গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন বা অন্যত্র__ মানব সমাজের বিবর্তন নিয়ে যেসব আলোচনা করেছিলেন, সেইগুলিকে এক জায়গায় করে – আপনাদের কাছে পরিবেশন করার চেষ্টা করা হচ্ছিল । সেই কাজ করতে গিয়ে আমরা মূল আলোচনা থেকে সরে এখন এসে গেছি এমন এক জায়গায়–যেখানে কোন দম্পতি এবং ওই পরিবারের সদস্যরা সন্তান হবার পর সেই সন্তানটিকে স্নেহ করে, যত্ন করে, শিশুটির লালন-পালনে যত্নবান হয়, কিন্তু গুরু মহারাজ এটি-কে বলেছিলেন – ‘আদিখ্যেতা’, অজ্ঞানতা-প্রসূত ক্রিয়াকর্ম, এটি কখনোই প্রকৃত ভালোবাসা নয় ! শুধু এই কথাই নয় – গুরুমহারাজ আরও বলেছিলেন – আজকের সমাজে দেখা যাচ্ছে ছেলে-মেয়েরা একটু বড় হলেই বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে – বৃদ্ধাবস্থায় তাদের পাশে থাকছে না, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবান থাকছে না, কারণ এরা “জারজ সন্তান” ! গুরুমহারাজ কেন এই কথাগুলি বলেছিলেন – আজ থেকে এই সব কথাগুলো নিয়ে ই আলোচনা চলবে – পরে নাহয় আবার মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাওয়া যাবে ।
গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন – প্রাচীন ভারতবর্ষে যে চতুরাশ্রম প্রথা ছিল, সেটাই ছিল একেবারে সঠিকভাবে বিজ্ঞানসম্মত(কিন্তু হয়তো সমাজের সর্বস্তরে এই প্রথা গুলি চালু করা যায় নি , তাছাড়া বারবার বিদেশি আক্রমণের শিকার হওয়ায় ভারতবর্ষ থেকে এই সুপ্রথা গুলি কোনসময় থেকে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল)।! সপ্তম বর্ষীয় বালককে (বালিকাদের) বিদ্যাশিক্ষার জন্য গুরুগৃহে পাঠানো হতো ! এই সাত বছর বয়স পর্যন্ত ঐ সন্তান (বালক বা বালিকা) স্বগৃহে থাকতো পিতা-মাতাসহ পরিবারের অন্যান্য বয়োজ্যোষ্ঠ সদস্যদের স্নেহচ্ছায়া এবং অনুশাসনের অধীনে ৷ প্রাথমিক পাঠসমূহ, পারিবারিক রুচিবোধ, সভ্যতা-ভদ্রতা-গুরুজনদের প্রতি সম্মানবোধ, চালচলনে শিষ্টাচার, প্রাথমিক সংযমসমূহ – ইত্যাদি অনেক কিছুই গৃহে থাকতে থাকতেই শিখিয়ে দেয়া হতো ঐ কনিষ্ঠ সদস্য (সদস্যা)-টিকে ! এরপর গুরুগৃহে যাত্রা ! সেখানে সাত বছর বয়স থেকে একুশ বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যাশিক্ষা ! এই সময়টিকে বলা হচ্ছে ব্রহ্মচর্য আশ্রম ! গুরুগৃহে বলতে – তখনকার দিনে তাঁরাই ‘শিক্ষক’ হিসাবে নির্বাচিত হতেন যাঁদের প্রকৃতিতে রয়েছে শিক্ষকতা ৷
কথাটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক – এখনকার দিনে শিক্ষকতা সহ সমস্ত পেশায় প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের নিযুক্ত করা হয় – কলেজ, ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার ডিগ্রী দেখে এবং ওই নির্দিষ্ট পেশার জন্য স্পেশালভাবে গৃহীত কোন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ! সবার শেষে নির্দিষ্ট পেশায় নিয়োগের আগে একদল বিশেষজ্ঞের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণের জন্য একটা মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়,যাতে করে পরীক্ষার্থীর চালচলন বা তার মনোভাবের একটা পরিচয়ের চেষ্টা করা হয়_ বর্তমানে যেটি একেবারেই নগণ্য হয়ে গেছে ! কিন্তু গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ওই শেষেরটির উপরেই জোর দেওয়া অধিক জরুরী ! শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারটাই ধরা যাক – যেখানে S.S.C পরীক্ষায় পাস করার পর মাত্র দশ মিনিট, কুড়ি মিনিট বা আধঘন্টার মৌখিক interview নেওয়া হয় – কিন্তু এইটা সঠিক পদ্ধতি নয় ! পড়াশোনা করাকালীন অবস্থা থেকে যেসব শিক্ষার্থীর মধ্যে Teaching Profession কে ভালোবাসা বোধ রয়েছে, অপরকে শেখানোর ability বা Teaching Capacity রয়েছে – তাদেরকেই নিয়োগ করতে হবে শিক্ষকরূপে ! তাতে তাদের নম্বরের সামান্য তারতম্য থাকলেও!কারণ তাদের অন্তঃপ্রকৃতিতে প্রকৃত শিক্ষক হবার বীজ রয়েছে – ক্ষেত্র পেলেই ঐ বীজ অঙ্কুরিত হয়ে, ডালপালা বিস্তার করবে এবং একদিন মহীরুহ হয়ে উঠবে !
সমস্ত পেশার ক্ষেত্রেই ঠিক এমনিভাবেই নির্বাচন করতে হবে, তবে তো সঠিক পেশার জন্য সঠিক লোক নিযুক্ত হবে । তবে তো সেই সব ধরনের পেশার শাখাগুলি উপযুক্ত শিক্ষক পেয়ে আরো আরো বেশী সমৃদ্ধ হবে ৷ তবে তো সমাজের তরুণ প্রজন্মরা বেশি বেশি প্রকৃত শিক্ষিত হবে, তবে তো মানব সমাজের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে !
কিন্তু বর্তমানে কি হচ্ছে – পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বা অন্য ভাবে প্রভাব খাটিয়ে (টাকা-পয়সা, ক্ষমতা) চাকুরীপ্রার্থীর অন্তঃপ্রকৃতি বিচার না করে অর্থাৎ আদৌ তারা ওই পেশা কে ভালবাসে কিনা বা তারা ওই পেশা-তে স্বচ্ছন্দ কিনা – তা বিচার না করেই তাদেরকে appoint করা হয়, আর ওই যুবক-যুবতীরাও শুধুমাত্র নিশ্চিত ভবিষ্যত ও উপার্জনের আশায় _তার অন্তঃপ্রকৃতির সাথে মিল না হওয়া পেশায় সারা জীবনের জন্য নিযুক্ত হয়ে যায় ! কিন্তু তার ফলে তো নানারকম বিশৃঙ্খলা হবেই ! ওই ব্যক্তিরা সবসময়েই একটা অস্বাচ্ছ্যন্দতা, অসহিষ্ণুতা, Adjustment-এর অভাববোধে ভুগবে । ঐ কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যক্তিরা সবসময়েই কোন না কোন অসুবিধা এবং অশান্তির সৃষ্টি করবে । অপরপক্ষে যার অন্তঃপ্রকৃতিতেই প্রকৃত শিক্ষক হবার tendency রয়েছে , সে যদি শিক্ষক হয় – দেখা যাবে যে, সে প্রথম থেকেই ছাত্র বা ছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে __স্কুলের উন্নয়ন, ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন – ইত্যাদি নিয়েই তার মাথাব্যথা – অন্য কোন ঝুট ঝামেলায় সে কখনো জড়াতেই চাইবে না ! এমন অনেক শিক্ষকের উদাহরণ পাওয়া যায়, যাঁরা স্কুল-কেই তাদের দ্বিতীয় ঘর-বাড়ি বানিয়ে নিয়েছিলেন।
