স্বামী বাউলানন্দজীর পেরেন্টাপল্লীতে থাকাকালীন সময়ের কথা বলা হচ্ছিলো। এখন কোন্ডা রেড্ডি উপজাতিদের সমস্যার কথা আলোচনা করা হচ্ছে। বণিকেরা কিভাবে এই সহজ-সরল উপজাতিদেরকে বঞ্চনা করতো, শোষন করতো সেই সব কথাই বলা হচ্ছিলো।
স্বামীজী বণিককে ডেকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তিনি উপদেশ দিলেন _”আপনার এতোখানি দুর্নীতিপরায়ন হওয়া উচিত নয় ! আপনার জীবনযাত্রার প্রণালী কিছুটা পরিবর্তন অবশ্যই করা দরকার!”
বণিক অত্যাচারী লোক! ওই বন-রাজ্যে গ্রামবাসীদের উপর সে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত কতৃত্ব চালাচ্ছিল । একজন সন্ন্যাসীর কথা সে শুনবে কেন ? কেনই বা একজন সন্ন্যাসীর বাক্যে সে শ্রদ্ধা জানাবে ? স্বামীজীর অনুরোধে কোন অনুকূল সাড়াই তার কাছ থেকে পাওয়া গেল না।
স্বামীজী তাঁর ভক্তদের আদেশ করতেন, তারা যেন চাল এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসে মাঝে মাঝে গ্রামবাসীদের দান করে । বহু গ্রামের রেড্ডিরা এইভাবে স্বামীজীর ভক্তদের সাহায্য পেতে লাগলো এবং এর ফলে ওই উপজাতিদের স্বামীজীর উপর আস্থা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগলো । তারা অনুভব করলো যে, তাদের দুঃখ কষ্ট বুঝবার এবং তার প্রতিকার করার মতো একজন আছেন। স্বামীজীর উপর সম্পূর্ণ আস্থা এসে গেল তাদের ! তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে, স্বামীজী তাদের আপনজন, বন্ধু এবং পথপ্রদর্শক ! স্বামীজীকে তারা তাদের দুঃখ কষ্টের কথা বলতে লাগলো। স্বামীজীও তাদেরকে যথাযথ উপদেশ দিতে লাগলেন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
বণিক বুঝতে পারলো, পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে এবং স্বামীজীর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । সেই সঙ্গে তার কর্তৃত্ব এবং অত্যাচার দ্রুত লোপ পাচ্ছে । সে কোনো প্রকারে স্বামীজীর সঙ্গে সমঝোতা করে তাঁকে তার হাতে আনার চেষ্টা করলো। আশ্রমের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে আশ্রম প্রাঙ্গণে ঢোকার চেষ্টা করলো। স্বামীজী তাঁর দেওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিলেন । এতে বণিক খুব রাগান্বিত হলো এবং আশ্রমে আসা বন্ধ করলো ।
স্বামীজী দশেরা, মুকোটি এবং মহা শিবরাত্রি উৎসব করতে শুরু করলেন । নিকটবর্তী প্রায় সমস্ত জায়গা হোতে উপজাতিরা আশ্রমে আসা শুরু করলো । তাদের যথেষ্ট পরিমাণে খাবার দেওয়া হোত। বাড়িতে যত সদস্য আছে ততগুলি খাবারের প্যাকেট তাদের হাতে দেওয়া হোত এবং রাস্তায় খাওয়ার জন্য দুই এক প্যাকেট বাড়তি দেওয়া হোত । এইভাবে খাবার দিয়ে স্বামীজী তাদের হৃদয় জয় করলেন । যত দূরেই থাকুক না কেন, স্বামীজীর নাম শুনলেই তারা মাথা নোয়াতো। বণিকের প্রভাব একেবারে কমে গেল তাকে গ্রামবাসীরা ভয় কোরতো কিন্তু সম্মান কোরতো না, ভালোবাসতো না !
