গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বনগ্রাম পরমানন্দ মিশনে নানা বিষয় নিয়েই আলোচনা করতেন, ফলে বাউল এবং বাউলতত্ত্ব নিয়েও বহুবার তাঁর শ্রীমুখ থেকে বিভিন্ন আলোচনাও শুনেছিলাম। গুরুমহারাজ খুব ছোটবেলায় ওনার জন্মভূমির কাছাকাছি কালনা শহরের ‘ভবা পাগলা’র সাথে খুবই সঙ্গ করেছিলেন। ‘ভবা পাগলা’-কে গুরুমহারাজ বলেছিলেন “প্লাস ওয়ার্ল্ড”-এর লোক, অর্থাৎ উনি ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই বিশেষ কিছু কাজ নিয়ে শরীর ধারণ করেছিলেন।
গুরুমহারাজের আলোচনা শুনে আমরা যুগল-সাধনা নিয়ে যা বুঝেছিলাম তা হোল – ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময় থেকে পরম্পরাগতভাবে এই সাধনা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে বা অন্ততঃ বাংলাদেশে_ চলে আসছিল। তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন আমরা দেখি_ জয়দেব-পদ্মাবতীও এই সাধনার মধ্যে দিয়েই রাধাকৃষ্ণের লীলা দর্শন করেছিলেন। এই ঘটনা আজ থেকে প্রায় হাজার বছর বা তারও বেশিদিন আগের ঘটনা! চন্ডীদাস এবং রামী রজকিনীর সাধন সময়ও মহাপ্রভুর জন্মের আগের ঘটনা ! তার মানে অন্ততঃ ছ’শো বা সাড়ে ছ’শো বছর আগের ঘটনা। কথিত আছে – কবি চন্ডীদাস যুগল সাধনায় সিদ্ধ হবার পর – ঈশ্বরের ভগবান রূপে অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রূপে অবতরণের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন ! তাই তিনি তাঁর পদে লিখেছিলেন —
“যে করে কানুর আশ –ধরে তার পায়, / সোনার পুতলি যেন ধুলাতে লুটায় ৷৷”
বিদ্যাপতিও__ চন্ডীদাসের সমসাময়িক ছিলেন। তিনিও পরকীয়া সাধনায় সিদ্ধ ছিলেন(বিদ্যাপতি রাজা শিবসিংহের সভাকবি ছিলেন। কথিত আছে যে, রানী স্বয়ং কবির সাথে পরকীয়ায় রত ছিলেন)। আরও পরবর্তীকালে এই সাধনার ধারায় এলেন নিত্যানন্দ প্রভু ! এমনও কথিত রয়েছে যে, মহাপ্রভুর শেষ কয়েক বছর যখন গম্ভীরায় কেটেছিল সেইসময় রায় রামানন্দ, স্বরূপ দামোদর, শিখী মাহিতি-র উপস্থিতিতে মাধবী দাসীর সাথে মধুর ভাবের লীলা সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এটা এতটাই গোপন ছিল যে, এই গম্ভীরা লীলার ঘটনাগুলি বাইরের জগতে প্রায় আসেই নি !
তবে নিত্যানন্দ প্রভু যেহেতু মহাপ্রভুর আদেশে বিবাহ করলেন – তাই তাঁর এই সাধনায় সামাজিকভাবে কোনো বাধা ছিল না। নিত্যানন্দ পুত্র বীরচন্দ্র বা অন্যান্য উত্তরসূরিরা অনেকেই এই যুগল-সাধনায় সিদ্ধ ছিলেন। এইভাবেই আউল-বাউল-দরবেশ-সাঁই ইত্যাদি নাম দিয়ে বিভিন্ন পরম্পরা বাংলা-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই সাধনাই__ ভিন্ন ভিন্ন নামভেদে, ভিন্ন ভিন্ন আচারভেদে ছড়িয়ে পড়ে। আউল-পরম্পরায় কথিত রয়েছে – ‘ মহাপ্রভুর যেদিন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল (ওনাকে মেরে ফেলা বা ওনার অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটেছিল)– সেদিন মহাপ্রভু যে কোন ভাবে বা অলৌকিকভাবে ওখান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর “আউল চাঁদ” নাম নিয়ে বাংলার গ্রামে গ্রামে (বিশেষতঃ নদীয়া,24-পরগনা এবং বর্তমান বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে) বৈষ্ণবের বিভিন্ন সাধন-পদ্ধতির প্রচার করেন।