এখানে একটা পেশার কথা উদাহরণ হিসাবে বলা হল , গুরু মহারাজ আরও দু-একটা পেশার-ও উল্লেখ করেছিলেন । যেমন, পুলিশের চাকরি – এখানেও স্বভাব-প্রকৃতি দেখে employer নির্বাচন করা উচিৎ – না হলে এই ডিপার্টমেন্ট সৃষ্টির উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে (যেটা বর্তমানে অনেকাংশেই সত্য) ! এই ডিপার্টমেন্ট সম্বন্ধে উনি আরও অনেক কথা বলেছিলেন সেগুলো এখানে প্রকাশ্যে আলোচনা না করাই ভালো ! আমরা যে ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম সেখানেই ফিরে যাই ।
তাহলে দেখা গেল_ যে কোন কর্মক্ষেত্রে selection বা ‘নির্বাচন’ করতে হবে ব্যক্তির দীর্ঘদিনের মানসিকতা-প্রকৃতি-আচার-আচরণ ইত্যাদি দেখে ! পরীক্ষার মাধ্যমে চাকুরী ব্যবস্থা যখন চালু ছিল না , তখনকার দিনে দেখা যেত (আজ থেকে 30-40 বছর বা তারও বেশি সময় আগে) যে, বিদ্যালয়গুলিতে হয়তো অপেক্ষাকৃত কম ডিগ্রিধারী একজন শিক্ষক, অন্যান্য ডাবল এম-এ (M.A.), ট্রিপল এম-এ শিক্ষকদের থেকেও ছাত্রদরদী ছিলেন, ছাত্রদেরকে আরও ভালো পড়াতেন, বিদ্যাশিক্ষা দানের সাথে সাথে তাদেরকে নৈতিক শিক্ষা দিতেন ! সর্বোপরি ছাত্র ছাত্রীদের কাছে তাঁরা হয়ে উঠতেন আদর্শ ব্যক্তিত্ব , জীবনের ধ্রুবতারা!! এর অবশ্য অন্য কারনও ছিল, কারনটা হচ্ছে__ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁরা অত্যন্ত সংযমী, নিষ্ঠাবান ছিলেন, বেশিরভাগ সময় ছাত্রদের পড়ানো এবং পড়াশোনা নিয়েই কাটিয়ে দিতেন, – “প্রকৃত শিক্ষক” হয়ে ওঠার আদর্শ-কে নিজের জীবনে আচরণ করতেন__ বলেই তো তাঁরা ছিলেন যথার্থ “আচার্য্য !”
বৈদিক যুগে ,পঞ্চাশোর্ধ্ব যে সব বানপ্রস্থীরা গুরুগৃহে যেতো_তাদের মধ্যে থেকে যে কোন বিভাগের জন্য শিক্ষকদেরকে এইভাবে অর্থাৎ তাদের গুণমান ভালো ভাবে বিচার করে, তবেই নির্বাচন করা হতো ।।… [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বলেছিলেন – প্রাচীন ভারতবর্ষে যে চতুরাশ্রম প্রথা ছিল, সেটাই ছিল একেবারে সঠিকভাবে বিজ্ঞানসম্মত(কিন্তু হয়তো সমাজের সর্বস্তরে এই প্রথা গুলি চালু করা যায় নি , তাছাড়া বারবার বিদেশি আক্রমণের শিকার হওয়ায় ভারতবর্ষ থেকে এই সুপ্রথা গুলি কোনসময় থেকে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল)।! সপ্তম বর্ষীয় বালককে (বালিকাদের) বিদ্যাশিক্ষার জন্য