বণিক নিজেকে বুঝিয়ে শান্ত কোরলো । ‘বিচক্ষণতা শৌর্যের এক বিরাট অংশ’_ বিবেচনা করে এবং রাগ প্রশমিত করে সে আশ্রমে উৎসবে আসা শুরু করলো । স্বামীজী তার উপস্থিতির সুযোগ নিলেন এবং উপজাতিদের সাহায্য করার জন্য তাকে উপদেশ দিতে লাগলেন ।
বণিক বললো _”আমরা ওদের যত্ন নিচ্ছি। ওদের আর কোনো কষ্ট নাই । যদি আপনি চান তাহলে ওদেরকে আমাদের সামনে ডাকুন !” স্বামীজী গ্রামবাসীদের ডাকলেন। তারা আশ্রমে পৌঁছে বণিককে দেখেই আতঙ্কিত হোল । ভয়ে ভয়ে বললো _”বণিক (সহুকার) আমাদের প্রতি ভালো ব্যবহারই করেছে !” বণিক উচ্চৈঃস্বরে হাসলো এবং স্বামীজীর দিকে বিদ্রুপ ভঙ্গিতে তাকালো। সে তার জয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল । সে দর্প সহকারে বললো _” স্বামীজী, আমি বণিক! আশ্রমের জন্য যা খাদ্য সম্ভার দরকার আমি দেবো ! কি চান বলুন !” স্বামীজী মৃদু হেসে বললেন _”আমাদের কিছু দরকার নাই !”
“স্বামীজী! আমরা দাতা এবং আপনি গ্রহীতা, আমাদের উচিত আপনাকে দেওয়া এবং আপনার উচিৎ তা গ্রহণ করা!” কথাগুলো বণিক অসভ্যের মত বললো! স্বামীজী উত্তর দিলেন _”আপনার পাঠানো কোনো জিনিস আমরা গ্রহণ করি না!” এই কথা শুনে বণিক সেখান থেকে চলে গেল ।
স্বামীজী গ্রামের কৃষকদের বা অন্যান্য গ্রামবাসীদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন _”বণিকের সামনে তারা যা বলেছিল, তা সত্য কি না!” উত্তরে তারা বললো _’যদি তারা ঐরূপ না বলতো তাহলে বণিক তাদেরকে প্রহার করতো!’
এই ঘটনার দুমাস পরে আশ্রমে ‘মুকোটি উৎসব’ পালিত হবে । উৎসবের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সম্ভার এক সপ্তাহ পূর্বে ভক্তরা সরবরাহ করলো ! উৎসবের একদিন আগে বণিক (সহুকার) দুবস্তা চাল পাঠালো কিন্তু স্বামীজী তা গ্রহণ করলেন না ! সেগুলো নদীর ধারে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। একাদশীর দিন মন্দিরে খুব জোরে ভজন হচ্ছিলো এবং বস্তা বস্তা চাল রান্না হচ্ছিলো।
*স্বামী বাউলানন্দজীর আধ্যাত্মিক আলোচনা*
………………………………………………………………
(পরবর্তী অংশ) …ধর্মের মহত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাধিক্য প্রধান মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ বড় বড় ধর্মমতগুলি এবং তাদের নেতারা ঈশ্বর এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওদের বিরােধিতা করলেই ভয় দেখানো হচ্ছে, জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। এই সমস্তই করা হচ্ছে আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি বা ঈশ্বরের নামে।
‘হিন্দুধর্ম’ বলতে যা বুঝায় তা প্রকৃতপক্ষে কোন ধর্ম নয়, তা আধ্যাত্মিকতা। একদা এটিও ধর্ম বলে বিবেচিত হয়েছিল । আধ্যাত্মিক ভিত্তিতে একে পুনঃস্থাপিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এই প্রচেষ্টাই ‘বড় ধর্মমতে’-র রূপ নিল। কিন্তু এই ধর্মমত নিজেকে সবল করার জন্য এবং নিজের দল ভারী করার জন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার বা পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করেনি। এটা আধ্যাত্মিক সূত্র প্রচার করেছিল। সাৰ্বজনীন ঊর্ধ্বপ্রগতি, মানুষের দায়িত্ব, তাদের জীবনের লক্ষ্য এবং সার্বিকতা সম্বন্ধে প্রচার করেছিল ৷ পরিশেষে ইহা বড় ধর্ম বলে গণ্য হলো ।
