অন্তর্জগতে চরম অনুন্নত! পরিস্থিতি প্রতিকূল হলেই, স্থুল উন্নতির সোপান ভেঙে গিয়ে হূড়মুরিয়ে নিচে পড়ে যায়! এইজন্যেই গুরুমহারাজ বলতেন _”ভারতীয় পরম্পরার ধারায় রয়েছে যে, ‘আমরা সোনার প্লেটে চানাচুর খেতে চাই না, আমরা শালপাতার ঠোঙায় রসগোল্লা খেতে চাই’।”
বাইরের উন্নতি, বাইরের চাকচিক্যে উন্নত হয়ে কি হবে _যদি না মানুষের অভ্যন্তরস্থ শক্তি জাগ্রত হয়! বিবেকের জাগরন এবং আত্মিক উত্তরণ না হোলে মানুষের জীবনে কোন উন্নতিই উন্নতি নয়!!
গুরুমহারাজ আরবের একজন মহাত্মার কথা বলেছিলেন _যিনি সাধনার চরম শিখরে পৌঁছে বোধ করেছিলেন – “আয়ানুল হক্” অর্থাৎ “আমিই সেই”, “আমিই সেই সত্যস্বরূপ”, “I AM THAT”! কিন্তু ইসলাম ধর্মমত অনুযায়ী এই কথা কোন মুসলমান বলতে পারে না। কারণ আল্ কোরানে রয়েছে _’আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় এবং হজরত মুহাম্মদ তাঁর একমাত্র প্রিয় রসুল।’ ফলে সেখানকার শাসক ঐ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যক্তির মুন্ডু কেটে ফেলা হলেও ঐ ব্যক্তির কাটামুন্ডু বলছিল_”আয়ানুল হক্”_” আয়ানুল হক্”!!! (ক্রমশঃ)