গুরু মহারাজ স্বামী পরমানন্দ বর্তমান পৃথিবীর সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে যে সমস্ত কথা বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে বা অন্যত্র আলোচনা করেছিলেন – সেই কথাগুলিই এখানে বলা হচ্ছিল ৷ গুরু মহারাজ বলেছিলেন – বর্তমানে তিনটি শক্তিশালী মতবাদ গোটা পৃথিবীতে ক্রিয়াশীল ! তার মধ্যে এক নম্বরে হলো, রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ_ বহুদিন থেকেই এই মতাবলম্বীরা তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে করে তারা গোটা পৃথিবীকে একজনের শাসনাধীনে এনে বিশ্বে সুখ-সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে । কিন্তু বহুকালের বহুচেষ্টা সত্বেও এখনও পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বকে এক ছত্রছায়ায় আনার যে প্রচেষ্টা _তা সফল হয়নি । দুই নম্বরে রয়েছে অর্থনৈতিক সাম্যবাদ, এই মতাবলম্বীরা_ কালমার্কস, লেনিন, মাওসেতুং – ইত্যাদিদের প্রদর্শিত বামপন্থী দর্শনে বিশ্বাসী । এরা চায় গোটা বিশ্বকে ওদের স্বমতে এনে – সবাইকে সুখ-সমৃদ্ধি এনে দিতে এবং বিশ্বকে সমস্যামুক্ত করতে । কিন্তু প্রায় সত্তর বছর ধরে লেনিনের হাত ধরে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও তারা (U.S.S.R) কম্যুনিজম থেকে সরে এলো এবং দেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলো । রাশিয়ার হাত ধরাধরি করে পূর্ব ইউরোপের আরো অনেক দেশই কম্যুনিজম থেকে বেরিয়ে এল ৷ আর দেখা গেল – প্রায় প্রতিটি ভেঙে যাওয়া কমিউনিস্ট দেশগুলির পলিটব্যুরোর সদস্যরা Corrupted এবং দেশের কর্ণধার (প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, চেয়ারম্যান ইত্যাদি)-রা এক একজন বিশাল Capitalist হয়ে বসে আছে ! চীন, উত্তর কোরিয়া বা এই ধরনের কয়েকটি দেশে এখনো কমিউনিজম টিম টিম করছে কিন্তু তারাও কালমার্কস-এর অর্থনীতিকে অনেক আগেই Reject করেছে এবং দ্রুত গণতন্ত্রের দিকেই ফিরে আসছে । ফলে যে উদ্দেশ্যে সমাজবাদ, সাম্যবাদ পথ চলা শুরু করেছিল – বলা যায় যে, সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে ।
আর তৃতীয় মতবাদটিকে বলা যায় – ধর্মীয় মৌলবাদ ! প্রথম দুটির চাইতে এটি আরো ভয়ানক এবং এর ক্রিয়াশীলতা সুদূরপ্রসারি । ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে ভগবান বুদ্ধের দেহত্যাগের (আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে) কয়েকশো বছর পরে তৎকালীন ভারতীয় কয়েকজন রাজন্যবর্গের প্রচেষ্টায় বৌদ্ধধর্মকে ভারতবর্ষের বাইরের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল – কিন্তু অস্ত্র হাতে নয়, এই ধর্মপ্রচার হয়েছিল বুদ্ধের প্রেম-মৈত্রী-করুণার বাণীকে সম্বল করে ! অপরপক্ষে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আরও দেখা যায় যে,_সেমিটিক ধর্মমতগুলি তখন থেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বিস্তার লাভ করেছিল –ওইসব অঞ্চলের রাজন্যবর্গ যখন থেকে এই ধর্মমতগুলির পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছিল ! কিন্তু এই ধর্মপ্রচারগুলি হয়েছিল এক হাতে অস্ত্র এবং একহাতে ধর্মগ্রন্থ নিয়ে! ঐসব রাজন্যবর্গদের মনেও রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের সুপ্তবাসনা চাগাড় দিয়ে উঠেছিল, তারা ভেবেছিল _ “এইতো একটা ভালো মওকা পাওয়া গেছে” ! ধর্মকে সামনে রেখে আসলে ঐ কাজটাই তারা করতে চেয়েছিল।
এসব সত্বেও দলে দলে মানুষ এই ধর্মমতগুলির অধীনে এসেছিলই বা কেন_তার কারণ হিসাবে গুরু মহারাজ বলেছিলেন_ সেমিটিক মতগুলির প্রতিষ্ঠাতাদের (আব্রাহাম, মুসা, ইশা, হযরত মুহাম্মদ প্রমূখ) জীবনে কিছু কিছু অলৌকিক বা অতিলৌকিক ক্ষমতার কথা তৎকালীন সমাজে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় _সাধারন মানুষকে টানার এটা একটা অন্যতম মাধ্যম ! তাছাড়া ওই ধর্মমতগুলিতে হেভেন বা জিন্নাত অর্থাৎ স্বর্গের এমন লোভনীয় বর্ণনা দেওয়া আছে যে ওইসব মরুভূমি অধ্যুষিত এলাকার মানুষ প্রলুব্ধ না হয়ে পারে না ।
প্রায় সব দেশের ধর্মশাশ্ত্রেই “স্বর্গ” নামক একটা কাল্পনিক স্থানের উল্লেখ রয়েছে!যেদেশে যেটা নাই বা যেটার অভাব আছে – স্বর্গে সেই সমস্ত জিনিসেরই প্রাচুর্য – এইভাবেই বর্ণিত রয়েছে ! সেমিটিকরা যেহেতু মরুভূমি অধ্যুষিত অঞ্চলে বাস করে অর্থাৎ সেখানে জলের বড় আকাল–তাই সেমিটিক ধর্মমতগুলির স্বর্গে তিনটি নদী(জলের নদী ছাড়াও মধু-র নদী এবং সুরা-র নদী) রয়েছে_এইরূপ বর্ণনা রয়েছে । যেহেতু ওখানে গাছপালা, পশুপাখি কম__ তাই স্বর্গে সুন্দর সুন্দর ফুল-ফল-পাখি ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে ৷ যেহেতু ঐ সমস্ত অঞ্চলের নারীরা পুরুষালী গঠনের (আজ থেকে ২০০০-২৫০০ বছর আগে, তখন ভ্রাম্যমান সংগ্রামশীল জীবনে ওখানকার নারীদের শরীরের কমনীয়তা ছিল না।) – তাই স্বর্গে সহজলভ্যা চিরযৌবনা সুন্দরী নারীদের বর্ণনা রয়েছে ! ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট, আল কোরআন – এই গ্রন্থগুলির প্রথম দিকটা(ঈশ্বর-শয়তান,আদম-ইভ, পৃথিবী সৃষ্টি ইত্যাদি)প্রায় একই রকম । তাই বোঝা যায় যে, প্রাচীন সুমেরীয়(সেমিটিক) সেই একই ধরণের চিন্তা__ স্থান-কাল-পাত্রভেদে একটু আধটু পরিবর্তন হয়েছে এইমাত্র ! … [ক্রমশঃ]