ধর্মের উদ্দেশ্য হোল অমানবীয় প্রবৃত্তিকে মানবীয় স্তরে রূপান্তরিত করা ৷ শক্তির রূপান্তরের উপর নির্ভর করে মানবের ঊর্ধ্বপ্রগতি ৷ ঈশ্বরের উপর তাদের যে বিশ্বাস সেই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে শক্তির রূপান্তর ৷ বিশ্বাস নির্ভর করে ধারণার উপর । ঈশ্বর যেমনই হোন না কেন, তিনি সাকার বা নিরাকার যাই হোন না কেন তাতে কিছুই যায় আসে না ৷ আমাদের উচিত ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা । ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা থাকলেও লোকে সেরূপ আচরণ করে না । এর কারণ হোলো উপযুক্ত চেতনাশক্তির অভাব ৷ মানুষের মধ্যে ভালোবাসা তথা প্রেম থাকা বিশেষ প্রয়োজন । ভালোবাসা বা প্রেম–শক্তি এবং জ্ঞানের চেয়েও শক্তিশালী ।
আধ্যাত্মিক ধারণার ফলে নৈতিক সংস্কৃতি পুনরায় গড়ে উঠবে ৷ প্রচ্ছন্ন শক্তি জাগরণের জন্য উপযুক্ত আচরণ করলে মানবের সূক্ষ্মচেতনা কার্যকরী হবে, সৃজনীশক্তির সংরক্ষণ সম্ভব হবে এবং এই শক্তিকে গুণগত সূক্ষ্মশক্তিতে রূপান্তরিত করাও সম্ভব হবে ৷
যারা সাম্প্রদায়িক স্বার্থের ঊর্ধ্বে যেতে পেরেছে, একমাত্র তারাই এই সমস্ত বিষয় বুঝতে পারবে । এইসবের ধারণা নিয়ে যদি তারা কাজ করে এবং এগিয়ে চলে তাহলে সাম্প্রদায়িক সংগঠনে অন্যান্য যারা আছে তারাও ওদেরকে অনুসরণ করবে এবং আধ্যাত্মিক জীবনে ব্রতী হবে । এইভাবে মানুষ সার্বজনীন স্বার্থ লাভ করতে পারবে ।”
জিজ্ঞাসা :– স্বামীজী, আধ্যাত্মিক ধারণা বলতে কি বুঝায় ?
মীমাংসা :– আমি মানুষ । সমস্ত মানুষ আমার মত । আমার একটা উৎস এবং অধিষ্ঠানভূমি আছে । পৃথিবীর সমস্ত লোক সেই উৎস এবং অধিষ্ঠানভূমি হতেই এসেছে – এই হল আধ্যাত্মিক ধারণা।(ক্রমশঃ)
স্বামীজী বণিককে ডেকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তিনি উপদেশ দিলেন _”আপনার এতোখানি দুর্নীতিপরায়ন হওয়া উচিত নয় ! আপনার জীবনযাত্রার প্রণালী কিছুটা পরিবর্তন অবশ্যই করা দরকার!”
বণিক অত্যাচারী লোক! ওই বন-রাজ্যে গ্রামবাসীদের উপর সে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত কতৃত্ব চালাচ্ছিল । একজন সন্ন্যাসীর কথা সে শুনবে কেন ? কেনই বা একজন সন্ন্যাসীর বাক্যে সে শ্রদ্ধা জানাবে ? স্বামীজীর অনুরোধে কোন অনুকূল সাড়াই তার কাছ থেকে পাওয়া গেল না।
স্বামীজী তাঁর ভক্তদের আদেশ করতেন, তারা যেন চাল এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসে মাঝে মাঝে গ্রামবাসীদের দান করে । বহু গ্রামের রেড্ডিরা এইভাবে স্বামীজীর ভক্তদের সাহায্য পেতে লাগলো এবং এর ফলে ওই উপজাতিদের স্বামীজীর উপর আস্থা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগলো । তারা অনুভব করলো যে, তাদের দুঃখ কষ্ট বুঝবার এবং তার প্রতিকার করার মতো একজন আছেন। স্বামীজীর উপর সম্পূর্ণ আস্থা এসে গেল তাদের ! তাদের দৃঢ় বিশ্বাস হল যে, স্বামীজী তাদের আপনজন, বন্ধু এবং পথপ্রদর্শক ! স্বামীজীকে তারা তাদের দুঃখ কষ্টের কথা বলতে লাগলো। স্বামীজীও তাদেরকে যথাযথ উপদেশ দিতে লাগলেন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
