গুরুমহারাজ স্বামী পরমানন্দ বনগ্রাম আশ্রমে বা অন্যত্র বিভিন্ন সিটিং-এ ওনার নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্বন্ধে যে সমস্ত কথা বলেছিলেন সেগুলিই এখানে আলোচনা করা হচ্ছিলো ৷ গুরুমহারাজ বলেছিলেন যে, তাঁর মাথা বা মস্তিস্ক ছিল আচার্য শঙ্করের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত ! অপরপক্ষে বলা যায়, মা জগদম্বা ভগবান পরমানন্দের শরীর গঠনে সু-সামঞ্জস্য আনতে আচার্য শঙ্করের ন্যায় অলৌকিক বা অতিলৌকিক ধীশক্তিসম্পন্ন মস্তিষ্ক_তাঁকে দিয়েছিলেন ৷
আচার্য শংকর ভারতীয় শাস্ত্রাদির সমস্ত জ্ঞান, ভারতীয় প্রাচীন পরম্পরার (ঋষিদের) উপলব্ধ সত্য এত অল্প বয়সে অধিগত করেছিলেন যে, ভাবলে অবাক হতে হয় ! মাত্র ষোল বছর বয়সে আচার্য শঙ্কর ভারতবিজয়ে বেরিয়ে পড়েন এবং তৎকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের জ্ঞান-বিতর্কে পরাজিত করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত *” _অদৈত্ব তত্ত্ব”_* প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । বলেছিলেন – “শ্লোকার্ধেন প্রবক্ষামি ……ব্রহ্ম সত্য – জগৎ মিথ্যা, জীব-ব্রহ্মৈব নাপরঃ।”
তৎকালীন ভারতবর্ষে দক্ষিণের (শঙ্করাচার্য দক্ষিণ ভারতের কেরলের লোক ছিলেন । “নাম্বুদরিপাদ”-ব্রাহ্মণ বংশে ওনার জন্ম হয়েছিল ।) সমস্ত পন্ডিত, মধ্যভারত, পূর্বভারত, পশ্চিম ভারতের সমস্ত পণ্ডিতদেরকে ওনার স্বমতে আনার পর উনি উত্তর ভারতের বারানসীতে এসে পৌঁছান । সেখানে তখন মহা মহা পন্ডিতদের বাস কিন্তু তারাও , ওনার অসাধারণ পান্ডিত্য_সুতীঘ্ন যুক্তিজাল ও অসম্ভব মেধার কাছে পরাজিত হয়ে _তরুণ শংকরকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল৷ ওখানকার পণ্ডিতরা শংকরকে বলেছিল যে, বর্তমানের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্ডিত কুমারিল ভট্ট তাঁর মত মেনে নিলেই বাকিদের কোন অসুবিধা থাকবে না ৷
শংকর সেইমতো কুমারিলের সাথে দেখা করেন । কিন্তু কুমারিল তখন প্রয়াগের পুণ্যতীর্থে তুষানল প্রজ্বলিত করে তাতে আত্মশোধনের জন্য আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত হয়েছেন ! তবু সেই অবস্থাতেই তিনি শঙ্করের প্রবর্তিত অদ্বৈত দর্শনের সারকথা শুনেছিলেন এবং খুবই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন । তারপর সেই মরণোন্মুখ মহাপন্ডিত, আচার্যকে বলেন তাঁর প্রধান শিষ্য মন্ডন মিশ্রকে যদি তিনি তর্কে হারিয়ে তাঁর মত প্রতিষ্ঠা করতে পারেন_ তাহলে সমগ্র ভারতবর্ষের পন্ডিত সমাজ এই মতবাদটা মেনে নেবে ৷
তাই হয়েছিল ! শংকরাচার্য মন্ডন মিশ্রের বাড়ি গিয়ে তাকে এবং মন্ডন মিশ্রের বিদুষী স্ত্রী উভয়ভারতীকে তর্ক যুদ্ধে পরাস্ত করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন “সঃ ব্রহ্ম নির্বিশেষঃ!”