গুরুগৃহে পাঠানো হতো ! এই সাত বছর বয়স পর্যন্ত ঐ সন্তান (বালক বা বালিকা) স্বগৃহে থাকতো পিতা-মাতাসহ পরিবারের অন্যান্য বয়োজ্যোষ্ঠ সদস্যদের স্নেহচ্ছায়া এবং অনুশাসনের অধীনে ৷ প্রাথমিক পাঠসমূহ, পারিবারিক রুচিবোধ, সভ্যতা-ভদ্রতা-গুরুজনদের প্রতি সম্মানবোধ, চালচলনে শিষ্টাচার, প্রাথমিক সংযমসমূহ – ইত্যাদি অনেক কিছুই গৃহে থাকতে থাকতেই শিখিয়ে দেয়া হতো ঐ কনিষ্ঠ সদস্য (সদস্যা)-টিকে ! এরপর গুরুগৃহে যাত্রা ! সেখানে সাত বছর বয়স থেকে একুশ বছর বয়স পর্যন্ত বিদ্যাশিক্ষা ! এই সময়টিকে বলা হচ্ছে ব্রহ্মচর্য আশ্রম ! গুরুগৃহে বলতে – তখনকার দিনে তাঁরাই ‘শিক্ষক’ হিসাবে নির্বাচিত হতেন যাঁদের প্রকৃতিতে রয়েছে শিক্ষকতা ৷
কথাটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক – এখনকার দিনে শিক্ষকতা সহ সমস্ত পেশায় প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষদের নিযুক্ত করা হয় – কলেজ, ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার ডিগ্রী দেখে এবং ওই নির্দিষ্ট পেশার জন্য স্পেশালভাবে গৃহীত কোন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ! সবার শেষে নির্দিষ্ট পেশায় নিয়োগের আগে একদল বিশেষজ্ঞের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণের জন্য একটা মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়,যাতে করে পরীক্ষার্থীর চালচলন বা তার মনোভাবের একটা পরিচয়ের চেষ্টা করা হয়_ বর্তমানে যেটি একেবারেই নগণ্য হয়ে গেছে ! কিন্তু গুরুমহারাজ বলেছিলেন – ওই শেষেরটির উপরেই জোর দেওয়া অধিক জরুরী ! শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারটাই ধরা যাক – যেখানে S.S.C পরীক্ষায় পাস করার পর মাত্র দশ মিনিট, কুড়ি মিনিট বা আধঘন্টার মৌখিক interview নেওয়া হয় – কিন্তু এইটা সঠিক পদ্ধতি নয় ! পড়াশোনা করাকালীন অবস্থা থেকে যেসব শিক্ষার্থীর মধ্যে Teaching Profession কে ভালোবাসা বোধ রয়েছে, অপরকে শেখানোর ability বা Teaching Capacity রয়েছে – তাদেরকেই নিয়োগ করতে হবে শিক্ষকরূপে ! তাতে তাদের নম্বরের সামান্য তারতম্য থাকলেও!কারণ তাদের অন্তঃপ্রকৃতিতে প্রকৃত শিক্ষক হবার বীজ রয়েছে – ক্ষেত্র পেলেই ঐ বীজ অঙ্কুরিত হয়ে, ডালপালা বিস্তার করবে এবং একদিন মহীরুহ হয়ে উঠবে !
সমস্ত পেশার ক্ষেত্রেই ঠিক এমনিভাবেই নির্বাচন করতে হবে, তবে তো সঠিক পেশার জন্য সঠিক লোক নিযুক্ত হবে । তবে তো সেই সব ধরনের পেশার শাখাগুলি উপযুক্ত শিক্ষক পেয়ে আরো আরো বেশী সমৃদ্ধ হবে ৷ তবে তো সমাজের তরুণ প্রজন্মরা বেশি বেশি প্রকৃত শিক্ষিত হবে, তবে তো মানব সমাজের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে !
কিন্তু বর্তমানে কি হচ্ছে – পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বা অন্য ভাবে প্রভাব খাটিয়ে (টাকা-পয়সা, ক্ষমতা) চাকুরীপ্রার্থীর অন্তঃপ্রকৃতি বিচার না করে অর্থাৎ আদৌ তারা ওই পেশা কে ভালবাসে কিনা বা তারা ওই পেশা-তে স্বচ্ছন্দ কিনা – তা বিচার না করেই তাদেরকে appoint করা হয়, আর ওই যুবক-যুবতীরাও শুধুমাত্র নিশ্চিত ভবিষ্যত ও উপার্জনের আশায় _তার অন্তঃপ্রকৃতির সাথে মিল না হওয়া পেশায় সারা জীবনের জন্য নিযুক্ত হয়ে যায় ! কিন্তু তার ফলে তো নানারকম বিশৃঙ্খলা হবেই ! ওই ব্যক্তিরা সবসময়েই একটা অস্বাচ্ছ্যন্দতা, অসহিষ্ণুতা, Adjustment-এর অভাববোধে ভুগবে । ঐ কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যক্তিরা সবসময়েই কোন না কোন অসুবিধা এবং অশান্তির সৃষ্টি করবে । অপরপক্ষে যার অন্তঃপ্রকৃতিতেই প্রকৃত শিক্ষক হবার tendency রয়েছে , সে যদি শিক্ষক হয় – দেখা যাবে যে, সে প্রথম থেকেই ছাত্র বা ছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে __স্কুলের উন্নয়ন, ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন – ইত্যাদি নিয়েই তার মাথাব্যথা – অন্য কোন ঝুট ঝামেলায় সে কখনো জড়াতেই চাইবে না ! এমন অনেক শিক্ষকের উদাহরণ পাওয়া যায়, যাঁরা স্কুল-কেই তাদের দ্বিতীয় ঘর-বাড়ি বানিয়ে নিয়েছিলেন।
এখানে একটা পেশার কথা উদাহরণ হিসাবে বলা হল , গুরু মহারাজ আরও দু-একটা পেশার-ও উল্লেখ করেছিলেন । যেমন, পুলিশের চাকরি – এখানেও স্বভাব-প্রকৃতি দেখে employer নির্বাচন করা উচিৎ – না হলে এই ডিপার্টমেন্ট সৃষ্টির উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে (যেটা বর্তমানে অনেকাংশেই সত্য) ! এই ডিপার্টমেন্ট সম্বন্ধে উনি আরও অনেক কথা বলেছিলেন সেগুলো এখানে প্রকাশ্যে আলোচনা না করাই ভালো ! আমরা যে ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম সেখানেই ফিরে যাই ।
তাহলে দেখা গেল_ যে কোন কর্মক্ষেত্রে selection বা ‘নির্বাচন’ করতে হবে ব্যক্তির দীর্ঘদিনের মানসিকতা-প্রকৃতি-আচার-আচরণ ইত্যাদি দেখে ! পরীক্ষার মাধ্যমে চাকুরী ব্যবস্থা যখন চালু ছিল না , তখনকার দিনে দেখা যেত (আজ থেকে 30-40 বছর বা তারও বেশি সময় আগে) যে, বিদ্যালয়গুলিতে হয়তো অপেক্ষাকৃত কম ডিগ্রিধারী একজন শিক্ষক, অন্যান্য ডাবল এম-এ (M.A.), ট্রিপল এম-এ শিক্ষকদের থেকেও ছাত্রদরদী ছিলেন, ছাত্রদেরকে আরও ভালো পড়াতেন, বিদ্যাশিক্ষা দানের সাথে সাথে তাদেরকে নৈতিক শিক্ষা দিতেন ! সর্বোপরি ছাত্র ছাত্রীদের কাছে তাঁরা হয়ে উঠতেন আদর্শ ব্যক্তিত্ব , জীবনের ধ্রুবতারা!! এর অবশ্য অন্য কারনও ছিল, কারনটা হচ্ছে__ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁরা অত্যন্ত সংযমী, নিষ্ঠাবান ছিলেন, বেশিরভাগ সময় ছাত্রদের পড়ানো এবং পড়াশোনা নিয়েই কাটিয়ে দিতেন, – “প্রকৃত শিক্ষক” হয়ে ওঠার আদর্শ-কে নিজের জীবনে আচরণ করতেন__ বলেই তো তাঁরা ছিলেন যথার্থ “আচার্য্য !”
বৈদিক যুগে ,পঞ্চাশোর্ধ্ব যে সব বানপ্রস্থীরা গুরুগৃহে যেতো_তাদের মধ্যে থেকে যে কোন বিভাগের জন্য শিক্ষকদেরকে এইভাবে অর্থাৎ তাদের গুণমান ভালো ভাবে বিচার করে, তবেই নির্বাচন করা হতো ।।… [ক্রমশঃ]