যাইহোক, ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশের কথা অতটা আমার জানা নাই – কিন্তু বাংলার প্রান্তে প্রান্তে – যুগল-সাধনা, পরকীয়া সাধনা, কিশোরী ভজন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এই সাধনা বহুকাল আগে থেকেই তার নিজস্বতা বজায় রেখেছে__এটা নিশ্চিত! এই সাধনা করতে গিয়ে হয়তো কোথাও বিচ্যুতি ঘটেছে, হয়তো কোথাও সাধক-সাধিকারা ভ্রষ্ট হয়েছে, মূলধারা থেকে সরে এসেছে__ কিন্তু এই সাধনার মূল সুরটি তার নিজস্বতা বজায় রেখে চলেছে __মাঝেমাঝেই সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে আসা খ্যাতনামা-অখ্যাতনামা সিদ্ধ সাধকদের হাত ধরে।।
কদিন আগে পার্বতী দাস বাউলের একটা গানে শুনলাম – ” যার মন ভালো নয় – যার প্রাণ ভালো নয়, সে পিরীতির মর্ম কি জানে।” ওই গানেই আর একটা লাইনে এই কথাগুলি রয়েছে – ” বীরচন্দ্রপুরের মাকরাই ঠাকুর স্বকীয়া এবং পরকীয়া একসাথে নিয়ে আনন্দ করেন।”
গানের দ্বিতীয় অংশের অর্থ তো আপনারা বুঝতেই পারছেন, কিন্তু প্রথম লাইনে যে রয়েছে ‘যার মন ভালো নয়’ এবং ‘প্রাণ ভালো নয়’ – এই কথার থেকে বোঝা যাচ্ছে সাধক বা সাধিকা যদি চেতনায় উন্নত না হোলে, উপযুক্ত না হোলে __ এই সাধনায় সিদ্ধিলাভ হয় না। ‘প্রাণ ভালো নয়’- অর্থে যার প্রাণায়াম সিদ্ধি ঘটেনি।৷
গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – ব্রহ্মা–>ঈশ্বর–>ভগবান -এই ক্রমের ব্যাখ্যা। ব্রহ্মের কোনো রূপ নাই, তিনি অরূপ-অব্যক্ত-অবাঙমানসগোচর _কিন্ত এটাও বলা হয়েছে ‘তিনি রসস্বরূপ’! অস্ফুট ব্রহ্মের প্রথম স্ফুট বা প্রকাশিত যে রূপ তাই ঈশ্বর, আর জগতের বা জগতবাসীর দুঃখ-বেদনা যখন সেই ঈশ্বরতত্ত্বকে স্পর্শ করে – তখন জীবের প্রতি করুণায় বিগলিত হয়ে সেই ঈশ্বরতত্ত্ব-ই শরীর ধারণ কোরে জগতে কোন না কোন ‘নাম’ এবং ‘রূপ’ পরিগ্রহ করে ভগবান রূপে অবতীর্ণ হ’ন। যেমন দক্ষিণেশ্বরে লীলা কারী ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ।
আবার দেখুন দক্ষিণেশ্বরের অনতিদূরে মহাসাধক অন্নদাঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত আদ্যাপীঠের আদ্যামন্দিরে যে মূর্তিটি রয়েছে – তার মাধ্যমে ওই মহাসাধক অধ্যাত্মবিজ্ঞানের মূল তত্ত্বটিই বোঝাতে চেয়েছেন। ওখানে রয়েছে সবার উপরে রাধাকৃষ্ণ, মাঝে শিবসহ মা-কালীর মূর্তি এবং নিচে শ্রীরামকৃষ্ণ৷ এখানে বোঝানো হয়েছে__ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হলেন ভগবান। মর্তের গুরু-ই ভগবান। এর উপরে রয়েছেন শিব-সহ কালী, অর্থাৎ নির্গুণ ব্রহ্ম এবং ব্রহ্মের শক্তি ! এই যে প্রকাশমান জগৎ যে শক্তিতে ক্রিয়াশীল সেই শক্তিই মা কালীরূপে প্রতিষ্ঠিত ! পৃথিবীতে যত উপাসনা পদ্ধতি রয়েছে, পূজা-পাঠ রয়েছে, তা সে যেকোনো ধর্মমতেরই হোক না কেনো – সে সবই ওই শিব এবং কালীর-ই পূজা! স্বামী বিবেকানন্দও প্রায় সমগ্র বিশ্ব ঘুরে এই কথাই বলেছিলেন _’ভিন্ন আকারে শিব এবং শিবানীই পূজা গ্রহণ করছেন’।