আর তৃতীয় মতবাদটিকে বলা যায় – ধর্মীয় মৌলবাদ ! প্রথম দুটির চাইতে এটি আরো ভয়ানক এবং এর ক্রিয়াশীলতা সুদূরপ্রসারি । ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে ভগবান বুদ্ধের দেহত্যাগের (আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে) কয়েকশো বছর পরে তৎকালীন ভারতীয় কয়েকজন রাজন্যবর্গের প্রচেষ্টায় বৌদ্ধধর্মকে ভারতবর্ষের বাইরের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল – কিন্তু অস্ত্র হাতে নয়, এই ধর্মপ্রচার হয়েছিল বুদ্ধের প্রেম-মৈত্রী-করুণার বাণীকে সম্বল করে ! অপরপক্ষে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আরও দেখা যায় যে,_সেমিটিক ধর্মমতগুলি তখন থেকেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বিস্তার লাভ করেছিল –ওইসব অঞ্চলের রাজন্যবর্গ যখন থেকে এই ধর্মমতগুলির পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছিল ! কিন্তু এই ধর্মপ্রচারগুলি হয়েছিল এক হাতে অস্ত্র এবং একহাতে ধর্মগ্রন্থ নিয়ে! ঐসব রাজন্যবর্গদের মনেও রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের সুপ্তবাসনা চাগাড় দিয়ে উঠেছিল, তারা ভেবেছিল _ “এইতো একটা ভালো মওকা পাওয়া গেছে” ! ধর্মকে সামনে রেখে আসলে ঐ কাজটাই তারা করতে চেয়েছিল।
এসব সত্বেও দলে দলে মানুষ এই ধর্মমতগুলির অধীনে এসেছিলই বা কেন_তার কারণ হিসাবে গুরু মহারাজ বলেছিলেন_ সেমিটিক মতগুলির প্রতিষ্ঠাতাদের (আব্রাহাম, মুসা, ইশা, হযরত মুহাম্মদ প্রমূখ) জীবনে কিছু কিছু অলৌকিক বা অতিলৌকিক ক্ষমতার কথা তৎকালীন সমাজে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় _সাধারন মানুষকে টানার এটা একটা অন্যতম মাধ্যম ! তাছাড়া ওই ধর্মমতগুলিতে হেভেন বা জিন্নাত অর্থাৎ স্বর্গের এমন লোভনীয় বর্ণনা দেওয়া আছে যে ওইসব মরুভূমি অধ্যুষিত এলাকার মানুষ প্রলুব্ধ না হয়ে পারে না ।
প্রায় সব দেশের ধর্মশাশ্ত্রেই “স্বর্গ” নামক একটা কাল্পনিক স্থানের উল্লেখ রয়েছে!যেদেশে যেটা নাই বা যেটার অভাব আছে – স্বর্গে সেই সমস্ত জিনিসেরই প্রাচুর্য – এইভাবেই বর্ণিত রয়েছে ! সেমিটিকরা যেহেতু মরুভূমি অধ্যুষিত অঞ্চলে বাস করে অর্থাৎ সেখানে জলের বড় আকাল–তাই সেমিটিক ধর্মমতগুলির স্বর্গে তিনটি নদী(জলের নদী ছাড়াও মধু-র নদী এবং সুরা-র নদী) রয়েছে_এইরূপ বর্ণনা রয়েছে । যেহেতু ওখানে গাছপালা, পশুপাখি কম__ তাই স্বর্গে সুন্দর সুন্দর ফুল-ফল-পাখি ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে ৷ যেহেতু ঐ সমস্ত অঞ্চলের নারীরা পুরুষালী গঠনের (আজ থেকে ২০০০-২৫০০ বছর আগে, তখন ভ্রাম্যমান সংগ্রামশীল জীবনে ওখানকার নারীদের শরীরের কমনীয়তা ছিল না।) – তাই স্বর্গে সহজলভ্যা চিরযৌবনা সুন্দরী নারীদের বর্ণনা রয়েছে ! ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট, আল কোরআন – এই গ্রন্থগুলির প্রথম দিকটা(ঈশ্বর-শয়তান,আদম-ইভ, পৃথিবী সৃষ্টি ইত্যাদি)প্রায় একই রকম । তাই বোঝা যায় যে, প্রাচীন সুমেরীয়(সেমিটিক) সেই একই ধরণের চিন্তা__ স্থান-কাল-পাত্রভেদে একটু আধটু পরিবর্তন হয়েছে এইমাত্র ! … [ক্রমশঃ]