মাত্র ৩২ বছর বয়সে আচার্য শরীর ছাড়েন ! ১৬-বছরে গৃহত্যাগ এবং ৩২- বছর বয়সে শরীর-ত্যাগ ! ষোলটি বছর ধরে সমগ্র ভারতবর্ষ পায়ে হেঁটে হেঁটে শঙ্করাচার্য এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন এবং শেষকালে মহাপ্রস্থানের পথে তিনি হিমালয়ের কেদারনাথে গিয়ে ধ্যানের অন্তর্লীন অবস্থায় ঢুকে গিয়ে শরীর ছেড়েছিলেন ।
গুরু মহারাজ আমাদের কাছে অনেকবার বলেছিলেন – “এবার মা জগদম্বা আমাকে পড়াশোনা শিখতে দেননি কিন্তু এমন মস্তিষ্ক দিয়েছেন যে, যেকোন বিষয়ের পন্ডিত ব্যক্তি আমার সামনে এলে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারবেনা – হয় আমার যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হবে, না হয় রেগেমেগে স্থান ত্যাগ করবে ।” আমরা সিটিংয়ে বহুবার বহু মানুষকে ওনার সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে দেখেছি ৷ এমনটা ঘটলে আমরা নিজেরাই বলাবলি করতাম – “দ্যাখ্ না – একটু পরে কি হয় !” -অর্থাৎ আমরা জানতাম ওই “অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী” যুবকটি, বা তার্কিক কোনো পন্ডিতস্মন্য অহংকারী ব্যক্তি (যে লোক ওনার সাথে তর্ক-বিতর্ক করতো)-টির একটু পরেই এমন ধোলাই হবে যে, বাছাধন কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথা নিচু করে থাকতে বাধ্য হবে !! গুরুমহারাজ বলতেন – কোনো মানুষ কথা বলতে শুরু করলেই_উনি তার মেধার পরিমাপ করে নিতে পারতেন, এটায় ওনার কোনো অসুবিধা হতো না । তারপর উনি ওই ব্যক্তি _”যতটা নিতে পারবে”, উনি তাকে উদ্দেশ্য করে ততটাই বলতেন !
যে কোনো ভাষাভাষীর মানুষের সাথে গুরুমহারাজ অনায়াসে কথা বলতেন ! যেকোনো বিষয়ের উপর যেকোনো জিজ্ঞাসার_ উনি অক্লেশে, যথাযথ ও নিখুঁত উত্তর দিতেন !
একবার সিটিং-এ বলেছিলেন – “আমার এই শরীরের মৃত্যুর পর যদি আমার মস্তিষ্ক বিজ্ঞানীরা পায় তাহলে জীববিজ্ঞানীদের কাছে এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি হবে ! আমার মস্তিষ্ক কোষগুলি নিয়ে যদি তারা গবেষণা করে – তাহলে অনেক অজানা তথ্যের রহস্য উন্মীলিত হবে! কারণ_মস্তিস্ক-কোষও যে ১০০% ক্রিয়াশীল হোতে পারে তার প্রমাণ সহ আরো অনেক কিছু জানতে পারবে “৷৷ … [ক্রমশঃ]
আচার্য শংকর ভারতীয় শাস্ত্রাদির সমস্ত জ্ঞান, ভারতীয় প্রাচীন পরম্পরার (ঋষিদের) উপলব্ধ সত্য এত অল্প বয়সে অধিগত করেছিলেন যে, ভাবলে অবাক হতে হয় ! মাত্র ষোল বছর বয়সে আচার্য শঙ্কর ভারতবিজয়ে বেরিয়ে পড়েন এবং তৎকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের জ্ঞান-বিতর্কে পরাজিত করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত *” _অদৈত্ব তত্ত্ব”_* প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । বলেছিলেন – “শ্লোকার্ধেন প্রবক্ষামি ……ব্রহ্ম সত্য – জগৎ মিথ্যা, জীব-ব্রহ্মৈব নাপরঃ।”
তৎকালীন ভারতবর্ষে দক্ষিণের (শঙ্করাচার্য দক্ষিণ ভারতের কেরলের লোক ছিলেন । “নাম্বুদরিপাদ”-ব্রাহ্মণ বংশে ওনার জন্ম হয়েছিল ।) সমস্ত পন্ডিত, মধ্যভারত, পূর্বভারত, পশ্চিম ভারতের সমস্ত পণ্ডিতদেরকে ওনার স্বমতে আনার পর উনি উত্তর ভারতের বারানসীতে এসে পৌঁছান । সেখানে তখন মহা মহা পন্ডিতদের বাস কিন্তু তারাও , ওনার অসাধারণ পান্ডিত্য_সুতীঘ্ন যুক্তিজাল ও অসম্ভব মেধার কাছে পরাজিত হয়ে _তরুণ শংকরকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল৷ ওখানকার পণ্ডিতরা শংকরকে বলেছিল যে, বর্তমানের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্ডিত কুমারিল ভট্ট তাঁর মত মেনে নিলেই বাকিদের কোন অসুবিধা থাকবে না ৷
শংকর সেইমতো কুমারিলের সাথে দেখা করেন । কিন্তু কুমারিল তখন প্রয়াগের পুণ্যতীর্থে তুষানল প্রজ্বলিত করে তাতে আত্মশোধনের জন্য আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত হয়েছেন ! তবু সেই অবস্থাতেই তিনি শঙ্করের প্রবর্তিত অদ্বৈত দর্শনের সারকথা শুনেছিলেন এবং খুবই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন । তারপর সেই মরণোন্মুখ মহাপন্ডিত, আচার্যকে বলেন তাঁর প্রধান শিষ্য মন্ডন মিশ্রকে যদি তিনি তর্কে হারিয়ে তাঁর মত প্রতিষ্ঠা করতে পারেন_ তাহলে সমগ্র ভারতবর্ষের পন্ডিত সমাজ এই মতবাদটা মেনে নেবে ৷
তাই হয়েছিল ! শংকরাচার্য মন্ডন মিশ্রের বাড়ি গিয়ে তাকে এবং মন্ডন মিশ্রের বিদুষী স্ত্রী উভয়ভারতীকে তর্ক যুদ্ধে পরাস্ত করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন “সঃ ব্রহ্ম নির্বিশেষঃ!”