আদ্যাপীঠ মন্দিরে সবার উপরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণ মূর্তি ! পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ এবং পরম প্রেমময়ী রাধা! ব্রহ্ম রস স্বরূপ – ‘ রসঃ বৈ সঃ’! ব্রহ্ম _ অপ্রকাশ-অরূপ-অব্যক্ত; তবু যেহেতু তিনি সাক্ষাৎ প্রেমস্বরূপ – তাই অমূর্তকে মূর্তিতে ধরার প্রয়াস ! সাধক–>শাক্ত–>বৈষ্ণব -এই ক্রমে অধ্যাত্মবিজ্ঞানকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে আদ্যামন্দিরে।৷ … [ক্রমশঃ]
গুরুমহারাজের আলোচনা শুনে আমরা যুগল-সাধনা নিয়ে যা বুঝেছিলাম তা হোল – ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময় থেকে পরম্পরাগতভাবে এই সাধনা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে বা অন্ততঃ বাংলাদেশে_ চলে আসছিল। তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন আমরা দেখি_ জয়দেব-পদ্মাবতীও এই সাধনার মধ্যে দিয়েই রাধাকৃষ্ণের লীলা দর্শন করেছিলেন। এই ঘটনা আজ থেকে প্রায় হাজার বছর বা তারও বেশিদিন আগের ঘটনা! চন্ডীদাস এবং রামী রজকিনীর সাধন সময়ও মহাপ্রভুর জন্মের আগের ঘটনা ! তার মানে অন্ততঃ ছ’শো বা সাড়ে ছ’শো বছর আগের ঘটনা। কথিত আছে – কবি চন্ডীদাস যুগল সাধনায় সিদ্ধ হবার পর – ঈশ্বরের ভগবান রূপে অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রূপে অবতরণের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন ! তাই তিনি তাঁর পদে লিখেছিলেন —
“যে করে কানুর আশ –ধরে তার পায়, / সোনার পুতলি যেন ধুলাতে লুটায় ৷৷”
বিদ্যাপতিও__ চন্ডীদাসের সমসাময়িক ছিলেন। তিনিও পরকীয়া সাধনায় সিদ্ধ ছিলেন(বিদ্যাপতি রাজা শিবসিংহের সভাকবি ছিলেন। কথিত আছে যে, রানী স্বয়ং কবির সাথে পরকীয়ায় রত ছিলেন)। আরও পরবর্তীকালে এই সাধনার ধারায় এলেন নিত্যানন্দ প্রভু ! এমনও কথিত রয়েছে যে, মহাপ্রভুর শেষ কয়েক বছর যখন গম্ভীরায় কেটেছিল সেইসময় রায় রামানন্দ, স্বরূপ দামোদর, শিখী মাহিতি-র উপস্থিতিতে মাধবী দাসীর সাথে মধুর ভাবের লীলা সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এটা এতটাই গোপন ছিল যে, এই গম্ভীরা লীলার ঘটনাগুলি বাইরের জগতে প্রায় আসেই নি !
তবে নিত্যানন্দ প্রভু যেহেতু মহাপ্রভুর আদেশে বিবাহ করলেন – তাই তাঁর এই সাধনায় সামাজিকভাবে কোনো বাধা ছিল না। নিত্যানন্দ পুত্র বীরচন্দ্র বা অন্যান্য উত্তরসূরিরা অনেকেই এই যুগল-সাধনায় সিদ্ধ ছিলেন। এইভাবেই আউল-বাউল-দরবেশ-সাঁই ইত্যাদি নাম দিয়ে বিভিন্ন পরম্পরা বাংলা-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই সাধনাই__ ভিন্ন ভিন্ন নামভেদে, ভিন্ন ভিন্ন আচারভেদে ছড়িয়ে পড়ে। আউল-পরম্পরায় কথিত রয়েছে – ‘ মহাপ্রভুর যেদিন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল (ওনাকে মেরে ফেলা বা ওনার অন্তর্ধানের ঘটনা ঘটেছিল)– সেদিন মহাপ্রভু যে কোন ভাবে বা অলৌকিকভাবে ওখান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর “আউল চাঁদ” নাম নিয়ে বাংলার গ্রামে গ্রামে (বিশেষতঃ নদীয়া,24-পরগনা এবং বর্তমান বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে) বৈষ্ণবের বিভিন্ন সাধন-পদ্ধতির প্রচার করেন।
