গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ ১৯৯৭-৯৮ সালেই পৃথিবীর আসন্ন বিপদ সম্বন্ধে সচেতন করেছিলেন ৷ বিভিন্ন আলোচনায় উনি এই আসন্ন বিপদের আগাম বার্তাই শুধু দিতেন তাই নয়, “কেন এই বিপদ”, “বিভিন্ন দেশের দেশনেতাদের এই মুহূর্ত্তে কি করা উচিত”, “সাধারণ মানুষের কি করা উচিৎ” – এইসব সম্বন্ধেও বিস্তৃত আলোচনা করতেন । উপস্থিত জনেদের উদ্দেশ্য করে উনি বলতেন – ” এখন সবার খুব বেশী করে ধ্যান-জপ-প্রার্থনা করা উচিৎ ৷ প্রার্থনা __শুধু নিজের ভালোর জন্য নয় – বিশ্বের সবার ভালোর জন্য, সবকিছুর কল্যানের জন্য ৷” এই প্রসঙ্গে উনি উল্লেখ করতেন – ভারতীয় মুনি-ঋষিদের প্রবর্তিত বিভিন্ন মন্ত্রের যেখানে বিশ্বের সবার জন্য মঙ্গল-প্রার্থনা করা হয়েছে । বিভিন্ন ‘শান্তি’ মন্ত্র যেখানে বলা হয়েছে – “ভূঃ শান্তি, ভবঃ শান্তি, স্বঃ শান্তি, …” – অর্থাৎ ভূলোক, ভবলোক এবং স্বর্গলোক সহ শুধু ত্রিলোক-ই নয় আরো উর্দ্ধ-উর্দ্ধলোক সমূহের (সপ্তলোক) জন্য শান্তি প্রার্থনা করা হয়েছে ৷ তর্পণ বিধির মন্ত্রগুলি গুরুমহারাজ খুবই উল্লেখ করতেন, বিশেষত যে মন্ত্রে রয়েছে – “আব্রহ্মস্তম্ভপর্যন্তং জগৎ তৃপ্যতাম্”, অথবা যে মন্ত্রে পশু-পাখী, সরীসৃপ, বৃক্ষ-লতা, আপন-পর, পাপী-তাপী সবার মুক্তির জন্য, তৃপ্তির জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে । উনি এই গুলিকেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতবর্ষের সভ্যতার প্রাচীনতার এবং উৎকর্ষতার মাপকাঠি হিসাবে তুলে ধরতেন । উনি বলতেন, এই যে চিন্তার উদারতা –হৃদয়ের সম্প্রসারণশীলতা –জড়-জীব-কীটানু-বীজানু সহ উন্নত প্রাণীসকলের মঙ্গলের জন্য ভাবনা – এটাই ঠিক ঠিক আধ্যাত্মিকতা। যেখানেই সংকীর্ণতা, সাম্প্রদায়িকতা, দলাদলি-বিভেদ-বিদ্বেষ ইত্যাদি রয়েছে – সেখানেই জানতে হবে গোলমাল ! সেখানে চিন্তাভাবনায় ভুল রয়েছে – মানবের চেতনাকে ভুল পথে চালিত করা হচ্ছে । কিন্তু উনি আবার দুঃখ করে এটাও বলতেন – ” দ্যাখো – করার-ই বা কি আছে !পৃথিবী গ্রহের সাধারণ মানুষের মানসিকতা এখনো এতটা নিম্ন-চেতনায় রয়েছে – যে উচ্চতর ভাবসমূহ নেবার উপযুক্ততাই তৈরি হয়নি ! তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে (দেশে) ভিন্ন ভিন্ন চেতনার মানুষ_ ভিন্ন ভিন্ন মত বা পথকে অবলম্বন করে জীবনপথে এগিয়ে চলতে চায় ৷ এই ব্যাপারটা পর্যন্তও ঠিক ছিল – কিন্তু সমস্যা হোল যখন কোনো না কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতা বা ধর্মনেতা জোর-জবরদস্তি_ ‘তার মতটাই শ্রেষ্ঠ এবং এটাকেই সকলকে গ্রহণ করতে হবে’– এই ধরনের ফতোয়া দিল এবং তার followers রা এটাকেই execute করতে লাগল।” উনি বলেছিলেন – ” বর্তমান পৃথিবীতে দেখছি তিনটে এই ধরনের জোরালো মতবাদ ক্রিয়াশীল ৷ প্রথমটা হল – ‘রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ’। বহুকাল আগে থেকেই শক্তিশালী সম্রাটদের মানসিকতা ছিল যে – সে তার শক্তি দিয়ে সমগ্র পৃথিবীকে তার স্বমতে নিয়ে এসে পৃথিবীতে সুখ শান্তি এনে দেবে । আজও আমেরিকার মত দেশ এই কাজই করে যেতে চাইছে । দ্বিতীয়টি হলো – ‘অর্থনৈতিক সাম্যবাদ’। কমিউনিজম-সাম্যবাদ-সমাজবাদ ইত্যাদি নাম দিয়ে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে একদল মানুষ চাইছে সমগ্র পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সাম্য নিয়ে এসে পৃথিবীর উন্নতি করতে ! আর তৃতীয়টি হলো – ‘ধর্মীয় মৌলবাদ’ ! পৃথিবীতে এই মতবাদের সমর্থকরা চাইছে পৃথিবীর সকল মানুষকে একটি মাত্র ধর্মমতের Under-এ নিয়ে এসে পৃথিবীকে শান্তি উপহার দেবে । (পরবর্তী আলোচনা পরের সংখ্যায়) … [ক্রমশঃ]