বণিক বুঝতে পারলো, পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে এবং স্বামীজীর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । সেই সঙ্গে তার কর্তৃত্ব এবং অত্যাচার দ্রুত লোপ পাচ্ছে । সে কোনো প্রকারে স্বামীজীর সঙ্গে সমঝোতা করে তাঁকে তার হাতে আনার চেষ্টা করলো। আশ্রমের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে আশ্রম প্রাঙ্গণে ঢোকার চেষ্টা করলো। স্বামীজী তাঁর দেওয়া জিনিসপত্র ফিরিয়ে দিলেন । এতে বণিক খুব রাগান্বিত হলো এবং আশ্রমে আসা বন্ধ করলো ।
স্বামীজী দশেরা, মুকোটি এবং মহা শিবরাত্রি উৎসব করতে শুরু করলেন । নিকটবর্তী প্রায় সমস্ত জায়গা হোতে উপজাতিরা আশ্রমে আসা শুরু করলো । তাদের যথেষ্ট পরিমাণে খাবার দেওয়া হোত। বাড়িতে যত সদস্য আছে ততগুলি খাবারের প্যাকেট তাদের হাতে দেওয়া হোত এবং রাস্তায় খাওয়ার জন্য দুই এক প্যাকেট বাড়তি দেওয়া হোত । এইভাবে খাবার দিয়ে স্বামীজী তাদের হৃদয় জয় করলেন । যত দূরেই থাকুক না কেন, স্বামীজীর নাম শুনলেই তারা মাথা নোয়াতো। বণিকের প্রভাব একেবারে কমে গেল তাকে গ্রামবাসীরা ভয় কোরতো কিন্তু সম্মান কোরতো না, ভালোবাসতো না !
বণিক নিজেকে বুঝিয়ে শান্ত কোরলো । ‘বিচক্ষণতা শৌর্যের এক বিরাট অংশ’_ বিবেচনা করে এবং রাগ প্রশমিত করে সে আশ্রমে উৎসবে আসা শুরু করলো । স্বামীজী তার উপস্থিতির সুযোগ নিলেন এবং উপজাতিদের সাহায্য করার জন্য তাকে উপদেশ দিতে লাগলেন ।
বণিক বললো _”আমরা ওদের যত্ন নিচ্ছি। ওদের আর কোনো কষ্ট নাই । যদি আপনি চান তাহলে ওদেরকে আমাদের সামনে ডাকুন !” স্বামীজী গ্রামবাসীদের ডাকলেন। তারা আশ্রমে পৌঁছে বণিককে দেখেই আতঙ্কিত হোল । ভয়ে ভয়ে বললো _”বণিক (সহুকার) আমাদের প্রতি ভালো ব্যবহারই করেছে !” বণিক উচ্চৈঃস্বরে হাসলো এবং স্বামীজীর দিকে বিদ্রুপ ভঙ্গিতে তাকালো। সে তার জয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল । সে দর্প সহকারে বললো _” স্বামীজী, আমি বণিক! আশ্রমের জন্য যা খাদ্য সম্ভার দরকার আমি দেবো ! কি চান বলুন !” স্বামীজী মৃদু হেসে বললেন _”আমাদের কিছু দরকার নাই !”
“স্বামীজী! আমরা দাতা এবং আপনি গ্রহীতা, আমাদের উচিত আপনাকে দেওয়া এবং আপনার উচিৎ তা গ্রহণ করা!” কথাগুলো বণিক অসভ্যের মত বললো! স্বামীজী উত্তর দিলেন _”আপনার পাঠানো কোনো জিনিস আমরা গ্রহণ করি না!” এই কথা শুনে বণিক সেখান থেকে চলে গেল ।
স্বামীজী গ্রামের কৃষকদের বা অন্যান্য গ্রামবাসীদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন _”বণিকের সামনে তারা যা বলেছিল, তা সত্য কি না!” উত্তরে তারা বললো _’যদি তারা ঐরূপ না বলতো তাহলে বণিক তাদেরকে প্রহার করতো!’