মাত্র ৩২ বছর বয়সে আচার্য শরীর ছাড়েন ! ১৬-বছরে গৃহত্যাগ এবং ৩২- বছর বয়সে শরীর-ত্যাগ ! ষোলটি বছর ধরে সমগ্র ভারতবর্ষ পায়ে হেঁটে হেঁটে শঙ্করাচার্য এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন এবং শেষকালে মহাপ্রস্থানের পথে তিনি হিমালয়ের কেদারনাথে গিয়ে ধ্যানের অন্তর্লীন অবস্থায় ঢুকে গিয়ে শরীর ছেড়েছিলেন ।
গুরু মহারাজ আমাদের কাছে অনেকবার বলেছিলেন – “এবার মা জগদম্বা আমাকে পড়াশোনা শিখতে দেননি কিন্তু এমন মস্তিষ্ক দিয়েছেন যে, যেকোন বিষয়ের পন্ডিত ব্যক্তি আমার সামনে এলে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারবেনা – হয় আমার যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হবে, না হয় রেগেমেগে স্থান ত্যাগ করবে ।” আমরা সিটিংয়ে বহুবার বহু মানুষকে ওনার সাথে তর্ক-বিতর্ক করতে দেখেছি ৷ এমনটা ঘটলে আমরা নিজেরাই বলাবলি করতাম – “দ্যাখ্ না – একটু পরে কি হয় !” -অর্থাৎ আমরা জানতাম ওই “অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী” যুবকটি, বা তার্কিক কোনো পন্ডিতস্মন্য অহংকারী ব্যক্তি (যে লোক ওনার সাথে তর্ক-বিতর্ক করতো)-টির একটু পরেই এমন ধোলাই হবে যে, বাছাধন কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথা নিচু করে থাকতে বাধ্য হবে !! গুরুমহারাজ বলতেন – কোনো মানুষ কথা বলতে শুরু করলেই_উনি তার মেধার পরিমাপ করে নিতে পারতেন, এটায় ওনার কোনো অসুবিধা হতো না । তারপর উনি ওই ব্যক্তি _”যতটা নিতে পারবে”, উনি তাকে উদ্দেশ্য করে ততটাই বলতেন !
যে কোনো ভাষাভাষীর মানুষের সাথে গুরুমহারাজ অনায়াসে কথা বলতেন ! যেকোনো বিষয়ের উপর যেকোনো জিজ্ঞাসার_ উনি অক্লেশে, যথাযথ ও নিখুঁত উত্তর দিতেন !
একবার সিটিং-এ বলেছিলেন – “আমার এই শরীরের মৃত্যুর পর যদি আমার মস্তিষ্ক বিজ্ঞানীরা পায় তাহলে জীববিজ্ঞানীদের কাছে এটা একটা বিরাট প্রাপ্তি হবে ! আমার মস্তিষ্ক কোষগুলি নিয়ে যদি তারা গবেষণা করে – তাহলে অনেক অজানা তথ্যের রহস্য উন্মীলিত হবে! কারণ_মস্তিস্ক-কোষও যে ১০০% ক্রিয়াশীল হোতে পারে তার প্রমাণ সহ আরো অনেক কিছু জানতে পারবে “৷৷ … [ক্রমশঃ]