যাইহোক, ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশের কথা অতটা আমার জানা নাই – কিন্তু বাংলার প্রান্তে প্রান্তে – যুগল-সাধনা, পরকীয়া সাধনা, কিশোরী ভজন ইত্যাদি বিভিন্ন নামে এই সাধনা বহুকাল আগে থেকেই তার নিজস্বতা বজায় রেখেছে__এটা নিশ্চিত! এই সাধনা করতে গিয়ে হয়তো কোথাও বিচ্যুতি ঘটেছে, হয়তো কোথাও সাধক-সাধিকারা ভ্রষ্ট হয়েছে, মূলধারা থেকে সরে এসেছে__ কিন্তু এই সাধনার মূল সুরটি তার নিজস্বতা বজায় রেখে চলেছে __মাঝেমাঝেই সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে উঠে আসা খ্যাতনামা-অখ্যাতনামা সিদ্ধ সাধকদের হাত ধরে।।
কদিন আগে পার্বতী দাস বাউলের একটা গানে শুনলাম – ” যার মন ভালো নয় – যার প্রাণ ভালো নয়, সে পিরীতির মর্ম কি জানে।” ওই গানেই আর একটা লাইনে এই কথাগুলি রয়েছে – ” বীরচন্দ্রপুরের মাকরাই ঠাকুর স্বকীয়া এবং পরকীয়া একসাথে নিয়ে আনন্দ করেন।”
গানের দ্বিতীয় অংশের অর্থ তো আপনারা বুঝতেই পারছেন, কিন্তু প্রথম লাইনে যে রয়েছে ‘যার মন ভালো নয়’ এবং ‘প্রাণ ভালো নয়’ – এই কথার থেকে বোঝা যাচ্ছে সাধক বা সাধিকা যদি চেতনায় উন্নত না হোলে, উপযুক্ত না হোলে __ এই সাধনায় সিদ্ধিলাভ হয় না। ‘প্রাণ ভালো নয়’- অর্থে যার প্রাণায়াম সিদ্ধি ঘটেনি।৷
গুরুমহারাজের কাছে শুনেছিলাম – ব্রহ্মা–>ঈশ্বর–>ভগবান -এই ক্রমের ব্যাখ্যা। ব্রহ্মের কোনো রূপ নাই, তিনি অরূপ-অব্যক্ত-অবাঙমানসগোচর _কিন্ত এটাও বলা হয়েছে ‘তিনি রসস্বরূপ’! অস্ফুট ব্রহ্মের প্রথম স্ফুট বা প্রকাশিত যে রূপ তাই ঈশ্বর, আর জগতের বা জগতবাসীর দুঃখ-বেদনা যখন সেই ঈশ্বরতত্ত্বকে স্পর্শ করে – তখন জীবের প্রতি করুণায় বিগলিত হয়ে সেই ঈশ্বরতত্ত্ব-ই শরীর ধারণ কোরে জগতে কোন না কোন ‘নাম’ এবং ‘রূপ’ পরিগ্রহ করে ভগবান রূপে অবতীর্ণ হ’ন। যেমন দক্ষিণেশ্বরে লীলা কারী ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ।
আবার দেখুন দক্ষিণেশ্বরের অনতিদূরে মহাসাধক অন্নদাঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত আদ্যাপীঠের আদ্যামন্দিরে যে মূর্তিটি রয়েছে – তার মাধ্যমে ওই মহাসাধক অধ্যাত্মবিজ্ঞানের মূল তত্ত্বটিই বোঝাতে চেয়েছেন। ওখানে রয়েছে সবার উপরে রাধাকৃষ্ণ, মাঝে শিবসহ মা-কালীর মূর্তি এবং নিচে শ্রীরামকৃষ্ণ৷ এখানে বোঝানো হয়েছে__ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হলেন ভগবান। মর্তের গুরু-ই ভগবান। এর উপরে রয়েছেন শিব-সহ কালী, অর্থাৎ নির্গুণ ব্রহ্ম এবং ব্রহ্মের শক্তি ! এই যে প্রকাশমান জগৎ যে শক্তিতে ক্রিয়াশীল সেই শক্তিই মা কালীরূপে প্রতিষ্ঠিত ! পৃথিবীতে যত উপাসনা পদ্ধতি রয়েছে, পূজা-পাঠ রয়েছে, তা সে যেকোনো ধর্মমতেরই হোক না কেনো – সে সবই ওই শিব এবং কালীর-ই পূজা! স্বামী বিবেকানন্দও প্রায় সমগ্র বিশ্ব ঘুরে এই কথাই বলেছিলেন _’ভিন্ন আকারে শিব এবং শিবানীই পূজা গ্রহণ করছেন’।
আদ্যাপীঠ মন্দিরে সবার উপরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণ মূর্তি ! পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ এবং পরম প্রেমময়ী রাধা! ব্রহ্ম রস স্বরূপ – ‘ রসঃ বৈ সঃ’! ব্রহ্ম _ অপ্রকাশ-অরূপ-অব্যক্ত; তবু যেহেতু তিনি সাক্ষাৎ প্রেমস্বরূপ – তাই অমূর্তকে মূর্তিতে ধরার প্রয়াস ! সাধক–>শাক্ত–>বৈষ্ণব -এই ক্রমে অধ্যাত্মবিজ্ঞানকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে আদ্যামন্দিরে।৷ … [ক্রমশঃ]