এই ঘটনার দুমাস পরে আশ্রমে ‘মুকোটি উৎসব’ পালিত হবে । উৎসবের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সম্ভার এক সপ্তাহ পূর্বে ভক্তরা সরবরাহ করলো ! উৎসবের একদিন আগে বণিক (সহুকার) দুবস্তা চাল পাঠালো কিন্তু স্বামীজী তা গ্রহণ করলেন না ! সেগুলো নদীর ধারে ফেরত পাঠিয়ে দিলেন। একাদশীর দিন মন্দিরে খুব জোরে ভজন হচ্ছিলো এবং বস্তা বস্তা চাল রান্না হচ্ছিলো।
*স্বামী বাউলানন্দজীর আধ্যাত্মিক আলোচনা*
………………………………………………………………
(পরবর্তী অংশ) …ধর্মের মহত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাধিক্য প্রধান মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ বড় বড় ধর্মমতগুলি এবং তাদের নেতারা ঈশ্বর এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওদের বিরােধিতা করলেই ভয় দেখানো হচ্ছে, জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। এই সমস্তই করা হচ্ছে আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি বা ঈশ্বরের নামে।
‘হিন্দুধর্ম’ বলতে যা বুঝায় তা প্রকৃতপক্ষে কোন ধর্ম নয়, তা আধ্যাত্মিকতা। একদা এটিও ধর্ম বলে বিবেচিত হয়েছিল । আধ্যাত্মিক ভিত্তিতে একে পুনঃস্থাপিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। এই প্রচেষ্টাই ‘বড় ধর্মমতে’-র রূপ নিল। কিন্তু এই ধর্মমত নিজেকে সবল করার জন্য এবং নিজের দল ভারী করার জন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার বা পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করেনি। এটা আধ্যাত্মিক সূত্র প্রচার করেছিল। সাৰ্বজনীন ঊর্ধ্বপ্রগতি, মানুষের দায়িত্ব, তাদের জীবনের লক্ষ্য এবং সার্বিকতা সম্বন্ধে প্রচার করেছিল ৷ পরিশেষে ইহা বড় ধর্ম বলে গণ্য হলো ।
ধর্মের উদ্দেশ্য হোল অমানবীয় প্রবৃত্তিকে মানবীয় স্তরে রূপান্তরিত করা ৷ শক্তির রূপান্তরের উপর নির্ভর করে মানবের ঊর্ধ্বপ্রগতি ৷ ঈশ্বরের উপর তাদের যে বিশ্বাস সেই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে শক্তির রূপান্তর ৷ বিশ্বাস নির্ভর করে ধারণার উপর । ঈশ্বর যেমনই হোন না কেন, তিনি সাকার বা নিরাকার যাই হোন না কেন তাতে কিছুই যায় আসে না ৷ আমাদের উচিত ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা । ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে ধারণা থাকলেও লোকে সেরূপ আচরণ করে না । এর কারণ হোলো উপযুক্ত চেতনাশক্তির অভাব ৷ মানুষের মধ্যে ভালোবাসা তথা প্রেম থাকা বিশেষ প্রয়োজন । ভালোবাসা বা প্রেম–শক্তি এবং জ্ঞানের চেয়েও শক্তিশালী ।
আধ্যাত্মিক ধারণার ফলে নৈতিক সংস্কৃতি পুনরায় গড়ে উঠবে ৷ প্রচ্ছন্ন শক্তি জাগরণের জন্য উপযুক্ত আচরণ করলে মানবের সূক্ষ্মচেতনা কার্যকরী হবে, সৃজনীশক্তির সংরক্ষণ সম্ভব হবে এবং এই শক্তিকে গুণগত সূক্ষ্মশক্তিতে রূপান্তরিত করাও সম্ভব হবে ৷
যারা সাম্প্রদায়িক স্বার্থের ঊর্ধ্বে যেতে পেরেছে, একমাত্র তারাই এই সমস্ত বিষয় বুঝতে পারবে । এইসবের ধারণা নিয়ে যদি তারা কাজ করে এবং এগিয়ে চলে তাহলে সাম্প্রদায়িক সংগঠনে অন্যান্য যারা আছে তারাও ওদেরকে অনুসরণ করবে এবং আধ্যাত্মিক জীবনে ব্রতী হবে । এইভাবে মানুষ সার্বজনীন স্বার্থ লাভ করতে পারবে ।”
জিজ্ঞাসা :– স্বামীজী, আধ্যাত্মিক ধারণা বলতে কি বুঝায় ?
মীমাংসা :– আমি মানুষ । সমস্ত মানুষ আমার মত । আমার একটা উৎস এবং অধিষ্ঠানভূমি আছে । পৃথিবীর সমস্ত লোক সেই উৎস এবং অধিষ্ঠানভূমি হতেই এসেছে – এই হল আধ্যাত্মিক ধারণা।(ক্রমশঃ)